এসএসবিঃ সর্ষেয় ভূত!!! পর্ব-২

প্রথম পর্ব

৪।

জিয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। অনেকক্ষণ ধরে বসে আছে জামশেদ আলম এবং নাদিয়া ইসলাম। তাদেরকে বলা হয়েছে, কোন এক উচ্চপদস্থঃ কর্মকর্তা তাদের সাথে দেখা করবে। ওরা দুইজনেই যখন ‘আর কতক্ষণ লাগবে’ ভাবছে, এমন সময় দরজায় দেখা দিল কায়সার চৌধুরি।
-‘দুঃখিত, আপনাদেরকে বসিয়ে রাখার জন্য। আমি স্পেশাল এজেন্ট কায়সার চৌধুরি, এসএসবি।’
-‘আপনাকে দেখে খুব খুশি হয়েছি বলতে পারছি না। আমাদেরকে বলবেন কি, এতক্ষন ধরে কেন বসিয়ে রেখেছেন???’ ঝাঁঝের সাথে বলে উঠল নাদিয়া।
-‘কাম অন, নাদিয়া, বি কুল। কায়সার সাহেবকেই সব বলতে দাও…’ জামশেদ মাঝ থেকে বলে উঠল।
-‘দেখুন সব কথা তো এখানে বলা যাবে না, প্রথমে আমরা একটি নিরাপদ যায়গায় যাব। যেতে যেতেই সব বলি…’
-‘তার আগে আপনি আপনার আইডি দেখান…’ নাদিয়া এখনো স্বাভাবিক হতে পারছে না।
-‘আপনার এই সাবধানী মনোভাব আমার ভাল লেগেছে, এই মুহুর্তে আপনাদের উচিত হবে হান্ড্রেড পার্সেন্ট এলার্ট থাকা, ২৪/৭। এই যে আমার ব্যাজ… এখন কি আমরা যেতে পারি????’
-কিন্তু বাসায় তো আমাদের জন্য সবাই চিন্তা করবে’ চিন্তিত মুখে জানাল জামশেদ।
-‘চিন্তা করবেন না, আপনাদের দুজনের বাসায়ই জানানো হয়েছে যে, আপনারা আরও সপ্তাহ্‌ খানেক পর দেশে ফিরছেন। সো, রিলাক্স! এবার চলুন।’

লেক্সাস জীপে করে ওরা এয়ার্টপোর্ট থেকে বের হল। ড্রাইভ করছে কায়সার নিজেই। মাঝে মাঝেই রিয়ার ভিউতে দেখে নিচ্ছে কেউ পিছু নিল কিনা। এয়ারপোর্ট রোডে ওঠার পর পেছনে একটি সাদা প্রাইভেট কার দেখা গেল। ওয়াকিটকিতে কায়সার বলল,
-‘নিজাম, তোমরা বেশি কাছে চলে এসেছ, দুরত্ব একটু বাড়িয়ে আসতে থাক।’
-‘ইয়েস স্যার।’

নাদিয়া আর চুপ থাকতে না পেরে বলে উঠল,
-‘এবার বলুন, এসব হচ্ছেটা কি???’

৫।

-‘ও মাই গড!!!’ জামশেদ পুরো হাউমাউ করে উঠল, আর নাদিয়ার চোখে দেখা গেল অশ্রু। এসএসবি’র অফিসে বসে সবাই কথা বলছে। ঠিক সবাই না, কায়সার এ ক’দিনের ঘটনা বর্ননা করছে- জামশেদ এবং নাদিয়া একটু একটু করে আতংকে নীল হয়ে যাচ্ছে।
-‘এখন তাহলে কি হবে???’ ত্রস্ত হরিণীর মতন নাদিয়ার প্রশ্ন।
-‘প্রথমেই বলতে চাই, এখানে আপনারা সম্পূর্ণ নিরাপদ। সুতরাং এত আতঙ্কিত হবেন না। আপনাদের সেফটি এনশিওর করে আমরা মাঠে নামব। এখন পর্যন্ত প্ল্যানটা এমন যে, আমি জামশেদ আলমের ভূমিকায় অভিনয় করব। আর মিস নাদিয়ার জায়গায় আমাদের কোন লেডী এজেন্ট…’
-‘কিন্তু ওরা তো আমার ছবি দেখেছে’ চিন্তিত মুখে নাদিয়া বলল।
-‘মানে???’ কায়সার আঁতকে উঠল।
-‘সরকার থেকে আমাদের কাছে প্রথম যখন ডেটাবেজ তৈরির প্রপোজাল আসে, আমরা সবাই সানন্দে রাজি হয়েছিলাম। দেশের এই ঐতিহাসিক কাজের অংশ হতে কে না চায়!!! পরবর্তীতে ফর্মালিটিস কমপ্লিট করার জন্য আমরা সবাই যার যার রেজুমে জমা দেই…ঐ সময় আমরা দেশের বাইরে ছিলাম বলে জামশেদ ওরটা জমা দিতে পারে নি। কিন্তু আমারটার সফটকপি কাছে ছিল বলে মেইল করে পাঠিয়ে দিয়েছিলাম…সুতরাং বুঝতেই পারছেন, জামশেদের ভূমিকায় আপনি অভিনয় করলেও কোন সমস্যা নেই…কিন্তু আমার জায়গায় অন্যকে নিলেই এই অপারেশনের বারো বেজে যাবে!!!’
-‘দেখুন, প্রথমে আমরাও এত কিছু জানতাম না, জামশেদের বিকল্প হওয়ার সময় আমি ওর মতন ছদ্মবেশ নিয়ে হতাম…আর আপনার জায়গায় যে এজেন্ট থাকবে সেও ছদ্মবেশ নেবে…সুতরাং আপনার থাকাটা জরুরী কিছু না…’
-‘আপনি বুঝতে পারছেন না…ওরা যেদেরকে খুন করেছে তাঁরা সবাই আমার পরিচিত ছিল…আর দুইজন তো ছিল আমার ভার্সিটির সহপাঠী…ওদের যারা খুন করল তাদেরকে ধরার জন্য আমি যে কোন কিছু করতে রাজি আছি…আপনি প্লিজ আমার ইমোশনটা বোঝার চেষ্টা করুন…আর একটা জিনিস, ওরা জামশেদের ছবি দেখে নি, কিন্তু আমার দেখেছে…ছদ্মবেশ যত ভালোই হোক না কেন, সবসময়ই ধরা পড়ার একটি চান্স কিন্তু থেকেই যাচ্ছে…’

এ পর্যায়ে কায়সার ভেবে পেল না কি বলবে। নাদিয়াকে এই অপারেশনে নিতে ওর মন মোটেই সায় দিচ্ছে না…কিন্তু ও যে যুক্তি দেখালো তা খণ্ডণ করার মতন কিছু খুঁজে পেল না। শেষে নিজের উপর বিরক্ত হয়ে বলল,
-‘ঠিক আছে, ইউ আর ইন। তবে, শর্ত হল- আমি যা বলব আপনি তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করবেন এবং এখন থেকে যতটা সম্ভব আমাদের একসাথে থাকতে হবে…’
-‘ঠিক আছে।’
-‘কি বলছ নাদিয়া??? তুমি এই বিপজ্জনক কাজে কেন মিছেমিছি নিজেকে জড়াচ্ছ। ওসব এদের কাজ, এদেরকেই করতে দাও না…’জামশেদ বলল।
-‘জামশেদ, প্লিজ! তুমি এর মধ্যে কিছু বলতে এস না।’

কায়সার এবার ওর অন্যান্য এজেন্টদের বলল,
-‘ওকে বয়েজ, তোমরা তো সবই শুনলে। এখন থেকে তোমাদের প্রথম কাজ হচ্ছে জামশেদ সাহেবের সেফটি। এবং দ্বিতীয় কাজ যতটা সম্ভব ইনফো কালেক্ট করা। তোমরা সবাই যার যার সোর্সকে এলার্ট করে দাও। কাল থেকে আমরা ফুল সুইং এ অপারেশনে নামব।’

৬।

এক্সিকিউটিভ টেকনোলোজী লিঃ এর অফিস, বনানী। কায়সার চৌধুরি, থুক্কু জামশেদ আলম এবং নাদিয়া ইসলাম তাদের নিজ নিজ চেম্বারে বসে আছে। গতকালই জামশেদ আলমের রেজুমে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে, ছবিটা অবশ্যই কায়সারের। এক্সিকিউটিভ টেকনোলোজীর এম ডি কে বলে কায়সার জামশেদ আলমের ‘স্থলাভিষিক্ত’ হয়েছে। ইন্টারকম তুলে নাদিয়াকে ফোন দিল কায়সার।
-‘মিস নাদিয়া, কেউ কি আপনাকে রিং করেছে বা কনটাক্ট করার চেষ্টা করেছে???’
-‘নাহ্‌, এখনো কেউ করে নি…একটা কথা, আপনি আমাকে মিস নাদিয়া না বলে শুধু নাদিয়া বলবেন…জামশেদ তাই বলে…’
-‘ও আচ্ছা, আমি তো এখন আর আমি নই…হা হা হা…আর জামশেদকে আপনি কি বলে ডাকতেন?? নাম ধরে, নাকি বিশেষ কিছু????’
-‘দেখুন, আপনি বোধহয় ভুল করছেন…জামশেদ এবং আমি শুধুই কলিগ…খুব বেশি হলে বন্ধু বলতে পারেন…এর চেয়ে বেশি কিছু নয়।’
-‘ওকে, ক্রিষ্টাল ক্লিয়ার…এখন রাখি, কে জানি আসছে।’

কাঁধে ক্যামেরা নিয়ে ষন্ডা মতন এক লোক ওর অফিসে ঢুকল। ভয়াল মুখে যথাসম্ভব সুন্দর করে হেসে জিজ্ঞাসা করল,
-‘আপনিই জামশেদ আলম??? গতকাল মালেয়শিয়া থেকে এসেছেন???’
-‘জ্বি বলছি, কি দরকার বলুন তো…’
-‘আমি এসেছি ‘দৈনিক ডিজিটাল বাংলাদেশ’ থেকে। এই যে আমার কার্ড। আমরা আপনার এবং মিস নাদিয়া ইসলামের উপর একটি ফিচার লিখতে চাই, অবশ্যই যদি আপনাদের আপত্তি না থাকে আর কি!!!’
-‘না না, আপত্তি কিসের? একটু বসুন, আমি আপনাকে চা দিতে বলি।’

আধা ঘন্টা পর। ‘সাংবাদিক’ সাহেব চলে গেছেন। যাবার আগে অবশ্য ওর এবং নাদিয়ার ছবি তুলে নিয়ে গেছে। লোকটা যাবার পরপর থেকেই নাদিয়া পাংশু মুখে ওর সামনে বসে আছে।
-‘তাহলে এখন ওরা জানে আমাদের চেহারা কেমন!’
-‘আপনার মানে তোমার চেহারা তো আগে থেকেই জানত, আজ আমার চেহারাটাও দেখে গেল।’
-‘আপনার কি ভয় করছে না??’
-‘ভয়ের কি আছে? আমি এটাই তো চাইছিলাম যে, ওরা আমাদের কাছে আসুক। তা না হলে ওদের ধরব কেমন করে???’
-‘কিন্তু লোকটা তো চলে গেল…’
-‘চিন্তা কর না, এই অফিসের ভেতরে ও বাইরে আমাদের ছয়জন এজেন্ট আছে। যে মুহুর্তে লোকটি বের হয়েছে, ওর পিছু নেয়া হয়েছে। এবার তুমি তোমার রুমে যাও…আর হ্যাঁ, তুমি বোধহয় এখনো আমাকে আপন ভাবতে পারছ না…’
-‘মানে???’
-‘মানে এই যে, এখনো তুমি করে না বলে আপনি করে বলছ…’
-‘ইয়ে মানে, একটু সময় তো লাগবেই…ঠিক আছে আমি যাচ্ছি…তবে হ্যাঁ, বেচাল কিছু দেখলেই কিন্তু আপনার…ধ্যাত্তেরি…তোমার কাছে চলে আসব…’
-‘আমি তো তাই ই চাই…তুমি সবসময় আমার কাছে ছুটে আস…হা হা হা…’

ভেংচি কেটে নাদিয়া ওর রুমে চলে গেল। ও চলে যাবার পর কায়সার পকেট থেকে মোবাইল বের করে চীফকে ফোন দিল,
-‘গো এহেড!!’
-‘স্যার, ওরা টোপ গিলেছে। কিছুক্ষণ আগে এক সাংবাদিক এসে আমাদের দুজনের ছবি তুলে নিয়ে গেছে…’
-‘ওর পিছু নেয়া হয়েছে???’
-‘জ্বি স্যার।’
-‘ভেরি গুড। কিপ মি পোষ্টেড…’
-‘স্যার একটা কথা, ডেটাবেজ তৈরি সংক্রান্ত মিটিং-এ কে কে ছিলেন-সেই লিষ্টটা পেলে খুব ভাল হত।’
-‘তোমার কি মনে হয়, সরকারের মধ্যে কোন লিক আছে???’
-‘স্যার এখনই কিছু বলা মুশকিল, তবে সাবধানের মার নেই……’
-‘ওকে, ইমরানকে বলে দিচ্ছি তোমাকে পাঠিয়ে দিতে…তোমার সাথে ল্যাপটপ আছে তো???’
-‘জ্বি স্যার।।

পাঁচ মিনিটের মাথায় লিষ্ট হাতে পেয়ে গেল কায়সার। মোট সাত জন ছিল সেদিনের মিটিং এ। প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রতিমন্ত্রী, এসএসবি’র টু-আই-সি ইমরান স্যার, বুয়েটের কম্পিউটার বিভাগের বিভাগীয় প্রধান, সেনা প্রধান এবং পুলিশের আইজি। আপন মনে ভাবতে থাকল
কায়সার, ‘এদের মধ্যে কে হতে পারে বেঈমান????’

৬৩ টি মন্তব্য : “এসএসবিঃ সর্ষেয় ভূত!!! পর্ব-২”

  1. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    জুনা ভাই বস ... কোয়াণ্টিটি আর কোয়ালিটি... দুটাই একসাথে চালায় যাচ্ছেন... :boss: :boss: :boss:


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন
  2. দিহান আহসান
    এদের মধ্যে কে হতে পারে বেঈমান????’

    জুনা ভাই, তুমি নিজেই একটা হুংকার দাও বাংলা সিনেমার মত করে , বেরিয়ে আয় শয়তান ...
    এত তাড়াতাড়ি দেওয়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ। 🙂
    :clap: আশা করছি পরের পর্ব, কালকেই আসছে। 😛

    জবাব দিন
  3. সানাউল্লাহ (৭৪ - ৮০)
    পাঁচ মিনিটের মাথায় লিষ্ট হাতে পেয়ে গেল কায়সার। মোট সাত জন ছিল সেদিনের মিটিং এ। প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রতিমন্ত্রী, এসএসবি’র টু-আই-সি ইমরান স্যার, বুয়েটের কম্পিউটার বিভাগের বিভাগীয় প্রধান, সেনা প্রধান এবং পুলিশের আইজি। আপন মনে ভাবতে থাকল কায়সার, ‘এদের মধ্যে কে হতে পারে বেঈমান????’

    আমি বেঈমানরে চিনছি!! দেখি জুনার সঙ্গে মিলে কিনা। চালাইয়া যাও দলিল খান.......... B-)


    "মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"

    জবাব দিন
  4. কাইয়ূম (১৯৯২-১৯৯৮)

    জায়গামতন ঝুলাইছিস :thumbup: :thumbup:
    গরীব্জুনা, এক্কেবারে মিস্কিঞ্জুনা হবার আগেই সিরিজটা কমপ্লিট কর।

    -’এখন তাহলে কি হবে???’ ত্রস্ত হরিণীর মতন নাদিয়ার প্রশ্ন।

    পয়েন্টে পয়েন্টে সেরকম উপমা 😀

    ’আমি তো তাই ই চাই…তুমি সবসময় আমার কাছে ছুটে আস…হা হা হা…’

    কায়সার হালারে আরেকটু কম লুইচ্চা বানা :grr: :grr:


    সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!

    জবাব দিন
  5. রহিমা আফরোজা নূপুর (৯১-৯৭)

    জুনায়েদ, কঠিন এক সিরিজ চালু করলা দেখি! গুড জব! আদর্শ স্পাই ফিকশন এর সব মাল মশলাই তো আছে...দেশপ্রেম মুলক প্লট, ব্যঘ্রসম বস, বসের সুন্দরী পি.এ , হালকা লুইস নায়ক এবং ইনোসেন্ট কিসুই পারেনা খালি ঝামেলা পাকায় টাইপ লেডি পার্টনার...এক্সেলেন্ট! আর গল্পের নায়ক হিসাবে এক্স ক্যাডেটরা সব সময় টপ ক্লাস!!

    খুব মজা লাগলো পড়ে...পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম।

    জবাব দিন
  6. হাসান (১৯৯৬-২০০২)
    -’ঠিক আছে, ইউ আর ইন। তবে, শর্ত হল- আমি যা বলব আপনি তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করবেন এবং এখন থেকে যতটা সম্ভব আমাদের একসাথে থাকতে হবে…’

    পুরাই মাসুদ রানা :guitar: :guitar: :guitar:

    জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।