মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজে যারা ১৯৯০ থেকে পরবর্তি বছরে পড়েছেন তাদের সবার “ফখরউদ্দিন আকন্দ” নাম দেখা মাত্র চেনার কথা। গনিতের এই শিক্ষকের নিকনেম ছিল ব্যাটসম্যান (আগের কথা ঠিক জানিনা)।
মূল কাহিনীতে যাবার আগে নামকরনের সার্থকতা একটু বর্ণনা করে যেতে চাই। লেকচার, কথা, বকা, স্যার ম্যাডামদের এই মোক্ষম অস্ত্রটিকে যে নামেই ডাকতে চান উনি সেটা ক্যাডেটদের উপর প্রয়োগ করতেন স্বতঃস্ফূর্তভাবে এবং দীর্ঘ সময় ধরে। বাধ্য হয়েই ব্যাপারটির হয়ত নাম হয়ে গিয়েছিল ব্যাটিং। কথা বলানোর জন্য বেশী কিছুনা শুধু একটি ছোট ইস্যু। ব্যাস, তাতেই হবে। তবে মজার ব্যাপার হল আজেবাজে বা অপ্রয়োজনীয় কথা তেমন বলতেন না।
৯৮’ এ কলেজ শুরু করবার পর থেকেই উনাকে দেখে আসছি। সহজে রাগতেন না তিনি। তার সব ব্যাটিং ছিল ঠান্ডা মাথায় ম্যাচ উইনিং শট। শেষের দিকে দেখতাম উনার ব্যাটিং এর উপর ভিত্তি করে কোন একজন ক্যাডেট আম্পায়ারের ভূমিকায় নেমে যেত এবং আরো কিছু ক্যাডেট স্কোরবোর্ড নিয়ে। তার উপর আমাদের ব্যাচের ফর্মমাস্টার হিসেবে উনাকে নিয়োগ দেয়া হয় ক্লাস টেন এর শেষ থেকে। আর যায় কোথায়। প্রতিদিন ফর্মক্লাস গুলো উনার প্র্যাক্টিস ম্যাচ এবং ম্যাথ ক্লাসগুলো ছিল ওয়ান ডে সিরিজ আর যেদিন ডিউটি মাস্টার সেদিনগুলোকে টেস্ট ইনিংসের মর্যাদা দেয়া হত। (নিঃসন্দেহে বলা যায় কলেজে থাকাকালীন সময়ে টি-২০ ক্রিকেট চালু হয়ে গেলে উনার এই লেকচারকে আরো নতুন আঙ্গীকে বর্ননা করার একটা সুযোগ পাওয়া যেত :D)
যাই হোক, দ্বাদশ শ্রেনীর শেষের দিকের একটি ফর্ম ক্লাস। একদিন ফর্মের সবাই গিয়ে ঠিক করলাম আজকে ফখরউদ্দিন স্যারকে কোন ব্যাটিং এর সু্যোগ দেয়া হবে না। ব্যাটিং বন্ধ করার জন্য কি কি করা আবশ্যক তার একটি চূড়ান্ত প্ল্যান আমরা বের করে ফর্ম ক্লাস শুরু হবার আগেই প্রস্তুত। যেমন ১। কেউ কোন কথা বলবে না, ২। কেউ কোন প্র্যাক্টিকাল খাতা লেখতে পারবে না, ৩। কেউ এমন কিছু করতে পারবে না যেটা স্যার এর দৃষ্টি আকর্ষন করে, ৪। কুশলাদি বিনিময় করলে ঠিকমত জবাব দিবে ইত্যাদি। প্ল্যান মাফিক সবাই প্রস্তুত হয়ে ফর্মে বসে আছি। পিনপতন নিরবতা (এডজুট্যান্ট জেনারেল কলেজ পরিদর্শনে আসলে এরকম নিরবতা থাকে)। স্যার ক্লাসে ঢোকার পর ঠিকমত সাবধান করি দিলাম (ক্লাস টুয়েল্ভের হতভাগা আজীবন ফর্ম লীডার ছিলাম আমি)। ঢুকেই উনার প্রথম প্রশ্ন “কি ব্যাপাররর…!!?” (এটা উনার কুশলাদি বিনিময়ের প্রথম নিশ্চিত প্রশ্ন)। দুই একজন উত্তর দিল “ভালো স্যার।” কিছু ফাইল পত্র রেখে উনি সামনে তাকালেন। আমি সাবধানে পেছনে তাকিয়ে দেখি একদম প্ল্যান মাফিক সব চলছে। ব্যাক বেঞ্চার সিরিজ ওয়ালি, সানিয়াত, আমিন, শাকেরীন, একদম ঠান্ডা, ভাবলেশহীন চেহারা বানিয়ে বসে আছে। কারন ছাড়া ফর্মে ঘুরে বেড়ানো, প্র্যাক্টিকাল খাতা লেখা, পাশের জনের সাথে কথা সম্পুর্নভাবে বন্ধ।স্যার ফর্মে পায়চারী শুরু করলেন। এই কোনা থেকে ওই কোনা, সামনে থেকে পেছনে। সময় যাচ্ছে মিনিট এর পর মিনিট। মাত্র ২০ মিনিট এর একটা চ্যালেঞ্জ। সবাই মোটামুটি আড়চোখে খেয়াল করছে। ধীরে ধীরে অস্থির হয়ে উঠছেন তিনি। সামনের সারিতে একজন এর সামনে দাড়ালেন। কিছু বলার জন্য মুখ খুলে আবার বন্ধ করে ফেললেন। তারপর আবার পায়চারী শুরু। এই প্রথম লোকটার প্রতি আমার একটু করুণা জাগ্রত হল। মানুষটা কথা বলতে ভালোবাসে। অনেকটা অক্সিজেনের মত। আর আজকেই তার ফর্মের এই বাজে বোলাররা কোন বল দিচ্ছে না খেলতে। ভালো বলও না। আর মাত্র মিনিটখানেক বাকি। হঠাৎ পেছন থেকে আমিন নড়েচড়ে উঠল। তাকিয়ে দেখি বাকিদের বলছে, “দোস্ত…একটা বল দেই। জাস্ট একটা। ঠিকমত সাবধান করার আগেই…”স্যার, যেরকম শীত পরেছে আমাদের পারসোনাল ড্রেস অফিসিয়ালি চালু করা উচিত। কলেজেরগুলো দিয়ে তো শীত মানছে না।” আর যায় কোথায়…”তোমরা আসলে ব্যাপারটা যা ভাবতাস আসলে কিন্তু তা না, কথা হইল গিয়া কলেজ অথরিটির কিসু পলিসি আছে…………” বেল দিয়ে দিল উনি ক্লাস থেকে বের হচ্ছেন এবং বলে যাচ্ছেন, জানালা দিয়ে ভেতরে বলতে বলতে যাচ্ছেন এবং ধীরে ধীরে ডপলার ইফেক্টের মত উনার ব্যাটিং এর তীব্রতা বাতাসে মিলিয়ে গেল।
পুনশ্চঃ সর্বশেষ ব্লগ লিখেছি গত বছরের সেপ্টেম্বরে। দীর্ঘ বিরতির পর আবার লেখা শুরু করতে পেরে আমি যারপরনাই আনন্দিত। :goragori:
😀 😀
R@fee
:)) :)) :))
:)) :)) তোরা পারতিও!
কি পাড়তো ভাইয়া?
ডিম x-(
নাহ,এই ছুট্টু ভাবীগুলারে নিয়া আর পারা যায়না।জেরিনাপ্পু তোমার পোষা বান্দরটা কই?ও কি আবার নেক্সট গেট-টুগেদারের আগে নিয়মিত হইবো? x-(
=))
ও মনে হয় পোস্ট ড্রাফট করায় ব্যাস্ত.........
এইবার সংখ্যা পুরন কইরাই যাইব :grr:
ধূর মাস্ফ্যু ভাই।আপ্নে খালি আমার বান্দরটারে এমন বলেন!! x-(
বেচারার কোপের উপর আছে,মিড চলে,আর সাথে জ্বর সর্দি,ফোনে কথা বলার সময় দেখি শুধু কাশতে থাকে। 🙁 🙁
বুধবার ঢাকা যাবো,দেখি বান্দরটার ওষুধ পত্রের কুন ব্যবস্থা করা যায় কিনা 😀
আর লেখাঝুকা নিয়া জলদি ওরে সিসিবিতে পাঠানোর সিস্টেম করতেছি,দাড়ান! 😉
নাহ, স্যাররে সালাম। লেখা ভাল হইছে। শেষ প্যারায় আইসা তো টেস্ট ম্যাচের আমেজ পাইলাম।
:)) :)) কড়া কইছেন মর্তুজাদা :boss:
ডপলার ইফেক্ট...। :)) :)) :)) :)) :))
:)) :)) :clap:
জটিল হইছে মর্তুজাদা :boss:
"Never think that you’re not supposed to be there. Cause you wouldn’t be there if you wasn’t supposed to be there."
- A Concerto Is a Conversation
মোকাব্বির , পুরা ইমোশনাল কইরা দিলা। ক্যাডেট কলেজ থেকে সত্যিকার অর্থে যে কয়জন ভালো লাগ প্রিয় মানুষের খোঁজ পেয়েছি ফখন্দ স্যার তাদের একজন। মজার ব্যাপার হলো আমার প্রথম ইডিও স্যারের হাতেই। 🙂
কিন্তু আজও কখনো ঘুমের মাঝে ক্যাডেট কলেজে ফিরে যাই যখন ক্যাডেট হিসাবে ক্লাশে ঢুকে স্যারের সেই ডায়লগ কানে ভাসে, " কি ব্যাপাআররর বয়েজ, আমার ক্লাস.... ইজি বস।"
স্যারের সাথে অনেক স্মৃতি আছে। ক্লাশে বেশি কথা বলার জন্য বেশিরভাগ স্যারের কাছে আমার বদনাম থাকলেও এই একই কারণে ফখর স্যার আমাকে লাইক করতেন।
তার অনেক গল্প মনে আসছে। আপাতত একটা শেয়ার করি।
তখন আমরা ক্লাশ নাইনে। ভলিবল কম্পিটিশনের পর পর। আমাদের সব পোলাপান ভলি খেলে। বিপদ হলো আমার মতো বারো মাস ফুটবল খেলাদের। যাহোক আমরা লাড্ডু ভলি প্লেয়াররাদের সাথে নিজেকে জায়গা করে দিই। আমাদের সাথে খেলতে আসতেন আমাদের ফরম মাস্টার মনসুর স্যার বেভারিট মুশফিক স্যার আর অবশ্যই আমদের ফখর স্যার। কোপের উপর ভলি খেলা ফখর স্যার একদিন আমাদের একজনের খেলার উপর খুব বিরক্ত হলেন। এবং তাকে একটু পর পর "হোপলেস" বলে ঝাড়তে লাগলেন। আমরা মজা পেয়ে গেলাম।
পরের দিন যখন খেলা শুরু হল স্যারের "হোপলেস" গালি শুনতে শুরু হল মিসের মহড়া। তাতেও দেখা গেল কাজ হচ্ছে না। অতপর আমরা একজনকে বল্লাম ব্যাটা হোপলেস।
কাজে দিল। একবার দুবার স্যার সহ্য করলেন। তারপ্পরে বলে উঠলেন , এই ছেলে,তুমি তো
আসলেই হোপলেস দেখি।
:boss: ঘটনাটা বলার ধরনটা খুব ভাল লাগল।
স্যারকে :salute:
চ্যারিটি বিগিনস এট হোম
😀
:)) :)) :))
কঠিন হইসে ভাই :thumbup: :thumbup:
R@fee
খুব মজা করে লিখছ মোকাব্বির! :)) :))
স্যারকে সালাম।
আমি তো লেখা পড়েই স্যারের ফ্যান হয়ে গেলাম! হা হা হা!
আমাদের বেশিরভাগ স্যার আসলে অনেক ভালো ছিলেন, রাগ করতেন, ফল্ট ধরতেন, তারপরেও তাদের মাঝে যে আরেকটা মানবিক রূপ আছে সেটা হঠাৎ হঠাৎ বের হয়ে যেতো।
খুব ভালো লাগলো পড়ে। 🙂
=)) =)) =))
আমার প্রিয় স্যার 🙂 ২০০৩ এ রিইউনিয়নে গিয়ে দেখি স্যার এখনো আগের মতোই আছেন । স্যারকে সালাম ।
সবাইকে ধন্যবাদ। সারা জীবন মনে রাখার মন একজন ব্যাক্তির ছোট্ট একটি গল্প অনেক বিশদ আকারে লিখলাম। 🙂 উনাকে নিয়ে গল্পের শেষ নাই। কোন এক ফর্মক্লাসে নিজের চাকুরী জীবনের শুরুর দিকের কাহিনী বলেছিলেন। আগে ব্যাটিং শুনে মজা পেতাম আর সেদিন থেকেই ভাব লাম...ফখরউদ্দিন স্যার...:boss: :boss: :boss: :boss:
যারা উনাকে পেয়েছেন তারা বুঝতে পারছেন আশা করি। 🙂
\\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\
ফখরউদ্দিন স্যার এর কথা কেঊ ভুলতে পারবে না।
আমি লোকটারে খুব ভালো পাইতাম যদিও বস আমারে জরিমানা করছিলেন তারপরেও উনার প্রতি আমার কোনো রাগ বা বিদ্বেষ নাই।
আর মোকাব্বির ভাই আরো লিখুন ।
:boss: :boss:
ফখরউদ্দিন স্যারকে আমরা ৯৩-৯৯ টানা ৬ বছর কলেজে পাইসি...বড়ই আনন্দদায়ক মানুষ ছিলেন...
উনার একটা ডায়ালগ সুপারহিট ছিল...তখন ডিশ এন্টেনা মাত্র নতুন আসছে, তো স্যার ক্লাসে একদিন কথাপ্রসঙ্গে বলতেসেন যে, "বুঝোই তো, এইসব চ্যানেলে কিসব জিনিস দ্যাখায়- একটু আলট্রা আলট্রা আর কি!"...আমরা এখনো প্রাপ্তবয়স্ক কনটেন্ট কে 'আলট্রা আলট্রা' বলি...
তবে উনার 'ব্যাটসম্যান' নিকনেম আমরা কলেজে থাকতে হয় নাই...কারণ তখন মাঠকাঁপানো ব্যাটিং করতেন ফায়জুল হাসান স্যার (পটুয়া কামরুল হাসানের ভাই...স্যার মনে হয় এখন জয়পুরহাট গার্লস এর প্রিন্সিপাল)...উনাকে যারা পাইসেন,তারা নির্দ্বিধায় স্বীকার করবেন যে- ফখরউদ্দিন স্যার উনার কাছে দুগ্ধপোষ্য শিশু মাত্র...
"আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস"
:shy: আমারো আল্ট্রা আল্ট্রা দেখতে মঞ্চায় :((
আমাদের ও একজন তুখোড় ব্যাটসম্যান ছিলেন।ওভার শেষ হয়ে যায়,ম্যাচ শেষ হয়ে যায় তাও সে ক্রিজ ছাড়েন না =)) =))
নামটা ব্লগেই কমু নে :-B
সাকেব ভাই ফায়জুল হাসান স্যার এর নাম কানে এসেছে কিন্তু চক্ষু কর্ণের বিবাদ ভঞ্জনের সৌভাগ্য হয় নাই... 😀
\\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\
হাসনাইনের লেখায় উনার বিখ্যাত "চাপ" ঘাড়ে পড়ার কথা শুঞ্ছি... 😕
লেখককে :hatsoff:
স্যারকে :salute:
চ্যারিটি বিগিনস এট হোম
একসময় আমাদের মর্ম মাষ্টার ছিলেন হোসনে আরা ম্যাডাম। ইতিহাস পড়াতেন। উনি ঠিক কতদিন আমাদের ফর্ম টিচার ছিলেন মনে নেই। তবে উনার আদরের ঠেলায় আমারা বেশ যন্ত্রনায় ছিলাম। তবে উনি যেদিন কলেজ থেকে বদলী হয়ে আমাদের ফর্ম থেলে বিদায় নিচ্ছিলেন, সবার বেশ মন খারাপ হয়েছিল। ম্যাডামের আদর মাখা বকাগুলো খুব মিস করতাম। মনে হয় এখনো মিস করি সেই আদরের বকাগুলো।
চ্যারিটি বিগিনস এট হোম
জন্যঃ মর্ম
পড়ুনঃ ফর্ম
চ্যারিটি বিগিনস এট হোম
আমাদের হাসান স্যর মোটিভেশনের নামে ব্যাটিং চালাত। উনি হাউস মাস্টার ছিলেন। হাউস অফিসে দাড়িয়ে থাকতে থাকতে পা ব্যথ্যা হয়ে যেত, কিন্তু মুক্তি মিলত না। উনি মানুষ ভাল ছিলেন, উপদেশ দিতে ভালবাসতেন।। এক কথা বারবার, যাবতীয় ফল্টে পুরা ক্লাসকে হাউস অফিসে ডেকে নিয়ে একই বক্তৃতা বারবার ....
মজার ব্যাপার, এই উপদেশগুলা এখন বুঝি, মিস করি।
মোকািব্বর ভাই, Sorry অামরা sir কে চিনিনা।Bt inshallah akhn theke cinbe..........Same type teacher Mannan sir......Any 1 knew him?????
চলো বহুদুর.........
এ এই ফখর উদ্দিন স্যার এখন কুমিল্লায় আমাদের ফর্ম মাস্টার (০৫-১১) মজার কথা হচ্ছে উনার ব্যাটিং এখনও চলে...আর আমরা তার বলার 😉 কিন্তু স্যার সেই সেভেন থেকে আমাদের জন্য অনেক করেছেন তার কথা কখনই ভুলব না। অসাধারন একজন ব্যাক্তি তিনি। :boss: :boss: :boss:
স্যারদের মধ্যে তো আর ভালো ব্যাটসম্যানের অভাব নাই। রেজাউল করিম স্যার তো সেই রকম ব্যাটসম্যান। ফখর স্যারকেও পাইছি ৩ বছর। স্যার যেইদিন প্রথম ডিউটি মাস্টার ছিলেন সেইদিন ই আমরা (তিতাস হাউস) ক্লাস ১২ এর ভাইয়াদের সাথে এক বড়সড় বিদ্রোহ করে বসলাম। আমরা তখন ক্লাস নাইনএ। হাউস প্রিফেক্ট মোতাহার ভাইএর ১ টা কমান্ড না শোনাতে তিনি আমাদের ডাইনিং হল এ হাত রাখার পারমিশন তুলে নিলেন। আমি আর আরাফাত তখন টেবিলে হাত রেখে দিব্যি খেয়ে ফেলছি। পরে এসে শুনি আমাদের হাউসের আর সবাই হাত তুলে নিয়েছে কিন্তু খাওয়া বয়কট করছে। এসব দেখে তো স্যারের মাথা পুরাই খারাপ। প্রিফেক্টদের অনেক ঝাড়ির পর স্যার শুরু করলেন এইভাবে "when i was in mirzapur cadet college.........."। এরপর থেকে পরবর্তী ১ বছর আমরা মির্জাপুর সম্পর্কে মোটামুটি ভাবে বিশেষজ্ঞ হয়ে গেছি।
তবে স্যার লোক অতীব ভালো ছিলেন।
ম্যাথ বইতে কিছু উপপাদ্য সল্ভ করা থাকে না,থাকে হিন্টস(বাংলায় বলে ইংগিত);আমরা আবার নিজেরা 'বিশেষ' আলোচনার সময়(আল্ট্রা আল্ট্রা আরকি) 'ওইসব কাজ'কে বলতাম ইংগিত/চিংগিত ইত্যাদি।স্যারের ক্লাসে বার বার আমরা প্রশ্ন করতামঃ স্যার,ঐ ইংগিতটা বুঝতে পারছি না।স্যার শুরু করতোঃইংগিত দেখে তো তোমরা কিছুই বোঝোনা,বুঝবা কেমনে?বোঝার আগেই তো ছুটিতে গিয়া ম্যাথ মুখস্ত কইরা আসো,খালি নাম্বারের পিছনে ছুট তোমরা,বেসিক ঠিক নাই ইত্যাদি ইত্যাদি...ব্যস ব্যাটিং শুরু।একদল হাসি শুরু করতো আর কেউ কেউ সাথে সাথে ক্যালকুলেটর বের করে রান যোগ করা শুরু করলে ব্যাটিংএ তখন ভিন্ন মাত্রা আসতো,যেমন সামান্য হিসাব নিকাশেও তোমরা ক্যালকুলেটর বের কর,উপপাদ্য ক্লাসে কেন এটা লাগবে ইত্যাদি ইত্যাদি।প্রতিটা ক্লাসে তাঁর মিনিমাম একটা হাফ সেণ্চুরি থাকতই।ক্লাস চলাকালীন উল্টা ঘুরলে আমরা চার/ছয় সিগনাল দিতাম।ক্লাস শেষে চলে যাবার পর আমরা হালকা হাত তালি দিতাম,স্যারের পক্ষ থেকে ব্যাট(খাতা/কলম) উঁচু করতাম 🙂
মোকা,ফরম লীডর হইয়া এত বড় ভুল করলি?তার নাম ছিল ফখরুদ্দিন 'আখন্দ'।অবশ্য মনে হয় 'ক' এর বদলে 'খ' হবে এই ইনিংসটা উনি আমাদের ফরমে খেলছিল