গত ২৬ ফেব্রুয়ারী ছিল আমার আইনজ়ীবি হবার পরীক্ষার প্রথম ধাপ, মানে লিখিত পরীক্ষা। (যারা এখন জানেন না তাদের জ্ঞ্যাতার্থে আবার বলছি, আমি কিন্তু সোজা বাংলায়……উকিল হতে যাচ্ছি…মানে ধর আর :duel: আর কেউ আছেন ভাই? একটু জানান দিয়েন)
তো যা বলছিলাম, পরীক্ষার প্রস্তুতি, কলেজ থেকে পাওয়া বাজে অভ্যাস মত, এক মাস আগে শুরু না করে শুরু করলাম এক সপ্তাহ আগে। পড়তে বসে বুঝতে পারলাম, আমার মাথার প্রসেসর আর কলেজের মত দৌড়ায় না।সত্যি কথা বলতে কলেজেও যে খুব একটা দৌড়াত সেটাও বলা উচিৎ না। যাই হোক মোটামুটি আগের বছরের প্রশ্নপত্র, বিভিন্ন ল’কলেজের সাজেশন আগে পিছে করে এ যাত্রায় বেচে যাবার একটা শর্টকাট তড়িকা বের করে বাজিটা ধরেই ফেললাম নিজের সাথে। পরীক্ষার কেন্দ্র ছিল সরকারী বিজ্ঞান কলেজ, তেজগাঁও। খুব একটা চিন্তা হচ্ছিল না। শুনেছি দু-একবার এই পরীক্ষায় কমবেশী অনেকেই হোচট খায়। আমিও নাহয় খাব একটা। কলেজে ঢোকার বেশ আগে থেকেই দেখছি পরীক্ষার্থীদের – সমবয়সী, মধ্যবয়সী, অতিশীপর…(বেশী বলে ফেললাম)। যাই হোক এই একটি পেশায় বিভিন্ন বয়সের মানুষের একইসাথে আনাগোনা স্বাভাবিক। নিজের রুমটা বের করে ঢুকতেই বুঝলাম আমার দিকে অনেকেই তাকিয়ে আছে। আমার চেহারা নিঃসন্দেহে এত চমৎকার না আবার কুৎসিত বলতেও আমি নারাজ। য়াসল কারণটা হল ওই রুমে সবচেয়ে চ্যাংড়া পরীক্ষার্থী হলাম আমি, তাই স্বভাবতই সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি।
পরীক্ষার খাতা দেয়া মাত্র অস্বস্তি লাগা শুরু হল। ৪০ পাতার লিগ্যাল সাইজ এর একটা খাতা। একটু বাতাস করলাম ওইটা দিয়ে। হলের পরীক্ষক এমন একটা হাসি দিলেন যে “চাঁন্দু…সবে তো শুরু…!!!” প্রশ্নপত্র দেয়া হল, পড়লাম এবং বুঝতে পারলাম বাজিতে জিতে গিয়েছি। ৬টা বিষয়, প্রতি বিষয় হতে ৩টি থেকে ১টি করে মোট ৬টি প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। সময় ৪ ঘন্টা। আমি প্রত্যেক বিষয় থেকে ঠিক একটি প্রশ্নের উত্তর খুব ভাল করে জানি। মনের আনন্দে লেখা শুরু করলাম।
একঘন্টা তখনো শেষ হয়নি শুনি পেছন থেকে কেউ একজন বলছেন যে “নাহ, আবার আসা লাগবে…” দু-ঘন্টা কমসে বসে থাকতে হবে। শেষ হবার পরই দেখলাম হল মোটামুটি খালি হয়ে গেল। মানে এদের সবারই কমবেশী “আবার আসা লাগবে”। খারাপ লাগল উনাদের দেখে। আমার পাশের ভদ্রলোক বলছিলেন সংসার, চাকরী সব মিলিয়ে বলেয় পারা যায় না। হতে পারে আবার নাও হতে পারে। উনি নিজেও দেখলাম আড়াই ঘন্টার মাথায় রণে ভংগ দিলেন। এরমাঝে দেখি পেছনের সারি থেকে পরীক্ষক মধ্যবয়স্ক এক পরীক্ষার্থীকে নকল সহ হাতেনাতে ধরে ফেলেছেন। বেচারা পরীক্ষকের বয়স আমার থেকে কিছু বেশী হবে আর কি। কিছু বলল না শুরু নকলগুলো ‘সংগ্রহ’ করে ছেড়ে দিল। অবাক হলাম। পরে আশেপাশে তাকিয়ে দেখি মোটামুটি সবাই লুকিয়ে/দেখিয়ে/ফ্রি-স্ট্যাইলে ব্যবহার করে যাচ্ছে যার যার সাথে আনা রসদ।
শেষ ঘন্টার শুরুতে গেলাম টয়লেটে। সরকারী কলেজের টয়লেট চিন্তা করে মানসিক ও শারীরিক প্রস্তুতি নিয়ে টয়লেটে ঢুকতেই হোচট খেলাম। পুরো টয়লেট সাদা মানে সাদা কাগজ মানে ছোট ছোট করে লেখা চিরকুটের মত কাগজ দিয়ে ভরতি। নকল দিয়ে টয়লেট ভরে ফেলেছে! কি আর করা ওর উপর দিয়ে মাড়িয়ে গিয়ে প্যান এর কাছে দাড়াতেই দ্বিতীয় ধাক্কা। প্যান এ হিসু করার যায়গা নেই পুরোটা নকল দিয়ে ভরে আছে। একি মুসিবত!!! তৃতীয় প্যানের অবস্থা কিছুটা ভাল। তাও ওখানেও নকলের উপরেই প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিয়ে ফেরত আসতে হল। চার ঘন্টা পর বের হয়ে মনে হল বিশ্বজয় করে এসেছি। কেউ বসে আছে গালে হাত দিয়ে, কেউ মাথায় হাত দিয়ে। কেউ চোখের পানি আটকাতে পারলই না শেষ পর্যন্ত আবার কেউ আমার মত “মামা চামে একটা ফাটাফাটি পরীক্ষা দিয়া আইলাম…!!” টাইপ হাসিও দিচ্ছে।
ইউনিভার্সিটির ফ্রেন্ড একজন পরীক্ষা দিচ্ছিল আরেক হলে। দেখা হল। জিজ্ঞাসা করলাম কেমন হল। উত্তরঃ ১৮ প্রশ্নের সবকয়টাই ভালো পারতাম। সর্বমোট ২০ মিনিটের মত আমার ব্যয় হয়েছে ‘কোনটা ছেড়ে কোনটা লিখব ঠিক করতে’।
পরীক্ষা দুজনেরই চমৎকার হয়েছে, পার্থক্য শুধু ওখানেই…!! :goragori:
B-)
B-) B-)
যাক ...... আরোও একটা উকিল ...... 😀 😀 😀 😀
B-) B-) 😀
"Never think that you’re not supposed to be there. Cause you wouldn’t be there if you wasn’t supposed to be there."
- A Concerto Is a Conversation
সাহস পাইলাম। :salute: :salute: চোথাগুলা জমা রাখেন। সামনের বার আমি ঐ পরীক্ষা দিবো। :bash: :bash:
চোথা কিন্তু ইংরেজীতে 🙂
একটু বেশী সাহস দেখায়া ফালাইসি 😕
\\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\
এই পরীক্ষায় পাশ করার টিপস হইলো : হাতের লেখা শুরু থেকেই খারাপ করতে হবে. প্রথম page এ কাটা-কাটি থাকলে আরো ভালো. প্রথম বার পরীক্ষা তে ফেল করে এই অভিজ্ঞতা লাভ করসি.
তাইলে কি ধরা খাইলাম? আমার প্রথম পৃষ্টায় তো ঝকঝকে লেখা... 🙁 মানে পুরা খাতাই। একটা কথা শুনেছি যে খাতা পাল্টাপাল্টি করে ফেলে ভালো খাতার সাথে। ওই ধরা খাইলে তো কচু গাছে ফাঁস দিব। :bash:
\\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\
চান্স আছে ধরা খাওয়ার. প্রথমবার আমার খাতা খুব ঝকঝকে ছিল. পরীক্ষা ভালই দিয়েসিলাম কিন্তু ফেল মারলাম. দ্বিতীয় বার কিসসু পড়ি নাই, পরীক্ষা খারাপ হইসিলো কিন্তু পাশ করসি.