‘টিয়ারস অব ফায়ার’ (tears of fire) প্রামান্যচিত্রটার কথা আমি প্রথম জানি হারুন হাবীবের ‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও প্রাসঙ্গিক প্রবন্ধ’ বই থেকে।
গত বইমেলায় খুঁজে খুঁজে ৭১’র যুদ্ধাপরাধ নিয়ে অনেকগুলি বই কিনেছিলাম। সব পড়া হয়নি। কিছু আধপড়া ফেলে রেখেছি, কিছু একদমই ধরিনি। কাল হঠাৎ শেষরাতে বিছানায় শোবার পরও যখন ঘুম আসছিলো না তখন উঠে বাতি জ্বালালাম। সেলফ থেকে একটা বই বের করে ভাবলাম দেখি পড়তে পড়তে ঘুম আসে কিনা। ‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও প্রাসঙ্গিক প্রবন্ধ’ – হারুন হাবীব।
হারুন হাবীব কে, আমি চিনি না। হয়তো বইমেলায় স্টলের সামনে দাঁড়িয়ে কয়েক পাতা পড়ে পছন্দ হয়ে গিয়েছিলো, কিনে ফেলেছি। পড়তে শুরু করার আগে লেখক পরিচিতিতে গিয়ে দেখলাম ভদ্রলোক মুক্তিযোদ্ধা সাংবাদিক। মুক্তিযুদ্ধের রনাঙ্গন থেকে ফিরে যে ক’জন মুক্তিযুদ্ধা কলম পেশায় যোগ দিয়েছিলেন তিনি তাদের একজন। যুদ্ধের সময়ও তার ক্যামেরা দিয়ে বেশ কিছু দুর্লভ ছবি তুলেছিলেন যা পরে মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরের আর্কাইভে রাখা হয়েছে।
কয়েক পাতা পড়ার পর দেখলাম এক জায়গায় হারুন হাবীব ‘টিয়ারস অব ফায়ার’ (tears of fire) নামে একটা প্রামান্যচিত্রের কথা বলছেন। উনি বেশ কিছুদিন আগে মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরে ছবিটি দেখেছেন, এবং সবাইকে দেখতে বলছেন। ১৯৭১ সালে এ দেশে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধ, আন্তর্জাতিক সমাজের দায়, বিশেষ করে মার্কিন সুহৃৎ প্রতিক্রিয়ার উপর নির্মিত।
বইটা রেখে উঠে আবার পিসি অন করলাম। নেটে সার্চ দিলাম tears of fire পাওয়া যায় কিনা দেখতে। একটু খোঁজাখোঁজির পর পেয়েও গেলাম। বই পড়া রেখে ‘টিয়ারস অব ফায়ার’ দেখতে বসলাম।
৩১ মিনিটের ছবি, পরিচালক সেন্টু রায় নামে এক প্রবাসী বাঙালি, পুরোটাই ইংরেজিতে। ছবিটি দেখতে দেখতে আমার মনে হয়েছে অতি সাম্প্রতিককালে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে আমরা যে কথাবার্তা বলছি তাতে এ ছবিটা খুবই প্রাসঙ্গিকভাবে থাকতে পারে।
ছবিতে সাক্ষাৎকার নেয়া হয়েছে প্রফেসর বেঞ্জামিন বি. ফেরেঞ্জ , যিনি ঐতিহাসিক ন্যুরেম্বার্গ ট্রায়ালের একমাত্র জীবিত বিচারক। আছেন প্রসিদ্ধ সাংবাদিক সিডনি সনবার্গ, ৭১ সালে তিনি ছিলেন নিউইয়র্ক টাইমসের দক্ষিন-এশিয় প্রতিনিধি। এবং ১৯৭১ সালে বাল্টিমোর বন্দরে পাকিস্তানের অস্ত্রবাহী মার্কিন রনতরী অবরোধকারী রিচার্ড টেলর, তার স্ত্রী ফিলিস টেলরসহ আরো বেশ কয়েকজন। দেশীয়দের মধ্যে সাক্ষাৎকার নেয়া হয়েছে শহীদজায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরি এবং তরুন সাংবাদিক নাদিম কাদিরের। ৭১ সালে এদের একজন হারিয়েছেন তার স্বামী অন্যজন বাবা, সেই ছোট বয়সে।
সবাই একসুরে বলেছেন, যতো বছরই হোক না কেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার অবশ্যই হতে পারে, হওয়া উচিত। মানব সভ্যতার স্বার্থেই এদের বিচার হওয়া দরকার। এক্ষেত্রে দেশীয় বা আন্তর্জাতিক কোন আইনেরই অভাব নেই। ফেরেঞ্জ বা সনবার্গের কথা শুনে মনে হয়েছে , মার্কিন সরকার সেদিন আমাদের স্বাধীনতার বিরুদ্ধাচারণ করলেও আজ খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও আমাদের দেশের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবি করার লোক আছে।
‘টিয়ারস অব ফায়ার’ আমাদের দেখা উচিত। এ ছবি নতুন করে আমাদের জাতীয় লজ্জার কথা মনে করিয়ে দেবে। মনে করিয়ে দেবে সেইসব ঘৃনিত মুখ যাদের হাতে এবং সিদ্ধান্তে এ দেশের লক্ষ মানুষ শহীদ হয়েছিলো সেদিন।
এ ছবি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবীতে আমাদের আরো একতাবদ্ধ করবে, আরো সোচ্চার করবে।
(আগ্রহীরা এখান থেকে সরাসরি দেখতে পারেন। কিংবা এই লিংকে গিয়ে ডাউনলোড করে নিতে পারেন সময়করে পরে দেখার জন্যে। )
১ম
দেখব, শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ কামরুল ভাই। এখন সময় নাই, কাল অবশ্যই দেখা হবে।
:thumbup: :thumbup: :thumbup:
যুদ্ধপরাধীদের বিচার আমাদের প্রাণের দাবী। আশা করবো সবাই ভিডিওটা শেয়ার করবে পরিচিতদের সাথে। কামরুল ভাইয়াকে ধন্যবাদ পোষ্ট এবং ভিডিওর জন্য।
আমি তবু বলি:
এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..
আমার মনে হয় যুদ্ধাপরাধী না বলে বলা উচিত 'মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী-শিবিরের যুদ্ধাপরাধী'দের বিচার চাই। কারণ, আন্তর্জাতিক আইন অনুসরণ করলে ভেজাল আছে- কাদের সিদ্দিকীর মতো বীর মুক্তিযোদ্ধাও যদ্ধাপরাধে ফেঁসে যাবেন।
অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি পাকিস্তানপন্থী যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের।
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
ইতিমধ্যেইতো ঠিক করা হয়েছে ৭২'র দালাল আইনে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হবে। এবং সে আইনে কারা যুদ্ধাপরাধী সেটাও বলা আছে।
তাই এখন আলাদা করে ‘মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী-শিবিরের যুদ্ধাপরাধী’ বলার দরকার আছে বলে মনে করি না।
আপনার মতো আমিও অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের।
---------------------------------------------------------------------------
বালক জানে না তো কতোটা হেঁটে এলে
ফেরার পথ নেই, থাকে না কোনো কালে।।
সেই কারণেই আন্তর্জাতিক আদালতে গেলে সমস্যা আছে। আর তাই, বিচার দেশেই 'দালাল আইনে' করতে হবে, আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ আইনে নয়।
দেখা যাক, এইবার সরকার কি করে।
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
নামাচ্ছি, দেখে ফেলবো সময় করে।
পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না
একটু বুঝিয়ে বলবেন মাহমুদ ভাই? ব্যাপারগুলোর অনেক কিছুই অজানা।
যতদূর জানি, আন্তর্জাতিক আইনে যুদ্ধাপরাধী মানে হচ্ছে যুদ্ধে রত সৈন্য-সামন্ত (মাঠেই হোক আর কোনো ছাদের নিচেই হোক) বাদে সিভিলিয়ানদের মেরে ফেলা বা অন্যান্য ক্ষতিসাধন করা।- এই হিসেবে কিছু কিছু মুক্তিযোদ্ধাও যুদ্ধাপরাধী হয়ে যায় যারা সিভিলিয়ান 'বিহারী' হত্যার জন্য দায়ী।
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
কামরুল ভাই, ডক্যুটা রাইখেন। আপনার কাছ থেকেই সংগ্রহ করব। দেখতেই হবে।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পরবর্তী আপডেটের অপেক্ষায় আছি।
শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ দোস্ত । সময় করে দেখব ।
সেন্টু রায় আমাদের সিনিয়র। পাগলাটে মানুষ। একসঙ্গে আমরা আশির দশকে উদীচী করতাম। নব্বইয়ের দশকে উনি স্ত্রীসহ যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান। এখন আবার পুরোপুরি ফিরে এসেছেন। থাকেন নেত্রকোনায়। আমাকে ভীষণ স্নেহ করেন।
"মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"
লাবলু ভাই
আমাদের সবার পক্ষ থেকে সেন্টু রায়কে এই দারুণ ছবিটার জন্যে ধন্যবাদ দেবার অনুরোধ করছি। :thumbup:
---------------------------------------------------------------------------
বালক জানে না তো কতোটা হেঁটে এলে
ফেরার পথ নেই, থাকে না কোনো কালে।।
কামরুল ভাই ভাল একটা জিনিসের খোজ দিয়েছেন 🙂
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
:thumbup:
ভিডিও'টা এখন ও দেখতে পারিনি,
আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অনেক ধন্যবাদ ।
কেউ দেখছে না, সবাই খালি 'ধন্যবাদ শেয়ার করার জন্য , পরে সময় করে দেখবো' বলে খালাস।
দেখে মতামত জানালে ধন্যবাদের চেয়ে বেশি ভালো লাগতো। 🙁
---------------------------------------------------------------------------
বালক জানে না তো কতোটা হেঁটে এলে
ফেরার পথ নেই, থাকে না কোনো কালে।।