এখানকার এলাকাবাসীরা বেশীরভাগ ইউরোপীয় বংশোদ্ভূত। এদের বেশিরভাগ আমেরিকান নামের শেষে দাঁত ভাঙ্গা কোন ইউরোপীয় শেষ নাম থাকেই। আগেই বলেছিলাম ১৮৮৫ সালে মাইনিং কলেজ হিসেবে যাত্রা শুরু এই বিশ্ববিদ্যালয়ের। সেই সময় ফিনল্যান্ড, সুইডেন, পোল্যান্ড, থেকে প্রচুর শ্রমিক কাজ করতে এসে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে। যাই হোক পুরনো এই অধিবাসীরা পর্যন্ত এবারের শীতের উপর চটে গিয়েছিল। গত নভেম্বরে তুষার পড়া শুরু হয়ে সর্বশেষ তুষারপাত হয়েছে এই বছর মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত। সর্বশেষ তুষার ঝড় (নামটা বড় মজার Snow Storm Yogi Bear বা আমি বলতাম যোগী ভাল্লুক) আঘাত হেনেছে এপ্রিলের দ্বিতীয় সপ্তাহে। লেকের ওপারের পাহাড় মন্ট রিপলীর উপরে স্কিং ট্রেইলের উপর এক টুকরো জমাট বরফ প্রতিদিন চোখে পড়তো। সেই বরফের টুকরো হার মেনেছে জুনের প্রথম সপ্তাহে। এক পর্যায়ে দক্ষিণের অঙ্গরাজ্যের অধিবাসী বন্ধুরা পর্যন্ত জিজ্ঞাসা করে বসলো কোন চিপায় গিয়েছি আমি? আসলে কাহিনী হলো জলবায়ু পরিবর্তন। মিশিগান টেক নিকট অতীতে তুষারঝড়ের জন্য বন্ধ করা হয়েছে বলেও আমার বাড়িওয়ালা মনে করতে পারলেন না। উনি ১৯৮৪ সালের ব্যবসায় প্রশাসন স্নাতক। যাই হোক অবশেষে বসন্তকালকে এবছরের জন্য ছুটি দিয়ে সরাসরি গ্রীষ্মকালের আগমন। ঝলমলে রোদ, বাহারী টিউলিপ (এই ফুল বসন্তের। সাধারণত ফোঁটে এপ্রিলের শুরুর দিকে কিন্তু এবার জুনের আগে সুযোগ হয়নি), পাখি, কাঠবিড়ালিদের গাছে গাছে ছুটোছুটি সব মিলিয়ে চমৎকার আবহাওয়া। শীতপ্রধান এলাকার গ্রীষ্মকাল খুব উপভোগ্য হয় এটা টের পেলাম।
প্রথমেই শুরু করি একটি তুলনামূলক ছবি দিয়ে। উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবেই উপরের ছবিটি তুলেছিলাম এই বছরের ফেব্রুয়ারীতে। জানতে চেয়েছিলাম যখন বরফ গলে যায় তখন আসলে কেমন লাগে দেখতে? জুনের মাঝামাঝি সময় তোলা নিচের ছবিটাই তার উত্তর। এতটা পার্থক্য হবে ধারণা করি নাই।
এরমাঝে হঠাৎ করেই টিউলিপ ফোঁটার ধুম পড়ে গেল। যেদিকে তাকাই শুধু রঙের মেলা। পাল্লা দিয়ে ফুটতে লাগলো বাগান গুলোতে। হুমায়রা আপা (মগকক, ৮৭) না বললে জানতামই না যে এদের বসন্তের ট্রেন ধরা হয়নি। তাই হয়তো এত হুড়োহুড়ি। প্রতিদিন ক্যামেরা সাথে রাখা হয়না তবে ঝলমলে দিনের আলোয় আমার মুঠোফোন একেবারে কম যায় না। পরবর্তি কয়েকটা মুঠোফোনে তোলা।
নিচের ছবিটা তুলে লাইটরুম এডিটিং সফটওয়্যার দিয়ে ঘষা দিতেই কেমন যেন হয়ে গেল। ছোটবেলায় পোষ্টকার্ডে এরকম কৃত্তিম ছবি দেখতাম। তবে একেবারে খারাপ না।
ছোটবেলায় স্বপ্ন দেখতাম গাড়ির ইঞ্জিনিয়ার হবো। বাবার বইপত্র দেখেই বোধ করি এই স্বপ্নের উৎপত্তি। তাই এখনো একটু নামিদামি ব্র্যান্ডের গাড়ি দেখলেই উচ্ছ্বসিত হই। এমন না যে খুব দামি কিছু হতে হবে। সময়ের বিচারে পুরনো বিখ্যাত গাড়ির মডেল ছিল আমার বরাবরের আগ্রহের উৎস। পড়াশোনার ফাঁকে অফিসের জানালা দিয়ে তাকিয়ে লাল টকটকে গাড়িটিকে দেখা মাত্রই মুঠোফোন নিয়ে দিলাম দৌড়। শেভ্রোলে ব্র্যান্ডের বিখ্যাত করভেট মডেলের গাড়ি। গুগলে ঘেঁটে বের করতে পারলাম না কত সালের দিকের তবে ‘৯০ দশকের হবার সম্ভাবনা আছে।
অফিসে যাচ্ছিলাম ক’দিন আগেই। খাবারের দোকান সাবওয়ে পার হচ্ছি তখনি দেখি মধ্যবয়ষ্ক এক লোক উনার বান্ধবীসহ এই গাড়ি করে এসে থামলেন। নির্লজ্জ্বের মত পথচারীর চাহনি দেখে উনি মনে হয় অভ্যস্ত তবে সেই তালিকায় আমি শুধু একা ছিলাম না। আশেপাশের সবাই তাকিয়ে ছিল গাড়িটির দিকে। খুব যত্ন নেয়া হয় গাড়িটির। চমৎকার পলিশ করা রং। ইঞ্জিনের শব্দে ভরাট আত্মবিশ্বাস। বামপাশের পোস্টঅফিস ভবনটা সরিয়ে ফেলতে পারলে সাদাকালো করে দেয়া এই ছবিটি দিব্বি ১৯৪১ সালের বলে চালিয়ে দেয়া যাবে। ক্যাডিলাক ব্র্যান্ডের ১৯৪১ সালের বিখ্যাত কনভার্টিবল মডেল এটি।
আবার ফুলে ফেরত আসি। এরমাঝেই একদিন ক্যামেরা নিয়ে বের হয়েছিলাম। মেঘলা দিনের আলোক স্বল্পতা ছবি তোলার জন্য সহায়ক নয় কিন্তু আমার স্বল্প অভিজ্ঞতায় বলে, মেঘলা দিনে রঙিন বিষয়বস্তুর রঙ সম্পূর্ণ ভিন্ন ভাবে ধরা দেয়। স্থিরচিত্র ব্যাকরণে অনেক ধরণের আলোর কথা বলা আছে। মেঘলা দিনের আলো তাদের একটি এবং আমার সেটা পছন্দ। মাঝপথে ইভাঞ্জেলিক গীর্জার সামনের বাগানে নতুন কিছু টিউলিপ চোখে পড়লো। তুলে ফেললাম দুটো ছবি। প্রথম ছবিটি চূড়ান্ত করে দেখার পর কেন জানি ডন ম্যাকলিনের হালেলুইয়া গানটির কথা মনে হলো।
এই গাছের নাম এখনো খুঁজে বেড়াচ্ছি। ফুলগুলোর আকার আমাদের রঙ্গনের মত। মৃদু মিষ্টি গন্ধ আছে। নীলাভ-বেগুনী এই ফুলগুলো খুবই মনোরম দেখতে।
এই পর্বের ইতি টানার আগে শেষ দুটো ছবি। হৌ’টন-হ্যানকক শহরের মাঝের এই সংযোগ সেতু এটি। নাম লিফট ব্রিজ। কারণ বড় কোন জলযান যাবার সময় মাঝে দিয়ে দ্বি-খন্ডিত হয়ে উঠে যায় সেতুটি। আর তখন এই ছোট শহরে ট্রাফিক জ্যামের আমেজ পাওয়া যায়। তবে এক এক সময় এক এক রকম লাগে এই সেতুটিকে। ফিন-ফেস্ট, ২০১৩ উপলক্ষে আতশবাজি হবে দেখে ক্যামেরা নিয়ে বের হয়েছিলাম। আতশবাজি শুরু হবার আগের এই সুন্দর সন্ধ্যার রঙটুকু ধরে রাখতে ভুলি নাই। এরপরে আতশবাজি শুরু হয় বেশ খানিকটা দূরে। আমার লেন্সের ক্ষমতার বাইরে তবে একেবারে খারাপ আসে নাই। যাই হোক লেখার শেষে এসে চিন্তা করছি গ্রীষ্মকালীন ছবিগুলো দুটো ভাগে দিব কারণ অল্প সময়ে কাহিনীবহুল অনেকগুলো ছবি তোলা হয়ে গিয়েছে।
পরথম নাকি?? 😀
... কে হায় হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগাতে ভালবাসে!
লাল টিউলিপ টা খুব ভাল লাগতেসে, সাথে লাল গাড়িটা।
... কে হায় হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগাতে ভালবাসে!
হ পরথম। ধইন্যা পাতা! :hatsoff:
\\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\
:clap: :clap: :clap:
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
আপনার ছবি গুলো দেখে মধ্য আমেরিকার রাষ্ট্রগুলো ঘুরতে ইচ্ছা করে। আমেরিকার অন্যতম কস্মোপলিটন নগরী লস আঙ্গেলেসে এসে এরকম শান্ত পরিবেশ ও ইউরোপীয় আমেরিকান দের এলাকা দেখতে ইচ্ছা হয়।
নেক্সট অরকা- USA '14 রি ইউনিয়ন মিশিগানে হবে। ইনশাল্লাহ দেখা হবে।
২০১৪ কবে হইবো? অামি কিন্তু মে মাসের মধ্যে গায়েব! 😀
\\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\
আম্রিকা যামু
চাঁদ ও আকাশের মতো আমরাও মিশে গিয়েছিলাম সবুজ গহীন অরণ্যে।
আইসা পড়েন!
\\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\
তোমার ছবিতে আম্রিকা খালি হাতছানি দেয়। ব্যাপারটা রিতীমত অনৈতিক।
অনটপিকঃ ছবিগুলার সাইজ আরেকটু বড় হইলে দেইখা আরেকটু শান্তি লাগতো।
You cannot hangout with negative people and expect a positive life.
ক্লিক করলে বড় হবার কথা আপা। ব্লগে আটানোর জন্য ৩০০x৩০০ তে দেয়া হইসে।
আমরিকা আইসা পড়েন! ঘুইরা যান! 🙂
\\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\
ম্যারিকা যাইতে মুঞ্চায় :(( :((
যে জীবন ফড়িঙের দোয়েলের- মানুষের সাথে তার হয় নাকো দেখা
টিকেট দিতাসি অাইসা পড়! 😛
\\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\