বাংলাদেশে বিগত এক দশকে গণমাধ্যমের ক্ষেত্রটিতে একটা বিপ্লব ঘটে গেছে। বেসরকারী টিভি চ্যানেলগুলোই মূলতঃ এই বিপ্লবে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। একসময়ে চট করে বলে দিতে পারলেও আজ যদি কেউ জিজ্ঞেস করে বাংলাদেশে বেসরকারী চ্যানেল কয়টি, তাহলে একটু সময় লাগে সঠিকভাবে উত্তর দিতে। কারণ এখন গুনতে হয়।
স্যাটেলাইট সংস্কৃতির এই যুগে আমাদের নিজস্ব ঐতিহ্য আর সংস্কৃতি যখন হিন্দি চ্যানেলগুলোর আক্রমণে তাদের অস্তিত্ব প্রায় হারাতে বসেছিল, তখনই আমাদের বেসরকারী চ্যানেলগুলোর আবির্ভাব হয়। যদিও বেশ দেরিতে, তাও এই চ্যানেলগুলো আমাদের প্রায় ভেঙ্গে পড়া সংস্কৃতিকে উজ্জীবিত করে তুলেছে অনেকখানি। হিন্দি সিরিয়াল আর বিচিত্র সব অনুষ্ঠানমালা আমাদের জীবনের সাথে এতই জড়িয়ে গিয়েছিল যে আমাদের সন্তানদের মুখ থেকে বেরিয়ে আসা প্রথম গানটি হিন্দি হলেও তাতে আমরা লজ্জা পাইনি, বরং একধরনের গর্ব বোধ করেছি। বাচ্চারা নিজেদের মধ্যে যে অনর্গল হিন্দিতে কথা বলে যাচ্ছে তা আমাদের বিন্দুমাত্র স্পর্শ করেনি।
আমি অবাক হয়ে লক্ষ্য করেছি কিভাবে মানুষ ইন্ডিয়ান আইডলদের প্রতি তাদের অনুভূতি ব্যক্ত করেছে, যখন দেশে (আমার মতে) ক্লোজ-আপ ওয়ানের মত সংগীতের আরও শক্তিশালী একটি প্লাটফর্ম ছিল। তারুণ্যের উচ্ছাস কোন বাঁধা বা নিয়ম মানে না একথাটি সত্যি, কিন্তু তাই বলে আমাদের দেশের তরুণরা যখন নিজের দেশের সংগীত বাদ দিয়ে ভিনদেশী সংগীত নিয়ে পাগলের মত মাতামাতি করে, নিজের দেশের নাটক বাদ দিয়ে হিন্দি সিরিয়ালের জন্য উন্মাদ হয়ে যায় তখন আমাদের চিন্তিত হবার যথেষ্ট অবকাশ আছে বলে আমি মনে করি। তাই ইদানীং যখন দেখছি আমাদের ছেলেমেয়েরা ‘রঙের মানুষ’, ‘হাউসফুল’ বা ‘ভবের হাট’ নাটক কিংবা ‘ক্লোজ-আপ ওয়ান’, ‘চ্যানেল আই সেরাকণ্ঠ’ বা ‘খুদে গানরাজ’ – এসমস্ত অনুষ্ঠানের দিকে আস্তে আস্তে ঝুঁকে পড়ছে তখন নিজের অজান্তেই একটা পরিতৃপ্তির শ্বাস ফেলি – যাক শেষরক্ষা হল বোধহয়।
ছোটবেলায় মনে পড়ে, মাঝে মাঝে না বুঝেও গোগ্রাসে গিলেছি আব্দুল্লাহ আল মামুন, ফেরদৌসি মজুমদার, আসাদুজ্জামান নূর, আলী যাকের, হুমায়ুন ফরিদি, পীযুষ বন্দোপাধ্যায়, আফজাল, সুবর্ণা, রাইসুল ইসলাম আসাদ, তারিক আনাম, প্রিসিলা পারভিন, ক্যামেলিয়া মুস্তাফা, আল মনসুর, সারা যাকের, শম্পা রেজা এর মত আরও অনেক মহাশক্তিধর অভিনেতা-অভিনেত্রীদের করা নাটকগুলো। কি প্রচণ্ড ছিল নাটকগুলোর শক্তি আর গুণগত মান। শুনেছি ওপার বাংলায় আমাদের এ সমস্ত নাটক রীতিমত সম্ভ্রম আর সম্মানের সাথে দেখা হত। আমি আজও আজকালকার নাটকের মধ্যে সে সময়ের শক্তিকে খুঁজে পাবার চেষ্টা করি। পাই না। পাই না। পুরনো অনেকেই এখনও নাটক করে যাচ্ছেন, কিন্তু কোথায় যেন সুর কেটে গেছে।
তবে এতকিছুর পরেও আমি ধন্যবাদ দিই সে সমস্ত উদ্যোক্তাদের যাঁরা আমাদের দেশের সংস্কৃতিকে নিশ্চিত অপমৃত্যুর কবল থেকে বাঁচিয়েছেন। কেউ যদি চ্যানেলগুলোর সমালোচনা করে বলেন, “কি ছাই-পাশ দেখায় এসব” তাহলে আমি বলব দেশি ছাই-পাশ বিদেশি গোবরের চেয়ে ভাল।
আজকাল বাংলা চ্যানেলগুলোতে বিচরণ (চ্যানেল সারফিং) করে দিনটা বেশ পার করে দেয়া যায়। শিল্প-সংস্কৃতি-শিক্ষা-কৃষি ইত্যাদি নানা বিষয়ে আমাদের বেসরকারী চ্যানেলগুলো তাদের অনুষ্ঠানের পসরা বেশ ভালভাবেই সাজিয়েছে। তবে রাষ্ট্রের বা দেশের বিভিন্ন স্পর্শকাতর ইস্যু যেমন রাজনীতি, দুর্নীতি, আইনের শাসন ইত্যাদি ক্ষেত্রে গঠনমুলক ভূমিকা রাখা বা জনমত গড়ে তোলার ব্যাপারে এদের অবদানের বিষয়ে আমার কিছুটা ভিন্নমত আছে যা হয়তো পরে কোন একসময় লিখব। আপাততঃ এদের সবাইকে ধন্যবাদ।
প্রথম 😀
ভাইয়া আপনার সাথে সহমত :thumbup:
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
সহমত । বিষয়টা নিয়া আরো লেখালেখি হওয়া উচিত ।
খেলা দেখার সময় ছাড়া টিভি খুব কমই দেখা হয়... :-B
হইলেও মুভি চ্যানেল- মফিজ, হুবো নাইলে জিস্টুডিও... B-)
আর মাঝে মাঝে কমেডি সিরিয়াল দেখি... ;))
ব্যাস!
ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ
‘খুদে গানরাজ’ এর পিচ্চিগুলা ইন্ডিয়ান চ্যানেল্গুলার যত মিউজিক রিয়্যালিটি শো'র গায়ক গায়িকা আছে সবগুলার চেয়েই দুর্দান্ত গায়। এবার কয়েকটা পর্ব দেখে রীতিমত চমকেছি, কি চমৎকার গলা পিচ্চিগুলোর :hatsoff: :hatsoff:
বেশ ইম্পর্টেন্ট টপিক ইউসুফ ভাই, নিশ্চয়ই আরো বিস্তারিত আলোচনা হবে :thumbup:
সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!
কি বলব ভাই, খুদে গানরাজ দেখে ও ঐ পিচকেগুলোর গান শুনে আমি আর আমার বউ এই বুড়া বয়সে চোখের পানি ফেলেছি।
আমাদের বাসার সবাই খুব আগ্রহ নিয়ে এই অনুষ্ঠানটা দেখে... :clap:
আমি এইসব দেখি না...কারণ যখন কেউ বাদ পড়ে আমার খুব খারাপ লাগে... 🙁 :((
ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ
ব্যাপার না ইউসুফ ভাই,
নিজের ছেলে-মেয়েদের দিয়ে ট্রাই মারেন। কথায় আছে না, ঘুমিয়ে থাকে/আছে শিশুর পিতা (মাতা নাই কেনো? :grr: ), সব শিশুরই অন্তরে।
আপনার বাচ্চা যখন গান গাইবো, আমরা ধরে নিব সেখানে 'ঘুমন্ত' ইউসুফ ভাইও......... 😀 😀
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
এইটা আমার খুব ভালো লাগছে, আরি বাপ্স, কি গায় এই পিচ্চিগুলা, বাপ্রে বাপ। :salute:
পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না
'৭১ -এর পটভূমিতে একটা বিশেষ টাইপের গল্প (অবশ্যি ফিকশন) নিয়ে আমার অভিনীত একটা শর্ট ফিল্ম আসছে শিগগির... স্টে টিউনড্!
ফ্রি ডিভিডি পাঠাইস!
রংমহল?
সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!
জানলেন কেমনে???
আপ্নের সাথে আপুটা খুব সুন্দর, ফেসবুকে দেখছি :shy:
আমি তবু বলি:
এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..
Congrats adnan.
এই প্রথম নিজের নামের কাউকে অভিনন্দন জানালাম । বের হবে কবে আপডেট জানিও ।
কনগ্রাটস বাচ্চু।
লিংকি, কিংবা কখন হবে জানাইও। দেখবো।
পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না
জটিল পোস্ট। পড়ে ভালো লাগছে ইউসুফ ভাই। 🙂
ধন্যবাদ তোমাকে ভাই....
খুবই সুন্দর একটা পোস্ট।
এই সমস্যাটা প্রকট হচ্ছে কিন্তু দিনদিন, মাবাবারা খুবই গর্বিত হয়ে যান বাচ্চারা একটু হিন্দি গানের সাথে নেচে দেখিয়ে দিলে, কিংবা একবারে পুরো একটা হিন্দী ডায়লগ যদি কোনমতে বলতে পারে, কথাই নেই।
শুধু হিন্দীকে দোষ দিয়ে লাভ নেই আসলে, একই সাথে সমস্যাটা ইংরেজীর ক্ষেত্রেও। এই জিনিসটা কমার চেয়ে বাড়ার লক্ষণই তো আমি বেশি দেখি।
তবে বাংলা অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে একটা নীরব বিপ্লব ঘটে যাচ্ছে কিন্তু খুব আস্তে আস্তে, অনেক ভাল নাটক, সিনেমা, শর্ট ফিল্ম আসছে। এগুলোকে কোনমতেই অস্বীকার করা যায় না। কাহিনী আপেক্ষিক ব্যাপার, কিন্তু মেকিং এ একটা বিশাল চেইঞ্জ এসেছে।
সকল ক্যাডেট ভাইবোনদের প্রতি একটা অনুরোধ, আপনাদের বাচ্চাকাচ্চারা যদি এইরকম টুকটুক করে হিন্দী কিংবা ইংলিশ বলে পার্ট নিতে চায়, পিলিজ লাগে তাদের ঠাস করে দুইটা থাবড় দিবেন।
সহমত, এইটা নিয়া একটা পোষ্ট দেবো দেবো করেও দেয়া হচ্ছে না।
আমি তবু বলি:
এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..
ঈসা কাজী সাবধান হবে সাবধান
:thumbup:
ঈসা কাজী কে? 😕
কাজী এহসান এর ছেলে ঈসা কাজী 🙂
সরি আপু তোমার কথাটা ভাল লাগলো না । মা বাবা যদি সারাক্ষণ হিন্দী দেখে তাহলে বাচ্চার কি দোষ । বাংলা অনুষ্ঠান যদি ভাল হয় দর্শক ধীরে হলেও বাংলা চ্যানেলে ফিরে আসবে । যার প্রমাণ হিসেবে সাম্প্রতিক সাড়া জাগানো বাংলা অনুষ্ঠান (নাটক, রিয়েলিটি শো) এর কথা বলা যায় । আরো আলোচনা চলুক । কামরুল এর কাছ থেকে মন্তব্য আশা করছি যাহেতু সে বিনোদন মাধ্যমে জরিত আছে ।
এই কথাটার মাঝে আসলে আমি ক্যাডেট ভাইবোনদের কেও এই অনুরোধটাই করেছিলাম, মানে তাঁরাও যেন অন্য সংস্কৃতির দিকে অযাচিত ভাবে ঝুকে না পরেন, তাহলে তাদের পরবর্তী প্রজন্মও তাদের আচরণটা নিজের করে নেবে। আর আসলে থাবড় দেবেন সেই বাবামাই, যারা মূল ধারাটা বুঝতে পারেন।
মনে হয় বুঝাইতে পারিনাই ~x(
পেরেছো আপু 😀
আমাদের সময় বিটিভি তে একটা নাটক আছ মনে আছে না ইউসুফ ভাই "এ সপ্তাহের নাটক" আহারে কি মজা করে দেখতাম।
এখন নাটক গুলা কেমন ম্যান্দা ম্যান্দা লাগে (সব না অবশ্য)
পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না
আমাদের সময় বলে ইউসুফ ভাইর সাথে সিনিয়রের পার্ট নেওয়ার জন্য ফয়েজ ভাইর ব্যাঞ্চাই। আমরাও কিন্তু এ সপ্তাহের নাটক দেখছি বৃহস্পতিবারে হইত। আরেকটা হইত বিশ্বনাটক কিছুই বুঝতাম না।
ইউসুফ ভাই একটা গুরুত্বপূর্ণ জিনিস পয়েন্ট আউট করছেন। এইটা নিয়ে বিস্তর আলোচনা হওয়া দরকার।
এইবার তপুর সাথে সাথে আমিও একটু সিনিয়রের ভাব ধরি। আমাদের সময়তো মনের মুকুরেতে সংশপ্তক দেখছি। দেখছি বহুব্রীহি অয়োময় বাকের ভাই সহ আরো কত নাটক। আহ সে কী না ছিল।!!!(সিনিয়র ভাব লওয়ার জন্য আগেই নিজের ব্যঙ্চায়া লইলাম)
এখনকার নাটকগুলোও আমার কাছে ভালো লাগে। ভালো লাগে বাংলা টিভি অনুষ্ঠান। তলের কথা হইলো আইকিউ লেভেল বানরের কাছাকাছি হওয়াতে বাংলা ছাড়া কোন ভাষা বুঝাটাই আমার জন্য কষ্টকর। আনন্ড জন্য টিভি দেখতে গিয়ে কষ্ট করতে কে চায়। তবে ইদানিং গুলশান এভিনিউ জাতীয় কী সব নাটক হয় হিন্দী সিরিয়ালের অনুকরণে। মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। আমাদের এত সুন্দএর নাটকের ঐতিহ্য আমরা নিজেরাই ধ্বংস করে দিচ্ছি আমাদের রুচির অবক্ষয়ে।