ছবি ব্লগঃ ১ – গত এক বছরের মার্কিনি ফিরিস্তি

যেকোন মৌলিক লেখা শুরু করা খুব কঠিন একটি কাজ। আমি খেয়াল করে দেখলাম আমার লেখা বেশীর ভাগ স্মৃতিচারণ কিংবা তথ্যভিত্তিক আলোচনা। যেগুলোতে মৌলিকত্ব আছে ঠিকই কিন্তু এধরনের লেখা শুরু করা অপেক্ষাকৃত সহজ। ছবিব্লগে ছবি থাকবে ও তার বর্ণনা থাকবে কিন্তু তা বাদে আর কি লিখা যায় ভাবছি।

আগামী আগস্ট মাসের ১৬ তারিখ মার্কিন মূল্লুকে পদার্পণের এক বছর পূর্তি। তবে মিশিগানের উত্তরের এই ছোট শহরে নেমেছি ঠিক ১১ দিন পর ২৭ তারিখ। সেই ১১ দিন ঘুরে বেড়িয়েছি টেক্সাসের আরলিংটন ও ডালাস এবং উটাহ্‌ এর সল্ট লেক সিটি ও পার্ক সিটি শহর। ভেবেছিলাম একদম উত্তরের শেষ সীমানায় চলে যাচ্ছি, দক্ষিণটা একটু দেখেই যাই। এত আগে থেকে ছবি দিয়ে অহেতুক বড় করতে চাইছি না। তবে পর্ব ভিত্তিক লিখলে ভিন্ন কথা। সমস্যা হলো আমি অলস। আমার দুটি ভ্রমণ কাহিনী দেখলাম অর্ধেক পথে (একটির প্রথম পর্ব, অপরটির দ্বিতীয় পর্ব) লিখে রেখে দিয়েছি। শেষ আর করা হয় নাই। তবে এবার আমি দৃপ্ত শপথ নিলাম। কোন অর্ধেক লেখা নয়। কোন অলসতা নয়। সুতরাং একাধিক পর্বেই প্রকাশ পাবে এই ছবি ব্লগ। মোটামুটি গত এক বছরের বিভিন্ন সময়ের তোলা ছবি ও সাথে কিছু প্রাসঙ্গিক ও অপ্রাসঙ্গিক কাহিনীর মাধ্যমেই সাজানোর চেষ্টা করব।

দেশ ছাড়ার পূর্বে এয়ারপোর্টে।

দেশ ছাড়ার পূর্বে এয়ারপোর্টে।


উপরের ছবিটি বিদায় নেবার ঠিক আগ মূহুর্তে ৩৬তম ব্যাচের সাথে। অন্ধকারে এর চেয়ে ভালো কিছু আশা করা যায় না। ছবির সর্ববামেরজন মারুফ তখন ছুটিতে দেশে এবং ডান থেকে তৃতীয় ওয়ালিউল্লাহ্‌ উড়াল দিবে আমার ঠিক ৫ মাস পরেই। ছবিটা দেখে খেয়াল হলো আর সবার মত পরিবারের সাথে আমার বিদায়ের কোন ছবি নেই। এই ছবির পরেই ভেতরে ঢুকে সময় দেখে বললাম যেতে হবে। সবার সাথে বিদায় নিয়ে শেষে মায়ের দিকে তাকিয়ে দেখি চোখ ছলছল করছে। ‘আসি’ বলে উলটো ঘুরে হাঁটা দিয়েছিলাম। নিজেকে খুব শক্ত দেখানোর পুরোনো অভ্যাস।
সল্ট লেক সিটি এয়ারপোর্টে ফয়সালের সাথে।

সল্ট লেক সিটি এয়ারপোর্টে ফয়সালের সাথে।


ডালাসে নামবার পরেও ভার্সিটির বন্ধু হাসান ভুলে গিয়েছিলো এরকম কোন মূহুর্তের ছবি তুলে রাখতে। পরের চারদিনেও আসলে খেয়াল ছিলো না। সত্য কথা বলতে চার দিনের বেশীর ভাগ সময় জেট ল্যাগের ঘুমে নাহয় আসক্তিতে কেটেছে! ফয়সাল এসব দিক দিয়ে খুব সতর্ক। বিশেষ করে এধরনের নাটকীয় মূহুর্ত ধরে রাখতে তার জুড়ি নেই।

পার্ক সিটি

পার্ক সিটি


ঘুরতে গিয়েছিলাম ‘পার্কসিটি।’ এককালের বিখ্যাত ও জনবহুল ছবির মত সুন্দর এই শহরে জনবসতি এখন কম বা নেই। পুরোটাই বিভিন্ন ধরনের দোকান বা রেস্তোরায় পরিপূর্ণ। লোকজন মূলত ঘুরতেই আসে এখানে। এছাড়া গিয়েছিলাম মিলার মোটরস্পোর্টে গো-কার্ট চালাতে। রেইস ড্রাইভিং এর প্রথম অভিজ্ঞতা সেখানেই। রেস শেষে একটাই কথা মনে হয়েছে, ফরমুলা ১, মোটো জিপি, র‍্যালি, মোটোক্রসের প্রতিযোগিদের স্যালুট!
পাহাড়ের কাছে বৃষ্টি দেখতে খুব সুন্দর

পাহাড়ের কাছে বৃষ্টি দেখতে খুব সুন্দর


শ-খানেক তোলা ছবির মাঝে এই ছবিটি সবসময় ভালো লাগে। বৃষ্টিকে এভাবে এত খোলামেলা ভাবে দেখার সুযোগ খুব কম হয়েছে আমার। এছাড়া ডাইনোসর যাদুঘর ছিলো বেশ চমৎকার আনন্দের খোরাক। ন্যাশনাল জিওগ্রাফীর আমেজ আনতে চাইছি না তাই ছবি দিলাম না।

সবশেষে গিয়েছিলাম কেনেকট কপার মাইনে। ১৮৯৮ সনে যাত্রা শুরু করে পৃথিবীর বৃহত্তম এই ওপেন-পিট তামা খনি। খনির পাথর শিলা সরানোর কাজে যেই বড় গাড়িগুলো ব্যবহার করা হয় তা অনেকেই হয়তো স্বচক্ষে কিংবা বিভিন্ন মাধ্যমে দেখেছেন। আমার ঠিক কাছে যাবার সুযোগ হয়নি তবে খনির এক প্রান্তে দর্শকদের জন্য উন্মুক্ত একটি জায়গায় গাড়ির একটি চাকা প্রদর্শনী হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। আমার উচ্চতা ৫ ফিট ৬ ইঞ্চি এবার চাকার ব্যাস আপনারা ছবি দেখে আন্দাজ করুন আর গাড়ির কথা বাদ দিলাম।

চিত্র কঃ মাইনিং ট্রাকের চাকা ও আমার তুলনামূলক পার্থক্য

চিত্র কঃ মাইনিং ট্রাকের চাকা ও আমার তুলনামূলক পার্থক্য

এইসব হাবিজাবির মাঝেই বিদায়ের ঘন্টা বেজে উঠে। আপাত দৃষ্টিতে দুর্ভাগ্য তবে প্রকৃতপক্ষে সৌভাগ্যক্রমে যাবার দিন সকালে উঠতে দেরী হয়ে যায়। ভোর পাঁচটায় ফয়সাল তার নতুন কেনা লেক্সাস স্পোর্টস এডিশন গাড়ি নিয়ে জীবন বাজি রেখে আমাকে এয়ারপোর্টে পৌঁছে দেয়ার চেষ্টা করে। এক পর্যায়ে সর্বোচ্চ গতি ১২০ মাইল/ঘন্টার কাঁটা (১৯৩ কিমি/ঘন্টা) ছোঁয়ার পরে মনে হয়েছিল এখনো নিকাহ্‌ করি নাই। একটি টোকা লাগলেই হবে। জিজ্ঞাসা করলাম পুলিশ ধরলে কি করবি। বললো এত সকালে পুলিশের নজরদারী কম থাকবে। যাই হোক শেষ রক্ষায় হয়নি। ততক্ষণে দেরী হয়ে গিয়েছে। সৌভাগ্যক্রমে বিনামূল্যেই দুদিন পরের ফ্লাইটে নতুন করে টিকিট কেটে নিয়ে আসি। শেষের বার সময়মত পৌঁছেছিলাম। চেকিং এর এক টি,এস,এ কর্মকর্তা বাংলাদেশ শুনে বেশ আগ্রহ নিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, “তোমাদের প্রচুর বন্যা হয় তাই না?” বিব্রতকর প্রশ্নের তালিকায় বেশ সহজ একটা প্রশ্ন ছিলো। উত্তর দেবার পর নানা কথায় এক পর্যায়ে দেখলাম এই টি,এস,এ কর্মকর্তার বাংলাদেশ সম্পর্কে জানার এত দরকার নেই তারপরেও রাজনৈতিক অবস্থা, ট্রাফিক জ্যাম, আবহাওয়া সম্পর্কে বেশ ভালই জানেন। তবে জিজ্ঞাসা করা হয়নি কিভাবে এত জানলেন তিনি। এর আগেই কোন এক ব্যস্ততায় কাজে ছুটে যান তিনি।

[চলবে]

২১ টি মন্তব্য : “ছবি ব্লগঃ ১ – গত এক বছরের মার্কিনি ফিরিস্তি”

  1. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    ভাল শুরু করেছো, এবার নিয়মিত পরের পর্ব গুলো দিতে থাকো, তোমার সাথে আমেরিকা ঘুরতে থাকি 🙂


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন
  2. দিবস (২০০২-২০০৮)

    সবগুলা ছবিই সুন্দর হইছে। ১৯৩ কি,মি দেখে উঠতে মন চাইছে। 😀

    এয়ারপোর্টের ছবিটাতে নস্টালজিক হলাম কিছুটা। প্রতিবার দেশে যাওয়া এবং আসার সময় একদল এয়ারপোর্টে দাঁড়ায় থাকে। আর বিরক্তি ভরে বলতে থাকে আসস ক্যান কয়েকদিন পর পর পেইন দিতে? 😀


    হেরে যাব বলে তো স্বপ্ন দেখি নি

    জবাব দিন
  3. মুশফিকুর রহমান তুষার (২০০২-২০০৮)

    বিদিক ছবি হইছে। :clap: :clap:

    জীবনে এখনো অনেক কিছু বাকি। বাংলাদেশের ৬৪ জেলায়ই এখনো যাইনাই। 🙁 🙁
    বিদেশে ঘুরতে যাইবার মুঞ্চায়। :(( :((


    ছোট হাতি

    জবাব দিন
  4. তাওসীফ হামীম (০২-০৬)

    খালি নিজের ছবি দিলে হইবে? মার্কিন মুলুকের সুন্দর সুন্দর ছবি দেখতে চাই, আর নিজে তো বলেন অনেক ফর্শা, ছবি তো বলে না!!


    চাঁদ ও আকাশের মতো আমরাও মিশে গিয়েছিলাম সবুজ গহীন অরণ্যে।

    জবাব দিন
    • মোকাব্বির (৯৮-০৪)

      আমি কবে কইসি আমি ফর্সা!? :chup:
      সুন্দর ছবি আসতে হবে। কাহিনীর পরিক্রমা বলে একটা কথা আছে না। খোলা আকাশ থেইকা ডানাকাটা পরীতো আর ক্র্যাশ ল্যান্ডীং করবে না। :dreamy: :dreamy:


      \\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
      অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\

      জবাব দিন
  5. মাহমুদ (১৯৯০-৯৬)

    লস আঞ্জেলসে আসার পরিকল্পনা থাকলে আগে থেকেই জানাবা। দারুন সব দেখার জায়গা+বিষয় আছে। আর খাওয়া-দাওয়া যা' হবে, সেটার কথা আমি আর না-ই বা বললাম। সাকেব (মকক ১৯৯৩-৯৯) এসে সাক্ষ্য দিয়ে যাবে B-)


    There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx

    জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।