(সর্বশেষ লিখা দিনলিপির শিরোনাম দিয়ে চালিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম)
অলস মস্তিষ্ক নাকি শয়তানের আখড়া। গত দেড় মাসে বিধ্বংসী ও শয়তানি কার্যকলাপ কিছু করেছি বলে মনে পড়ছে না। নাকি দেড় মাস যথেষ্ট সময় নয়? কফিতে ইদানিং দুধ চিনি দিচ্ছি। ইন্সট্যান্ট কফি পানিতে গুলে পান করতে রুচি হয় না। আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলা জীবনধারায় ছোট একটি ব্যত্যয়। নিয়মগুলোর ব্যাখ্যা শুনে বন্ধুরা বিভিন্ন ভাবে তাকায়। সমীহ, তাচ্ছিল্য, অবিশ্বাস। কারো মুখে অশনি সংকেত। “বিয়া কইরা নে ******* দেখুম নে এইসব কেমনে চালাইস।” আমি প্রতিবাদ করি না। রোনাল্ড ম্যাকডোনাল্ডের চাইতে একটু ছোট হাসি দিয়ে ডানে তাকাই। জেট ব্ল্যাক রঙের জাগুয়ার এক্সজেএল গাড়িটি ওয়েস্টিনের ড্রাইভওয়ে থেকে বের হয়ে এসে প্রায় সন্তর্পণে এগিয়ে যায়। ভাঙা রাস্তায় কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত সাসপেনশান তাকে এনে দেয় শিকারী জাগুয়ারের মত স্থিরতা। চালকের পাশের আসনে বসে থাকা মেয়েটির দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে ভাবনার খেই হারিয়ে ফেলি।
‘She is riding shotgun.’ মেয়েটা কি জানে ‘রাইডিং শটগান’ কথাটার মানে? চালকের পাশের আসনে বসাটাই রাইডিং শটগান। কিন্তু কেন? ১৮০০ শতকের শেষের দিকের স্টেজকোচ আমলের এক্সপ্রেস মেসেঞ্জাররা চালকের পাশে একটি শটগান বা রাইফেল হাতে নিয়ে বসতেন যাতে মূল্যবান পণ্য কিংবা মূদ্রাবাহী কোচের উপর ডাকাতের হামলা রুখে দেয়া যায়। এই কথ্য শব্দটি পরবর্তীতে ১৯০০ শতকের শুরুর দিকে ওয়েস্টার্ণ চলচিত্রের মাধ্যমে বিস্তার লাভ করে। এই কথাগুলো না জানলেই বা কি ক্ষতি ছিল? অপ্রয়োজনীয় তথ্য জানা নিয়েও কম দুর্ভোগ পোহাতে হয়নি জীবনে। সরলীকরণ করলে দাঁড়ায়ঃ আঁতেল।
“জাগুয়ারের এই মডেলটা চরম করসে কিন্তু। টেল লাইটের ডিজাইনটা দেখ?” বাস্তবে ফিরে এসে দেখি সামনের বামের গলিতে ব্রেক চেপে বসে আছে শিকারী বিড়ালের এই যন্ত্র-বোন। কোথায় যেন ছিলাম? খুব বুঝেছি ভাণ করে মন্তব্যের সাথে একমত হই। আবারো হারিয়ে যাই। অনেক কিছু ভীড় করে আছে। খুব কাছের এক আত্মীয় মাদকাসক্ত। ইয়াবা। ফুটফুটে তিন পুত্র সন্তানের জনক। কেউ তার ছায়া মাড়ায় না। মাকে দেখলে মারধোর করে টাকার আশায়। খুন করার হুমকি। সেদিন সেগুন কাঠের সদর দরজা খুলে নিতে চেয়েছিল। বিক্রি করে কিছু টাকা তথা দুটো পিল। দরজার দিকে হাত কারণ ঘরে বিক্রয় উপযোগী জিনিসপত্র বলতে আর কিছু নেই। সেই কিশোরী মেয়ে ঐশীও কি এভাবেই পিতামাতাকে ভয় দেখাতো?
আগে দিনলিপি লিখতাম তারিখ সময় ও ছোট একটি নাম দিয়ে। এখন অলস লাগে। এটা নতুন গল্প। একদিনের জন্য একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ময়মনসিংহ গিয়েছিলাম গত শুক্রবার। ময়মনসিং গার্লস ক্যাডেট কলেজের মুনার সাথে রংপুর ক্যাডেট কলেজের সুহাসের বিয়ে। বিয়ের দাওয়াত পেলে জীবনের নিয়মগুলোকে ডাউন দ্য উইকেটে ছক্কা মারার অভ্যাসটা এখনো যায় নি। ইংরেজীতে যাকে বলে guilty pleasure. মনের সাধ মিটিয়ে গরুর রেজালা খাবার পরেরদিন বহির্গামী দহন মনে করিয়ে দিল পাকস্থলীর অভিযোজন প্রক্রিয়া প্রকল্পে স্থানীয় সরকার দুর্নীতি করেছে। বিয়ে, ছবি, বিদায় পর্ব শেষ করে পরের এক ঘন্টার দ্রুত ভ্রমনে ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ব্রহ্মপুত্রের পাড় ইত্যাদি এলাকা ঘুরে রওনা দিলাম ঢাকার উদ্দেশ্যে। ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কটি চারলেনে উন্নীত করার কাজ চলছে। বাঙলাদেশ সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কন্সট্রাকশন ব্যাটালিয়ন, আব্দুল মোনেম গ্রুপ ও সড়ক বিভাগের যৌথ উদ্যোগে কাজ চলছে। কাজ শেষ করার শেষ তারিখ থেকে সবাই পিছিয়ে। কিন্তু তার মাঝে সবচাইতে নিকটে যথাক্রমে সেনাবাহিনী ও আব্দুল মোনেম গ্রুপ। বিপুল ব্যবধানে পিছিয়ে সড়ক বিভাগ। আবারো ইংরেজীতে যাকে বলে the usual suspect.
অনেক অপেক্ষার পর ট্রাস্ট ব্যাংকের ভিসা ডেবিট কার্ডটি হাতে পেলাম। চলমান হরতালের জন্য নাকি কার্ড তৈরীর কাঁচামাল আমদানি করতে সমস্যা হচ্ছিলো তাই নির্ধারিত সময়ে কার্ড হস্তান্তর করতে নাকি তারা ব্যর্থ হচ্ছেন। আমাকে হাইকোর্ট দেখালো কিনা বুঝলাম না। যাই হোক কার্ডটি দেখতে প্যাকেট খুলে হাতে নিয়ে বেশ খানিকটা অবাক হলাম। উভয় পৃষ্ঠায় বেশ বড় করে আরবী ক্যালিগ্রাফিতে কোরানের আয়াত লিখা। ধর্মকর্ম মন দিয়ে পালন করে থাকেন এরকম যেকোন ধর্মাবলম্বীর কিংবা নিধার্মীর জন্য ব্যাপারটা অস্বস্তিকর হতে পারে। ব্যাংকের কার্ডগুলো সাধারণত একরঙা, স্পর্শকাতরতা বিবর্জিত হয়ে থাকে এমনটাই দেখে এসেছি। ট্রাস্ট ব্যাংকের এহেন মতিভ্রমের হেতু বুঝতে পারলাম না। প্রধান অফিসের এরকম একটি সিদ্ধান্ত নিয়ে শাখা ব্যাংকের ফ্রন্ট ডেস্কের এই খিটখিটে কর্মকর্তার সাথে গঠনমূলক আলোচনায় জড়ালে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তাই বুদ্ধিমানের মত বাড়ির উদ্দেশ্যে হাঁটা দিলাম।
তিন জিহাদী ওয়াশিক বাবুকে কুপিয়ে মেরে ফেলল সেদিন। লাশের দিকে নাকি তাকানোর মত অবস্থা নাই। কি চমৎকার! অভিজিৎদার খুন হলো তাই এফবিআই এসে কিছু NCIS-ধরণের শোডাউন দিয়ে চলে গেল। এদিকে আমাদের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকর্তারা মাছ ধরার বদলে টোপ নিয়ে টানাটানি। আমি কিন্তু ভাই মৌন জিহাদী। আমি খুশিতে মিষ্টিমুখ করতে এক চামচ চিনি মুখে দিয়েছি। বিচার চেয়ে কি হবে? বরং আসেন ২০২০ সাল নাগাদ আইএস-এর ইসলামিক রিপাবলিক বাঙলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়নে আমরা কাজ করি, বহুত ফায়দা হবে। এই কথাগুলো বলতেও ভয় লাগে। এরা তো সংঘবদ্ধ ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। এরা নজর রাখে, ঠিক যেমনটি গোয়েন্দারা রাখে। তারপরে শিকার হাতের নাগালে এসে গেলে সচল করে তোলে ওদের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত আততায়ীদের। ওদের চাপাতির কোপ এলোপাতাড়ি নয়। আপনি-আমি হয়তো নিরাপদ কারণ আমরা মৌন জিহাদী, বড়জোর আমার মত মিউমিউ। নাহ এত হতাশার কথা না লিখি। এই বিষয় বাদ। পরের অনুচ্ছেদে নতুন বিষয়।
গতকাল সন্ধ্যায় পাড়ার সেলুনে গিয়েছিলাম চুলে ছাঁট দিতে। নাম সেভেন স্টার সেলুন। চতুর্থ শ্রেণীতে পড়া ক্ষুদে বালকের চুল কেটে যিনি অভ্যস্ত, আড়াই বছরের অনুপস্থিতি তার চোখে পড়বেই।
‘আছিলা কই এতদিন?’
‘আমেরিকা।’
‘পড়াশোনা?’
‘হ।’
‘বাহ ভাল।’
কথোপকথন কখনোই চার-পাঁচ লাইনের বেশী আগায়নি। এবারো নয়। প্রায় কামানো মাথার খোঁচা চুলগুলো সম্পূর্ণ সাদা। ক্ষুরে হাত দিলে এখন ‘+’ পাওয়ারের চশমা চোখে উঠে আসে। সময় কি এত দ্রুত চলে যায়? আহামরি, কেতাদুরস্ত কোন সেলুন নয়। মনের মত ফ্যাশনেবল ছাঁট পেতে চাইলে বেগ পেতে হবে। কিন্তু এই চতুর্থ শ্রেণীর বালকের ব্র্যান্ড লয়ালটি একটু বেশী। আশেপাশের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত সেলুনগুলোতে গিয়ে ঠিক যেন শান্তি পাই না। আমার মনে হয় সেলুনের ক্ষেত্রে প্রায় প্রতিটা মানুষই ব্র্যান্ড লয়ালটির পরিচয় দিয়ে থাকেন। The Barbershop চলচিত্রটির কথা মনে করে হাসলাম। এই ব্র্যান্ড লয়ালটি সম্ভবত বৈশ্বিক একটি ব্যাপার।
বাহ! লেখা পড়ে কড়াস্বাদের আর ঘোরলাগা ঘ্রাণের কফির স্পর্শ পেলাম যেন!
রেশ থেকে যাবে একটু।
জীবনে কড়া কফি ফিরিয়ে আনতে জোর চেষ্টা চালাচ্ছি নূপুরদা! 🙁
\\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\
আপনের গদ্য লেখা খুব কড়া ভাই। সিরিয়াসলি । তেল টেল মারতেছিনা 😛 পড়লে একধরনের প্রশান্তি আসে মনে ।
ধন্যবাদ নাফিস! খুশী হয়ে গেলাম! :hatsoff:
\\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\
🙂 🙂
ফোলজারস নাকি ফ্রিএল (Friele) ভাবছি, মোকা! মনের ভুলে মেলিটা হলেই বা কার কী!
তোমার কুড়মুড়ে লেখা পড়ে মুগ্ধ হলাম সবুজ চায়ের সকালে!
ধন্যবাদ আপা। 😀 ফোলজার্স ব্ল্যাক সিল্ক, জেভালিয়া (সুইডিশ) ডার্ক রোস্ট এই দুইয়ের মাঝে ঘুরপাক খেতাম। :teacup:
শুনেছি আমেরিকান এক দম্পতি ঢাকার এমব্যাসি পাড়ার কাছে এক্সপ্যাটদের জন্য নর্থ এন্ড কফি রোস্টার্স নামে এক কফি শপ খুলেছে বছর তিনেক আগে। সেখানে নাকি পার্বত্য চট্রগ্রামের উৎপাদিত কফিও পাওয়া যায়। নাম হিল ট্র্যাক্টস ব্লেন্ড। কফি মেশিনটা কিনেই সেখানে ঢুঁ মারতে হবে!
\\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\
দারুন লাগলো মোকা, আসলেই :hatsoff:
ট্রাস্ট ব্যাঙ্ক এই কাহিনি কবে করলো, এতদিন তো ছিল না। মনে হয় ওদের ইসলামি ব্যাঙ্কিং এর ডেবিট কার্ড তোমারে ধরায় দিছে।
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
ভাই চেক করে দেখেছি। ওদের ইসলামি ব্যাংকিং এর জন্য আলাদা ডেবিট কার্ড নাই। এইটা সম্ভবত নতুন ডিজাইন এবং খুব শীঘ্রই এইটা নিয়া তারা ঠেলা গুঁতা খাবে!
\\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\
‘রাইডিং শটগান’ কথাটার মানে জানা হলো। পুরো লেখাটা ভালো লাগলো।
"আমার মনে হয় সেলুনের ক্ষেত্রে প্রায় প্রতিটা মানুষই ব্র্যান্ড লয়ালটির পরিচয় দিয়ে থাকেন" - চুলকাটা নিয়ে আমার "তন্দ্রা ও নিদ্রা" নামের একটা কবিতা আছে। ভবিষ্যতে কোনদিন এখানে পোস্ট করার আশা রাখছি।
ধন্যবাদ ভাই। কবিতার অপেক্ষায় থাকলাম! 🙂
\\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\
ভাল ছিল।
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
পড়লাম।
ভাল লেগেছে।
কিন্তু মন্তব্য করার কিছু পাচ্ছি না।
বীনা ভাবীর শেয়ার করা বাবুর ছবি ভাসে চোখের সামনে।
বাবুর লেখা তাকে হত্যা করার আগে পড়ি নাই।
কিন্তু কেউ বুঝবে না মনে হয় ভাই হারানোর বেদনা।
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
কেউ বুঝবে না ভাই। পুরানো কথা। কোপ (আক্ষরিক ও রূপক অর্থে) ঘাড়ে পড়ার আগ পর্যন্ত সব ঠিক।
\\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\
🙁
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
বরাবরের মতই ভাল।
খুব ভাল ও সুখপাঠ্য।
এইভাবে অবলিলায় কোন কিছু জানানোটা দারুন এনজয় করি। এই একটা ব্যাপারে আমিও হুমায়ুন আহমেদিয় ঘরানার...
Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.