১
অফিসে পৌঁছে সিটে বসতে না বসতেই মোবাইলটা বেজে উঠল। মা ফোন করেছেন।
-হ্যালো, বাবা, পৌঁছে গেছিস?
-হ্যাঁ, মা। এই তো মাত্র এসে পৌঁছলাম। ট্রাফিকের কারনে একটু দেরি হয়ে গিয়েছিল…তবে অফিসের সময়ের আগেই চলে আসতে পেরেছি…
-আলহামদুলিল্লাহ্! আজ তো অনেক গরম পড়েছে…একটা স্যালাইন খেয়ে নিস। তোর কাছে আছে? না থাকলে কাউকে দিয়ে…
-আচ্ছা মা, ঠিক আছে। এখন রাখি, পরে কথা হবে…
প্রতিদিন মোটামুটি এভাবেই আমার অফিস শুরু হয়। অফিসে পৌঁছে আমি মাকে ফোন দিই, অথবা মা-ই আগে ফোন করেন। রাস্তা-ঘাটের যে অবস্থা…প্রতিদিন বাসা থেকে অফিস এবং অফিস থেকে বাসা ঠিকমতন পৌঁছানো যুদ্ধজয়ের চেয়ে কোন অংশে কম নয়! কাউকে ছোট করছি না, তবে ঢাকার মায়েরা সন্তানের জন্য যেমন চিন্তা করেন, সম্ভবতঃ পৃথিবীর অন্য কোন অঞ্চলের মায়েরা এত চিন্তা করেন না…সঠিক ভাবে বলতে গেলে- করতে হয় না!
২
দুপুরের খাবার শেষে একটু আয়েশ করে চেয়ারে দোল খাচ্ছি এমন সময় বন্ধু শিহাবের ফোন এল।
-দোস্ত, অফিসে?
-হ্যাঁ, কি অবস্থা?
-গতকাল রাতে টিপু খুব অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। ওকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
-সে কি?? কি হয়েছে? আমাকে রাতে জানাস নি কেন?
-কি হয়েছে এখনো জানি না। ডায়াগনসিস চলছে, তবে ডাক্তার বলেছে ওর সিম্পটমগুলো নাকি ভাল না…আজ সন্ধ্যায় রিপোর্ট দেবার কথা। রাত বেশি হয়েছিল বলে তোকে আর বলিনি। আজ অফিস শেষে তোর সময় হবে?
-অবশ্যই। টিপু শুধু তোর ভাই নাকি? ও আমাদের সবার ভাই…আমি অফিস শেষে তোকে ফোন করব।
-ওকে, বাই।
টিপু আমাদের চেয়ে বছর দুয়েক ছোট। আমাদের বন্ধু মহলের আড্ডাবাজি বেশির সময় শিহাবদের বাসায় হত বলে ওদের পুরো পরিবারের সাথে আমাদের খুবই আন্তরিক সম্পর্ক। খালা আমাদের সবাইকে নিজের ছেলের মতনই দেখেন। টিপু ছোট ভাই হলেও, আমাদের সার্কেলের সাথে সেই ছোটকাল থেকেই মিশে গেছে।
কি যে হল ছেলেটার!
৩
টিপুকে দেখেই আঁৎকে উঠলাম। দুই/তিন সপ্তাহ আগে শেষবার দেখেছিলাম, ভালোই তো ছিল। এখন কি চেহারা হয়েছে! শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে, চোখ তো পুরো গর্তের ভেতরে ঢুকে গেছে। আমাদের দেখে শুকনো একটা হাসি দিল।
-কেমন আছিস রে, ব্যাটা?
-এখন একটু ভাল। তবে সারা গায়ে খুব ব্যাথা আর কাশির সময় এখনো মাঝে মাঝে রক্ত আসছে…
এটুকু বলতেই ও হাঁপিয়ে গেল। আমরা আর ওকে কথা বলার সুযোগ না দিয়ে কেবিনের বাইরে চলে এলাম। খালা-খালু খুব ভেঙ্গে পড়েছেন। শিহাব প্রাণপণ চেষ্টা করছে স্বাভাবিক থাকার জন্য, কিন্তু খুব একটা সফল হচ্ছে না। ওকে সাইডে সরিয়ে নিয়ে রিপোর্ট এর খবর জানতে চাইলাম।
-টিপুর লাং এডেনোকার্সিনোমা হয়েছে। এটা একটি বিশেষ ধরনের লাং ক্যান্সার, সাধারণত নন-স্মোকারদের এ ধরনের লাং ক্যান্সার হয়…
-কোন স্টেজে আছে? চিকিৎসা শুরু করলে ঠিক হতে কতদিন লাগবে?
-কোন আশা নেই রে দোস্ত, লাস্ট স্টেজে আছে…ডাক্তার বলল খুব বেশি হলে এক-দেড় মাস…!!
-দেশের বাইরে নিয়ে গেলে…
-জিজ্ঞাসা করেছিলাম, ডাক্তার কোন ভরসা দেয় নি…বলেছে মনের স্বান্তনার জন্য নিয়ে যেতে পারেন, তবে…
আমরা সবাই ঝিম মেরে বসে রইলাম।
৪
-ব্যাপারটা কোন মতেই ফেয়ার না। যে ছেলেটা কোনদিন বিড়ি-সিগারেট খেল না, রেগুলার জিম-খেলাধুলা করে…তার হল লাং ক্যান্সার!
-হুম! আসলেই দুঃখজনক…
-সব হল কপাল। ওর ভাগ্যটাই আসলে খারাপ…
-আমি তো বলব, ওর ভাগ্যই আসলে আমাদের মধ্যে সবার চেয়ে ভাল।
-কি????
-চিন্তা কর-আমাদের মধ্যে একমাত্র কে জানে, কবে কিভাবে মারা যাবে? প্রতিদিন আমরা জানটা হাতে নিয়ে ঢাকা শহরে যেভাবে চলাচল করি এটা কি কোন স্বাভাবিক জীবন? আমাদের কখন কোথায় মরতে হবে, কোন গ্যারান্টি নেই…আমার তো মনে হয় স্বাভাবিক মৃত্যুর কনসেপ্টটাই বাংলাদেশের জন্য আলাদা হয়ে গেছে…মরণব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে মরাটাই এখন আমাদের দেশে সবচেয়ে স্বাভাবিক মৃত্যু। সেই দিক দিয়ে চিন্তা করে দেখলে টিপুই সবচেয়ে ভাগ্যবান…
-খারাপ বলিস নি। সড়ক দূর্ঘটনা, ছিনতাইকারী বা সন্ত্রাসীদের হাতে মরার চেয়ে অসুখ করে মরাও ভাল। এতে করে কবে মারা যাব একটা ধারনা থাকবে আর ডেডবডিটা অন্ততঃ কাছের মানুষরা দেখতে পাবে…
আমাদের আড্ডা চলতে থাকে, কিন্তু আমরা কোন সিদ্ধান্তে আসতে পারি না…
:thumbup:
:clap: :clap: :clap:
😀 😀 😀
ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ
এটা নিশ্চয়ই একটা নিছক গল্প। তাই নয় কি??
ঠিকই কইছস! নিছকই একটা গল্প!
ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ
হুম, পড়ার পর খুব মন খারাপ হইছিল।
:clap: :clap: :clap:
খেয়া (২০০৬-২০১১)
আপু, তুমি তো জন এব্রাহাম হয়ে যাচ্ছ... :dreamy:
সব খানে একই রকম এক্সপ্রেশন... 😛
ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ
=))
জন এব্রাহাম তো ছেলে , একটা মেয়ের উদাহরণ দিন 😛
খেয়া, তোমার এক্সপ্রেশন বদলাও।
সকালে ব্লগ খুলেই আপনার নাম দেখে মনটা ভরে গিয়েছিল, কিন্তু পুরোটা পড়ার পর মন খারাপ হয়ে গেল। আমাদের অবস্থা আসলেই এত খারাপ হয়ে গিয়েছে। আফ্রিকায় এসেছি এখানকার উন্নতি করার নাম নিয়ে, কিন্তু প্রায়ই কষ্ট লাগে যখন দেখি অনেক অনেক দিক থেকে এরা আমাদের থেকেও ভাল আছে।
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
সবাই সামনে আগায়...আর আমরা... 🙁
ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ
বন্ধু আহসান! আমি ত আফ্রিকা র কথা জানি ওই খানেও নাকি রাতে ব্লাক দের রাজত্ত চলে।
Islam, CCR (1996-2002)
'ব্লাক'দের রাজত্ব বলতে ঠিক কি বোঝাতে চাচ্ছিস?
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
কি জুনা নাকি ??
হুমমমম
বোঙ্গা বোঙ্গা টিল ডেথ ...
পথ ভাবে 'আমি দেব', রথ ভাবে 'আমি',
মূর্তি ভাবে 'আমি দেব', হাসে অন্তর্যামী॥
কি ডা? তাইফুর্ভাইঙ্কি??? 😀
এতো দেখি হাতীর ঘরে গরীবের পা... 😛
দেখলাম, অনেক রিজিক রিজিক খেলা খেলে বেড়াচ্ছেন!? 😛
ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ
আর রিজিক রিজিক খেলা ...
পৃথিবীর Oldest Profession সব গুলা একই রকম রে ... (সম্পাদিত)
পথ ভাবে 'আমি দেব', রথ ভাবে 'আমি',
মূর্তি ভাবে 'আমি দেব', হাসে অন্তর্যামী॥
:no: :no: :no:
আমাদের কাছে আপনারা ::salute::
ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ
Oldest profession গুলার একটা লিস্ট যদি দিতেন। কিংবা ভালো হয় তুলনামূলক পর্যালোচনা নিয়ে একটা ব্লগ লিখে ফেলেন :dreamy:
সাতেও নাই, পাঁচেও নাই
তবে ভাই...এই সৌভাগ্য ঠিক কতটা সৌভাগ্য সন্দিহান...শুনেছি পৃথিবীর সবচেয়ে উদ্দেশ্যহীন জীবন তার যার জীবনে সব কিছু ফিক্সড...যার জীবনে মৃত্যুর মত ভাইটাল একটা ব্যাপার ফিক্সড সে কি অলরেডি ডেড না?
আর মানবেতর জীবন যাপন করলেও আমাদের যেটা আছে সেটা হলো আশা...আশাকে পুঁজি করেই তো মানুষ বেঁচে থাকে...
লেখার অনুভূতিগুলো সুন্দর হয়েছে ভাই...আমার কলেজের ভাই ::salute::
ব্যাপারটা কি নিছকই গল্প??
আপনার লেখায় টুইস্টের উপর ডাবল টুইস্ট থাকে। তাই বুঝতে কষ্ট হইছে। ভাবতে ভালো লাগলো এটা নিছক গল্পই। গত বছরই সামু ব্লগের টিপু নামে এক ব্লগার ক্যান্সারে মারা গেছে কাউকে না বলেই। আমি ভাবতেসিলাম তার সাথে কোন ভাবে রিলেটেড কিনা !!!
স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি নাই -- এই কথাটাই টানলো বেশি।
ব্যাপার না। লাইফ এমনই ( ব্যাপক সিরিয়াস কমেন্ট করলাম।)
নিছকই একটা গল্প 🙁
আমাদের দেশে আসলেই স্বাভাবিক মৃত্যুর নিশ্চয়তা কি আছে? উত্তর পাই না 🙁 ...লেখাটা বরাবরের মতই মন ছুঁয়ে গেল, জুনায়েদ ভাই... 🙂
পড়লাম। জুনার পরের ব্লগে আশা-আনন্দের কথা পড়তে চাই।
আমার বন্ধুয়া বিহনে
চমৎকার লেখা ভাই। আমাদের দেশে এই বাস্তবতাটা বোধহয় একটু বেশিই রুঢ়...
বিনা সিগনালে আযরাইলের খপ্পরে পড়ার জায়গা এই দেশ, তারই মাঝে আরও আজীব এই ঢাকা শহর। .... উন্নতি তুমি কুথাই???............... 🙁
জুনাদা মানেই আলাদা কিছু ......... :boss: