প্রথম সাইকেল চালানোর ব্যাপারটি কেমন?
কিংবা প্রথম সাঁতার শেখা?
অথবা প্রথম গাড়ি চালানো?
সবগুলো ক্ষেত্রেই প্রথম প্রথম মনের মধ্যে কাজ করে কিছুটা শঙ্কা, কিছুটা সংকোচ, আবার একই সাথে কাজ করে নতুন কিছু করার রোমাঞ্চ, শিহরণ। শুরুতে কিছুটা বেঁধে যাওয়া, গুঁতো-ব্যথা-পানি খাওয়া, ধীরে ধীরে অভ্যস্ত হওয়া এবং সবশেষে দারুণ পটু হয়ে যাওয়া! কিন্তু এই কাজগুলোই নিজের ইচ্ছের বিরুদ্ধে করতে কেমন লাগবে? নিশ্চয়ই আনন্দদায়ক কিছু নয়।
একটি সময় ছিল যখন লে-আউট মুখস্থ করে বাংলা টাইপ করা লাগত। এছাড়াও সিডি কেনা বা অন্যের কাছ থেকে ধার নেয়া, বিরক্তিকর ইন্টারফেস… বাংলায় লেখা শেখার ব্যাপারটি ছিল শাস্তির মতন। নেহায়েত বাধ্য না হলে কেউ বাংলায় টাইপ করতে চাইত না। অনেকটা এমন ছিল যে আপনাকে জোর করে সাইকেল/গাড়ি চালানো বা সাঁতার শেখানো হচ্ছে এবং শুধু তাই নয়, হাত-পা পেছন থেকে বাঁধাও আছে!
এরপর এল অভ্র। যেন অনেকদিনের খরা শেষে বৃষ্টি এল। ছোট্ট একটি বাংলা টাইপ করার সফটওয়্যার। ফোনেটিক, দারুণ ইউজার ফ্রেন্ডলি এবং সবচেয়ে বড় কথা একেবারেই বিনামূল্যে পাওয়া গেল। অন্তর্জালে যেন বাংলা বিপ্লব ঘটে গেল। শত শত ব্লগার, লেখক, কবি, সাহিত্যিকের আত্মপ্রকাশ ঘটতে লাগল। এক পর্যায়ে ফেসবুকেও বাংলার ছোঁয়া লাগল। এছাড়া বাংলা তথ্য ভাণ্ডারের সমৃদ্ধিও দ্রুততর হয়ে উঠল। সত্যিকার অর্থেই বাংলা ভাষা হল উন্মুক্ত!
ঈর্ষান্বিত জব্বার সাহেব অভ্রকে দমাতে কি কি করলেন সেসবে আর নাই বা গেলাম। একটি সময় পর্যন্ত লোকটির উপর ভীষণ ক্ষুব্ধ ছিলাম, এখন করুণা বোধ করি। বেচারা! নিজের দীনতার কথা নিজেও বুঝতে পারে না! আমাদের কিছুই করা লাগবে না, ইতিহাসই তাকে একসময় আস্তাকুঁড়ে ছুঁড়ে দেবে। স্বঘোষিত বাংলা লেখার অগ্রদূত সবার আগেই বিস্মৃত হয়ে যাবে…
যাই হোক, আবার ফিরছি অভ্র তথা ডাঃ মেহদী হাসান, রিফাত নবী, তানবিন ইসলাম সিয়াম এবং ওমিক্রন ল্যাবের প্রসঙ্গে। বাংলা ভাষাকে সত্যিকার অর্থেই ওরা উন্মুক্ত করে দিয়েছে। (রিদমিক, মায়াবী ইত্যাদি’র অবদান অস্বীকার করছি না!) ওদেরকে আধুনিক ভাষা সৈনিক বললে এতটুকু বাড়িয়ে বলা হবে না।
সবকিছু স্বাভাবিক থাকলে অনেক আগেই অভ্র দলের একুশে পদক পাওয়া উচিত ছিল। তবে, এ কথা কে না জানে- আমাদের দেশে খুব কম জিনিসই স্বাভাবিকভাবে হয়। অভ্র একুশে পদক পাবে কি না, তা সময়ই বলে দেবে। তবে, সত্যিকারের একুশে পদক ওরা অনেক আগেই পেয়েছে- তা হল, সাধারণ মানুষের ভালবাসা এবং দোয়া। সরকারের দেয়া ঐ পদকের চেয়ে যা অনেক বেশি দামী।
ভাষার মত বাংলাদেশের সকল নাগরিক অধিকার উন্মুক্ত হোক।
১ম B-)
তীব্র সহমত।
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
শিরোনামটা আমার মনের কথা।
“Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
― Mahatma Gandhi
স্বঘোষিত বাংলা লেখার অগ্রদূত সবার আগেই বিস্মৃত হয়ে যাবে…
স্বঘোষিত শব্দটা না থাকলে কথাটা আর মানা যেতো না।
বাংলায় প্রথম কম্পিউটারে লেখার সুযোগ এনে দিয়েছিলো শহীদলিপি। যার প্রণেতা তৎকালীন বেক্সিমকোর কম্পিউটার কোম্পানীটির কর্ণধার সাইফুদ্দাহার শহীদ। যিনি ফৌজদারহাট এর ৬ষ্ঠ ব্যাচের এবংবুয়েটের প্রকৌশলী। বর্তমানে দীর্ঘ অনেক বছর যাবৎ প্রবাসী।
শহীদলিপি ছিল ফনেটিক কিবোর্ড। যা মোস্তফা জব্বারের মরিয়া বিপণন প্রচেষ্টা এবং কুটকৌশলের কাছে হার মেনে এক সময় হারিয়ে যায়, শহীদ ভাইও বিদেশ চলে যান বলে।
এতোকাল ধরে বিজয় একাই বলতে গেলে দখল করে ছিলো বিজয়ীর মঞ্চ। অভ্রকে নাজেহাল করার চেষ্টার কথা তো আমাদের সবার জানা। আর আমাদের আমলাতান্ত্রিক এবং তোষণবাজ সংস্কৃতির বদৌলতে অভ্র তার প্রাপ্য স্বীকৃতি ও সন্মাননা পাওয়ার পিথ থেকেও পিছলে যেতে থাকে।
১৯৮৭ সালে ফ্লপি ডিস্কের যুগে এপল ম্যাকিন্টশ কম্পিউটারে শহীদলিপিতেই প্রথিম বাঙলা লিখেছিলাম। তাতে অভ্রের মতোনই সচ্ছন্দ ছিলাম। বিজয়ের মতোন মুটে মজুরের কসরত করে লেখবার যুদ্ধ করতে হতো না।
সাইফ শহীদ ভাই একসময় সিসিবিতে নিয়মিত থাকতেন। এখন আর আসেন না। সবচেয়ে কষ্টের কথা হচ্ছে উনি না জানালে আমরা অনেকেই শহীদলিপি'র ইতিহাস জানতে পারতাম না। এভাবেই ক্ষমতাধরের হাতে আমাদের দেশের ইতিহাস বিকৃতি হয় এবং যোগ্য ব্যক্তির বদলে অযোগ্যরা স্বীকৃতি পেয়ে যায়... 🙁
ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ
শুধু বাংলা কেন, একটা সময়ে ইংলিশ লিখাও ছিল ঘোর অত্যাচার।
আমি প্রথম যে ওয়ার্ড প্রসেসরটা ইউজ করেছিলাম এক ৫১২ কিলোবাইট র্যাম আর ২০ মেগাবাইট হার্ডডিস্কের বিশাল পিসিতে তার নাম ছিল "ওয়ার্ডস্টার"।
টাইপ করতে বসতে হতো মেনুর এক বিশাল প্রিন্ট আউট পাশে নিয়ে।
পরে ওয়ার্ড পারফেক্ট আসায় অনেকেই খুব খুশি হলেও আমি ঐ ওয়ার্ডস্টারই চালিয়ে গেলাম এমএস ওয়ার্ড আর উইন্ডোজ ৩.১ আসার আগ পর্যন্ত।
ইংলিশ ওয়ার্ড প্রসেসিং অভিজ্ঞতাটা এতই বেদনাদায়ক ছিল যে কোনো রকমের বাংলা টাইপ করার ইচ্ছাই আর কখনো জাগে নাই।
২০১৩-তে গণজাগরণ কালে ফেবুতে ইংলিশেই পোস্ট করে যাচ্ছিলাম।
হঠাৎ কোনো এক ব্লগে উত্তর দিতে গিয়ে দেখি বাংলা ছাড়া কিছু নেয় না।
বাধ্য হয়ে অভ্র নামালাম।
বাধ্য হয়ে চাপাচাপি শুরু করলাম।
অবাক হয়ে দেখলাম, ১৪-১৫ বছর ধরে জোড় করে দূরে ঠেলে রাখা বাংলা শিখতে ১৪-১৫ দিনও লাগলো না।
এ যেন এক ম্যাজিক!!!
এই ম্যাজিশিয়ানদের প্রতি তাই আমার সীমাহীন কৃতজ্ঞতা।
এই কৃতজ্ঞতা কিন্তু কেবলই বাংলা শেখানোর জন্য না।
আসলে এই বাংলা লিখতে পারার জন্য আমার যাবতিয় স্ট্রেস দূর করার প্রধান পদ্ধতিই হয়ে দাঁড়িয়েছে অনলাইন লিখালিখি (এইটা সহ 🙂 🙂 )।
ডাঃ মেহেদি সহ পুরো অভ্র টিমের কাছে আমার সীমাহীন কৃতজ্ঞতা আসলে আমাকে অসাধারন একটা স্ট্রেস-মুক্ত হবার উপকরন হাতে তুলে ধরিয়ে দেবার জন্য।
আমার শেষ পর্যন্ত যে আয়ু হবে, আমি ধরে নেবো তাঁর অন্তত দশটা বছর আমি এই কয় তরুনের জন্য বেচে থাকবো।
অভ্র না পেলে যত যত চাপ নিজের মধ্যে অবলীলায় হজম করতে হতো তা আমার আয়ু অন্ততঃ দশ বছর কমানোর জন্য যে যথেষ্ট ছিল, এতে আমার কোনো সন্দেহ নাই.........
Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.
একদম ঠিক কথা, পারভেজ ভাই।
মনের দুঃখ-কষ্ট-আনন্দ-বেদনা চ্যানেলিং করতে পারছি শুধুমাত্র অভ্রের কারণে।
ইংরেজিতে আর যাই হোক ব্লগিং, ফেসবুকিং করে কোন মজা নেই।
ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ
:thumbup: