মার্কিন মুল্লূকে এসেছি সেই আগস্ট মাসে। এখন পর্যন্ত টাইম জোনের বিশাল পার্থক্যের সাথে মিলিয়ে উঠতে পারি নি। খেই হারিয়ে ফেলি। উদ্দেশ্য ছিলো একটি একটি সুখকর স্মৃতির রোমন্থন করার কিন্তু মন বেশ খারাপ। সকালে উঠেই ফেইসবুকে দেখতে পেলাম ময়মনসিংহের ২০১২ তে পাশ করে যাওয়া একটি মেয়ের ব্রেইন হেমারেজের ঘটনা। জীবনের সাইকেলে প্যাডেল দেয়ার আগেই অনেক অনিশ্চয়তা। ইতমধ্যেই পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর “অতীত ভুলে যাওয়ার” জ্বালাময়ী আহ্বান ও আমাদের অর্থমন্ত্রীর মন্তব্যের স্বেচ্ছাচারী পুতুল খেলা দেখে মন তেতো হয়ে আছে। কোন এক ফেইসবুক স্ট্যাটাসে দেখলাম ফেরদৌস ভাই (ফ,ক,ক ৯০-৯৬) স্মরণ করিয়ে দিলেন ২৫শে মার্চ, ১৯৯২ তারিখে পাকিস্তান বিশ্বকাপ ক্রিকেট জেতার পরে বাংলাদেশে উল্লাস ও উন্মাদনার কথা। পড়ার পর নিজে নিজেই হাসলাম কিছুক্ষণ। একেই কি বলে “irony”? বয়স তখন মোটে সাড়ে ছয়। বোঝার কথা না। বিতর্ক ভয় পাই। কারণ আমার জ্ঞান অনেক সীমিত। যুক্তি দাঁড়া করাতে পারবো না। খেলাধুলা-রাজনীতি-ইতিহাস অনেকে এক সুঁতোয় গেঁথে দেখতে চান না। আমি ওই দলে নই। তাই আর কথা বাড়াবো না।
জোড়াতালি দিয়ে লেখার হাতটি “সময়ের অভাব” নামক খোঁড়া বাহানার কারণে জং ধরে ভঙ্গুর অবস্থায় রয়েছে। (সম্ভবত) যেই ঘটনা নিয়ে লিখতে চেয়েছিলাম সেটা হলো আমাদেরই একজনের ১ম বিবাহ বার্ষিকী। আমার খুব পছন্দের একজন ব্লগার, সুষমার (ম,গ,ক,ক ৯৯-০৫) সম্ভবত গত পরশু বা গতকাল (টাইম জোনের গোলমাল) ১ম বিবাহ বার্ষিকী। এই মানুষটির লেখা পরে আপন মনে হাসি আর ভাবি যে ইনি একজন ইঞ্জিনিয়ার এবং যার চাকুরী এক কথায় “সময় জ্ঞানহীন”। এর মাঝেও রম্য থেকে রোমান্টিক যেকোন লেখায় শেষ পর্যন্ত চোখ আটকে থাকে ল্যাপটপের স্ক্রীনে। এই ইঞ্জিনিয়ার-লেখকের (লেখিকা-শব্দটি ব্যবহার করতে চাইনা তবে লেখক-শব্দটিই বা কেন নিচ্ছি? উত্তর জানা নেই) বিবাহ আমার জীবনে খুব একটা অর্থবহ নয় তবে ঠিক চার মাস পরে বিবাহের অনুষ্ঠান আমার জীবনের জন্যে অত্যন্ত স্মরণীয়। অনুষ্ঠানের দাওয়াত পেয়েই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যাব এই ভেবে যে আরেকটি নতুন জেলা ঘুরে দেখবার এর চেয়ে ভালো সুযোগ আর হতে পারে না। পেট পুজো ও সাথে ভ্রমন একদম ফ্রি!
মার্চ মাসের ১ তারিখ বৃহস্পতিবার রাতে রওনা দিলাম বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ছোট একটি জেলা মেহেরপুরের উদ্দেশ্যে। আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে অ্যাপ্লিকেশান জমা দেয়ার ধাক্কা চলছে। সেদিনও ওরিগন স্টেট ইউনিভার্সিটিতে অনলাইনে অ্যাপ্লিকেশান জমা দেয়ার কথা। ভেবেছিলাম বৃহস্পতিবার আসার আগেই শেষ হয়ে যাবে। অগত্যা ল্যাপটপ ও বাংলালায়নের ছোট মডেমটি নিয়ে বাসে বসেই অ্যাপ্লিকেশান পূরণ করে চলেছি। এদিকে বাস ছুটে চলেছে মেহেরপুরের উদ্দেশ্যে। প্রচন্ড দ্রুত গতিতে কাজ করতে করতে ভাবছি যেকোন মূহুর্তে নেটওয়ার্কের বাহিরে চলে গেলে গজব হয়ে যাবে। যাইহোক গাবতলী ছাড়িয়েছি মাত্র “সাবমিট” বাটন ক্লিক করলাম কনফার্মেশান মেইল পেলাম আর সাথে সাথে লাইন কেটে গেলো। কানের পাশ দিয়ে নয় কানে সুড়সুড়ি দিয়ে যাওয়ার মত গুলি ছিলো সেটি। পাশের ও পেছনের সিটের বেশ কয়েক জোড়া উৎসুক চোখকে বিশ্রাম দিয়ে ল্যাপটপ বন্ধ করে নিজেই ঘুমিয়ে পড়লাম।
ভোরে এসে নামলাম (বৈদ্যনাথতলা) মুজিবনগর খ্যাত মেহেরপুরের জেলা বাস টার্মিনালে। আমার ভ্রমণের প্রথম কর্মসূচি হিসেবে সবসময় যেটা করে থাকি তা করার প্রস্তুতি নিলাম। টার্মিনালের একটি চায়ের দোকানে গিয়ে বসলাম। (আন্দাজ) ষাটোর্ধো দোকানের মালিক দোকান খুলে সাজিয়ে নিচ্ছেন। চা মাত্র চাপানো হয়েছে। ছোট শহরগুলোতে বিশেষ করে বাস/ট্রেন স্টেশানগুলোতে নতুন কোন মুখ দেখলে যেকোন মানুষ এক ধাক্কায় বলে দিতে পারে। দোকানদার চাচার (আইনের ভাষায় লিডিং প্রশ্ন) জিজ্ঞাসা, “ঢাকা থেকে এসেছেন?” সম্মতিসূচক উত্তর পেয়ে মগে পানি ঢেলে বললেন পাশে গিয়ে মুখ ধুয়ে নিতে। কিছুটা অবাক হলাম কারণ নিজে থেকে কোন দোকানদারকে আগে এই ভাবে পানি এগিয়ে দেয় নি। ওটা দোকানের খদ্দেরের নিজের দায়িত্ব। চা বানিয়ে দিয়ে হাতে দিলেন। বিস্কুট খাই না এবং একমাত্র ব্যতিক্রম করি ভ্রমনে থাকলে তাই একটা নোনতা বিস্কুট চেয়ে নিলাম। চা ও নোনতা বিস্কুট এই পুরো ব্যাপারটা ভ্রমনের সময় (বাংলা ভালো পারি না ক্ষমাপ্রার্থী) symbolic appreciation করে থাকি। ইতমধ্যে সকালের চায়ের স্বাদ নিতে আরো অনেকেই ভীড় জমানো শুরু করেছে দোকানে। কমবেশী সবাই বয়সে অনেক বড়। সাধারণত পকেট থেকে সিগারেট বের করে ধরানোর ক্ষেত্রে থোড়াই কেয়ার থাকি। আজকে কেনো জানি একটু অস্বস্তি বোধ হলো। চা-বিস্কুটের দাম মিটিয়ে বাইরে গিয়ে সিগারেট ধরালাম। একটু ঘুরে দেখলাম টার্মিনালের আশেপাশে, রাস্তার এদিক সেদিক। এরপর মনে হলো যাত্রার আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি দরকার। তার আগে বাসের ফিরতি টিকেট কিনে নিলাম। এর মাঝে ইঞ্জিনিয়ারকে জানিয়ে দিয়েছি যে মেহেরপুর এসে পৌঁছে গিয়েছি। উনি বললেন রিকশা ধরে ডাক্তার বাড়ি চলে আসতে। সাথে আরো কিছু বিস্তারিত ছিলো ঠিকানার সেটা ভুলে গিয়েছিলাম। যাই হোক মনে আছে ডাক্তার বাড়ি, সেই হিসাবে একটা রিকশা থামিয়ে বললাম ভাই ডাক্তার বাড়ি যাব। ঠিক চিনলেন না। এক পথচারীকে থামালাম। জিজ্ঞাসা করলাম। উনিও কিছুটা দ্বিধান্বিত। আরো একটি তথ্য যোগ করলাম, “ভাই ডাক্তার সাহেবের মেয়ের আজকে বিয়ে।” ফিলিপ্স বাতির মত চোখমুখ জ্বলে উঠলো। রিকশাচালককে বলে দিলেন কোথায় যেতে হবে। মিনিট পাঁচেকের মধ্যে এসে পড়লাম ইঞ্জিনিয়ারের বিবাহের সাজে সজ্জিত বাড়িতে।
(দ্বিতীয় পর্বে সমাপ্তি, একটু দৌঁড়ের উপর আছি)
বাদ দিয়ে দ্রুত ২য় পর্ব চালান করো বাছা... অনেক দিন পড়ে এসেছি...এভাবে ঝুলিয়ে রেখোনা...লোভ সামলাতে পারছিনা... (সম্পাদিত)
ওয়েলকাম ব্যাক স্যার,অরে পাঙ্গান............... 😀
::salute:: ভাই একটু অপেক্ষা করেন। আসলেই দৌঁড়ের উপর আছি। অর্ধেক লিখে রেখে দিয়েছি!
\\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\
অপেক্ষায় থাকলাম।
চ্যারিটি বিগিনস এট হোম
:clap: :clap: :clap:
মোকা,আর দিস না ধোঁকা
মকুদা, এক্সিডেন্টের লেখাগুলাতেই কেম্নে কেম্নে জানি আপনার রসবোধের পরিচয় বেশি পাওয়া যায় ( আগের এক্সিডেন্টের লেখাটাও সিরাম 😀 )
অফটপিক ঃ এত্ত প্রশংসা কই যে রাখুম 😀
ব্যাংকে ফিক্সড ডেপোজিট করেন!!! :goragori:
\\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\
বোজো ~x(