মুমিনুল হক- আরেকটি আক্ষেপের নাম??

বাংলাদেশ হারুক…
মিডল অর্ডার কলাপ্স করবে…
গো হারা হারার পর কোচ-সিলেক্টর শিক্ষা পাবে…

উপরের কথাগুলো অনলাইন বা অফলাইনে অনেকেই বলছেন। কেউ কি খেয়াল করেছেন কথাগুলোর মধ্যে কত বিশাল একটি শুভংকরের ফাঁকি রয়ে যাচ্ছে?

কী হবে যদি বাংলাদেশ জিতে যায়?
কী হবে যদি মিডল অর্ডার কলাপ্স না করে?
কী হবে যদি আমরা গো হারা না হারি?

তখন কি এটাই প্রমাণিত হবে না (আপনাদের যুক্তি অনুযায়ী) যে মুমিনুলের বাদ পড়াটা যৌক্তিক ছিল?

আসলে একটি টেস্ট বা একটি সিরিজের নয় বরং তার চেয়েও অনেক বড় একটি বিষয় এটি। কেননা, যে কোন বিচারে মুমিনুল এখন পর্যন্ত আমাদের সেরা টেস্ট ব্যাটসম্যান। ওর বয়স মাত্র ২৬। সাধারণ হিসেব অনুযায়ী আরও কমপক্ষে ৭-৮ বছর খেলতে পারার কথা। বর্তমান কোচ, নির্বাচক কতদিন থাকবেন জানি না-তবে দেশকে দেয়ার মত মুমিনুলের অনেক কিছু বাকি রয়েছে।

২।

বাংলাদেশের টেস্টের ইতিহাস মাত্র ১৭ বছরের। টেস্ট ক্রিকেটে এখনও আমরা নিজেদেরকে সেভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারি না। এ কারণে টেস্টে আমাদের সাফল্যও খুব বেশি নয়। বড় মুখ করে যা বলি বেশিরভাগই ব্যক্তিগত সাফল্য কাহিনী। যেমন, সবচেয়ে কম বয়সে অভিষেক শতক, একই ম্যাচে সেঞ্চুরি এবং হ্যাট্রিক, অভিষেক ম্যাচেই দশ নম্বরে খেলে শতক, টেস্টের এক নম্বর অলরাউন্ডার ইত্যাদি…আমাদের মত একটি টেস্ট খেলুড়ে দেশের পক্ষে মুমিনুলকে টেস্ট দল থেকে ছুঁড়ে ফেলার বিলাসিতা কি মানায়?

অথচ একটি সময় পর্যন্ত সবকিছু স্বপ্নের মত এগোচ্ছিল। টেস্টে মুমিনুলের গড় ছিল অবিশ্বাস্য! ওয়ানডেতেও ভাল খেলছিলেন। তাহলে সমস্যা হল কেন? বা সমস্যার শুরু হল কিভাবে?

এজন্য প্রথমেই ওর ওয়ানডে ক্যারিয়ার নিয়ে আলোচনা করা যাক।

ওয়ানডে’তে মুমিনুলের ইনিংস মাত্র ২৬ টি (ব্যাট করেছেন ২৪ ইনিংসে)। এই ২৬ ইনিংসেই ওর ব্যাটিং পজিশন নিয়ে রীতিমত গিনিপিগ স্টাইলে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলেছে।

১-৭ নম্বর ইনিংস খেলেছে ৬ নম্বরে
৮-২০ নম্বর ইনিংস খেলেছে ৩ নম্বরে
২১তম ইনিংস খেলেছে ৫ নম্বরে (ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর অর্থাৎ ২০১৪ সালের আগস্ট থেকে)
২২তম ইনিংস খেলেছে ৩ নম্বরে
২৩তম ইনিংস খেলেছে ৭ নম্বরে
২৪তম ইনিংস খেলেছে ৩ নম্বরে
২৫তম ইনিংস খেলেছে ৯ নম্বরে
২৬তম ইনিংস খেলেছে ৪ নম্বরে

এর পাশাপাশি ওকে দেয়া হয়েছে ‘টেস্ট স্পেশালিস্ট’ এর তকমা!
ফলাফল? ওয়ানডে দল থেকে বাদ!

এবার আসি মুমিনুলের টেস্ট ক্যারিয়ারের আলোচনায়। টেস্টে ও ব্যাটিং করেছে দুইটি পজিশনে- ৩ ও ৪ নম্বর। অভিষেক হবার পর প্রথম ১৭ ইনিংস খেলেছে ৪ নম্বরে এবং বাকি ২৩ ইনিংস খেলেছে ৩ নম্বর পজিশনে। দুই পজিশনের গড় এমন-
৩ নম্বরে ৩৬.৮৬
৪ নম্বরে ৬২.৬৪

মজার ব্যাপার (আসলে দুঃখের) হচ্ছে টেস্টে ৪ থেকে ৩ এ নামানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে সেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরেই, অর্থাৎ ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর থেকে। ঠিক যে সময়ে ওয়ানডে’তে ওর পজিশন নিয়ে মিউজিক্যাল চেয়ার খেলা শুরু হয়েছিল।

ফলাফল? ৯ টেস্ট শেষে যার গড় ছিল ৬২.৬৪, ২২ টেস্ট পর সেটা নেমে হয়েছে ৪৬.৮৯!
এবং টেস্ট থেকেও বাদ।

৩।

দলের কোচ এবং নির্বাচক বলছেন সাম্প্রতিক পারফরমেন্সের কারণেই মুমিনুল দল থেকে বাদ পড়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে কেন ওকে জোর করে ৩ নম্বরে খেলানো হল? ক্রমাগত গড় নিম্নমুখী হবার পরও ওকে কেন ৪ নম্বরে ফিরিয়ে আনা হল না? কেন ওয়ানডে ওর জায়গা নিয়ে ইঁদুর-বিড়াল খেলা হল? (কেননা ওয়ানডে’র বাজে প্রভাব টেস্টেও পড়েছে। মানুষ তো একজনই, নাকি?)

কেন গুজব ছড়ালো মুমিনুল শর্ট বল খেলতে পারে না?
কেন গুজব ছড়ালো মুমিনুল অফ স্পিন খেলতে পারে না?

সবচেয়ে বড় কথা, ওর সমস্যাগুলো (আরোপিত) কাটিয়ে ওঠার ব্যাপারে বিসিবি কী কী কাজ করেছে?
কোচ কী করেছেন?

৪।

ক্রমাগত নিম্নমুখী হবার পরও দেশের মাটিতে টেস্টে মুমিনুলের গড় এখনও ঈর্ষণীয় ৫৮.১০!
অর্থাৎ, শুধু এই একটি পরিসংখ্যান দিয়েই ও অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে সিরিজে দলে থাকা ডিজার্ভ করে, দল ঘোষণার আগে নিজেদের মধ্যে খেলা ম্যাচে রান পাবার কথা না হয় বাদই দিলাম!

তাই, সাংবাদিক সম্মেলনে নির্বাচক নান্নু যখন বলে “ওকে (মুমিনুলকে) নিয়ে আমাদের প্ল্যান আছে। আমরা অনেক আলোচনা করছি…” কেন জানি নিশ্চিন্ত হতে পারি না, বরং আরও শংকিত হয়ে পড়ি। কেননা, এখন পর্যন্ত কোন দিক দিয়ে কিংবা কারও কাছ থেকে মুমিনুল কোন প্রকার সহায়তা পায় নি। জানি না ওর সাথে সবার কীসের শত্রুতা?

সম্ভবত আমাদের দেশের হাজারো আক্ষেপের মধ্যে আরেকটি নাম যোগ হতে চলেছে- মুমিনুল হক!

৪ টি মন্তব্য : “মুমিনুল হক- আরেকটি আক্ষেপের নাম??”

  1. খায়রুল আহসান (৬৭-৭৩)

    খুব সুন্দর করে, তথ্য উপাত্ত সাজিয়ে, মুমিনুল এর বাংলাদেশ টেস্ট দল থেকে বাদ পড়ার অযৌক্তিকতা এবং অসারতা প্রমাণ করেছো। আমিও মুমিনুল এর বাদ পড়ার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাচ্ছি। সে নিঃসন্দেহে এখনও বাংলাদেশ দলের সবচেয়ে সেরা টেস্ট খেলোয়াড়।

    জবাব দিন
    • জুনায়েদ কবীর (৯৫-০১)

      ধন্যবাদ ভাই। 🙂
      প্রথম টেস্টে 'অসুস্থ' মোসাদ্দেকের বদলে মুমিনুলকে নিয়েছে। অথচ, বোর্ড আগে থেকেই ১৫ জনের দল ঘোষণা করতে পারত। শুধু শুধু বিতর্ক তৈরি করল। তাছাড়া মোসাদ্দেকের বদলী খেলোয়াড় মুমিনুল হতে পারে না। মুমিনুল টপ অর্ডার জেনুইন ব্যাটসম্যান (অবশ্য মাঝে মাঝে বলও করে...)। ওদিকে মোসাদ্দেক মিডল/লোয়ার অর্ডার ব্যাটসম্যান যে মোটামুটি ভাল বলও করে।

      মুমিনুলের ব্যাপারে কোচ, নির্বাচক, বিসিবি প্রেসিডেন্ট একেকবার একেক ব্যাখ্যা দিচ্ছে। ওর 'সমস্যা' (তাদের ভাষ্যমতে) কাটিয়ে ওঠাবার জন্য বিসিবি বা কোচ কি পরিকল্পনা করেছে সে ব্যাপারে কোন কথা নেই...মোট কথা সবাই মিলে ছেলেটার ক্যারিয়ার ধ্বংস করে দিচ্ছে... 🙁


      ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ

      জবাব দিন
  2. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    হাতুরাসিংহ আমার কাছে একটা confusion, একদিকে পারফরমেন্সের উন্নতি, অন্যদিকে স্বৈরাচারী আচরণ। আর এটা balance করার দায়িত্ব যে বোর্ডের, তারাও ব্যস্ত স্বভাবজাত অকর্মণ্যতা দেখাতে।


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।