গত বুধবার (জুলাই ৮, ২০১৫) সিলেট শহরতলীর কুমারগাঁও বাসস্ট্যান্ড এলাকায় শেখ সামিউল আলম রাজনকে খুঁটির সাথে বেঁধে ক্রমাগত পিটিয়ে হত্যা করে তিন যুবক। আর এই দৃশ্য মুঠোফোনে ভিডিও করে ফেসবুকে আপলোড করে তাদেরই একজন। রাজনের বাড়ি সিলেট সদর উপজেলার কান্দিগাঁও ইউনিয়নের বাদেআলী গ্রামে। রাজনের বাবা শেখ আজিজুর রহমান পেশায় মাইক্রোবাসচালক। তাঁর দুই ছেলের মধ্যে রাজন বড়। অনন্তপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করা রাজন সবজি বিক্রি করত। সবজি বিক্রির টাকা দিয়েই চলতো রাজনের পরিবারের খরচ।
রাজনের লাশ গুমের সময় হাতেনাতে মুহিত আলম (২২) নামের একজনকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেন স্থানীয় লোকজন। মুহিতসহ চারজনকে আসামি করে জালালাবাদ থানায় হত্যা মামলা করেছেন রাজনের বাবা। মামলার অন্য আসামিরা হলেন মুহিতের বড় ভাই সৌদি আরব প্রবাসী কামরুল ইসলাম (২৪), তাঁদের সহযোগী আলী হায়দার ওরফে আলী (৩৪) ও চৌকিদার ময়না মিয়া ওরফে বড় ময়না (৪৫)। চুরির অভিযোগ এনে গত বুধবার সিলেট শহরতলীর কুমারগাঁও বাসস্ট্যান্ড এলাকায় শিশু রাজনের ওপর নির্যাতন চালান কামরুল ইসলাম, আলী হায়দার ও ময়না। তাঁদের নির্যাতনের দৃশ্য ভিডিও করেন মুহিত। তিনিই প্রথম ওই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দেন।
[খবরের সূত্রঃ এখানে, সতর্কীকরণঃ খবরের ছবি ও ভিডিও মনের ওপর চাপ ফেলতে পারে। স্ক্রিনশটঃ এখানে, ছবি ও ভিডিও সরিয়ে রাখা হয়েছে।]
গতকাল থেকে শিশু নির্যাতন ও হত্যার বিষয়টা মাথা থেকে বের করতে পারছি না। সেদিন সকালে বাংলাদেশ বনাম দক্ষিণ আফ্রিকার খেলা ছিল। ভোরবেলা উঠে দেখি বাংলাদেশ দক্ষিণ আফ্রিকাকে চেপে ধরেছে, প্রথম ইনিংসে আফ্রিকা ৯৫/৫। হাত মুখ ধুয়ে আসতে আসতেই ১০০/৬। বেশ ভাল লাগছিল, স্ট্রিমিং দেখা শুরু করলাম। একটু পরেই ফেসবুকে দেখি এই ভয়ানক খবর। তারপর খেলায় জেতার পরেও গলায় কাঁটা আটকে থাকার অনুভূতি হচ্ছে। এক পর্যায়ে ফেসবুকই বন্ধ করে দিলাম। চারপাশের নানা মুনির মতামত আর ভাল লাগছিল না।
শিশুটিকে চোর অপবাদে পিটিয়ে মারা হয়েছে। এরকম মারামারি আমাদের দেশে অহরহই ঘটে। প্রতিদিনই এরকম চোর বা পকেটমার ধরা পড়লে পাবলিক একত্র হয়ে তাকে মার দেয়। কখনো কখনো পুলিশ এসে তাদের নিরস্ত করে, কখনো করেই না। শক্তপোক্ত পোড় খাওয়া কেউ হলে মার খেয়ে টিকে যায়, কমবয়েসিরা মরে যায়। মারতে মারতে মেরে ফেলার পেছনে উন্মত্ত মবের মানসিকতাকে চিহ্নিত করেন কেউ কেউ। একজনকে ঘিরে যখন অনেকে মারতে শুরু করে, তখন স্বাভাবিকভাবেই স্থিরভাবে চিন্তা করার অবস্থা লোপ পায়। সাধারণত এরকম পরিস্থিতিতে চোরকে যারা হাতে-নাতে ধরেছে, তেমন তিন থেকে পাঁচজন বেশি সক্রিয় থাকে। তারা ক্লান্ত হয়ে পড়লে আশেপাশের পাবলিক সক্রিয় হয়ে ওঠে। সহিংসতা ক্রমশ সংক্রামিত হয়। এই মবের ভেতর হয়তো দুয়েকজন সহিংসতায় আক্রান্ত হয় না, কিন্তু তারাও নিষ্ক্রিয় দর্শক হয়েই থাকেন। খুব কম পরিস্থিতিতেই সহিংসদের নিরস্ত করা যায়।
ফেসবুকে এই ভিডিও ছড়িয়ে যাওয়ার পরে যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে, তা আমাকে বিস্মিত করে। এরকম ঘটনা আমাদের চারপাশে অহরহই ঘটে, আমরা অনেকেই এইসব ঘটনা বাস্তবে এড়িয়ে যাই। কোনখানে মানুষ একত্র হয়ে কাউকে মারছে দেখলে খুব কম মানুষই এগিয়ে গিয়ে সেটা থামাতে যায়। বেশিরভাগ দাঁড়িয়ে “মজা দেখে”, অনেকে নিজ নিজ কাজে চলে যায়। এই ঘটনা ইদানিং বেশি ঘটছে এমনও না, আগেও ছিল, এখনও আছে। ঘটনাগুলো এতোটাই “স্বাভাবিক” যে সবগুলো খবরের কাগজেও আসে না। যেসব ক্ষেত্রে ভিক্টিমকে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়, সেগুলোই সাধারণত খবর হয়ে ওঠে। গুগলে “চোর সন্দেহে পিটিয়ে হত্যা” লিখে সার্চ করলে প্রায় ৭৯,৮০০ ফলাফল পাওয়া যায়। এই সংখ্যাটি ভীতিকর। এই সংখ্যাটি প্রমাণ করে যে আমরা সমষ্টিগতভাবে ব্যাপারটিকে স্বাভাবিকভাবেই নিয়ে থাকি।
তাহলে রাজনের হত্যার ঘটনায় এমন তীব্র প্রতিক্রিয়া কেন হচ্ছে? সঠিক উত্তর আমার জানা নেই। বাংলাদেশের সামাজিক মনস্তত্ত্ব বিষয়ে আমি অজ্ঞ। কেবল নিজের অভিজ্ঞতালব্ধ উত্তরটিই চিন্তা করে দাঁড় করাতে পারি, তবে তা একান্তই আমার ব্যক্তিগত উত্তর।
আমার মতে, রাজনের ঘটনায় এমন প্রতিক্রিয়ার পেছনে কতগুলো বিশেষ কারণ রয়েছে। প্রথমত, এই ঘটনাটি first person point of view থেকে ভিডিও করা হয়েছে। রাজনকে ধরে একটা থামের সাথে বেঁধে রাখা থেকে ভিডিওটি শুরু হয়। আমি ১১-১২ মিনিটের ভিডিওটি দেখেছি, যেখানে ধীরে ধীরে মার খেতে খেতে রাজনের মুখের অভিব্যক্তি পাল্টে যেতে থাকে। শুরুতে সে যেভাবে ক্ষমা চাচ্ছিল আর মার দেয়ার সাথে সাথে ব্যথা পেয়ে কেঁদে উঠছিল, সেটা ধীরে ধীরে কমে আসতে থাকে। রাজন ক্লান্ত হয়ে পড়তে থাকে। ধারণা করি, তার ব্যথাবোধের অনুভূতিও ভোঁতা হতে শুরু করেছিল। ভিডিও ধারণ করেছিল হত্যাকারীদেরই একজন, এবং আমরা ক্যামেরার পেছনে তার কথা ও হাসিও শুনতে পাই। এর চেয়ে সরাসরি চোখের সামনে একজন মানুষকে ধীরে ধীরে মরে যেতে দেখা সম্ভব না। বেশ কিছুদিন ধরে মধ্য প্রাচ্যের আইসিস “ইনফিডেল”দের হত্যা করার সরাসরি ভিডিও প্রকাশ করছে। সেগুলো দেখলে প্রায় কাছাকাছি পর্যায়ের বিবমিষা হতে বাধ্য। দর্শক সেখানে আইসিসের হত্যাকাণ্ডের স্থানে সরাসরি প্রবেশ করে, এবং হত্যাকাণ্ড প্রত্যক্ষ করে। ভিডিও বন্ধ করে না দেয়া পর্যন্ত নিজের অনিচ্ছাতেই দর্শককে এই নারকীয় ঘটনাগুলোর অংশ হতে হয়। রাজনের হত্যার ভিডিও দেখে দর্শকের মনে তাই তীব্র প্রতিক্রিয়া হওয়াই স্বাভাবিক।
দ্বিতীয়ত, আমার মনে হয় ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এসে যাওয়ায় এই প্রতিক্রিয়ায় আরেকটি ভিন্ন মাত্রা, ভিন্ন তীব্রতা যোগ হয়েছে। ফেসবুকে বাংলাদেশি ইউজারের সংখ্যা কত জানার চেষ্টা করছিলাম। ফেসবুক জানাচ্ছে এই মুহূর্তে ১৩ থেকে ৬৫ বছর বয়সী প্রায় এক কোটি ৩০ লক্ষ বাংলাদেশি ফেসবুক ব্যবহার করেন। অডিয়েন্স হিসেবে এই বিপুল সংখ্যক মানুষ ভিডিওটি যে কোন সময়েই এক ক্লিকে দেখতে পারবেন। এছাড়াও ভিডিওটি ইউটিউবে আছে, গুগল করলে শ’খানেক নিউজ-পোর্টালে আছে, এবং এটা বিভিন্ন ইমেইল সার্ভার দিয়েও ছড়িয়েছে। মোবাইল ফোন প্রযুক্তির উন্নতির কারণে আক্ষরিক অর্থেই ইন্টারনেট এখন মানুষের হাতের মুঠোয়। এমন অবাধ তথ্যের স্বাধীনতা যেমন উপকারী, তেমনি দানবীয় শক্তিও বটে। রাজনের মৃত্যুর ভিডিও তাই দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়েছে। ইন্টারনেটকে অনেকেই স্রেফ বিনোদনের জন্য ব্যবহার করেন। প্রবাসী বাংলাদেশিদের কাছে ফেসবুক দেশের সাথে সরাসরি যোগসূত্রের মাধ্যম। এরকম মাধ্যমে যখন রাজনের মৃত্যুর ভিডিও এসে পড়ে, তখন আমরা সরাসরি বাস্তবের এক ভয়াবহ ধাক্কা খাই। এটা তখন আর স্রেফ বিনোদন আর চটুল রসিকতার জায়গা থাকে না। চ্যানেল পাল্টে দিলেই যে খবরকে এড়িয়ে যাওয়া যেতো, কিংবা পত্রিকার পাতা উল্টে যে খবরকে না পড়েও দিন শুরু করা যেতো, সে খবর এখন এড়ানোর আর উপায় নেই।
“এ ক্লকওয়ার্ক অরেঞ্জ” মুভির অ্যালেক্সকে চোখের পাতা জোরপূর্বক খুলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নাতজি জার্মানির ধ্বংসযজ্ঞ দেখানো হয় (দৃশ্যটি এখানে)। অ্যালেক্সের অপরাধের শাস্তি বা সংশোধনের ধাপ হিসেবে তাকে এই প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে যেতে হয়েছিল। রাজনের হত্যার ভিডিও দেখে ফেসবুকে তীব্র চিৎকার করে ওঠা আপামর বাংলাদেশিদের দেখে কেন জানি এই দৃশ্যের কথাই বারবার মনে পড়ছিল। এমন তো নয় যে আমরা এমন অপরাধ স্বচক্ষে এই প্রথম দেখছি, কিংবা এর চেয়ে ভয়ানক অপরাধ আর আগে ঘটে নি। বরং এই হত্যাকাণ্ড আমাদের প্রাগৈতিহাসিক সংস্কৃতির অংশই বটে। আমরা এর চাইতেও ভয়ানক অপরাধের সাক্ষী। কিন্তু এবারের ঘটনার বিশেষত্ব হলো, এটি ঘটছে আমাদের বিনোদন ও স্বস্তির এলাকায়, আমাদের ফেসবুকিং ও meme-জীবনে, আমাদের কমেডি ও স্যাটায়ারের বর্ণিল বাবল্-এ রাজনের আর্তচিৎকার ঢুকে পড়েছে। ক্লকওয়ার্ক অরেঞ্জের অ্যালেক্স নিজে পিটিয়ে খুন করেছে, তার কাছে তো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ধ্বংসের ফিল্ম বেশি কিছু লাগার কথা না। কিন্তু সে চিৎকার করে ওঠে কারণ যুদ্ধের ফিল্মের পটভূমিতে বিইটোভেনের নবম সিম্ফোনির সুর আবহ সঙ্গীত হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। সেটা শুনে সঙ্গীতপিপাসু অ্যালেক্সের মনে তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়। বিইটোভেন তার কাছে স্বর্গীর সুরস্রষ্টা, আনন্দ ও স্বস্তির জায়গা। তাই তাকে যখন সহিংসতার পটভূমিতে ব্যবহার করা হয়, তখন সেটা অ্যালেক্সের সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে যায়। আমাদের জন্যেও ফেসবুকের বিনোদনের সাথে রাজনের ভিডিওর উপস্থিতি সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে বলেই এতটা তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখছি।
রাজনের মৃত্যুর ঘটনার প্রতিক্রিয়ার তৃতীয় ও সবচেয়ে বেদনাদায়ক কারণটি হলো, আমাদের সম্মিলিত মননে ও চিন্তায় আমরা নিশ্চিত না যে এই অপরাধের বিচার হবে এবং এই নারকীয় মারধরের সংস্কৃতি নির্মূল হবে। আমরা জানি যে রাজনের হত্যাকাণ্ডের মূল অপরাধীদের একজন কামরুল ইসলাম শুক্রবারেই (১০ জুলাই) দ্রুত সৌদি আরব পালিয়ে গিয়েছিল। ছয় লাখ টাকা ঘুষ নিয়ে সিলেটের পুলিশই তাকে সাহায্য করেছে পালিয়ে যেতে। সামাজিক মাধ্যম থেকে খবর মাধ্যমে এই হত্যার প্রতিবাদ তীব্র হলে সৌদি পুলিশের সাহায্য নিয়ে সোমবারে কামরুলকে আটক করা হয়েছে। আদালতের দীর্ঘসূত্রিতায় এই অপরাধের শাস্তি হতে কতদিন লাগবে তা আমরা জানি না। আমরা এটাও জানি না যে আদৌ তাদের অপরাধ প্রমাণিত হবে এবং যথাযথ শাস্তি হবে। বাংলাদেশ রাষ্ট্রে অপরাধী ক্ষমতাবান ও অর্থশালী হলে প্রায় কখনই তার শাস্তি হয় না। যে সকল ঘটনায় আমরা শাস্তি হতে দেখছি, সেখানে জনগণ ও মিডিয়ার সক্রিয়তা প্রভাবক হিসেবে কাজ করে। আমাদের সম্মিলিত আগ্রহ কমে এলে বিচারপ্রক্রিয়াও একপ্রকার থেমে যায়। তারপরও আশাবাদী হয়ে ধরে নিচ্ছি যে ফেসবুকের তীব্র প্রতিক্রিয়ার কারণে আমরা এই অপরাধের বিচার সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হতে দেখবো। রাজনের বাবা-মা ন্যায়বিচার পাবেন। অপরাধীরা শাস্তি পাবে। কিন্তু তারপরেও কি আমরা নিশ্চিত যে রাজনের মতো আর কেউ গণপিটুনিতে মারা যাবে না? এই নিত্যনৈমিত্তিক মারপিটের ঘটনা ঘটতেই থাকবে, পাশবিক মব যা আমাদের মতো সাধারণ শিক্ষিত বাংলাদেশিদের দিয়ে গড়া, তারা তীব্র রোষে অন্য কোন চোর বা পকেটমারকে মেরে খুন করে ফেলবে। এই নৃশংস সংস্কৃতি আমাদের অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং এই অভাবিত ও নিষ্ঠুর সত্যের সামনে রাজনের নিষ্প্রাণ মুখ আমাদের আজ দাঁড় করিয়ে দিয়েছে বলে আমরা আর আয়নার সামনে চোখ তুলে তাকাতে পারছি না।
ব্যক্তিগত মনস্তত্ত্বের একটা দারুন একটা বিশ্লেষণ। খুব ভালো হয়েছে। (তবে এই ঘটনায় আমার ফোকাস অন্যখানে)।
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
যেখানে ধীরে ধীরে মার খেতে খেতে রাজনের মুখের অভিব্যক্তি পাল্টে যেতে থাকে। শুরুতে সে যেভাবে ক্ষমা চাচ্ছিল আর মার দেয়ার সাথে সাথে ব্যথা পেয়ে কেঁদে উঠছিল, সেটা ধীরে ধীরে কমে আসতে থাকে। রাজন ক্লান্ত হয়ে পড়তে থাকে। ধারণা করি, তার ব্যথাবোধের অনুভূতিও ভোঁতা হতে শুরু করেছিল। ভিডিও ধারণ করেছিল হত্যাকারীদেরই একজন, এবং আমরা ক্যামেরার পেছনে তার কথা ও হাসিও শুনতে পাই।
হৃদয় বিদারক বর্ণনা। আমরা ধীরে ধীরে পশু হয়ে যাচ্ছি। আমাদের কে এগুলি সব সহ্য করে নিতে শেখানো হচ্ছে। আমরা বুঝতে পারছি না। রাজনের ভিডিও দেখে আমাদের মএ যে প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হচ্ছে এর পরে এরকম ঘটনা ঘটলে প্রতিক্রিয়ার তীব্রতা কমে যাবে। তারপরও যদি আরও ভিডিও দেখতে থাকি, একসময় এ গুলি গা সওয়া হয়ে যাবে। সেই পর্যায়ে যাবার আগেই এধরণের ঘটনা বন্ধ করতে হবে।
যে কথা কখনও বাজেনা হৃদয়ে গান হয়ে কোন, সে কথা ব্যর্থ , ম্লান
রাজন হত্যাকান্ড এ সময়ের আলোচিত বিষয়। তাকে কয়েকজন কুলাঙ্গার মিলে গণমারপিটে হত্যা করেছে। এর প্রতিক্রিয়ায় সাধারণ মানুষের মনোভাব অনেকটাই সামাজিক গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে। অবাক হলাম, অনেকেই হত্যাকারীদের গণধোলাই দিতে চেয়েছেন। কিছু দিন আগে এক হিজরাকে গণধোলাই দিয়ে হত্যা করা হয়েছে। ডাকাত সন্দেহে প্রায়ই গণধোলাই দিয়ে হত্যাকান্ড ঘটানো হয়। এগুলো কি সমর্থন যোগ্য? যারা এগুলো সমর্থন করেন, তারাই আবার রাজন হত্যাকান্ডের বিরুদ্ধে গণধোলাই চান। হাস্যকর, এদের কিভাবে মানুষ করবেন!
সেদিন আসলেই সারাটাদিন মন খারাপ ছিলো, আমি ভিডিওটা এখনো দেখার সাহস করে উঠতে পারিনি।
পিটিয়ে মারার ঘটনা আমাদের দেশে এত সহজ আর স্বাভাবিক ব্যাপার বহুদিন ধরেই। রাজনের ভিডিওটা ছড়িয়ে পড়ায় আমাদের যা একটু মন খারাপ লেগেছে। শুধু খবরের পাতায় আসলে আমরা আর দশটা সংবাদের মতই এড়িয়ে যেতাম সহজে। আবার এক শ্রেণীর দল আছে যারা চকচকে চোখে রসিয়ে রসিয়ে এমন ঘটনা বলে বা শেয়ার করে। রাজনের ঘটনার কয়েকদিন পরই আরেকটা ঘটনা খবরে এসেছিলো, সম্ভবত সাভারে। সেই ঘটনার ভিডিও নাকি স্থানীয় দোকানে টাকা দিয়ে বিক্রিও হয়েছে।
সাতেও নাই, পাঁচেও নাই
প্রথম দু একবার কষ্ট হবে...এরপর ১৩ কেন, ৩ বছরের কেউ মরলেও কিছু মনে হবে না! 😐
ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ
মানুষের প্রতিক্রিয়া দেখে আমি আসলে কিছুটা অবাক হয়েছি, কারন এরকম আয়োজন করে 'চোর' পেটানোর ঘটনা দেখে বা শুনে আসছি একদম ছোটবেলা থেকে। এসব আয়োজনে স্বপ্রনোদিত হয়ে যোগ দেয়া মানুষের অভাব হয় না আর দর্শকদের তো ঠিক মত স্থান সংকুলানই হয় না। হয়তো তোর ব্যাখ্যাটাই ঠিক, আমাদের বিনোদনের স্পেসে এটা চলে আসায় এই তীব্র প্রতিক্রিয়া।
তবে আমরা এ ঘটনা আবার ঘটাবো, সক্রিয় বা নিতান্ত দর্শক হিসেবে আবার সবাই মিলে অংশগ্রহণ করবো।
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
আমি দূর্বল চিত্তের মানুষ, ভিডিওটা দেখার সাহস হয়নি, টিভি রিপোর্টিংটা দেখা বা শোনারও ইচ্ছে জাগেনি। চ্যানেলটা চেঞ্জ করে দিয়েছিলাম। তবে লোকমুখে যতটুকু জেনেছি, তাতেই বিবমিষা জেগেছে। মনে প্রাণে কামনা করছি, অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক এবং একটা সামাজিক আন্দোলন গড়ে উঠুক।
ক্লকওয়ার্ক অরেঞ্জ এর এনালজি টাতে ক্লিয়ার হলাম। মে বি এটাই কারন। মাঝে মাঝে মনে হয় চারপাশের মানুষের প্রতিক্রিয়াতেও আমি অনেক ইন্ফুয়েনসড হই। সোশ্যাল লোফিং। মানুষজনের তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখার পর আমি ভিডিও টা দেখেছিলাম। কেন জানি মনে হয় সাবকনশাশলি আমি ভাবছিলাম যে কোন প্রতিক্রিয়া না দেখানো টা হয়তো স্বাভাবিক না।
ঘটনার ৭ দিন পরে এখন এটা নিয়ে ভাবতে গেলে খুব বেশি কিছু আর মনে হয়না। আমিও মনে হয় এই একই চক্রে পরে গেছি।