ফিরে ফিরে আসি-২

৩.
ক্লাস শেষ হওয়ার পর এক স্যার চলে গিয়ে অন্য স্যার আসার আগে মাঝে মাঝে দুই এক মিনিট সময় পাওয়া যায়। সেই সময় আমরা খুব মজা করতাম। একজন অন্যজন কে পচানো, হিট-ফ্লপ রস করা সব হতো ওই সময়। কেউ গলা ছেড়ে গান গাইতো, কয়েকজন টয়লেটে যাবার জন্য দল বেধে বেরিয়ে যেতো। শুধু দু একজন তখনো ঘুমিয়ে থাকতো। কে আসলো, কে গেল, কার ক্লাস এই সব তাদের কাছে কিছুই মানে রাখে না। তাদের প্রধান কাজই হলো ঘুম।

এই রকম একদিন ক্লাস শেষ হওয়ার পর আমাদের আশরাফ উঠে লেকচার ডায়াসের সামনে গেল। তারপর তপংকরের দিকে তাকিয়ে নেচে নেচে গান ধরলো, -“তোমায় নিয়ে নাও ভাসিয়ে যাবো তপংকর।” সঙ্গে হাত দিয়ে নাও ভাসানোর খারাপ ইঙ্গিত । হঠাৎ শিকদার স্যার এসে পরলেন। হাতেনাতে ধরা। স্যার স্কেল নিয়ে আসলেন।
-কি গান গাইতেছিলা বল?
-স্যার এমনেই গুন গুন করতেছিলাম
-কি গুন গুন করতেছিলা?
-স্যার এমনেই গুন গুন স্যার
-এমনেই কি? এমনেই কি?
বলে স্যার পিটানো শুরু করলেন। স্কেল আশরাফের পিঠে মারছেন আর বলছেন
-বলো, বলো কি গান গাইতেছিলা?
মাইর সহ্য করতে না পেরে শেষে আশরাফ বলল
-স্যার গাইতেছিলাম… “বেদনা মধুর হয়ে যায়, তুমি যদি দাও।”

৪.
ক্লাস সেভেনে যেদিন প্রথম কলেজে যাই সেদিন রাতে ক্লাস টুয়েলভের ভাইয়ারা আমাদের ডাকলেন, আমাদের সাথে পরিচিত হওয়ার জন্য। আমরা ভয়ে ভয়ে গেলাম। ভাইয়ারা অনেক আন্তরিক হয়ে আমাদের সাথে কথা বলছেন, কে কোথা থেকে এসেছে জানতে চাইলেন, কার হবি কি? কে কি খেলা পছন্দ করে এই সব। আমরা কেউ বললাম ক্রিকেট খেলতে ভালোবাসি, কেউ গান গাইতে, কেউ ঘুরতে। বলতে বলতে এক সময় একজন আমাদের সিদ্দিকী কে জিজ্ঞেস করলেন
-তোমার প্রিয় খেলা কি?
-ভাইয়া ফুটবল
-তুমি ফুটবল খেলো?
-জি ভাইয়া
-কোন পজিসনে খেলো
-ভাইয়া কর্নার পজিসনে।
-ও আচ্ছা আচ্ছা ।
কয়েকজন একসাথে হো হো করে হেসে উঠলেন। আমরা বুঝতে পারলাম না কেও কর্নার পজিসনে খেললে হাসির কি আছে?

৫.
আমাদের ডাক্তার স্যার কে আমরা সবাই ডাকতাম মদন। সিক রিপোর্ট করে কেউ হাসপাতালে গেলে উনি অনায়াসে তার লাইফ হেল করে দিতেন। প্রথমত তার সাথে ইংরেজিতে কথা বলতে হতো। ডাক্তার স্যার জিজ্ঞেস করতেন ,-হোয়াট হ্যাপেন্ড? তখন যার যা সমস্যা ইংরেজিতে সেই রোগের নাম বলতে হতো। এখন সব রোগের নাম তো আর ইংরেজিতে বলা সম্ভব না। তখন এডমিট, পিটি এক্সকিউস তো দুরের কথা উল্টা ঝারি এবং ক্ষেত্রবিশেষে মাইর খাইতে হতো।

তো আশরাফের একবার পেট খারাপ হলো। সিক রিপোর্ট করার আগে একে ওকে জিজ্ঞেস করে ও পেট খারাপের ইংলিশ শিখে নিলো, লুজ মোশান। আমরা ওকে বার বার মনে করিয়ে দিলাম, “লুজ মোশান, দেখিস ভুলিস না কিন্তু, লুজ মোশান, লুজ মোশান।“ ও বলল, “না না ঠিক আছে, লুজ মোশান”। তারপর সিক রিপোর্ট করে স্মার্টলি ডাক্তার স্যারের রুমে গেল। আমাদের ডাক্তার স্যার তার বিখ্যাত মদন মার্কা হাসি দিয়ে জিজ্ঞেস করলেন
– হোয়াট হ্যাপেন্ড আশরাফ?
-স্যার আমার স্লো মোশান হইসে। আই হেভ গট স্লো মোশান। আশরাফ স্মার্টলি উত্তর দিল।
-ইউ ব্লাডি শিট, হোয়াট ইজ স্লো মোশান?
-স্যার হোয়েন আই গো টু টয়লেট অনলি লিকুইড কামস আউট, নো সলিড। দেট ইজ শ্লো মোশান।

এর পরে কি হইছিল সেইটা আর আশরাফ আমাদের বলে নাই।

১,৮৬০ বার দেখা হয়েছে

১৯ টি মন্তব্য : “ফিরে ফিরে আসি-২”

  1. আমিন (১৯৯৬-২০০২)

    ডাক্তারগুলো সেইরকম হয় বরাবরই।সেভেনে আমরা পাইছিলাম মঈন ওরফে সফদার স্যাররে।
    তারে সফফদার বলার কারণ ছোটবেলায় পড়া সফদার ডাক্তারের মত তার টাক গোফ আর ভুড়ি ছিল।তা তার কাছে গেলে তিনি কী হয়েছে বলে ই ঔষধ দিতেন এইস।যে অসুখ ই হোক তার একটাই ঔষধ।
    তা একবার এডজুট্যান্ট নাই।তো গেমস টাইমে গেমস প্রিফেক্ট বদরুল ভাই প্যারেড সাবধান করাচ্ছেন।বদরুল ভাইয়ের ভয়েজ একটু নাকি ছিল।সেটা শুনে সফদার বললেলন,বাবা বদরুল তুমি যে কমান্ড দাও এরা তো নাচতে থাকবে।তারপর ভুড়ি দুলিয়ে বিকট সুরে তিনি যখন সাবধান বললেন তখন আমাদের হাসি আটকানো কঠিন হয়ে গেল।পারলে আমরাই নাচতে থাকি আরকি।

    জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।