ঘটনাগুলো খুব দ্রুত ঘটছে বা ঘটে গেছে। আমি খুবই টেনশনে ছিলাম বাকি সবার মতোই। কী ঘটেছিল, তার নানা টুকরো দৃশ্য আমাদের সামনে আসবে। আমি যেটুকু জেনেছি, তাই তুলে ধরছি।
অনেকেই হয়তো দেখেছেন, কর্ণেল সালাম নামক একজন অফিসার বেরিয়ে এসেছেন আজকে আটকাবস্থা থেকে। আমি ব্যক্তিগতভাবে তাঁকে চিনি, আমার বাবার বন্ধু। তাঁর মুক্তির খবর পেতেই বাবা দেখা করতে গিয়েছিলেন। ফিরে আসার পরে সেইদিনের কাহিনী শুনলাম।
অনেকের সাথে কর্ণেল সালামও ছিলেন দরবার হলে, সেদিন সকালে। সেখানে দরবারের এক পর্যায়ে ডাল-ভাত কর্মসূচীর টাকা ইত্যাদি নিয়ে কথা ওঠে। তখন কিছু সিপাহী তাদের দাবি জানানোর চেষ্টা করেছিলেন। এক পর্যায়ে ডিজি শাকিল তাদের থামিয়ে দেন। কর্ণেল সালাম যেখানে বসেছিলেন, সেখান থেকে উনি তার একটু পরেই দুটো গুলির আওয়াজ পান। সেটি দরবার হলের বাইরে থেকে ভেতরের দিকে। সেই শব্দে সবার মাঝে একটা চাঞ্চল্য শুরু হয়। একটু পরেই দেখা যায় পাঁচজন সৈনিক সশস্ত্র অবস্থায় দরবার হলে ঢুকে পড়ে। হুড়োহুড়ির এক পর্যায়ে সকল অফিসারই পেছনের জানালা ভেঙে পালানোর চেষ্টা করেন। তখন চারপাশ দিয়ে জনাপঞ্চাশেক সৈনিক সশস্ত্র অবস্থায় ঢুকে পড়ে। পালানোর শুরুতেই কর্ণেল সালাম একদল সৈনিকের সামনে পড়ে যান, তাদের সবার হাতে অস্ত্র ছিল না, তবে লাঠিসোটা ছিল। এক সৈনিক তার বুকে লাঠির আঘাত করলে উনি বলতে থাকেন যে আমি ডাক্তার, আমি তোমাদের কোনদিন পানিশমেন্ট দেই নাই। আমাকে মেরো না। ইত্যাদি। সেসময়ে যে কোনভাবেই হোক বার বার এভাবে বলার কারণে একজন সৈনিক তার কথা বিশ্বাস করে এবং তিনি তার বিশ্বাস অর্জনে সক্ষম হন। সেই সৈনিকই বলেন যে স্যার আপনি এখানে থাকলে ওরা আপনাকে মেরে ফেলবে, আমার সাথে আসেন।
এর পরে তিনি সেই সৈনিকের সাথে রওনা দেন। পথে আরো বেশ কিছু দলের সামনে পড়েন এবং সৈনিকটি তাঁকে বাঁচানোর জন্যে সর্বাত্মক চেষ্টা করেছে। এক পর্যায়ে একদল বেশ উগ্র সিপাহীদের মধ্যে একজন তাঁর মুখে বাঁট দিয়ে আঘাত করে। তিনি পড়ে যান এবং আবারও বার বার অনেক বুঝানোর পরে তারা তাঁকে ছেড়ে দেয়। সেই সৈনিকের সাথে তিনি সিপাহীদের বিল্ডিঙে আশ্রয় নেন। তবে সৈনিকটিও এই পর্যায়ে তাঁকে বাসায় আশ্রয় দিতে পারেননি। কারণ তাহলে তার নিজের জানের আশঙ্কা দেখা দিত। কর্ণেল সালাম সেখানে সিঁড়িঘরেই বসে থাকেন। পাশের ফ্ল্যাটের এক মহিলা তাকে পানি (সম্ভবত পরে খাবারও) দিয়েছিলেন। দুপুর থেকে পরের সময়টুকু তিনি ওখানেই ছিলেন। সিঁড়িতে আসা যাওয়ার মধ্যে অনেকবার তাঁকে সৈনিকরা ধরেছে, চার্জ করেছে এবং প্রতিবারই তিনি তাঁদের বুঝাতে সক্ষম হয়েছেন। এর মাঝে তিনি শরীরের উর্দিটি খুলে রেখেছিলেন। অন্ধকার ঘনিয়ে এলে সাহায্যকারী সৈনিকটি বাইরে চলে যায়। ঘন্টা দুয়েক পরে ফিরে এলে কর্নেল সালামকে না চেনার ভান করে কারণ তার সাথে আরো সিপাহীরা ছিল।
অন্যান্যরা চলে গেলে সৈনিকটি তাঁকে বলে চলে যেতে নাহলে রাতে তার নিজের জীবনই বিপন্ন হতে পারে। এই সময়ে তিনি একবার দোতলা একবার তিনতলা এভাবে সিঁড়িতেই অবস্থান করেন কারণ বাইরে গেলেই নিশ্চিত মৃত্যু। আশার কথা, অন্ধকারে তাঁকে বসে থাকতে দেখে অনেকেই সিনিয়র সিপাই ভেবেছে। ওস্তাদ বসে আছেন কেন? এমন প্রশ্ন করেছে।
সারারাত নির্ঘুম কাটানোর পরে সকালে তিনি নিজের ইউনিটের তিনজন সৈনিকের দেখা পান। তাদের কাছেই জানতে পারেন যে সেনা অফিসারদেরকে ছেড়ে দেয়া হতে পারে। তখনই জানতে পারেন যে কোয়ার্টার গার্ড-এ বাকি সেনা অফিসার-রা আটক আছেন, ওখানে চলে গেলে উনি দ্রুত মুক্তি পাবেন। তারপরে সেই তিন সৈনিক তাঁকে ঘিরে ধরে সেখানে নিয়ে আসেন। পথে যতবারই মৃত্যুর আশঙ্কা হয়েছে, তারা চিৎকার হুঙ্কার দিয়ে সেগুলো ঠেকিয়েছেন।
অবশেষে সেনা অফিসারদের ছেড়ে দেয়ার সময়ে তিনি আরো অনেকের সাথে বেরিয়ে আসেন। এখন সম্ভবত উনি সিএমএইচে আছেন।
kotojon mara gechen ei shomporke tini kono kichu bolechen????
না সাজিদ। উনি নিজেই লুকিয়ে ছিলেন। দরবার হল থেকে পালানোর সময়ে দেখেছেন সামনের মাঠে জীবিত সিনিয়র অফিসারদের দাঁড়া করিয়ে ব্রাশফায়ার করা হয়েছে!
ভেতরে তার আগে এলোপাতাড়ি গুলি চলেছে। সেই মুহূর্তে আসলেই খেয়াল করা যায় নাই।
এরাই কি সেই ১৩৭ জন? খোদা না করুন...
আন্দালিব : আসলে জায়গাটার নাম হলো কোয়ার্টার গার্ড।
"মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"
ওহ ধন্যবাদ লাবলু ভাই। আমার শ্রবণ ও স্মৃতিশক্তি খুবই খারাপ! 🙁
একপাল মনুষ্যত্বহীন জন্তু জানোয়ারের মাঝে যে সিপাহী নিজের প্রাণ হাতে নিয়ে আরেকজন অফিসারকে বাঁচিয়েছে, তার জন্য শ্রদ্ধা।
হ্যাঁ, আর যেই তিন সৈনিক আজকে দিনের আলোতে তাকে গার্ড দিয়ে বাঁচিয়েছেন তাদের জন্যেও সশ্রদ্ধ স্যালুট!
এই প্রথম ভেতরের অবস্থা সম্পর্কে কিছু জানতে পারলাম। নাহ!!! আশা দেখছি না একদম... 🙁
আশা তবুও করতেছি। আমাদের তো আশা করা ছাড়া আর কোন উপায়ও নাই রে ভাই। এখনও ১৩৬ জন নিখোঁজ!
এখোনো কোন মিরাক্যল এর আশায় আছি। বিশ্বাস করতে চাই, অনেকেই হয়তো ফিরে আসবেন নিজেদের পরিবার পরিজনদের মাঝে।
সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!
আমিও... 🙁
আমার কিন্তু মনে হয়েছে বিডিআরের বেশিরভাগি বাধ্য হয়েছে অস্ত্র ধরতে কোন অদৃশ্য শক্তির ইশারায়।
দোস্ত, আমারও অনেককিছুই মনে হচ্ছে। তবে এইসব অদৃশ্য দৃশ্যমান সব শক্তি (?) সামনে চলে আসবে। আপাতত গত দু'দিনের ঘটনা জানাটাই জরুরি। তারচেয়েও জরুরি ঐ নিখোঁজ অফিসারদের খবর পাওয়াটা।
কিছু জওয়ান যে এতকিছুর পরও মানুষের, সৌনিকের মত আচরন করেছে, তাই তাদেরকে স্যালুট।
:salute: :salute:
আমি তবু বলি:
এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..
ওঁরাই প্রমাণ করেছেন যে দুনিয়াতে মনুষ্যত্ব এখনও শেষ হয়ে যায় নাই!
সেইসকল সত্যিকার ও দায়িত্ববান সৈনিকের জন্য সশ্রদ্ধ সালাম।
এঁদের মধ্যে সকলেই তাঁদের ভালোকাজের পুরষ্কার পাক। তেমনি সকল খুনী, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী, দূর্নীতিবাজ অন্যায়কারী অফিসারের শাস্তি হউক।
tvte onekei fon kore jiggesh korche j shadharon khoma ghoshonar por keno palie jaoa bdr shoshshoder gereptar kora hochche r tvr atelra, shei nie bolche j ha shorkarer ei nie kichu kora dorkar.... baparta bujte parchi na khuner abar khoma ki, eto jon manush marlo r tader emni chere deya hobe, kono bichar hobe na, shasti hobe na??? r manusho kibhabe eto mrittur por tader khoma kore debar kotha bole, amader ki kichui bolar nei??? amra ki r protibad korte parina??? jara uporer poste achen pls kichu budhdhi din....
সাজিদ, এখানে কোনই প্রতিবাদ করার জায়গা নাই। ব্যাপারটা বুঝাই। সাধারন ক্ষমা করেছেন প্রধানমন্ত্রী, অর্থাৎ গণতান্ত্রিক সরকারপ্রধান। এখন, এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হবে এবং অপরাধীরা শাস্তি পাবে। সেখানে কোন অপরাধীই ছাড়া পাবে না (বিডিআর এবং সামরিক বাহিনী দুই দলেই)। বিডিআর জওয়ানদের উপরে হওয়া নির্যাতনের যেমন বিচার হবে, তেমনি নির্বিচারে অফিসার খুনেরও বিচার হবে। এবং আমি যদ্দুর বুঝি, আর্মির ভিতরে শৃঙ্খলা বজায়ে রাখতেই এটা করা হবে। প্রধানমন্ত্রী কখনই বলেননি যে নির্বিচারে সবাইকে ছেড়ে দেয়া হবে, সাধারন ক্ষমার ঘোষণাটি ছিল আশু রক্তপাত বন্ধের একটা রাজনৈতিক পন্থা।
আঁতেলদের গুষ্টি কিলাই। এরা কয়টা টাকা পায় আর টিভি চ্যানেলে এসে বমি করে। এদের মাথায় ঘিলু থাকলে বাড়ি গিয়ে ঘুমাইতো। জাবর কাটতে কাটতে সব ঘিলু হজম হয়ে গেছে। এদের কথা না শুনাটাই উত্তম।
তাদের বিদ্রোহ কে সাধারন ক্ষমা করা হয়েছে, মানুষ হত্যাকে না । মানুষ হত্যার কোন ক্ষমআ নাই ।
Andalib,
It's Nazmul. Accha, Director General er wife mara gache shunlam tv te, emon aro onek officer er bashay agun lagiye ki family ke mere fela hoise? Familyr upor torture er jei ghotona gulo shunchi, ta ki shotti!!! bisshash korte koshto hocche, era hotat kore eto poshur moto achoron kano korlo!
অনেকরকম গুজব ভাসতেছে। তবে সবচেয়ে সমর্থিত তথ্য হলো, ডিজি এবং তার স্ত্রী মারা গেছেন। তাদের লাশ পুড়িয়ে ফেলার খবর শোনা গেছে, সমর্থিত নয় এখনও পুরোপুরি। আর তাদের সন্তানদ্বয় নিরাপদে আছে, এটা মোটামুটি শিওর।
আগুন লাগানোর ঘটনা সত্য। কিছু কিছু বর্ণনা আমরা শুনতেছি, একেবারে শিওর হবে যদি এলাকায় ঢোকা যায় তখন। তবে আমারও বিশ্বাস করতে ইচ্ছা করে না রে দোস্ত যে মানুষ এভাবে নৃশংস ভাবে মানুষকেই খুন করছে!
বিডিআরের যেসব সদস্য মানুষের মতো আচরণ করেছেন তাদের জন্য শ্রদ্ধা। অফিসারদের নির্বিচারে হত্যা এবং তাঁদের ফ্যামিলিদের কোন ক্ষতি হয়ে থাকলে তার বিচার যেন হয়- এই আশাই করি।
আমিও সেই আশাই করি।
Dos, I read your blog, heard some of pathetic stories from my dad.
I am worried about a few issues now.
1. How will Army react at the loss of their some 137/ 148/ 168 officers? Not all of them can be accused to any graft case.
2. How will PM pacify the issue for both the forces?
3. How will BDR survive without Army? No doubt they are one of the most decorated forces in Bangladesh, but are always under Army's command. How will a petty DAD lead them?
ঘটনাটা শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ। আল্লাহ আমাদের রক্ষা করুক।
আন্দালিব ভাই, এটা সলিড নিউজ... জানানোর জন্য ধন্যবাদ। আমরা দোয়া করি যাতে কোন রকম বাজে খবর আর শোনা না লাগে।