বাবা যখন বাক্স থেকে বের করলেন সেই মুহূর্তেই আমি আর আমার ছোট ভাই ঠিক করেছিলাম-একবার পড়তে পারলে হয়, এই জিনিস আর গা থেকে খুলছি না!
বাবা যখন বাক্স থেকে বের করলেন সেই মুহূর্তেই আমি আর আমার ভাই ঠিক করেছিলাম-একবার পড়তে পারলে হয়, এই জিনিস আর গা থেকে খুলছি না!
অবশ্য, বাক্সটা যেদিন আমাদের সুইজারল্যান্ডের বাড়ির ঠিকানায় পৌঁছল সেদিন কিছু বুঝতে পারি নি। আমরা জানতামও না ভেতরে কী আছে। শুধু উপরে ক্রোয়েশিয়ার একটি রিটার্ন এড্রেস লেখা ছিল। জায়গাটাকে আমাদের বাড়ি বলে চিনতাম, যদিও তখনও আমি বা আমার বড় ভাই কেউই নিজের চোখে দেখি নি।
বাড়িতে আমরা সবসময় ক্রোয়াট ভাষাতে কথা বলতাম। সুইজারল্যান্ডের যে শহরে থাকতাম সেখানেও প্রচুর ক্রোয়েশিয়ান বসবাস করত। কিন্তু তারপরও ক্রোয়েশিয়া আমার কাছে অনেক দূরের কিছু মনে হত। বিরূপ পরিস্থিতি আঁচ করে ১৯৯১ সালে যুদ্ধ শুরু হবার আগেই আমার বাবা-মা সেখান থেকে পালিয়ে এসেছেন। এরপর আর কখনও সেখানে যাওয়া হয় নি। আমার বড় ভাই দেয়্যান এবং আমি, আমরা দুজনই সুইজারল্যান্ডে জন্মেছি। আমাদের চেনা ক্রোয়েশিয়া শুধুমাত্র টিভির অনুষ্ঠান কিংবা বাবা-মা’র পুরনো ছবির মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল।
আর মাঝে মাঝে টেলিফোনে যখন বড়রা ক্রোয়েশিয়া নিয়ে কথা বলত তখন কানে যা আসত। ব্যাস।
সে সময় আমরা এত ছোট ছিলাম যে বলকান এলাকায় কী চলছে তা বোঝার সাধ্য আমাদের ছিল না। স্বাভাবিকভাবেই বাবা-মা’ও কখনও যুদ্ধ নিয়ে আমাদের সামনে কথা বলতেন না। তবে, আমার মনে আছে মাঝে মাঝে ফোনে কথা বলার সময় তাদেরকে কাঁদতে দেখতাম। পুরো ব্যাপারটি আমার কাছে কেমন জানি লাগত…আসলে ঠিক বোঝাতে পারব না, অনেকটা দুঃস্বপ্নের মত বলা যেতে পারে। আমরা আসলে ভাগ্যবান ছিলাম যে আমাদের ওসব নিজের চোখে দেখতে হয় নি। কিন্তু আমার বাবা-মা চাইলেও দূরে থাকতে পারেন নি। পারবেন কী করে? তাঁদের বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন বেশিরভাগই তো ক্রোয়েশিয়াতেই ছিল। ভয়ঙ্কর যুদ্ধে তাঁরা অনেক প্রিয়জনকে হারিয়েছেন।
এরপর একদিন হঠাৎ, আমার বয়স তখন হয়ত চার বা পাঁচ, এক টিভি রিপোর্টে আমি প্রথমবারের মত সেই যুদ্ধের ছবি এবং ভিডিও দেখতে পেলাম। প্রথমবারের মত যুদ্ধের ভয়াবহতা দেখে আমি বিশ্বাসই করতে পারি নি-এগুলো কি বাস্তব ছিল? এটা কিভাবে সম্ভব?
স্বাধীনতা ঘোষণা করার আগেই ক্রোয়েশিয়ার জাতীয় দল ম্যাচ খেলেছিল। এ থেকেই বোঝা যায় ফুটবল আমাদের জাতীয় জীবনে কত গুরুত্বপূর্ণ। আমার মনে হয় পৃথিবীর বেশিরভাগ দেশের জন্যই এটা কমবেশি প্রযোজ্য-তা সে যে অঞ্চলেই হোক না কেন! ফলে, বাবা যখন ছুরি দিয়ে বাক্স কেটে ক্রোয়েশিয়ার জাতীয় দলের জার্সি বের করলেন…তখনকার ছোট্ট আমি এবং আমার ভাই এর জন্য ওটা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা ছিল। সেদিনই প্রথম অনুধাবন করলাম যে আমরাও ক্রোয়েশিয়ার একটি অংশ!
দুই ভাই জার্সি পড়েই সে রাতে ঘুমিয়েছি। এমনকি পরদিন স্কুলেও ওটা পড়েই গিয়েছিলাম। এবং তারপরের দিনও…আমরা কেউই গা থেকে জার্সি খুলতে দিই নি। খালি বারবার মনে হচ্ছিল- ওয়াও! আমাদের কাছে ক্রোয়েশিয়ার জার্সি আছে- সাদা এবং লাল চেক জার্সি! আমরা আরও দশটি একই রকম জার্সির আবদার করেছিলাম, কেননা ঠিক করেছিলাম জীবনে আর অন্য কোন শার্ট পড়ব না! এতটাই প্রিয় হয়ে গিয়েছিল!
তবে, আমি নিজে যখন ফুটবল খেলা শুরু করলাম আমার গায়ে কিন্তু ক্রোয়েশিয়া নয়, আমার আরেক বাড়ি অর্থাৎ সুইজারল্যান্ডের জার্সি ছিল! সত্যি কথা বলতে কী…আমি যখন নিজেকে সুইস বলে পরিচয় দিতাম অপরিচিত লোকজন কেমন অবাক দৃষ্টিতে তাকাত। ‘ইভান রাকিটিচ? সুইস?’ অথচ, আমার জন্ম, বেড়ে ওঠা, স্কুল, বন্ধু বান্ধব…সবই ছিল সুইজারল্যান্ড! ফলে, বয়সভিত্তিক খেলা শুরুর পর আমি গর্বের সাথেই সুইজারল্যান্ডের জার্সি পড়ে খেলতাম।
কিন্তু আমার বুকের বিশাল এক অংশ জুড়ে ছিল শুধুই ক্রোয়েশিয়া।
যুদ্ধ শেষ হবার কয়েক বছর পর আমরা সপরিবারে ক্রোয়েশিয়া গিয়েছিলাম। যুদ্ধ শেষ হলেও যুদ্ধ নিয়ে কেউই কথা বলতে চাইত না। সবার মনোভাব ছিল- যত তাড়াতাড়ি ওসব ভোলা যায়, ততই ভাল। সবাই দুঃসহ স্মৃতিকে চিরতরে চাপা দিতে চাচ্ছিল…
মজার ব্যাপার হচ্ছে ক্রোয়েশিয়া গিয়েও আমার মনে হচ্ছিল আমি যেন সুইজারল্যান্ডের ছোট্ট শহর মোহলিন-এ ই আছি! কারণ আগেই বলেছি, আমাদের শহরে প্রচুর ক্রোয়াট বসবাস করত। আশপাশে প্রচুর ক্রোয়েশিয়ান রেস্টুরেন্ট এবং অন্যান্য দোকান-পাট ছিল। ১৯৯৮ সালে ক্রোয়েশিয়া প্রথমবারের মত বিশ্বকাপ ফুটবলে অংশ নেয়ার পর বেশিরভাগ বাড়ি, দোকান, রেস্টুরেন্ট ক্রোয়েশিয়ান জাতীয় পতাকা দিয়ে ছেয়ে যায়! খুশিতে সবাই যেন আত্মহারা হয়ে গিয়েছিল!
১৯৯৮ সালের ফুটবল বিশ্বকাপ আমরা সবাই সুইজারল্যান্ডের বাড়িতে বসেই দেখেছিলাম। প্রতিদিন জার্সি পড়ে টিভির সামনে বসতাম। খেলার মধ্যে কোন কথা বলার অনুমতি ছিল না। কথা বলতে গেলেই বাবা চুপ করিয়ে দিতেন। ‘যত কথা আছে খেলার শেষে হবে, এখন চুপ করে খেলা দেখো!’
আপনি যে কোন ক্রোয়েশিয়ানকে সেই আসরের কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করুন-সবাই গড়গড় করে বিস্তারিত বর্ণনা দিতে পারবে। আর কেনই বা নয়? ’৯২ সালে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি পাবার মাত্র ছয় বছরের মধ্যেই বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল! তাও আবার জার্মানির বিরুদ্ধে! আমার বাবা যেন খুশিতে পাগল হয়ে গিয়েছিলেন! এখানে একটি কথা বলে রাখি- আমি এখন পর্যন্ত আমার বাবার মত এত ফুটবল পাগল মানুষ কোথাও দেখি নি। বার্সেলোনার একজন হয়েও এরকম কথা বলছি, তারমানে বুঝুন তিনি কত বড় ফুটবলভক্ত! সুইজারল্যান্ডে যাবার পর কনস্ট্রাকশনের কাজ করলেও তরুণ বয়সে তিনি দারুণ ফুটবল খেলতেন। ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার ছিলেন…আমার মতনই (বার্সেলোনা) ৪ নম্বর জার্সি পড়ে খেলতেন!
যা বলছিলাম, জার্মানিকে হারানোর পর কী হল?!
ঠিক আন্দাজ করেছেন- বাবা যেন আকাশে উড়ছিলেন! আজ এতদিন পরে মাঝে মাঝে আমার মনে হয় আমি যেন আমাদের দুজনের হয়ে একই স্বপ্নের মধ্যে আছি। বসনিয়া থাকাকালীন বাবা দারুণ প্রতিশ্রুতিশীল ফুটবলার ছিলেন, কিন্তু যুদ্ধ সে স্বপ্ন চুরমার করে দেয়। সুইজারল্যান্ডে আসার পর আমার মাঝে নিজের স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে গেছেন। এ কারণে ছোটবেলা থেকেই আমার প্রতিটি ম্যাচে তিনি মাঠে উপস্থিত থাকতেন, যত কাজই থাকুক না কেন!
ফুটবল এবং ক্রোয়েশিয়া তাঁর স্বত্তাজুড়ে ছিল!
আমার মনে আছে যেদিন আমি সিদ্ধান্ত নিলাম -সুইজারল্যান্ডের হয়ে খেলব নাকি ক্রোয়েশিয়ার হয়ে, সেদিন সুইস কোচকে ফোন দিয়েছিলাম। বাবা পুরোটা সময় আমার ঘরে বাইরে উৎকণ্ঠার সাথে পায়চারী করছিলেন।
সত্যি কথা বলতে, একটি সময় সুইজারল্যান্ড ছাড়া অন্য কোন দেশের হয়ে খেলার কথা আমার মাথায়ও আসে নি। তখন পর্যন্ত সুইজারল্যান্ডই ছিল আমার বাড়ি, আমার দল। কিন্তু আজ থেকে প্রায় ১০ বছর আগে স্লাভেন বিলিচ এবং ক্রোয়েশিয়ান ফুটবল ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট আমার খেলা দেখতে বাসেল এসেছিলেন। খেলা শেষে তাঁদের সাথে আমার কথা হয়।
প্রথমবারের মত স্লাভেনের সাথে একই রুমে…আমি উত্তেজনায় টগবগ করে ফুটছিলাম। আমার মনোভাব ছিল ‘যাই বলুক না কেন, আমি ইতিবাচক জবাব দেব!’ কারণ, তিনি ছিলেন আমার আইডল। কিন্তু, স্লাভেন আমার উপরে কোন কিছু চাপিয়ে দেন নি। তিনি শুধু দল নিয়ে নিজের পরিকল্পনা আমার সাথে শেয়ার করলেন এবং জানালেন আমাকে দলে চান।
আমার সাথে চল, তিনি বলেছিলেন। চলো, নিজের দেশের হয়ে খেলি।
স্লাভেন সম্পর্কে কী আর বলব! আমার ফুটবল ক্যারিয়ারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মানুষ তিনি। শুধু কোচ হিসেবে নয়, একজন মানুষ হিসেবেও। তিনি অন্যদের চেয়ে একেবারেই আলাদা। পুরোপুরি স্পেশাল। তাঁর মধ্যে এমন কিছু আছে যা আপনাকে জাদুমন্ত্রের মত তাঁর হয়ে খেলতে উদ্বুদ্ধ করবে। শুধু অল্প কিছুদিনের জন্য নয়, দিনের পর দিন…সবচেয়ে বড় কথা, স্লাভেন আপনার সেরাটা বের করে আনতে পারবে। আপনার মনে হবে, ফা*, এই লোক আমার জন্য সবকিছু করতে পারে!
তবে, যত যাই হোক-সিদ্ধান্ত নেয়াটা আমার জন্য মোটেও সহজ ছিল না। এজন্য চট করে সিদ্ধান্ত না নিয়ে কিছুদিন ভাবার জন্য সময় নিলাম। ওদিকে বাসেলের সাথে আমার চুক্তি শেষ হয়ে গেছে। নতুন ক্লাব শালকে’র হয়ে খেলার জন্য জার্মানি যেতে হবে। মাঝের সময়টুকু বাসায় বসে জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য আকাশ-পাতাল ভেবে চলেছি…জাতীয় দলে খেলার সিদ্ধান্তটি জার্মানি যাওয়ার আগেই পাকা করতে চাচ্ছিলাম। কারণ আমি জানতাম-তা না হলে পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে খেলতে পারব না।
একদিন নিজের রুমে বসে আছি। তখনও বুঝতে পারছিলাম না আমার কী করা উচিত। সুইজারল্যান্ড, ক্রোয়েশিয়া, আমার পরিবার, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব…সব কিছু মিলিয়ে আমার মাথায় যেন জট পেকে যাচ্ছিল!
হঠাৎ ঠিক করলাম এত চিন্তা করে লাভ নেই। আমার মন যা চায় তা-ই করব!
আমি টেলিফোন হাতে নিয়ে ডায়াল করা শুরু করলাম। প্রথমে কল দিলাম সুইস কোচকে। কেননা, তখন পর্যন্ত বলতে গেলে আমার ক্যারিয়ার মানেই ছিল সুইজারল্যান্ডের হয়ে খেলা। ফলে, আমি কেন ক্রোয়েশিয়ার হয়ে খেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছি তা কোচকে জানানো আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছিল। আমি আসলে নিজের অবস্থান তাঁর কাছে পরিষ্কার করতে চেয়েছিলাম। কোচকে বোঝালাম যে সিদ্ধান্তটি সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে নয়, বরং ওটা ছিল ক্রোয়েশিয়ার পক্ষে।
এরপর কল দিলাম স্লাভেনকে।
-আমি রাজি। আমি তোমার সাথে আছি!
-ক্রোয়েশিয়ার সবাই তোমাকে পেয়ে দারুণ গর্ববোধ করবে। তুমি অন্য কোন কিছু নিয়ে আর ভেবো না, শুধু ফুটবল খেলাটা উপভোগ করে যাও…
কল-দুটো শেষ করতে আমার খুব বেশি সময় লাগে নি। তবে, আমি বুঝতে পারছিলাম বাবা পুরোটা সময় বাইরে পায়চারী করছেন! শেষ পর্যন্ত আমি যখন দরজা খুলে বের হলাম তিনি আমার দিকে তাকালেন। আমি কোন কিছু বলার আগেই জানালেন সিদ্ধান্ত যাই হোক কেন-তিনি পূর্ণ সমর্থন দেবেন। আমাদের দুজনের জন্যই এটা ছিল জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত…
হঠাৎ মনে হল বাবার সাথে একটু মজা করি।
-আমি ঠিক করেছি সুইজারল্যান্ডের হয়েই খেলব।
-ওহ, তাই? ওকে, গুড!
-না আ আ আ! আমি ক্রোয়েশিয়ার হয়েই খেলব!! হা হা হা…
আমি দেখতে পেলাম বাবার চোখ আর্দ্র হয়ে উঠল! তিনি কাঁদতে শুরু করলেন!
আমি যখনই ক্রোয়েশিয়ার হয়ে মাঠে নামি সেই মুহূর্তটি এবং বাবার কথা চিন্তা করি। আমি জানি বাবাও আমার মত জাতীয় দলের হয়ে খেলার স্বপ্ন দেখতেন। শুধু বাবাই নন, প্রতি ক্রোয়েশিয়ান এই স্বপ্ন দেখে। দেশের হয়ে খেলা, দেশের পতাকাকে সবার সামনে তুলের ধরার অনুভূতি…এটা আসলে ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়!
ক্রোয়েশিয়ার মানুষগুলোও অসাধারণ! ওদের মধ্যে আলাদা একটি ব্যাপার…একটি বৈশিষ্ট্য আছে। আমি যখন জাতীয় দলের হয়ে তাদের সামনে দাঁড়াই…মনে হয়, খেলা যেন আর শেষ না হয়! মনে হয়…মনে হয়…সবাইকে জড়িয়ে ধরি! মনে হয় এই মুহূর্তটি যদি চিরদিনের জন্য আটকে রাখা যেত! মনে হয় প্রতিদিন তাদের জন্য খেলে যাই…জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত…
শুনে মজা লাগতে পারে, তবে ছোটবেলায় সেই যে বাক্স থেকে জার্সি পেয়ে আমি আর না খোলার যে জিদ করেছিলাম, এত বছর পর আমি এখনও সেই অনুভূতি, সেই একই প্রেরণা অনুভব করি!
হ্যাঁ, এই জার্সি পড়ে খেলার অনেক চাপও রয়েছে। তবে, আমার মতে সেসব ইতিবাচক চাপ। নিজের দেশকে বিশ্বের দরবারে গৌরবান্বিত করতে কে না চায়?! স্লাভেন বা ডেভর সুকর ক্রোয়েশিয়া জন্য যে দারুণ দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন আপনি অবশ্যই চাইবেন সেটাকে অব্যাহত রাখতে…
আমার মনে হয় আমরা সঠিক পথেই রয়েছি। বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে গ্রীসের বিরুদ্ধে ম্যাচে আমরা সম্ভবত গত ৫/৬ বছরের সেরা খেলা উপহার দিয়েছিলাম। ম্যাচ শেষে ড্রেসিংরুমে গিয়ে সবাইকে বলেছিলাম, আমাদের উচিত হবে এভাবেই খেলে যাওয়া!
সেদিন লুকা মদ্রিচের সাথে আলাপ করছিলাম- এতদিন আমরা এভাবে খেলি নি কেন?!
আপনারা হয়ত জানেন আমার নিজের সংসারও একাধিক দেশজুড়ে বিস্তৃত! আমার স্ত্রী স্প্যানিশ এবং আমাদের দুই মেয়ে বেড়ে উঠছে বার্সেলোনায়। ঠিক আমি ছোটবেলায় যেভাবে বেড়ে উঠেছিলাম- অনেকটা সেরকমই! আমার মেয়ে-দুটোই আমার সবচেয়ে বড় ভক্ত!
তাই, বিশ্বকাপের আগে আমি একটি স্পেশাল অর্ডার করেছিলাম। সত্যি কথা বলতে কী, বাধ্য হয়েছিলাম…অর্ডারটি হাতে পাবার পর আমি সেদিন বাড়িতে একটি বাক্স নিয়ে ঢুকলাম। ওতে ছিল ক্রোয়েশিয়ার দুইটি জার্সি!
ওদের উচ্ছ্বাস ছিল দেখার মত!
ওরা জানালো এই জার্সি আর গা থেকে খুলবে না!
দেঁজা ভু!
আহ! জীবন এত সুন্দর কেন?!
-ইভান রাকিটিচ
(The Players’ Tribune অবলম্বনে)
:clap:
চমতকার হয়েছে এ ভাবানুবাদ।
দারুন জুনায়েদ।
ক্রোয়েশিয়া - এ বিশ্বকাপের যাদুকরী দল।
অনেক শুভ কামনা রইলো।
সৈয়দ সাফী