লন টেনিসের দুই যোদ্ধার মহাকাব্য রচনা!

বিশ্বকাপ ফুটবলের কারনে যেখানে দেশ-বিদেশের অনেক গুরুত্বপূর্ণ খবরই আমাদের কাছে পাত্তা পাচ্ছে না, সেখানে লন টেনিসের খবর কে-ই বা রাখে! কিন্তু এবারের উইম্বলডন এ আমেরিকান জন আইজনার এবং ফ্রান্সের নিকোলাস মাহুত যে মহাকাব্যের রচনা করেছেন, তা কিছুটা হলেও মিডিয়ার আগ্রহকে টেনিসের দিকে আনতে পেরেছে।

উইম্বলডনের প্রথম রাউন্ডের খেলায় গত মঙ্গলবার এই দুই তরুণ ১৮ নম্বর কোর্টে পরস্পরের মোকাবেলা শুরু করেন। ম্যাচ শেষ হয় বৃহঃস্পতিবার, দীর্ঘ এগার ঘন্টা পাঁচ মিনিটের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবার পর। যারা এখনো ম্যাচের দৈর্ঘ্যের মাহাত্ম্য বুঝতে পারছেন না, তাদের জন্য এখন পর্যন্ত সেরা পাঁচ দীর্ঘতম ম্যাচের পরিসংখ্যান দিলাম-

লন টেনিসের ইতিহাসে দীর্ঘতম ম্যাচ

১১ ঘন্টা, ০৫ মিনিট- জন আইজনার বনাম নিকোলাস মাহুত, উইম্বলডন ২০১০
৬ ঘন্টা, ৩৩ মিনিট-ফ্যাব্রিস সাতোঁরো বনাম আর্নড ক্লেমেন্ত, ফ্রেঞ্চ ওপেন ২০০৪
৬ ঘন্টা, ২২ মিনিট- জন ম্যাকেনরো বনাম ম্যাটস উইল্যান্ডার, ডেভিস কাপ ১৯৮২
৬ ঘন্টা, ২১ মিনিট- বরিস বেকার বনাম জন ম্যাকেনরো, ডেভিস কাপ ১৯৮৭
৬ ঘন্টা, ০৪ মিনিট- হর্ষ্ট স্কফ বনাম ম্যাটস উইল্যান্ডার, ডেভিস কাপ ১৯৮৯

o

জন আইজনার এমনিতেই তার দীর্ঘাবয়বের কারনে মিডিয়ার আগ্রহের কেন্দ্রে ছিলেন। এই ভদ্রলোকের উচ্চতা ঝাড়া ছয় ফুট নয় ইঞ্চি এবং তার জুতার মাপ ১৫! তবে এই ম্যারাথন ম্যাচের পর তারা দুইজনেই স্থান করে নিয়েছেন ইতিহাসের পাতায়।

মঙ্গলবার যখন তাদের খেলা শুরু হবার দিন শেষে ২-২ সেটের সমতার মধ্যে শেষ হয়। বুধবার খেলা শুরু হবার পর পঞ্চম সেট ৫৯-৫৯ গেমের পর রেফারি আলো-স্বল্পতার কারনে মুলতবি করতে বাধ্য হন। বৃহঃস্পতিবার খেলা শেষ হবার পর চূড়ান্ত ফল দাঁড়ায় এরকম-
৬-৪, ৩-৬, ৬-৭ (৭-৯), ৭-৬ (৭-৩), ৭০-৬৮!!!

p

ম্যাচের মাধ্যমে সুইডিশ রেফারি মোহামেদ লাহ্‌ইয়ানি-ও ইতিহাসের অংশ হয়ে গেছেন। এই দীর্ঘসময় ধরে ম্যাচ পরিচালনা করা চাট্টিখানি কথা নয়। তাঁর ভাষ্যমতে,
‘আমি আসলে ক্লান্ত হবার সুযোগই পাই নি, অবিশ্বাস্য এই ম্যাচ আমাকে পুরো সজাগ করে রেখেছিল এবং আমার মনঃসংযোগ নষ্ট হতে দেয় নি। তাদের (খেলোয়ারদ্বয়ের) প্রতি আমি কৃতজ্ঞ।‘

ম্যাচ শেষে ৪৪ বছর বয়স্ক এই রেফারিকে উইম্বলডন কর্তৃপক্ষ স্বারক উপহার স্বরুপ ক্রিষ্টালের বোল, উইম্বলডন টাই এবং রুপার কাফলিঙ্ক দেয়া হয়। সেই সাথে উভয় খেলোয়ারকেও পুরস্কৃত করা হয়।

j

মহাকাব্যিক এই ম্যাচের বিজয়ী জন দ্বিতীয় রাউন্ডে মুখোমুখি হবেন ডাচ থিয়েমো দ্য বাকের এর, যিনি কিনা আরেক ছোট-খাটো ম্যারাথন বিজয়ী! তিনি কলম্বিয়ার সান্টিয়াগো গিরাল্ডো কে হারিয়েছেন ৬-৭ (৪-৭), ৬-৪, ৬-৩, ৫-৭, ১৬-১৪ সেটে! ম্যাচের দৈর্ঘ্য ছিল ৪ ঘন্টা ৬ মিনিট! তাই উইম্বলডন কর্তৃপক্ষ মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে তাদের ম্যাচ ‘বেষ্ট অব ফাইভ’ এর বদলে বেষ্ট অব থ্রি’ করলে অবাক হবার কিছু নেই!

স্কোরবোর্ডে জন আইজনারকে বিজয়ী দেখালেও আসলে তারা দুজনেই জয়ী। লন টেনিসের এই দুই যোদ্ধাকে জানাই স্বশস্ত্র সালাম!!

ম্যাচের কিছু পরিসংখ্যান

ম্যাচের দৈর্ঘ্য- ১১ ঘন্টা, ৫ মিনিট
পঞ্চম সেটের দৈর্ঘ্য- ৮ ঘন্টা, ১১ মিনিট
সর্বমোট গেম – ১৮৩ টি
পঞ্চম সেটে গেম- ১৩৮
সর্বমোট পয়েন্ট- ৯৮০
আইজনার এর এইস- ১১২ টি
মাহুত এর এইস- ১০৩ টি
আইজনার এর উইনার- ২৪৬
মাহুতের উইনার- ২৪৪

১,১৬৪ বার দেখা হয়েছে

১০ টি মন্তব্য : “লন টেনিসের দুই যোদ্ধার মহাকাব্য রচনা!”

  1. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    মোবাইলে ইএসপিএন এ বিশ্বকাপের টেক্সট কমেন্ট্রি দেখতে গিয়ে ব্রেকিং নিউযে এটা চোখে পড়ে, তখন স্কোর ছিল ৫৬-৫৬, তারপর থেকে এটাই চেক করছিলাম... খেলাটা মিস করলাম।


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন
  2. রুম্মান (১৯৯৩-৯৯)

    মিস করছি,বিরাট মিস করছি ....... (সম্পাদিত)


    আমার কি সমস্ত কিছুই হলো ভুল
    ভুল কথা, ভুল সম্মোধন
    ভুল পথ, ভুল বাড়ি, ভুল ঘোরাফেরা
    সারাটা জীবন ভুল চিঠি লেখা হলো শুধু,
    ভুল দরজায় হলো ব্যর্থ করাঘাত
    আমার কেবল হলো সমস্ত জীবন শুধু ভুল বই পড়া ।

    জবাব দিন
  3. সাজিদ (২০০২-২০০৮)

    বেচারা ইস্নার, এই খেলার ২৪ ঘন্টা যেতে না যেতেই তাকে আবার মাঠে নামতে হইসে কিন্তু এবার আর ১১ ঘন্টা না, মাত্রই ১ ঘন্টা ২৪ মিনিটেই তাকে বেকার নামে একজন হারায় দিসে, উচিত ছিল তাকে কিছু সময় রেস্ট দেয়া, বেচারা দাড়াতেই পারছিলনা।

    জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।