যৌনকর্মীঃ একজন পেশাজীবীর স্বীকৃতি ও তদসংলগ্ন ছেঁড়া চিন্তা

গত পরশু (১৮/৮/২০১০) বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন একটু খবরের শিরোনামে এসেছেন। ধর্মনিরপেক্ষতা বলবৎ করার ব্যাপারে মূল আলোচনা বা বিতর্কের জায়গায় ছিলো সুপ্রীম কোর্ট। বাংলাদেশের সংবিধানের মূল স্তম্ভের একটাকে পুনর্বহাল করেছিলো তারা। আর এখন নির্বাচন কমিশন ভোটার আইডি’তে যোগ করেছেন বেশ কিছু পেশা। তাদের বক্তব্য, নতুন যোগ করা পেশাগুলোকে আগে চিহ্নিত করা হতো না। সেই পেশাজীবী মানুষদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিতেই এই উদ্যোগ।

লিস্টিটা দেখলাম- যৌনকর্মী, ইমাম/পুরোহিত/যাজক(clerics), সেবিকা, হেয়ার-ড্রেসার, ধোপী, কাজের লোক (মেইড), মালী, ক্লিনার, বাবুর্চি, দর্জি, ড্রাইভার। তবে এই পেশাগুলোকে নিয়ে তেমন আলোচনা তৈরি হয় নি। বাঙালি মধ্যবিত্তের মননে ‘তোলপাড়’ তুলে ফেলেছে কেবল যৌনকর্মী পেশাটি। এই নিয়ে এরই মাঝে কিছু ব্লগে কয়েকটা লেখা দেখলাম, মূলত খবরটার প্রতিক্রিয়া নিয়ে। আশা করেছিলাম যেমন, ঠিক তেমন প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে সকলেই আমার ধারণাটিকে বদ্ধমূল করেছেন যে বাংলাদেশের সামাজিক চালচিত্র মোটেই এই পদক্ষেপের জন্যে অনুকূল নয়।

যৌনকর্মী সংক্রান্ত প্রাথমিক ‘বুকিশ’ আলোচনার দিকে যাবো না, সেদিকে আমি আপনার চাইতে বেশি কিছু জানি না। তাই চলুন একটু অন্যদিকে চোখ ফেরাই। ঐ যে বলছিলাম, নির্বাচন কমিশন এবং সুপ্রীম কোর্ট নিয়মিতই কিছু পদক্ষেপ নিয়ে আমাদের মাঝে ঘুরে ফিরে উঠে আসছে। এই উঠে আসার কারণ হয়তো তাদের গৃহীত সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপের সাথে আমাদের মনন, সামাজিক প্রথাবদ্ধতার অমিল মূলাংশে দায়ী। ধর্মপ্রবণ এবং মোটামুটি অশিক্ষিত এই জনপদে গিজ গিজ করছে মাথা, সেই মাথায় চুল গজায় আবার ঝরে পড়ে টাক বিস্তৃত হয় কিন্তু খুলির ভেতরে ধূসর-বস্তুতে খুব বেশি আলোড়ন ওঠে না। যে খুলিগুলোতে কিছুটা রসদ থাকে, সেগুলো ড্রেন দিয়ে বা প্লেনে চড়ে পাচার হয়ে যায় ফর্সা-চামড়ার দেশে। তার এখানকার কালো, কুৎসিত, কুশিক্ষিত মানুষের মনন একটা আধা-ধর্মান্ধ-আধা-সুশীল অবস্থানে আটকে থাকে (আছে)। এই অবস্থায় আমাদের রাষ্ট্রের কর্তাব্যক্তিরা পরপর দুটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। “যুগের অন্ত” আক্ষরিকার্থেই! কারণ, জন্মাবধি কাগজে কলমেও বাংলাদেশ সাড়ে চার বছরের বেশি সময় ধর্মনিরপেক্ষতা ধরে রাখতে পারে নি।

পাকিস্তান রাষ্ট্র সৃষ্টির সময়ে যেমন ভবিষ্যদ্বাণী করা হচ্ছিলো যে এই ইসলামিক রাষ্ট্রটি ১০০ বছর বাঁচবে, যুগে যুগে এইখান থেকে তৈরি হবে নব্য-মুসলিম স্কলার, জ্ঞান-বিজ্ঞানের পথে ও সভ্যতার উৎকর্ষে তারা অবদান রাখবেন; সেই সুখ কল্পনা ছেঁড়া কাথার ফুট দিয়ে পালিয়েছে। পেছনে ছিলো সামরিক লাঠির বাড়ি। আধামূর্খ-আধামুসলিম বাঙালিত্বের লুঙ্গি খুলে খুলে যখন পাক-পবিত্র পাকিস্তানিরা চেক করেছে, তখনই বোঝা গেছে পলিমাটিতে মরু-রুক্ষ ইসলাম জমবে না। এখানে পীর-আউলিয়াদের হাত ধরে আগত ইসলাম কেবল আচারে, প্রথায় রাখা যেতে পারে, তার বেশি মানুষ তা মানবে না।

বাঙালি তখন লুঙ্গি ছেড়ে সবে রাস্তাঘাট বানাচ্ছে আর শার্ট-প্যান্টের সাথে জুলপি রাখতে শিখেছে। তাদের কাছে ধর্মনিরপেক্ষতার গ্রহণযোগ্যতা একটা সামাজিক-রাজনৈতিক উল্লম্ফন ছিলো। কিন্তু পুরো শরীর এক সাথে না লাফালে যেমন গোত্তা খেয়ে পড়তে হয়, তেমনি সাড়ে চার বছরেই ধর্মনিরপেক্ষতার ঝুমঝুমি হাত ফস্কে গেছে, একেবারে নিচতলায়, বেইসমেন্টে ধুলো মেখে। আমরা শনৈ শনৈ সামরিক উন্নয়নে ডুবে গেছি, বন্যায় ডুবেও রাস্তাঘাট আর খাল কেটে স্বস্তি পেয়েছি। ব্রিটিশ জুতো, পাকিস্তানি জুতোর পরে বাংলাদেশী জুতোর পাড়া খেতে আমাদের কালো দেহে মন্দ লাগে নি। পরিবারতন্ত্রের রাশান রুলেৎ খেলা “রহমান ডাইনেস্টি” দুটোর ভগিজগিও গত বিশ বছরে সামরিক শাসনের ‘সমসাময়িক’ হয়ে উঠছে। তো, এবারে নতুন শতকের এক দশক পেরিয়ে গেলে কোন দৈববলে আবার সেই মানিকরতন ফিরে এলো, তাকে নিয়ে আমরা কী করবো; কোলে রাখবো নাকি ছুঁড়ে ফেলবো, এটাই এখনো ঠিকঠাক ঠাহর হচ্ছে না।

তার ওপরে নির্বাচন কমিশন চাপিয়ে দিলেন পেশা-স্বীকৃতির এই ‘অভাবনীয়’ বিজ্ঞপ্তি! এবারে আমাদের পুরুষালী রোম খাড়া হয়ে গেছে। এই উত্তেজনায় বাকি সবগুলো পেশাজীবীকে বাদ দিয়ে আমরা যৌনকর্মীদের নিয়ে পড়েছি। এমনিতেই তাদের ব্যাপারে ট্যাবু, চাপা-আগ্রহের কোনই কমতি নাই, তার ওপর নিঃকঃ এসে পেশা হিসেবে উন্মুক্ত করে দিলো যেন। এখন হিসেব উঠে আসছে, ঢাকায় ঠিক কতোজন যৌনকর্মী আছেন, ঠিক কোন কোন জায়গায় তাদের ডেরা, বাংলাদেশেই বা কতোগুলো ‘নিষিদ্ধপল্লী’ আছে ইত্যাদি।

খেয়াল করলাম, যে পেশাগুলোকে নতুনভাবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে বেশিরভাগই নারীর পেশা। ইমাম/পুরোহিত/যাজক, মালী এবং ড্রাইভারের পেশাতে এখনও পুরুষের একচ্ছত্রতা। সেবিকা, যৌনকর্মী, কাজের লোক এগুলো পেশায় নারীর একচ্ছত্রতাও উল্লেখ করি। বাদ বাকি পেশাগুলোতে ধীরে ধীরে নারীকে জড়িয়ে পড়তে হচ্ছে। এই সবগুলো পেশার মধ্যে মিল হলো সচরাচর এগুলোকে সমাজ ও রাষ্ট্র ‘চিনতে’ চায় না। কাজের লোককে নামমাত্র বেতনে রাখা হয়। ইংরেজি খবরে “ক্লিনার” বলে সম্ভবত মেথর ও জমাদার বুঝিয়েছে, তাদেরকেই বা কতোটা দ্রষ্টব্য ভাবা হয়? সেবিকাদের নামের আশে পাশে ‘মহামতি ফ্লোরেন্সে’র নাম নিয়ে তাদেরকেও শ্রমের ন্যায্যমূল্য দেয়া হয় না। হয়তো শুভ্র পোশাকের সেবিকাদেরকে ততোটা ‘খেটে খাওয়া’ বলে মনে করতে আমাদের ‘সুশীল’ চোখ অভ্যস্ত নয়। আর সেই সুশীল চোখের কাছে যৌনকর্মীর নাম দূরে থাক, উল্লেখমাত্রই একেবারে অচ্ছুৎ।

তবু নিষিদ্ধের কৌতূহল আর বিকৃত আগ্রহ আমরা নিশ্চিত লালন করি। তাদের জীবন ও জীবিকার খবর জানতে, পরিসংখ্যানের ভেতরে আরো খতিয়ে জানতে অনেকেই উৎসুক। এই ঔৎসুক্য জন্মেছে পারিবারিকভাবে শেখানো ঠুঁটো নিষিদ্ধতার কারণে। যৌনতা এ অঞ্চলে ট্যাবু হলেও অন্তরীণ নয়। সকলেই চর্চা করেন, এখন তথ্যপ্রবাহের ঢেউয়ে তার অনেকটাই জানা যায়। নারী বা পুরুষ কেউই এই চর্চার বাইরে নেই। হয়তো অংশগ্রহণের স্বাভাবিকতায় নারী যুগযুগ জিইয়ে রাখা জড়তা এখনও কাটাতে পারে নাই, তবু প্রায় সমানে সমানেই (আড়ালে বা প্রকাশ্যে) যৌনতার লালন ঘটছে।

সুতরাং এখানে কোন উন্নাসিকতার উপায় নেই, সুযোগ নেই উপেক্ষার। স্বীকার করেই নিতে হয় যে এই আদিমতম পেশাটি বঙ্গ-জনপদে প্রাচীনকাল থেকেই আছে, আছে এর “ভোক্তা” (পুরুষ) ও “কর্মী” (নারী)। সমাজে পুরুষ নিজের সামাজিক প্রতিপত্তি আর পরিচয়ের জন্যে রেখেছে স্ত্রী, আর ভোগ ও লালসার জন্যে রেখেছে যৌনকর্মী। এবং নিজেদের ‘সম্মান’ ধরে রাখতে এই কর্মীদের নাম দিয়েছে ‘পতিতা’, ‘বেশ্যা’ ইত্যাদি। নামগুলো দেখুন, নিছক শব্দ হিসেবেই প্রথম শুনেছিলেনঃ কিশোর বয়সের কথা মনে করুন। তারপরে শিখে গেছেন, এগুলো কতোটা নিকৃষ্ট শব্দ, অশ্লীল, অসভ্য, কুৎসিত। তারপরে পরিচিত হয়েছেন এই শব্দগুলো যাদের সাথে ব্যবহার করা হয়, তাদের সাথে – সেই নারীদের সাথে যারা পতিত, অস্পৃশ্য, নিষিদ্ধ ইত্যাদি। অথচ তারা কোথায় থাকে, কি করে, কারা তাদের কাছে যায় এটা জিজ্ঞেস করলে নিশ্চিত বড়ো একটা ধমক খেতেন। ‘চুপ’ বলে চেঁচিয়ে উঠতো আপনাকে আদর্শলিপির পাঠ দেয়া ‘পুরুষ’ চরিত্রটি।

এই চর্চা, আবহমান সংস্কৃতির মতো চলে আসছে। পুরুষ কখনই যৌনকর্মীর কাছে যাওয়া থামায় নি, এবং নিয়মিত খদ্দেরকেই দেখা গেছে তাদের বিপরীতে উচ্চকণ্ঠে। এই দ্বিমুখী আচরণ আসে কুশিক্ষা থেকে, প্রথাবদ্ধতা থেকে, অন্ধের মতো ক্ষমতা দখলের লিপ্সা থেকে। এখানে কেন ক্ষমতার কথা আনলাম? একটু ভেবে দেখলে আপনি নিজেও বুঝতে পারবেন।

সমাজের ক্ষমতার পিরামিডে এই নারীদের অবস্থান কতোটা নিচে! হয়তো সবার নিচে। এমনিতেই অনগ্রসর ও দরিদ্র জনপদে গড়পড়তা নারীরা ২য় শ্রেণীর নাগরিক, তার ওপরে তাদের মধ্যে যারা দেহব্যবসার সাথে জড়িত, তারা না পান পরিচয়, না পান মূল্য – সামাজিক অবস্থান তো দূরাস্ত। এ অবস্থায় তাদেরকে আলাদাভাবে কেন ‘পতিত’ বলে চিহ্নিত করা হলো? কারণটা কি খুব স্পষ্ট না? কারণ সমাজের পুরুষের দুশ্চরিত্রের অনেকটা চেহারাই তাদের কাছে উন্মুক্ত। ভ্রষ্ট প্রথা মেনে সমাজে প্রতিপত্তি গড়ে তোলা উপরতলার বেশির ভাগ পুরুষ এই সকল নারীর ভোক্তা। কাঁচা বাজারে গেলে তারা যেমন প্যান্ট উঁচু করে চলেন, কাদা মাড়ালে যেমন তাদের নাক কুঁচকে যায়, সেই সকল উন্নাসিকের গতায়াত এই অঞ্চলে অহরহ। আর সেজন্যেই, যৌনকর্মীদেরকে সমাজের নিচু থেকে নিচুতলায় ঠেলে দিলে এই সব পুরুষদের স্বস্তি হবে। এতোটা নিচুতলা থেকে তারা আর কিইবা বলবে, আর সেটা কে-ইবা শুনবে?

বিষয়টা প্রবলভাবে রাজনৈতিক – ক্ষমতার বন্টনের মতো। কিন্তু সে দিকে না তাকাই। আমরা বরং ‘আম’ জনতা সেজে থাকি। অন্ধকারে আমাদের মাঝে কে কে এই পল্লীতে এগুবেন সেটা একান্তই তার নিজস্ব ব্যাপার। আমরা সেখানে কোন জাজমেন্টাল অবস্থান নিতে চাই না।

কিন্তু নির্বাচন কমিশন যৌনকর্মীদের স্বীকৃতি দিচ্ছেন। যুগের পর যুগ ধরে তাদের প্রতি জমে ওঠা অবহেলা, নাক সিঁটকানোর স্বভাবটাকে বদলাতে তারা সমাজের আরো পাঁচজন পেশাজীবীর কাতারে উঠিয়ে নিয়ে আসছেন। এই পদক্ষেপটি যাদের গাত্রদাহের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে, তারা স্বভাবতই উপরে উল্লিখিত মানুষদের মতো মন-মানসিকতা ধারণ করেন। যতোক্ষণ তাদের সেই কূপমণ্ডুক, পুরুষতান্ত্রিক মনোভাব তারা নিজেদের ভেতর রাখছেন, ততোক্ষণ সেটা নিয়ে মনে হয় না কারো মাথাব্যথা আছে। কিন্তু যখনই তারা গলাবাজি করে সমাজের নৈতিকতা, এবং অনুশাসনের বুলি আওড়াতে যাবেন, তখন মনে করিয়ে দেয়া জরুরি যে এই নারীদের পেশাবৃত্তির ভোক্তাশ্রেণীটি কারা।

যৌনকর্মীদের পেশাজীবী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়াটা মূলত পুরুষ ভোক্তাদেরকে ভোক্তা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার সমতূল্য। এই বিষয়টিই হয়তো কাঁটার মতো গলায় বিঁধছে অনেকেরই। তাদের জন্যে প্রেসক্রিপশন, দ্রুত ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন। আপনার পুরুষতান্ত্রিকতার গলায়, মানবতার ফোরসেপ দিয়ে কাঁটাটি না তুললে অচিরেই সেপটিক হয়ে যাবে। তখন না গোটা গলাটাকেই কেটে ফেলতে হয়!

***

[*নির্বাচন কমিশনে এবং সরকারি কর্তাব্যক্তিদের মাঝে কোটি কোটি দোষত্রুটি আছে। এই সরকার ইতোমধ্যেই বিভিন্ন খাতে ব্যর্থতার পরিচয় ‘সগৌরবে’ রেখেছে। তারপরেও এরকম কিছু দুরন্ত উদ্যোগের জন্যে তারা সাধুবাদ দাবি করেন। বাংলাদেশে সামরিক ও ধর্মব্যবসায়ীদের প্রতিক্রিয়াশীলতার পিঠে এরকম প্রগতিশীল পদক্ষেপকে স্বাগত জানাই!]

৩,৯৬৯ বার দেখা হয়েছে

২৯ টি মন্তব্য : “যৌনকর্মীঃ একজন পেশাজীবীর স্বীকৃতি ও তদসংলগ্ন ছেঁড়া চিন্তা”

  1. রকিব (০১-০৭)
    যৌনকর্মীদের পেশাজীবী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়াটা মূলত পুরুষ ভোক্তাদেরকে ভোক্তা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার সমতুল্য। এই বিষয়টিই হয়তো কাঁটার মতো গলায় বিঁধছে অনেকেরই।

    ব্যাপারটা গলধঃকরণে কিঞ্চিৎ কষ্ট হলেও সত্য।


    আমি তবু বলি:
    এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..

    জবাব দিন
  2. আদনান (১৯৯৭-২০০৩)
    নারী বা পুরুষ কেউই এই চর্চার বাইরে নেই। হয়তো অংশগ্রহণের স্বাভাবিকতায় নারী যুগযুগ জিইয়ে রাখা জড়তা এখনও কাটাতে পারে নাই, তবু প্রায় সমানে সমানেই (আড়ালে বা প্রকাশ্যে) যৌনতার লালন ঘটছে।

    সব শ্রেণীর ক্ষেত্রেই এটি সত্য।

    জবাব দিন
  3. মইনুল (১৯৯২-১৯৯৮)

    এই লোকগুলোকে খুবই বিরক্ত লাগে। খুব জানতে ইচ্ছে করে, দেশ গেলো দেশ গেলো -- করে দশদিক কাপাচ্ছে যারা, তাদের কয়জন কতভাবে এইসব মেয়েদের পুনর্বাসনের জন্যে সাহায্য করেছে। আমি নিশ্চিত ৮০% এরও বেশি ক্ষেত্রে মেয়েরা লাস্ট রিসোর্ট হিসেবেই এই পেশা বেছে নেয়। সময় মতন সাহায্য সহযোগিতা পেলে অনেকেই হয়ত এই পেশা বেছে নিতো না। ওই সময়ে এই লোকগুলো কই ছিলো? ভাত দেবার মুরোদ নেই, কিল দেয়ার সময় গোঁসাই।

    জবাব দিন
    • আন্দালিব (৯৬-০২)

      আপনার মতো আমিও বিরক্ত মইনুল ভাই। পার্সেন্টেজটা আরো বেশি। স্বেচ্ছায় এই পেশায় যাওয়া নারীর সংখ্যা অনেক কম। বেশিরভাগই প্রেমিকের দ্বারা প্রতারিত হয়ে, বা অভাব অনটনে পড়ে, বা ধর্ষণের পরে সমাজচ্যূত হয়ে বা এরকম বিভিন্ন কারণে যৌনকর্মী হয়ে যান। এই প্রক্রিয়াটা নারীর সম্মতিতে ঘটে না। তাই সেখানে ছোঁয়া বাঁচিয়ে, নাক সিঁটকে চলা লোকজনের মাথায় বাড়ি দিতে ইচ্ছা করে।

      আমরা মধ্যবিত্তরা আসলে একটা বাবলের মধ্যে বাস করি। প্রান্তিক মানুষের জীবনযাপন একদিন জানতে পারলে সেই বাবল ঠুশ করে ফেটে যায়। তখন আর এই গলাবাজি করা যায় না।

      জবাব দিন
  4. ওয়াহিদা নূর আফজা (৮৫-৯১)

    পেশার সংগা কী? কেউ যখন স্বেচ্ছায় তার নিজের কোন দক্ষতা বা শ্রমের বিনিময়ে জীবনধারনের জন্য কোন জীবিকা বেছে নেয় তখন তাকে আমরা পেশা হিসেবে চিহ্নিত করি। আমার দৃষ্টিকোন থেকে পতিতাবৃত্তি (খেয়াল করো পতিতাজীবি না পতিতাবৃত্তি) প্রফেশন নয় বরং এটা এক্সপ্লয়টেশন। তুমি নিজেই উল্লেখ করেছো যে ৮০% স্বেচ্ছায় এ পথে আসে না। এই পথটি শুধু নারীই নয়, শিশু এমনকি পুরুষের জন্যেও ক্ষতিকর। এখন প্রশ্ন হলো তাহলে এটা টিকে আছে কেন? সমাজপতিরাই এটাকে টিকিয়ে রেখেছে। তাদের প্রয়োজনের তাগিদে। একই তাগিদে টিকে যায় ড্রাগডিলার, চোরাকারবারীরা। রক্তবিক্রেতারও।
    বাংলাদেশের অনেক খারাপ খবরের মাঝে যখন দেখি ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ হতে যাচ্ছে তখন খুব আশান্বিত হয়ে পড়ি। কিন্তু আমাদের সমস্যা হচ্ছে তরী একদম তীরে এনে ঠিকমতো ভিড়তে না পারা। আমেরিকার মতো দেশও (নেভাদার কিছু অংশ ছাড়া) পতিতাবৃত্তিকে বেধ পেশার লাইসেন্স দেয়নি। সেখানে আমাদের দেশের মানুষের মানষিকতা কী নির্বাচন কমিশন জানে না? কেন তারা ইস্যু তেরী করার সুযোগ করে দিল। মৌলবাদী ছাড়াও সাধারণ মানুষেরাও তো এটা মেনে নিতে পারবে না। চিন্তা করে দেখ যে কোন পতিতার কারণে যদি কেউ মনে করে তার সুখের সংসার ভেংগে যেতে শুরু করেছে সেও কী এখন এর বিরুদ্ধে যাবে না? এখানে আপাতত ইতি টানছি।


    “Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
    ― Mahatma Gandhi

    জবাব দিন
    • সৌমিত্র (৯৮-০৪)

      ওয়াহিদা আপু
      ড্রাগডিলার, চোরাকারবারী, রক্তবিক্রেতা - এদের থেকে যৌনকর্মীদের অনেক মৌলিক পার্থক্য আছে। তার একটা আপনি নিজেই বলেছেন - প্রফেশন বনাম এক্সপ্লয়টেশন। ঠিক এই কারণেই তাদের 'পেশা'র স্মীকৃতিটা জরুরী।
      আর ঘর ভাঙার যে ব্যাপারটি বললেন সেটা একটা অত্যন্ত দুঃখজনক বাস্তবতা, তবে যৌনকর্মীদের পেশাগত স্মীকৃতি পাওয়ার সাথে তার কোনো ক্ষতিবৃদ্ধির সম্পর্ক আবিষ্কার করতে পারলাম না। যৌনকর্মীদের পেশাগত স্মীকৃতি দিলে কি তাদের কারণে ঘর ভাঙার হার বাড়বে বা কমবে? মনে হয় না। বরং পুরুষশাসিত সমাজের ঢেকে রাখা কুৎসিত দিকটি, যা কেবল মেয়েদের উপর চাপিয়ে দেওয়া হতো, তার বিরোধিতা করার একটা standpoint পাওয়া যাবে।

      জবাব দিন
    • আন্দালিব (৯৬-০২)

      "কেউ যখন স্বেচ্ছায় তার নিজের কোন দক্ষতা বা শ্রমের বিনিময়ে জীবনধারনের জন্য কোন জীবিকা বেছে নেয় তখন তাকে আমরা পেশা হিসেবে চিহ্নিত করি।"

      আপু, বাংলাদেশে মনে হয় এই সংজ্ঞাটা পুরোপুরি খাটে না। তাহলে প্রচুর পেশাজীবীকে আমি চিনি জানি যারা অনিচ্ছায় পড়ে নিজের পেশায় রয়েছেন। বাংলাদেশের মানুষের জীবনযাত্রার মান এতোটাই খারাপ, এতওটাই যে সেটাকে আমরা সচরাচর উল্লেখ করি না। সেই হিসেবে জোর করে যৌনকর্মী বানিয়ে ফেলা একটা বিরাট জনগোষ্ঠীকে কেবল সংজ্ঞায় ফেলতে না পেরে বাতিল করে দেয়া যায় না।

      "এখন প্রশ্ন হলো তাহলে এটা টিকে আছে কেন? সমাজপতিরাই এটাকে টিকিয়ে রেখেছে।"
      এখানে একমত হতে পারলাম না আপু। দেখুন সমাজপতি টার্মটাই খুব অস্পষ্ট। এরা ঠিক কারা? আপনি কি রাজনীতিবিদদের কথা বলছেন? এরা নিজেরা কি যৌনকর্মীদের সরাসরি ভোক্তা?

      বাংলাদেশের মানুষের হিসেবে এই রায় হয়তো বেশ প্রগতিশীল হয়ে গেছে। যে বাঙালি ৩৯ বছর আগে 'ধর্মনিরপেক্ষতা'কে সাংবিধানিক মূলনীতি বানাতে পারে, সেই বাঙালিই সেটা পুনর্বহাল হলে 'কুফর'-এর সাথে তুলনা দেয়। হয়তো গত ৩৫ বছরে আমরা প্রবল প্রতিক্রিয়াশীলতার রোগে ভুগেছি। ভুগে ভুগে জীর্ণ মস্তিষ্কে এখন কিছু নাই। তাই খুব মানবিক বা যৌক্তিক আবেদন আমাদের কাছে পাত্তাই পায় না।

      "কোন পতিতার কারণে যদি কেউ মনে করে তার সুখের সংসার ভেংগে যেতে শুরু করেছে সেও কী এখন এর বিরুদ্ধে যাবে না?"
      > পতিতার "কারণে" সংসার ভাঙতে শুরু করলে সেই সংসার 'সুখের' হয় কেমন করে? আর মূল কারণ কি আদৌ যৌনকর্মী? নাকি যে লোকটা তার কাছে গেল সে?
      যুগ যুগ ধরে শেখানো হয় যে 'মেনকাই সন্ন্যাসীকে ফুসলিয়েছে', কেউ সন্ন্যাসীর মনের ভেতর উঁকি দিয়ে দেখে না!

      জবাব দিন
  5. রাব্বী (৯২-৯৮)

    আন্দালিব লেখাটার জন্য সাধুবাদ।

    ১.
    আমার ধারণা, পেশা হিসেবে যৌনকর্মকে স্বীকৃতি নির্বাচন কমিশনের একটি নতুন সাহসী সংযোজন মাত্র। একজন নাগরিককে, সেটা খুব সম্ভবত শুধু নারী, যৌনকর্মকে পেশা হিসেবে গ্রহন করতে হলে বয়স নূন্যতম ১৮ বছর হতে হয় এবং প্রথম শ্রেনীর একজন ম্যাজিস্ট্রেটের কাছ থেকে লাইসেন্স প্রত্যয়ন করতে হয়। দুটি ব্যবসার নৈতিক এবং সামাজিক পেক্ষাপট ভিন্ন হওয়া সত্ত্বেও, বাংলাদেশে মদ এবং যৌন ব্যবসার ধরন প্রকরণে খানিকটা মিল রয়েছে, সেটি হচ্ছে অস্পষ্টতা এবং সামাজিক অস্বীকৃতি। কিন্তু রাষ্ট্রীয়ভাবে যে এদুটি অস্বীকৃত তা নয়। সমস্যাটা আমাদের, বানিজ্যিক চাহিদা এবং সরবরাহের যে সামাজিক এবং অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট সেটি মেনে নেওয়া এবং সম্মানের সাথে স্বীকার করার মতো উদারমনস্কতা এবং সৎ সাহস নেই। ব্যাপারটি নিয়ে যেহেতু একটি ঢাক গুঢ় গুঢ় বাস্তবতা রয়েছে তাই বিষয়টি নিয়ে আমাদের জানাশোনাও সীমিত এবং অস্পষ্ট। শোষন, নির্যাতন এবং পুরুষতান্ত্রিক বাস্তবতার ডাইমেনশন অনেক বিস্তৃত তাই সেদিকে এখন যাচ্ছি না।

    ২.
    যৌনকর্ম পেশা কিনা তা নিয়ে আলোচনা হতে পারে। তবে যারা পেশাদার যৌনকর্মী তারা এটিকে পেশা হিসেবে দাবি করেন তাদের সামাজিক স্বীকৃতি এবং অধিকার আদায়ের জন্য। তাদের সংগঠনগুলো এটি নিয়ে জোর এ্যাডভোকেসি চালায়। কারণ যৌনপল্লীর কোন যৌনকর্মী মারা গেলে এখনো তাদের কবর দিতে অস্বীকৃতি জানানো হয়। সাধারণত নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হয়। এরকম আরো কিছু গুরুত্বপূর্ন বিষয় রয়েছে। আমার মত হলো, শোষণ নির্যাতন যাই হোক, জীবনের দামে কেনা জীবিকা কেন পেশা হবে না?

    ৩.
    আমার ধারণা, নির্বাচন কমিশন শুধু নারী যৌনকর্মীদের পেশাকে স্বীকৃতি দিয়েছে। কিন্তু খোদ ঢাকা শহরেই যে একটি বিস্তৃত পুরুষ যৌনকর্মীর বাজার রয়েছে, তাদের সেই পেশার স্বীকৃতি কে দিবে? যৌনকর্মী শব্দবন্ধনীটি লিঙ্গ নিরপেক্ষ হলেও তারা বাদ পড়ে যাচ্ছেন। তাদের দেশ জোড়া পেশাদার কর্মী, নেটওয়ার্ক এবং সংগঠনের কর্ম তৎপরতা দেখলে তাদেরকে অবজ্ঞা করার কোন সুযোগ নেই। এখন প্রশ্ন হলো, আমাদের সেই সোশ্যাল টলারেন্স আছে কিনা এরকম একটি সামাজিক প্রপঞ্চকে মেনে নেবার মতো?

    পেশাটির প্রতি আমার নৈতিক সমর্থন এবং শ্রদ্ধা রয়েছে।


    আমার বন্ধুয়া বিহনে

    জবাব দিন
    • আন্দালিব (৯৬-০২)

      চমৎকার মন্তব্য রাব্বী ভাই।
      প্রথম পয়েন্টের সাথে আমি একটু যোগ করি, মদ বা যৌন ব্যবসার মূল বিস্তৃতিটা ছিলো উচ্চ ও নিম্নবিত্তে। মধ্যবিত্ত অনেকদিন 'লুকিয়ে চুরিয়ে' দুটো পথে যাতায়াত করেছে সামাজিক অগ্রহণযোগ্যতার ভয়ে। এখন কিছুটা অর্গল খুলেছে, যে যার মতো জীবনযাপন শুরু করেছে। ঢাকা'র মতো শহরে এখন পাশের ফ্ল্যাটের কর্তা কি করেন সেটা অনেকেই খোঁজ নিতে যায় না (বা চায় না)। এতে করে ভণ্ডামি কমেছে বলে আমি মনে করি। তবে এই বিষয়ে আমার কোন গবেষণা নাই, আশেপাশে যা দেখি, সেটা থেকে বলছি।

      "জীবনের দামে কেনা জীবিকা কেন পেশা হবে না?"
      > খুব জরুরি প্রশ্ন। আর কারো জীবিকাকে রাষ্ট্র অনুমোদন দিবে তখনই যখন সেটা রাষ্ট্রের আইনের সাথে সাংঘর্ষিক হবে না। এখানে যৌনকর্মীদের পেশার কারণে তা কোনভাবে সেটা ঘটে নি বলেই নিঃকঃ সেটাকে অনুমোদন করেছে।

      আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলানোর সময় চলে এসেছে। ঢাকঢাক গুড়গুড় সমাজে মানুষকে ন্যূনতম অধিকার দূরে থাক, সম্মানই দেয়া হয় না। এ'রকম দেশে সবাই সামাজিক 'অবক্ষয়' নিয়ে কথা বলে, অথচ যৌনকর্মীদের পুনর্বাসন বা তাদের অধিকার আদায়ে এই কথা বলা লোকদের পাওয়া যায় না।

      জবাব দিন
  6. নূপুর কান্তি দাশ (৮৪-৯০)

    অসাধারণ বলেছো আন্দালিব। সেইসাথে অসাধারণ মন্তব্যগুলোও পড়ছিলাম।
    কিন্তু অপরিচয়ের আড়ালে যাঁরা নানাভাবে বেঁচে থাকার জন্য লড়ে যাচ্ছেন,
    তাঁদের আমরা এই যে স্বপ্নটি দেখাচ্ছি, বলছি স্বীকৃতি, অধিকার ইত্যাদি অঙ্গীকারের কথা, কতটা রাখতে পারবো এসব প্রতিশ্রুতি? হ্যাঁচকা টানে ফর্সা আলোতে নিয়ে এসে আবার কোন খেলা খেলবোনা তো? নির্বাচন কমিশন মানলাম সৎ বুদ্ধিতে চলছে, বাকীদের খবর কি? যৌনকর্মীদের ভালোভাবে 'চিহ্নিত' করে নিয়ে তাঁদের নিষ্পেষণ করার চিরস্থায়ী কোন বন্দোবস্ত করছিনা তো আমরা?

    জবাব দিন
    • আন্দালিব (৯৬-০২)

      নূপুর ভাই, আপনার আশঙ্কাটা বাংলাদেশে বসে খুবই স্বাভাবিক, আমিও ভেবেছি। তারপরেও মনে হয়েছে, যৌনকর্মীদের পেশাজীবীর স্বীকৃতি দেয়ায় এই পেশার ব্যাপারে গণসচেতনতা বাড়বে। নেতিবাচক দিকে না গিয়ে, নারী ট্রাফিকিং, জোর করে এই পেশায় নামিয়ে দেয়া, দালালবৃত্তি ইত্যাদি সেক্টরের দিকে অনেকে আলো ফেলবেন। এতে করে হয়তো গ্রামের কোন কিশোরীকে এই পেশায় আসতে হবে না আর।

      আপাতত, আমি আশাবাদী। আর সকল আশাবাদের মত এটা ফুরিয়ে যাবে না, এই আশা করতেছি।

      জবাব দিন
  7. পেশাটির প্রতি সমর্থন ও অসমর্থন যা-ই করুন না কেন, একটা কথা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে যে, ওদের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে আপনারা সবাই একমত।
    বৈধকরণের স্বার্থকতা নিয়ে আমার কিছু প্রশ্ন আছে-
    ১. সরকার তাদের STD s সম্পর্কে জ্ঞানদান করা ছাড়াও কি ছ'মাস বা অন্তত বছরে কি একবার pap smear করবে?
    ২. দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত কর্মীটিকে কি পেশা থেকে সরিয়ে চিকিৎসা দেবে?
    ৩. যারা বেরিয়ে আসতে চান তাদের জন্য কি অন্যান্য ভোকেশনাল ট্রেনিং এর ব্যবস্থা করে পুনর্বাসন করবে?
    ৪.তাদের ছেলেমেয়েরা কি অন্যান্য বাচ্চাদের সাথে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারবে?
    ৫.তারা কি কোনো দালাল ছাড়া-ই ইচ্ছে করলে স্বাধীনভাবে ব্যবসা করতে পারবেন?
    ৬.কোনো ক্লায়েন্ট দ্বারা নির্যাতিত হলে কি কর্মীটি কেস ফাইল করতে পারবেন?

    শুধুমাত্র ১,২ ও ৬ এর যেকোনো একটিও যদি বাস্তবায়িত হয়, তবে আমি স্বীকৃতির পক্ষে।আমার এই প্রশ্নগুলো কি গরীবের ঘোড়ারোগের মত শোনালো?

    ওয়াহিদা আপু তো বললেনই যে, আমাদের দেশে অন্তত ৮০% মেয়েই অনিচ্ছায় এই পেশায় চলে আসে।পেশা হিসেবে স্বীকৃতি পাবার পর হয়ত পুলিশি হয়রানি কিছুটা কমবে, কিন্তু আমেরিকাতেই ভেগাসের আশপাশে প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলো ছাড়া যেখানে লাইসেন্স দেয়া হয়নি, সেখানে আমাদের দেশে এই পেশা স্বীকৃত হলে তা নিয়ন্ত্রণ করতে কি আমাদের (আপাতত) দুর্বল law enforcement কি হিমশিম খাবেনা?
    ওয়াহিদাপুর কাছ থেকে আরও লিখা পেতে চাই।

    জবাব দিন
  8. সৌমিত্র (৯৮-০৪)

    আমেরিকার বেশিরভাগ অংশে পতিতাবৃত্তির আইরগত অনুমোদন নেই।
    সত্যি কথা।
    একই সাথে নিচের কথাগুলোও সত্যি...
    ১. আমেরিকাতে লিভ-টুগেদার সামাজিকভাবে স্বীকৃত।
    ২. আমেরিকাতে 'সিঙ্গেল মাদার' এবং পিতৃপরিচয়হীন শিশুরা সমাজের ভ্রুকুটির শিকার হয় না।
    ৩. আমেরিকাতে যৌন নিপীড়নের ঘটনায় কোনো নারী খুব সহজেই আইন-প্রয়োগকারী সংস্থার সহায়তা পায়, সেখানে তাকে দ্বিতীয়-দফা নিপীড়ীত হতে হয় না।
    ৪. আমেরিকাতে যৌন নিপীড়নের ঘটনায় কোনো নারী আইন-প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে যেতে সামাজিক বাধার সম্মুখীন হয় না।

    অ.ট-১: উপরের ৩ ও ৪ নং কারণে আমেরিকায় ধর্ষণের 'রিপোর্টেড কেস' এর সংখ্যা বেশি। এই সংখ্যাধিক্যকে কেউ কেউ এমন যুক্তিপ্রয়োগে অপব্যবহার করে থাকেন - দেখেছ, মধ্যপ্রাচ্য এবং ভারত-উপমহাদেশের চেয়ে আমেরিকায় ধর্ষণের হার কত বেশি! মধ্যপ্রাচ্য এবং ভারত-উপমহাদেশের 'আনরিপোর্টেড কেস' গুলোকে হিসেবে আনলে কোনদিকের পাল্লা ভারী হবে তা সহজেই অনুমেয়।

    অ.ট-২:এতো কিছুর পরেও আমি আমেরিকাকে প্রগতিশীল মনে করি না কারণ ওখানে ধর্মান্ধতাকে সযত্নে লালন করা হয়, যদিও সেই ধর্মান্ধতা হিংস্র নয় খুব একটা, তবে প্রগতিশীলও নয়।

    জবাব দিন
  9. ওয়াহিদা নূর আফজা (৮৫-৯১)

    কমেন্টগুলো পড়ে কিছু এলোমেলো শব্দ মাথায় এলো। তাই লিখছি,

    স্বর্গে পতিতারা বেধ বলে
    ইদানিং আর স্বর্গে যেতে ইচ্ছে করে না।
    না, আমি ওদের ইর্ষা করিনা
    বরং এ অমানবিকতা বড় অসহনীয় লাগে।
    মৃত ভেবে কতোগুলো হিংস্র শকুন
    বার বার ঠোকর দিয়ে যাচ্ছে
    হৃদয়হীন জেবিক তাড়নায়।

    ধারনা করা হয় মানব সভ্যতার একেবারে প্রারম্ভে নারীরা উদ্ভাবন করেছিলো কৃষিকাজের। তারপর পুরষ্কার স্বরুপ তারা কী পেল।
    একদল বন্দি হলো ঘরে মা হিসেবে।
    আরেকদল বন্দি হলো বাজারে পতিতা হিসেবে।

    আমি এখনও বিশ্বাস করি সবচেয়ে আধুনিক এবং সেকুলার মানষিকতার পরিচয় দেওয়া হবে যদি উতপাদনশীল কর্মসংস্থাপনের মাধ্যমে পতিতাদের সমাজের মূল স্রোতে পূনর্বাসিত করা।
    কার্ল মার্কসের মতো জ্ঞানী লোকের তত্বও শত বছর পর অকার্যকরী হয়ে পড়ে। সেখানে আমি নতুন কোন তত্বের পিছনে ছুটবো না। আমার কাছে এখন পর্যন্ত আমেরিকাই প্রমানিত বেস্ট নোন মেথর্ড।


    “Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
    ― Mahatma Gandhi

    জবাব দিন
  10. সৌমিত্র (৯৮-০৪)
    সবচেয়ে আধুনিক এবং সেকুলার মানষিকতার পরিচয় দেওয়া হবে যদি উতপাদনশীল কর্মসংস্থাপনের মাধ্যমে পতিতাদের সমাজের মূল স্রোতে পূনর্বাসিত করা।

    সম্পূর্ণ সহমত

    কার্ল মার্কসের মতো জ্ঞানী লোকের তত্বও শত বছর পর অকার্যকরী হয়ে পড়ে।

    আংশিক সহমত

    আমার কাছে এখন পর্যন্ত আমেরিকাই প্রমানিত বেস্ট নোন মেথড।

    সম্পূর্ণ দ্বিমত

    জবাব দিন
  11. মুহিব (৯৬-০২)
    পতিতার “কারণে” সংসার ভাঙতে শুরু করলে সেই সংসার ‘সুখের’ হয় কেমন করে?
    ‘মেনকাই সন্ন্যাসীকে ফুসলিয়েছে’, কেউ সন্ন্যাসীর মনের ভেতর উঁকি দিয়ে দেখে না!
    জবাব দিন
  12. সানাউল্লাহ (৭৪ - ৮০)

    আন্দালিব : শেষ পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন পিছু হটেছে। বিডিনিউজে পড়লাম : গণিকাবৃত্তি পেশা ভোটার নিবন্ধন ফরমে না রাখার সিদ্ধান্ত। যুক্তি সেই পুরনো। সাহস ধরে রাখতে পারলো না নির্বাচন কমিশন।


    "মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"

    জবাব দিন
  13. সানাউল্লাহ (৭৪ - ৮০)

    আন্দালিব, উপরে দেওয়া বিডিনিউজের লিংকটা কাজ করছে না। তাই পুরো খবরটাই তুলে দিলাম।

    গণিকাবৃত্তি পেশা ভোটার নিবন্ধন ফরমে না রাখার সিদ্ধান্ত
    Thu, Aug 26th, 2010 7:34 pm BdST

    ঢাকা, অগাস্ট ২৬ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)-যৌনকর্মী পরিচয় ছবিসহ ভোটার তালিকার কেন্দ্রীয় তথ্য ভাণ্ডারে (সেন্ট্রাল ডাটাবেজ) রাখার প্রস্তাব নাকচ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

    এ পেশাকে সামাজিকভাবে নিরুৎসাহিত করতেই ভোটার নিবন্ধন ফরমে পেশা নির্দেশিকায় ' গণিকাবৃত্তি' না রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানান নির্বাচন কমিশনার মুহাম্মদ ছহুল হোসাইন।

    ২০০৭ সালে ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রণয়ণের সময় নিবন্ধন ফরমে ১৪টি পেশার নাম (সরকারি চাকরি, বেসরকারি চাকরি, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, শিক্ষক, আইনজীবী, ব্যাংকার, ব্যবসা, শ্রমিক, কৃষক, ছাত্র/ছাত্রী, গৃহিনী, দিনমজুর, বেকার) উল্লেখ ছিল। এর বাইরে কেউ পেশার ঘরে তথ্য দিতে চাইলে 'অন্যান্য' ঘরটি ব্যবহার করা হতো।

    নিবন্ধন ফরমে অন্তর্ভূক্তির জন্য 'গণিকাবৃত্তি'সহ ৩০টি নতুন পেশার তালিকা সম্প্রতি ইসির কাছে প্রস্তাব আকারে জমা দেয় ভোটার তালিকা প্রণয়ন ও জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদানে সহায়তা প্রকল্প। 'গণিকাবৃত্তি' ছাড়া বাকিগুলো অনুমোদন করা হয়।

    ছহুল হোসাইন মঙ্গলবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "নিবন্ধন ফরমে পেশাটি রাখার পর গণিকাবৃত্তিকে উৎসাহিত করা হচ্ছে বলে মনে হতে পারে। এ ধরনের কর্মকাণ্ডকে সামাজিকভাবে নিরুৎসাহিত করতেই প্রস্তাবনাটি নাকচ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে এই পেশার যে কেউ 'অন্যান্য' অপশনটি ব্যবহার করবেন।"

    এই নির্বাচন কমিশনার জানান, যদিও ইসি কোনো পেশার স্বীকৃতি দেয় না; নির্বাচন কমিশনের ভোটার নিবন্ধন ফরমের পেশার ঘরে ' গণিকাবৃত্তির্ ' রাখা হলে তা পেশার স্বীকৃতির মতো মনে হয়। কিন্তু সামাজিক ও ধর্মীয়ভাবে এই পেশাকে নিরুৎসাহিত করা হয়।

    এ নিয়ে কয়েকজন জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা বলেছেন উল্লেখ করে ছহুল হোসাইন বলেন, "জেলা প্রশাসন যৌনকর্মীদের কোনো লাইসেন্স দেয় না। অনেকে গণিকাবৃত্তির জন্য নোটারি করে কার্যক্রম চালায়।"

    আরও যেসব পেশার নাম প্রস্তাব করা হয়েছে-ধোপা, কামার, কুমার, জেলে, মিস্ত্রী, প্রহরী, তাঁতি, পরিচ্ছন্ন কর্মী, মাঝি, কুলি, মুচি, বাবুর্চি, শিল্পী, হকার, রিক্সা/ভ্যান চালক, নাপিত, দর্জি, বিচারক, ঠিকাদার, ড্রাইভার, নার্স, সাংবাদিক, অবসরপ্রাপ্ত সরকারি চাকুরিজীবী, অবসরপ্রাপ্ত বেসরকারি চাকুরিজীবী, ইমাম/পুরোহিত/পাদ্রী, গৃহকর্মী, হেকিম/কবিরাজ, কসাই এবং মালি।

    পেশা ছাড়া নিবন্ধন ফরমে ভোটারের জন্য আরো ২৭টি তথ্য সংগ্রহ করা হয়। তবে জাতীয় পরিচয়পত্রে কোনো পেশার নাম তো উল্লেখ থাকে না।

    বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েটের) তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক এস এম লুৎফুল কবীর বিডিনিউজ টোয়েন্টফোর ডটকমকে জানান, কেন্দ্রীয় তথ্য ভাণ্ডারে ভোটারের যত বেশি তথ্য সংগ্রহে রাখা যায় ততই তা কাজে আসবে। তথ্যভাণ্ডারের বহুমুখী ব্যবহারও নিশ্চিত করা যাবে। যেমন কয়জন প্রতিবন্ধী রয়েছে, কী ধরনের প্রতিবন্ধী রয়েছে-তাও তথ্য ভাণ্ডারে থাকছে।

    প্রথমবারের মতো ছবিসহ ভোটার তালিকা তৈরির প্রকল্পের শুরুর দিকটায় পরামর্শক হিসেবে কাজ করেছেন লুৎফুর কবীর।

    'ইসির তথ্য সংগ্রহ মানেই পেশাগত স্বীকৃতি নয়। জাতীয় পরিচয়পত্রে পেশার নাম না থাকায় এতে করে কোনো কিছু যায়-আসেও না। তবে কখনো কখনো পরিসংখ্যান জানতেই এই তথ্যভাণ্ডার ভূমিকা রাখতে পারে। কোন পেশায় কয়জন ভোটার রয়েছে- তা সহজেই জানা যাবে।" - বলেন তিনি।


    "মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"

    জবাব দিন
    • রাব্বী (৯২-৯৮)
      এ নিয়ে কয়েকজন জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা বলেছেন উল্লেখ করে ছহুল হোসাইন বলেন, “জেলা প্রশাসন যৌনকর্মীদের কোনো লাইসেন্স দেয় না। অনেকে গণিকাবৃত্তির জন্য নোটারি করে কার্যক্রম চালায়।”

      লাবলু ভাই, আমি কয়েকজন যৌনকর্মীর ইন্টারভিউতে পড়েছি যে প্রথম শ্রেনীর ম্যাজিসট্রেট থেকে নারী যৌনকর্মীদের অনুমোদন নিতে হয়। যতটুকু মনে পড়ছে, খান এবং আরেফিনের (১৯৮৯) "পতিতা নারী - এ্যা স্টাডি অফ প্রসটিটিউশন ইন বাংলাদেশ"-এ যৌনপল্লীর কর্মীদের ব্যাপারে এটা উল্লেখ আছে। এটা কি একটু নিশ্চিত হওয়া যায়?


      আমার বন্ধুয়া বিহনে

      জবাব দিন
    • আন্দালিব (৯৬-০২)

      লাবলু ভাই, মন খারাপ হয়ে গেলো। আমি আরো আগে কমেন্টটা দেখি নি, হয়তো সে'সময়ে অনলাইনে ছিলাম না আর নিজের পাতায় না এলে তো বুঝাও যায় না।

      হয়তো আমি যেভাবে ভাবি, দিন দিন সেই ভাবনার লাইন এই সমাজের জন্যে খাপছাড়া হয়ে উঠছে। আমার ধারণা আমার মতো করে ভাবে এরকম সবার কাছেও এরকমটা মনে হচ্ছে। কী করে একটা সমাজে ব্যাধি ছড়ায়, সেটাকে সেই সমাজ লালন করে, পালন করে, জায়গামতো ইন্ধনও যোগায়। তারপরে যখন সেই ব্যাধি থেকে রোগবালাই আর নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া পায়, তখন আস্তে করে সুশীল সেজে সেটাকে উপেক্ষা করে!

      সামান্য 'স্বীকৃতি' দিতে গিয়েও এতোটা বিরোধ! আর আমি কোন বোকার স্বর্গে বাস করে ভাবছিলাম এর ফলে হয়তো যৌনকর্মীদের পুনর্বাসনের কাজ শুরু হবে! হায়! 🙁

      জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।