অধ্যায় একঃ ১ম পর্ব, ২য় পর্ব
গত পর্বের পর
সরকারের তিনটি বহুল পরিচিত কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ সংস্থার কাজকর্মের পার্থক্যের আলোচনা দিয়ে এই বইটি শুরু করা হয়েছে। এখানে পার্থক্য বলতে তাদের গঠনগত ও আমলাতান্ত্রিক পার্থক্যের কথা বোঝানো হয়েছে। এই তিনটি উদাহরণের উপর ভিত্তি করে পরবর্তী অধ্যায়ে আমরা দেখবো কেন একই ধরনের কাজের দায়িত্ব থাকা সত্বেও এই সংস্থাগুলো ভিন্ন আচরণ করে থাকে (বিশেষ করে কার্ভার হাইস্কুল কিভাবে আচরণ পরিবর্তন করে থাকে।)
কিভাবে সেনাবাহিনী, কারাগার, কিংবা স্কুল চালাতে হয় সেটা শেখানোর জন্য বইটি এভাবে শুরু করা হয়নি। বরং উদাহরণ গুলো তুলে ধরা হয়েছে আমাদের মনে করিয়ে দিতে যে আমলাতন্ত্র একটি জটিল ও ভিন্নধর্মী বিষয়। এটি সহজ সরল কোন সামাজিক বিভাগ কিংবা রাজনৈতিক বিশেষণ নয়। সরকারের আকার কত বড় (এবং সম্ভবত কতটা আমলাতান্ত্রিক) হবে এই নিয়ে বহুল প্রচলিত বিতর্কের উভয় পক্ষই সরকারে সকল সংস্থাকে ছকেবাঁধা সংস্থা মনে করে থাকেন (যেমনটা আমরা মনে করে থাকি, সরকারী অফিস মানেই, ঘুষ, স্বজনপ্রীতি, দুর্নীতি, ইত্যাদি।) উদারপন্থীরা মনে করেন সমাজ তথা রাষ্ট্রের উন্নয়নে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিশ্চিত করতে আমলাতান্ত্রিক বিধিবিধান কমিয়ে আনতে হবে। অথবা তাঁরা ধরে নেন যে সরকার বাজেট বৃদ্ধির মাধ্যমে তথা উন্নত সুযোগ-সুবিধা, অবকাঠামো গড়ে তুলে, দক্ষ লোক নিয়োগ, কিংবা জনগণের এসব সংস্থার উপর অধিকার নিশ্চিত ও বৃদ্ধি করার মাধ্যমে সহজেই এই সমস্যার সমাধান করতে পারে। রক্ষণশীলরা, যারা মনে করেন আমাদের জীবনে সরকারের ভূমিকা যত কম তত মঙ্গল, উদারপন্থীদের কটাক্ষ করে থাকেন আমলাতান্ত্রিক বিধিবিধান নিয়ে তাদের বিপথগামী আশাবাদী চিন্তাভাবনা নিয়ে। তবে রক্ষণশীলেরা নিজেরাও আমলাতন্ত্রের অসঙ্গতিপূর্ণ সমালোচনা করে বলে থাকেন, “জনকল্যান অফিস কমাও বড় সেনাবাহিনী গড়।”
জনসাধারণের কোন কোন লক্ষ্য সরকারী কিংবা বেসরকারী তত্বাবধানে সবচাইতে ভালো ভাবে অর্জিত হবে এই ব্যাপারে আমাদের গভীরভাবে চিন্তাভাবনা করাটা জরূরী এবং এই বইয়ের শেষের দিকেও এই ব্যাপারে কিছুটা আলোকপাত করা হয়েছে। সরকারের আকার বড় কিংবা ছোট যেটা হওয়াই যুক্তিসঙ্গত মনে হোক না কেন এই দেশ কখনো সেনাবাহিনী ছাড়া কিংবা তার সেনাবাহিনীকে কখনো বেসরকারী তত্বাবধানে দেয়ার চিন্তাভাবনা করবে বলে মনে হয় না। হয়তো কারাগার ও স্কুলগুলো সরকারী হতে বেসরকারী তত্বাবধানে ভালো ভাবে পরিচালনা করা যায়, কিন্তু এই দেশ অদূর ভবিষ্যতে, অন্যান্য দেশের মতই, অপরাধ-বিচার ও শিক্ষা সংক্রান্ত লক্ষ্য অর্জনে সরকারী কারাগার ও স্কুলের উপর অধিকাংশে নির্ভরশীল থাকবে। বেসরকারী নিরাপত্তা সংস্থার সংখ্যা প্রচুর ও ক্রমবর্ধমান, কিন্তু তারপরেও পুলিশ থাকবে। স্টেট ডিপার্টমেন্ট যতই হাসি-তামাশার উৎস হয়ে থাকুক না কেন, বৈদেশিক নীতির পরিচালনা ও দেখভাল কোন হাসি-তামাশার বিষয় নয় এবং বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে এটি সরকারী আমলাতন্ত্র ছাড়া পরিচালনাও সম্ভব নয়।
সরকারী সংস্থাকে দুইভাবে পর্যবেক্ষণ করা যায়ঃ সংস্থার শীর্ষ থেকে তৃণমূল (টপ ডাউন) এবং তৃণমূল থেকে শীর্ষে (বটম আপ)। বেশীরভাগ বই, রাষ্ট্রের নির্বাচিত কর্মকর্তাগণ সাধারণত প্রথম পন্থা অবলম্বন করে থাকেন। এদিকে একাডেমিক দৃষ্টিকোণ ম্যাক্স ভেবারের তত্বের (এবং পরবর্তীতে কারবারের অর্থনৈতিক তত্ব)দ্বারা প্রভাবিত এবং প্রতিষ্ঠানের গঠন, উদ্দেশ্য ও সংস্থানের উপর আলোকপাত করে থাকে। রাজনৈতিল দৃষ্টিকোণ সংস্থার উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের অভিন্নতা, বিশ্বাস, এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের উপর আলোকপাত করে থাকে। এসব বিষয়ই আলোচনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু এসব বিষয়ের উপর গুরুত্ব আরোপ করতে গিয়ে আমরা সংস্থাগুলো কি কাজ করে সেটা ভুলে যাচ্ছি। ভুলে যাচ্ছি একটি সংস্থার কৃত কাজের সাথে অভিষ্ঠ লক্ষ্যে পৌঁছানোর কিংবা মক্কেলের চাহিদা পূরণ করার গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক।
দুটো পরিস্থিতি রয়েছে যেখানে টপ ডাউন দৃষ্টিকোণ নিশ্চিত ভাবে প্রয়োগ করা যায়। তবে দুটো পরিস্থিতিতেই একটি সংস্থা দৈনন্দিন কার্যক্রম হিসেবে কি করছে তা জানা প্রয়োজন। প্রথম পরিস্থিতি যেখানে সংস্থার লক্ষ্য অগ্রীম ও নিশ্চিতভাবে উল্লেখ করা থাকে এবং সংস্থার উর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ লক্ষ্য অর্জনের উদ্দেশ্যে সংস্থার অগ্রগতি নির্ভরতার সাথে পরিমাপ করতে পারেন। নবম অধ্যায়ে সরকারের এই ধরনের সংস্থার আমি নাম দিয়েছি উৎপাদনশীল সংস্থা বা (production organization) এবং উদাহরণ সরূপ অবসরভাতা ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে নিয়োজিত সোশ্যাল সিকিউরিটি এডমিনিস্ট্রেশানের কথা তুলে ধরেছি। দ্বিতীয় পরিস্থিতির উদ্ভব হয় যখন একটি স্বার্থ রক্ষাকারী দল কোন সংস্থার (যার লক্ষ্য অনেকটা অস্পষ্ট) কর্মকান্ডকে নিবিড় পর্যবেক্ষণের মাঝে রাখে এবং সেই পর্যবেক্ষণের উপর ভিত্তিকরে আইনসভার নিকট নিজ স্বার্থরক্ষাকারী প্রতিবেদন পেশ করে থাকে। পঞ্চম অধ্যায়ে এই ধরণের পরিস্থিতিকে আমি “মক্কেলভিত্তিক রাজনীতি” (client politics) নাম দিয়েছি এবং উদাহরণসরূপ মার্কিন প্রাক্তন সিভিল এ্যারোনটিক্স বোর্ড (বাংলাদেশের সিভিল এভিয়েশান অথরিটি সমতূল্য) এবং বর্তমানের এগ্রিকালচারাল স্টাবিলাইজেইশান এ্যান্ড কনসার্ভেশান সার্ভিস [১] (কিছুটা বাংলাদেশের কৃষি ব্যাংকের মত) এর কথা উল্লেখ করেছি।
আমাদের মনে হতে পারে সরকারী যেকোন সংস্থাই উপরে বর্ণিত পরিস্থিতির ভিত্তিতে কাজ করে থাকে কিন্তু বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই সেটা সত্য নয়। একজন সেনাসদস্য, কারারক্ষী, স্কুল শিক্ষকের কাজ কি আমরা সবাই তা জানি, সুতরাং বলা যেতে পারে সেনাবাহিনী, কারাগার, স্কুলের কর্মকান্ডের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো তাদের কাঠামো, বাজেট ও বিধিবিধান। যদি সেটাই সত্য হয় তবে কেন কার্ভার হাইস্কুল বাজেট ও কাঠামোগত পরিবর্তন না করেও এভাবে পরিবর্তিত হলো? ফরাসীবাহিনীর তুলনায় কম সুযোগসুবিধা ও সংস্থান থাকা সত্বেও কেন জার্মান বাহিনী ফরাসীবাহিনীকে পরাজিত করলো? স্টেট ডিপার্টমেন্টের কারাগার সম্পর্কিত সংস্থার কাঠামো সকল রাজ্যেই একই রকম এবং বাজেটের উপর কম নির্ভরশীল হওয়া সত্বেও কেন এক এক রাজ্যের কারাগারের সার্বিক মানের তারতম্য হয়?
এদিকে সরকারী সংস্থায় কর্মরত সদস্যরা ঠিক কি কাজ করে থাকেন সেটাও আমরা আন্দাজ করি না। সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি কিংবা ড্রাগ এনফোর্সমেন্ট এ্যাডমিনিস্ট্রেশান বাস্তবে ঠিক কি কাজ করে এ নিয়ে আমরা ভাবি, এবং মাঝে মাঝে দুশ্চিন্তাও করি। তবে আমরা মনে করি এইসব সংস্থায় কর্মরত সদস্যদের আচরণ নির্ভর করে সংস্থার আইন, বিধিবিধান, এবং সংস্থার কাঠামোর উপর। তাই আইন, বিধিবিধান কিংবা সংস্থার কাঠামো পরিবর্তন করলেই সংস্থার সদস্যদের আচরণ সহজেই পরিবর্তন করা যাবে। বিশেষ করে এই ধারণাটি সরকারী সংস্থার পূনর্গঠনে বিশ্বাসী রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের কাজকর্মের উপর প্রভাব ফেলে। এরূপ ধারণায় বিশ্বাসী হবার কারণে এসব রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এবং তাদের কর্মকান্ড পর্যবেক্ষণকারী গবেষকেরা প্রায়শই বিষ্ময়ের সাথে লক্ষ্য করে থাকেন যে সংস্থার পূনর্গঠন প্রচেষ্টা অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়েছে। বেশ কয়েকটি গবেষণায় সংস্থার পূনর্গঠনের ব্যর্থতা নিয়ে আলোকপাত করা হয়েছে। তবে বেশীরভাগ ফলাফল গবেষণাকৃত সংস্থাকে টপ-ডাউন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার ফলে হয়েছে।
উদাহরণ সরূপ রাষ্ট্রবিজ্ঞানী প্যাট্রিশিয়া রাসালের কথা বলা যেতে পারে যিনি ১৯৭০ সালে মাদক আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে ফেডারেল পর্যায়ের সংস্থার ভূমিকা পূনর্গঠনের প্রচেষ্টা নিয়ে গবেষণা করেছিলেন। সেসময় পূনর্গঠন প্রক্রিয়ায় ব্যুরো অফ নারকোটিকস এ্যান্ড ডেঞ্জারাস ড্রাগস এবং কাস্টমস সার্ভিসের কিছু কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে ডিপার্টমেন্ট অফ জাস্টিসের (বাংলাদেশের স্বরাস্ট্র মন্ত্রনালয় সমতুল্য) অধীন বর্ণিত দুটি সংস্থার কাজের পুনরাবৃত্তি, অপ্রয়োজনীয় প্রতিযোগীতার ইতি টানতে, এবং বৃহত্তর চোরাচালানির তদন্তের মান উন্নয়নের জন্য তৈরী করা হয় বর্তমান জমানার ড্রাগ এনফোর্সমেন্ট এ্যাডমিনিস্ট্রেশান বা DEA কিন্তু এতে বর্ণিত দুটি সংস্থার প্রতিযোগীতা ও শত্রুতা মোটেও বন্ধ হয়নি। তদন্ত প্রক্রিয়া ও তার মানের উল্লেখ করার মত পরিবর্তন তথা উন্নয়ন হয়নি এবং ১৯৮১ সাল নাগাদ এই সমস্যা সমধানের লক্ষ্যে আরো একটি নতুন সংস্থার কথা চিন্তা করা হচ্ছিল। মজার ব্যাপার হলো বর্ণিত ডিইএ এর পূর্বসূরী ব্যুরো অফ নারকোটিকস এ্যান্ড ডেঞ্জারাস ড্রাগস নিজেই ১৯৬৫ সালের দিকে আরো এক পুনর্গঠন প্রচেষ্টার ফসল। রাসাল এই ব্যর্থতার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলেন, নতুন সংস্থাটি কোন সৌন্দর্য্যবর্ধন ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের উদ্দেশ্যে তৈরী হয়নি; সংস্থার লোকবলের মাঝে দক্ষতা ও প্রেরণার কোন অভাব ছিলনা; এমনও হয়নি যে উদ্দিষ্ট সমস্যাগুলো কাল্পনিক ছিল; বরং মাদক নিয়ন্ত্রণ এজেন্টরা কি কাজ করে এবং কেন একজনের কাজের ধরণ আরেকজনের কাজের ধরণ থেকে ভিন্ন এই বিষয়গুলো সংস্থার স্থপতিগণ নকশা তৈরী করবার সময় পুরোপুরি বুঝতে ব্যর্থ হয়েছিলেন।
আমরা যদি আমলাতন্ত্রকে বটম-আপ দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার চেষ্টা করি তাহলে একটি সংস্থার পরিচালনা ও প্রসাশনিক ব্যবস্থা কতটা মজবুত বা কতটা দুর্বল এবং তা সংস্থার কর্তব্য পালনে কতটা সহায়ক তা সহজেই মূল্যায়ণ করতে পারবো। এই দৃষ্টিকোণের মাধ্যমে আমরা অনেক ধরণের আচরণ ব্যাখ্যা করতে পারব যা সাধারণত আমাদের কাছে দুর্বোধ্য ঠেকে। উহাহরণসরূপ বলা যায়ঃ
ক) ১৯৩০ সালে যখন টেনাসি ভ্যালি অথোরিটি (টিভিএ) গঠন করা হয়, রক্ষণশীলেরা এই নতুন সংস্থার কঠোর সমালোচনা শুরু করেছিল কারণ এই সংস্থাটি ছিল বেসরকারী বিদ্যুৎ উৎপাদনকারীর উন্নতির জন্য হুমকিসরূপ। কয়েক দশক পরেই এই একই সংস্থা — ঠিক আরো একটি গতানুগতিক বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের মত আচরণ করছে অভিযোগে — উদারপন্থীদের সমালোচনার মূল লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হলো। কেন?
খ) ১৯৬১ সালে যখন রবার্ট ম্যাকনামারা প্রতিরক্ষা সচিব ছিলেন, সামরিক বাজেট বহুলাংশে বৃদ্ধি করা সত্বেও উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তারা কেউ তাকে পছন্দ করতেন না। অপরদিকে মেলভিন লেয়ার্ড ১৯৬৯ সালে প্রতিরক্ষা সচিব থাকাকালীন সামরিক বাজেট উল্লেখযোগ্য হারে কমিয়ে আনা সত্বেও সামরিক হর্তাকর্তাদের কাছে তিনি পছন্দের পাত্র ছিলেন। কেন?
গ) বছরের পর বছর ধরে স্টেট ডিপার্টমেন্ট (মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়) মস্কো অবস্থিত মার্কিন দূতাবাসের রাঁধুনী, গাড়িচালক, মেরামত ও তদারকী ইত্যাদি কাজে সোভিয়েত নাগরিকদের নিয়োগ দিয়ে আসছিল হয়তো যাদের অনেকেই কিংবা প্রত্যেকেই কেজিবির গুপ্তচর ছিল। সরকারের উচ্চপদ থেকে যখন এদের পরিবর্তন করে মার্কিন নাগরিকদের নিয়োগ দেয়ার জন্য উপদেশ দেয়া হলো তখন খোদ স্টেট ডিপার্টমেন্ট এর বিরোধিতা করে বসলো। কেন?
ঘ) মার্কিন আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপনাস্ত্রগুলোর দেখভালের দায়িত্ব এখন মার্কিন বিমান বাহিনীর হাতে এবং তারা এই দায়িত্ব কর্তৃত্বের সাথে পালন করে থাকে। কিন্তু সর্বপ্রথম যখন আইসিবিএম বানানোর প্রস্তাব দেয়া হয়, বিমানবাহিনী এই ব্যাপারে নিস্পৃহ এবং কিছু ক্ষেত্রে বৈরীভাবাপন্ন ছিল। কেন?
ঙ) মার্কিন সরকার কর্মক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধির লক্ষ্যে জাহাজ নির্মাণ কারখানাগুলোতে নারী শ্রমিক বৃদ্ধির সুপারিশ করলো। বেসরকারী সংস্থাগুলোতে নারী শ্রমিক বৃদ্ধির হার সরকারী সংস্থাগুলো থেকে বেশী ছিল। কেন?
চ) শহরের সার্বিক আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতির জন্য যখন নতুন কোন পুলিশ চীফকে নিয়োগ দেয়া হয়, খুব কম ক্ষেত্রেই অপরাধের হার কমে আসে তবে ট্রাফিক টিকেট ইস্যু করার হার বৃদ্ধি পায়। কেন?
ছ) যখন এনভায়রনমেন্টাল প্রটেকশান এজেন্সি (ইপিএ) গঠন করা হলো অর্থনীতিবিদ যারা এই গঠন প্রক্রিয়া নিয়ে গবেষণা করছিলেন তারা সবাই সর্বসম্মতিক্রমে দাবী করলেন দূষন কমিয়ে নিয়ে আসার সবচাইতে কার্যকরী পন্থা হলো দূষনকারী কারখানার নিঃসৃত বর্জ্যের পরিমান মূল্যায়ন করে কারখানার উপর কর আরোপ করা। কিন্তু ইপিএ সেই উপদেশের তোয়াক্কা না করে দূষনকারীদের বিরুদ্ধে গণহারে মামলা ঠুকতে শুরু করলো। কেন?
পরবর্তি অধ্যায়গুলোতে এই প্রশ্নগুলোর উত্তরসহ অন্যান্য ধাঁধার সমাধান বর্ণিত বটম-আপ দৃষ্টিকোণের সহায়তায় দেয়ার চেষ্টা করবো। আমি মনে করি এই বটম-আপ দৃষ্টিকোন, রাজনৈতিক, আইনী, ও একাডেমিক পরিমন্ডলের প্রথাগত টপ-ডাউন দৃষ্টিকোণের একটি চমৎকার সংশোধন। তবে খেয়াল রাখতে হবে শুধু এই দৃষ্টিকোণের উপর বেশী আলোকপাত করতে গিয়ে সরকারের বিভিন্ন বিভাগ যথাঃ রাষ্ট্রপতি, গভর্ণর, মেয়র, আইনসভা, আদালতের নেয়া গুরুত্বপূর্ণ নীতি,কাঠামোগত সিদ্ধান্তগুলো যেন বাদ না পড়ে। আমলাদের কর্মক্ষেত্রের স্বাধীনতা সাধারণত সীমিত এবং কিছু ক্ষেত্রে সম্পূর্ণভাবে উর্ধ্বতন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সিদ্ধান্তের উপর নির্ভরশীল। বইয়ের পঞ্চম পর্বে আমি এই ব্যাপরে আলোকপাত করার চেষ্টা করেছি। এছাড়া অন্যান্য অধ্যায়ে আমলাতন্ত্রের উপর প্রায় নিয়মিত ভিত্তিতে খাটানো রাজনৈতিক প্রভাবের বিভিন্ন দিক নিয়েও আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। তিনটি গুরুত্বপূর্ণ আমলাতন্ত্র — যথাঃ সেনাবাহিনী, কারাব্যবস্থা, ও সরকারী স্কুল — নিয়ে আলোচনা শুরু করার মূল উদ্দেশ্য ছিল এই যে একটি সংস্থার শুধু লক্ষ্য, সংস্থান, ও কাঠামো নিয়ে গবেষণা করাটাই সেই সংস্থার ভবিষ্যত কর্মকান্ড, কাঠামোগত পরিবর্তন অনুমান করার জন্য যথেষ্ট নয়। সেই প্রেক্ষিতে একটি সংস্থার আরো কি কি বিষয় নিয়ে গবেষণা করলে সংস্থার কর্মকান্ড বুঝতে সেটা সহায়ক হবে এই বিষয়ে পরবর্তি অধ্যায়ে আলোচনা করার চেষ্টা করবো।
[১] লেখক বইটি লেখার সময় এবং পরবর্তী কয়েকটি সংষ্করণ বের করার সময় এগ্রিকালচারাল স্ট্যাবিলাইজেশান এ্যান্ড কনসার্ভেশান সার্ভিস একটি চলমান সংস্থা ছিল যেটি পরবর্তীতে ১৯৯৪ সালে আরো কয়েকটি কৃষি বিষয়ক সংস্থার সাথে একত্র করে ফার্ম সার্ভিস এজেন্সি (এফএসএ) গঠন করা হয়।
ভুল বানান, অসম্পূর্ণ বাক্য, অস্পষ্ট বাক্য চোখে পড়লে উদ্ধৃতি সহকারে মন্তব্যের ঘরে দেয়ার জন্য অনুরোধ রইলো।
(চলবে)
আগের লেখা গুলো পড়া হয়নি। এই উইকেন্ডে সব পড়ে তারপর কমেন্ট করবো।
জানি না কতদূর যাইতে পারবো তবে এই বইটার পরের দিকে চরম মজা। ইতিহাসের ভিত্তিতে গণপ্রশাসনের আলোচনা। ভদ্রলোকের প্রতিরক্ষা বাহিনী নিয়া আগ্রহ নাকি অবশেসান বোঝা বড় মুশকিল। তবে সিরাম বিনোদন। কথা হইলো লেখতে টাইম লাগে! 🙁
\\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\
আমার নেক্সট বুক এসাইনমেন্ট পরছে খুব ইন্টারেস্টিং একটা বই.. নাম ইন্টারন্যাশনাল পলিটিক্স এন্ড জম্বি ! 😛 জম্বি কাহিনী আর মেটাফোর দিয়ে ইন্টারন্যাশনাল পলিটিক্স ব্যাখ্যা করার চেষ্টা। কালকে পড়া শুরু করবো।
চালিয়ে যাও বইটার নাম পড়েছি অথবা ডিপার্টমেন্টের কোন একটা জেনারেল এডুকেশান কোর্সের টেক্সট বই। 🙂
\\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\