”মানুষের মত এত অমানুষ জানোয়ার এই পৃথিবীতে নেই!”
সতর্কীকরণঃ নিচের লেখাটি নিজ দায়িত্বে পড়বেন। দুর্বল মনের অধিকারী হলে না পড়াই ভালো।
—————————
আজ একটি ডকুমেন্টারির ব্যাপারে জানতে পারলাম। নাম ‘সারায়েভো সাফারি’ (Sarajevo Safari)। এ বছরের আল-জাজিরা বলকান ডকুমেন্টারি ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে মুক্তি পাবে। ডকুটির টেকনিক্যাল তথ্যঃ
Genre: feature documentary film
Duration: 75 min
Year: 2022
Screenplay: Miran Zupanič
Director: Miran Zupanič
Featuring: Stana Ćišić, Samir Ćišić, Faruk Šabanović, Edin Subašić
Cameramen: Božo Zadravec, Maksimiljan Sušnik, Miran Zupanič
Editors: Jaka Kovačič, Miran Zupanič
Composer: Tilen Slakan
Sound Designer: Boštjan Kačičnik
Producers: Franci Zajc, Boštjan Ikovic
এটি কোন ডার্ক সাইকোলজিক্যাল ফিকশন নয়। একেবারে সত্য কাহিনী অবলম্বনে নির্মিত। ঘটনার সময়কাল ১৯৯২ থেকে ১৯৯৬। সার্বিয়ানরা যখন সারায়েভো অবরুদ্ধ করে রেখেছিল। এই সময়ে অসহায় বসনিয়ার জনগণের উপর অকথ্য, অকল্পনীয় অত্যাচার, নির্যাতন, খুন, ধর্ষণ, গণহত্যার অনেক রোমহর্ষক কাহিনী আমরা পরবর্তীতে জানতে পেরেছি। কিন্তু সম্প্রতি আরেকটি তথ্য পাওয়া গেছে যা যে কোন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের কলিজা কাঁপিয়ে দেবে। মানুষ হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিতেও কষ্ট হবে…
নিচের লেখাটুকু Serbia Post (English) থেকে বাংলায় ভাবানুবাদ করে তুলে ধরছি-
যারা ভেবেছিলেন দীর্ঘ চার বছর ধরে অবরুদ্ধ সারায়েভো’য় নিরীহ বসনিয়া ও হার্জেগোভিনার অধিবাসীদের উপর চালানো অকথ্য নির্যাতন, নিপীড়ণের প্রায় সকল গোপন ইতিহাস জেনে ফেলেছেন তারা নতুন পাওয়া তথ্য ও বিস্তারিত ঘটনা জেনে রীতিমত শক খাবেন!
স্লোভেনিয়ার পরিচালক ও স্ক্রিনরাইটার মিরান জুপানিচ ‘সারায়েভো সাফারি’ নামক ডকুর মাধ্যমে আমাদের সেই গল্পটি বলার চেষ্টা করেছেন। গল্পটি রীতিমত অকল্পনীয় ও পিলে চমকে দেবার মত। অবরুদ্ধ সারায়েভোর নির্মম গল্পটি যে কোন যুদ্ধের ভয়াবহতা সম্পর্কে আপনাকে নতুন করে ভাবাবে।
ডকুটির উপজীব্য মানব শিকার বা ম্যানহান্টিং। এই থিমের উপর বিভিন্ন সময়ে ডার্ক নোভেল বা গল্প রচিত হয়েছে। কিন্তু সারায়েভো সাফারি কোন বানানো গল্প নয়, একেবারে সত্য ঘটনা। সার্বিয়ার আর্মি অব দ্যা সর্পস্কা’র তত্ত্বাবধায়নে বিভিন্ন দেশের ধনী, ক্ষমতাবান মানুষ মোটা টাকার বিনিময়ে মানুষ শিকার খেলায় মেতে উঠত- নিরীহ, বেসামরিক, নিরস্ত্র মানুষ!
এই ‘অ্যাডভেঞ্চারের’ শুরুটা হত বেলগ্রেড থেকে। আল জাজিরা বলকানকে দেয়া সাক্ষাতকারে পরিচালক মিরান জুপানিচ বলেন, ‘সে সময় বেলগ্রেড পর্যন্ত বিদেশী দেশের সাথে বিমানপথে যোগাযোগ ছিল। এরপর চলাচল করতে হত যুগোস্লাভিয়ান আর্মির মাধ্যমে। এক সোর্স জানিয়েছে যুগোস্লাভ আর্মি হেলিকপ্টারে করে শিকারিদেরকে পালে শহর পর্যন্ত নিয়ে যেত। আরেক সোর্স মারফত জানতে পেরেছি তাদেরকে সড়ক পথেও নেয়া হত। আসলে পদমর্যাদা, ক্ষমতা, টাকা পয়সার উপর ভিত্তি করে নির্ধারণ করা হত কে কিভাবে সারায়েভো পর্যন্ত যাতায়াত করবে।’
⚫️সারায়েভো সাফারি কী?
– এটি ছিল এক ধরণের অবিশ্বাস্য ও অকল্পনীয় শিকার উৎসব। মানুষ শিকার! মোটা টাকা ফি প্রদান করে বিভিন্ন দেশের ধনী লোকজন অবরুদ্ধ সারায়েভোর নিরীহ, বেসামরিক মানুষ শিকার করত। শিকারের কাজে ব্যবহার করা হত শক্তিশালী স্নাইপার রাইফেল। ফলে, সার্বিয়ার দখলকৃত এলাকা থেকেই তারা হত্যাযজ্ঞ পরিচালনা করতে পারত।
⚫️ আপনার জানা মতে মোট কতজন এই শিকারের সাথে যুক্ত ছিল?
-আসলে এই ঘটনা অত্যন্ত গোপনীয় ছিল এবং এখনও নানাভাবে বিভিন্ন মহল ধামাচাপা দেয়ায় ব্যস্ত। আমরা যতটা সম্ভব আলোকপাত করার চেষ্টা করেছি কিন্তু তারপরও কিছু হলফ করে বলা মুশকিল। কেননা, আমি নিজেও পুরো ঘটনা জানতে পারি নি। তবে, শিকারের আয়োজন, শিকারিদের যাতায়াত ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা-প্রভৃতি চিন্তা করলে বোঝা যায় বহু সংখ্যক লোক এর সাথে যুক্ত ছিল।
⚫️এই ঘটনার কথা প্রথম কবে জানতে পারলেন?
– আমার প্রযোজক ফানসি সেইৎজ এর কাছ থেকে এই বিষয়ে জানতে পারি ২০১৯ সালের দিকে। আমি তো প্রথমে বিশ্বাসই করতে পারি নি! আমাদের সম্পর্ক অনেক পুরনো। ১৯৯৩ সালে ফানসি ও ক্যামেরাম্যান বোজো জাদরাভেচকে নিয়ে বসনিয়ার ভিডিও বানানো শুরু করি। আমাদের প্রথম ডকুর নাম ছিল Eyes of Bosnia. সম্ভবত এটি ছিল একমাত্র স্লোভেনিয়ান ডকু যা যুদ্ধচলাকালীন খোদ বসনিয়ায় নির্মিত। শুধু তাই নয়, এরপর ১৯৯৩ এর শেষ হতে ১৯৯৪ শুরু পর্যন্ত ওরা আরও প্রচুর ভিডিও, তথ্য, উপাত্ত সংগ্রহ করে।
সত্যি বলতে এই ডকুর পেছনে মূল কারিগর ফানসি’ই। সে-ই বহুদিন ধরে, বহু শ্রম ব্যয় করে সারায়েভো সাফারি সম্পর্কে মুখ খোলার মত ভুক্তভোগীদের খুঁজে বের করেছে। আমাদের দুর্ভাগ্য এই যে, কিছু মানুষ শুরুতে রাজী হলেও শেষ পর্যন্ত ক্যামেরার সামনে আসতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। ঘটনার পর ৩০ বছরেরও বেশি সময় অতিবাহিত হলেও তারা এখনও এই ব্যাপারে কথা বলতে ভয় পায়।
⚫️ এই শিকার অভিযান আয়োজনের ব্যাপারে পালে শহরের কর্তৃপক্ষ কতটুকু জড়িতে ছিল?
-বিভিন্ন সাক্ষ্যের ভিত্তিকে জানা যায় আরএস (RS) আর্মি এবং যুগোস্লাভ আর্মির কিছু সদস্য এই সাফারি আয়োজনে হোতা ছিল। সম্ভবত তারা বেশ উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ছিল কিংবা হতে পারে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষমতাও তাদের ছিল। আমি নিশ্চিতভাবে বলতে পারব না। আসলে সুনির্দিষ্টভাবে কাউকে চিহ্নিত করা আমাদের লক্ষ্য ছিল না। সেটা হলে আমরা নিশ্চিতভাবে কারও কাছ থেকে কোন প্রকার সাহায্য বা তথ্য পেতাম না।
আমাদের মূল লক্ষ্য ঘটনাটি জনসাধারণের সামনে তুলে ধরা, তাদের জানানো। এরপর যাদের উৎসাহ ও সামর্থ্য আছে তারা নিজেরাই ঘটনার বিস্তারিত অনুসন্ধান করে বের করতে পারবে। অবশ্য, আগে থেকেই জানিয়ে রাখি এই বিষয়ে যে কোন প্রকৃত ও সঠিক তথ্য পাওয়া অত্যন্ত কঠিন।
⚫️শিকারিগণ কোন দেশের নাগরিক ছিল?
-একজনের কাছে জেনেছি তারা আমেরিকা, কানাডা এবং রাশিয়ার ছিল। আরেকজনের বলেছে সে ইতালির নাগরিক দেখেছে। যে দেশেরই হোক-তারা অত্যন্ত ক্ষমতাবান ও ধনী লোক ছিল এবং মনস্তাত্ত্বিকভাবে সুনির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্যধারী ছিল।
⚫️ওদের মধ্যে যুগোস্লাভিয়ার নাগরিক ছিল কি?
-এমন কোন তথ্য কেউ নিশ্চিতভাবে জানাতে পারে নি।
⚫️পারাচিন নামক এক স্বেচ্ছাসেবী কর্মীর সাক্ষ্য থেকে জানা যায় শিকারিগণ পুরোদস্তুর শিকারের পোশাক ও সজ্জায় থাকত। আপনি যে মনস্তাত্ত্বিকভাবে সুনির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্যর কথা বললেন, সেটা কেমন ছিল- ধনী, রাজনৈতিক মদদপুষ্ট, সাইকোপ্যাথ, অ্যাডভেঞ্চারার?
-আমরা সিনেমায় কোন প্রকার উত্তর দেয়ার চেয়ে প্রশ্ন করেছি বেশি। পৃথিবী নামক আমাদের গ্রহে এমন অনেক মানুষ আছে যারা বন্দুকের সামনে যেই আসুক- অপরিচিত নারী, পুরুষ, মা এমন কী শিশুকেও গুলি করতে দ্বিধা করবে না। কিন্তু তাদের ভেতরে এমন কী আছে যা তাদেরকে অমন অভাবনীয় কাজে প্রলুব্ধ করে? এটা করে তারা কী আনন্দ পায়? তাদের কী এমন ক্ষমতা ছিল যে লোকজন তাদের মনোরঞ্জনের জন্য এই ধরনের সাফারির সকল প্রকার আয়োজন করত? তারা কোথা হতে আসত? কোথায় ফিরে যেত?
এমন হাজারো প্রশ্ন আছে যার উত্তর আমি নিজেও জানি না। শুধু তাই নয়, বিভিন্ন দেশের গোয়েন্দা সংস্থা এই ব্যাপারে জানার পরও কেন তারা এসব অমানবিক ও পাশবিক আয়োজন বন্ধ করে এগিয়ে আসে নি? কোন আন্তর্জাতিক সংস্থা কেন হস্তক্ষেপ করে নি? আমার কাছে এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন।
⚫️ওরা কি এই শিকারের জন্য টাকা দিত এবং আপনার কি ধারণা আছে সেটার পরিমাণ কেমন হত? বলতে চাইছি মানুষ শিকারের এই খেলায় অংশ নিতে কেমন ব্যয় হত?
-হ্যাঁ, ঐ সব বিদেশি লোকদের প্রচুর অর্থ ব্যয় করতে হত। তবে, পরিমাণের ব্যাপারে আমি নির্দিষ্ট কোন তথ্য পাই নি। এক সাক্ষীর কাছে জানতে পেরেছি বাচ্চাদের মারলে ফি’র পরিমাণ বেড়ে যেত। সেই একই লোক আরও জানিয়েছে যে বেশিরভাগ সময় গুলি করা হত গর্বভিকা এলাকা হতে।
সবশেষে আমি আরেকটি কথা বলতে চাই-এই জীবনে কম সিনেমা তৈরি করি নি এবং সেটা করতে গিয়ে অনেক অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছি। কিন্তু এটার মত অন্ধকারময়, পৈশাচিক, নির্মম কিছু ছিল না। এর চেয়ে খারাপ কিছু হতে পারে না। তবে, এত কিছুর পরও আমি সিনেমাটি তৈরি করেছি এটা ভেবে যে মানুষের এই অশুভ ও মন্দ দিকটি সম্পর্কে সবার জানা দরকার। খারাপকে জানার মাধ্যমেই সেটাকে প্রতিহত করা সম্ভব। তবে, কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলার মত ব্যাপার নয়। শুধু ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগত শুভ বোধের মাধ্যমেই এই অশুভকে দূর করা সম্ভব।
ডকুর ট্রেইলারঃ
দেখার সাহস পেলাম না।
পুরাদস্তুর বাঙ্গাল
খুবই স্বাভাবিক ভাই। 🙁
ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ