পুশকির ছোট ভাই “ঠুশকি” (খুশকি -২)

অনেকদিন ধরে আমাদের সায়েদের কোন :tuski: (টুশকি) পড়িনা। এত জনপ্রিয় একটা সিরিজ নিয়মিত না দেখলে কেমন জানি লাগে 🙁 । ইদানীং আবার সায়েদের কি এক রোগ হয়েছে যেন, লেখা তো পুরাপুরি বন্ধই, বরং শুধু ইমো দিয়ে কমেন্ট করে x-( । কী-বোর্ডটা নষ্ট হয়ে গিয়েছে মনে হয় :-B । আমি ঠিক করেছি আমার কী-বোর্ডটা সায়েদকে দিয়ে দিব। তাও টুশকি যেন থেমে না থাকে :no: ।

এরমধ্যে আরো কয়েকজনকে ‘টুশকির নকল সংস্করন’ এবং টুশকি টাইপ কিছু লেখা দিতে দেখেছিলাম, কিন্তু তারাও এখন আর লিখে না। কিছুদিন আগে আমার লেখা ‘টুশকির ছোট ভাই পুশকি’ লেখার পরে অনেকে বেশ উৎসাহ দিল। কেউ কেউ বলল এটাকেও সিরিজ করে ফেলার জন্য। কিন্তু আমার ষ্টকে আসলে সিরিজ করে লেখার মতো এত ঘটনা জমা নাই। যখন যেটা মনে আসে সেটাই সবার সাথে শেয়ার করার চেষ্টা করি। আজ আবার হঠাৎ করে কিছু ঘটনা মনে পড়ল। উল্লেখ্য যে, এবারের সবকটি ঘটনা কলেজে অবস্থানকালীন ঘটনা। তাই আবারো সেগুলো সবার সাথে শেয়ার করার জন্য আমার এই ক্ষুদ্র প্রয়াসঃ

১। ক্লাস এইটে কি নাইনে পড়ি তখন। একদিন মিল্কব্রেক টাইমে আমি আর আমার ক্লাসমেট (ধরলাম তার নাম কাইয়ুম ;;; ) মিল্কব্রেকে না গিয়ে আমাদের ফর্মে বসে গল্প করছিলাম। না যাওয়ার একটা কারন হলো আমরা ‘জ্ঞানকোষ’ পড়ে বের করেছিলাম যে, সিড়ি দিয়ে এবং পাহাড়ের উপরে উঠতে গেলে নাকি ৮০০ ক্যালরী খরচ হয় যেটা স্বাভাবিক সব দৈনন্দিন কাজের মধ্যে সর্বোচ্চ পরিমান ক্যালরী খরচের কারন। আমাদের ডাইনিং হল ছিল একটা ছোট পাহাড়ের উপরে। আমরা হিসেব করলাম, এক কাপ চা এবং ২ টা বিস্কুট খেলে যেই ক্যালরী পাব; ৫০০-৭০০ গজ হেটে গিয়ে পাহাড়ের উপরে উঠলে তার চেয়ে বেশি ক্যালরী খরচ হবে, এই ধারনা থেকে আমরা দুইজন মিল্কব্রেকে যাবার পরিমান কমিয়ে দিয়েছিলাম।

যাই হোক, ঐদিন মিল্ক ব্রেক টাইমের শেষ পর্যায়ে আমি আর কাইয়ুম গল্প করতে করতে একজন আরেকজনকে ধাধা ধরছিলাম। কাইয়ুম আমাকে বলল “বাবলা গাছে বাঘ বসেছে” এই বাক্যটা খুব দ্রুত বলতে হবে নির্ভূল ভাবে। আমি কয়েকবার বলতে গিয়েই দেখলাম বাক্যটি বদলে গিয়ে “ বাগলা বাছে বাপ বসেছে” এই টাইপ বলা শুরু করেছি। দুজনে হাসাহাসি করলাম। এরপর আমি কাইয়ুমকে ধরলাম “পাখি পাকা পেপে খায়” এই বাক্যটি। কয়েকবার বলতেই বাক্যটি রূপ নিল “পাকি পাপা পেকে কায়” এই জাতীয় বাক্যে। আবারো হাসাহাসি। এবার কাইয়ুম আমাকে আরেকটা পরীক্ষা দিল “আমি সাবান আর দুধ খাই” এই বাক্য দ্রুত বলতে হবে বারবার। আমি এই চালাকিটা আগে থেকেই জানতাম। আমি তখন চিৎকার করে বলতে থাকলাম “কাইয়ুম সাবান আর দুধ খায়”। বেশ কয়েকবার বলার পর দেখলাম, কাইয়ুমের মুখ ভয়ে শুকিয়ে গিয়েছে। পিছনে তাকিয়ে দেখি **ফা ম্যাডাম দাঁড়িয়ে আছে। আমি তখন বললাম, “স্যরি ম্যাডাম, আমরা দুষ্টামি করছিলাম সাবান এবং দুধ খাওয়া নিয়ে, আর কখনো এমন হবেনা”। ম্যাডাম রাগের চোটে ‘বেয়াদব ছেলেপেলে’ টাইপ আরো কিছু বকাঝকা দিয়ে বিড়বিড় করতে করতে চলে গেলেন। আমি যেন হাফ ছেড়ে বাচলাম।

ম্যাডাম যাবার পর কাইয়ুম আমাকে বলল, “ভাগ্যিস, ম্যাডামের নাম শাবানা না” :-B ।

২। এবারের ঘটনা ক্লাস নাইনের শেষের দিকের। একদিন ড্রিল গ্রাউন্ডে ইন্সপেকশনের সময় আমার ক্যাপের প্লুমটা ডিসকালার হয়ে ছিল দেখে এ্যাডজুট্যান্ট আমাকে বললেন “প্লুম পাল্টাতে হবে” এবং আইয়ুব ষ্টাফকে বললেন “ষ্টাফ, ওর নামটা নোট করে রাখেন, নেক্সট টাইম ইডি লাগাবেন”। ঐ দিন দুপুরে রেষ্ট টাইমে শুনি বিকালে গেমস টাইমে আমার ইডি। বুঝলাম আইয়ুব ষ্টাফ না বুঝে আমাকে ইডি লাগিয়েছে। আমার মন খুব খারাপ হলো। আমার ক্যাডেট লাইফের প্রথম এক্সট্রা ড্রিল ছিল ওটা। বিকালে ইডি গ্রাউন্ডে গিয়ে আমি ষ্টাফকে জিজ্ঞাসা করলাম, “ষ্টাফ, বলেন তো ‘নেক্সট টাইম’ মানে কি?” উত্তরে ষ্টাফ বলল ‘নেক্সট টাইম’ মানে ‘খেলাধুলার সময়’। আমি বললাম না ষ্টাফ, নেক্সট টাইম মানে পরবর্তী সময়, গেমস টাইম মানে হলো খেলাধুলার সময়। এ্যাডজুট্যান্ট আমাকে পরেরবার ইডি লাগাতে বলেছিল, আপনি বুঝেন নাই”। আইয়ুব ষ্টাফ আমার উপর মহা ক্ষেপে গেল। সাথে সাথে শুরু হলো বিকট চিৎকার – “আমারে ইংরাজী শেখাইতে আইসছ ??? ডাবল আফ, ফরগ জাম্প, ফরন টোল, টাছেন বেক” ইত্যাদি ইত্যাদি। শুরু হয়ে গেল আমার উপর আযরাইলের কারসাজি। বুঝলাম, নিজের দোষ ঢাকার জন্য ষ্টাফ এখন আমাকে আরো বেশি পানিশমেন্ট দিচ্ছে। তাই আর কথা না বাড়িয়ে মনে কষ্ট নিয়েই আমার প্রথম ইডি ভোগ করা শুরু করলাম। মনে মনে বললাম, এত সব পানিশমেন্টের ইংরেজী নাম জান আর মানে বুঝ, অথচ ‘নেক্সট টাইম’ এর মানেটা বুঝনা!!!

আইয়ুব ষ্টাফ সাইজে ছিল খাটো এবং গাট্টাগোট্টা। তাই আমরা ষ্টাফকে আড়ালে ‘গিট্টু’ বলে ডাকতাম। সেদিন প্রথম ইডি খেয়ে (কলেজ লাইফে মোট ৪টা ইডি খেয়েছিলাম) এসে মন খারাপ করে আমি আমার ডায়েরীতে ঘটনাটা লিখে রেখেছিলাম। তার একলাইন এখনো মনে আছে-

“আজ আইয়ুব গিট্টুর ইংরেজী না বোঝার কারনে আমার লাইফের প্রথম ইডি খেলাম”

৩। এবারের ঘটনা ক্লাস টেনের। ক্লাস নিচ্ছিলেন শা** স্যার। হঠাৎ কে যেন আবিষ্কার করল স্যারের প্যান্টের জিপার খোলা। সাথে সাথে সাড়া ক্লাসে তা রটে গেল। সবার মুখ টিপে হাসাহাসি ;)) আর আড়চোখে তাকানো দেখে ব্যাপারটা স্যারও একসময় টের পেলেন। কিন্তু সবার সামনে তো আর জিপার লাগানো যায়না। স্যার তখন একটা বুদ্ধি বের করলেন। হঠাৎ করে আমাদের সেলফ্ ষ্টাডি দিয়ে ফর্ম থেকে বের হয়ে গেলেন। করিডোরে গিয়ে এদিক ওদিক তাকালেন কিন্তু আড়াল না পেয়ে খুব একটা সুবিধা করতে পারলেন না। ফলে ঐ অবস্থায় আবার ক্লাসে ঢুকলেন। সবার হাসি যেন এবার আরো বেড়ে গেল। এবারে তিনি ক্ষেপে গেলেন। চিৎকার করে উঠলেন, “বেয়াদব ছেলেপেলের দল, এটা হাসির কোন ঘটনা নাকি?” পুরা ক্লাসকে তিনি করিডোরে নিয়ে হ্যান্ডস ডাউন করালেন। এই সুযোগে ফর্মে ঢুকে উনি জিপার লাগিয়ে নিলেন। উনার এক জিপার খোলা থাকার জন্য আমরা সবাই সেদিন পানিশমেন্ট খেলাম।

এরপর আর কখনো স্যারের জিপার খোলা দেখা যায়নি অবশ্য 😀

৪। এবারের ঘটনা ক্লাস টুয়েলভের। গোমতী হাউসের হাউস বেয়ারা (নামটা এখন মনে আসছেনা, আমি অবশ্য মেঘনা হাউসে ছিলাম) ছিল তখন নব বিবাহিত। তাকে দিয়ে প্রায়ই আমাদের গোমতী হাউসের পোলাপাইনরা টাকাপয়সা দিয়ে বিভিন্ন নিষিদ্ধ জিনিসপত্র যেমন- ওয়াক ম্যান, অডিও ক্যাসেট, ব্যাটারী, ওয়াটার হিটার ইত্যাদি আনাতো। তো ঐবার তাকে দিয়ে আনানো হলো নীল ছবি। বৃহস্পতিবার রাতে সবাই মিলে দেখব প্ল্যান।

বৃহস্পতিবার রাত আসল। ঐদিন ডিউটি মাষ্টার ঘুমিয়ে গেলে লুকিয়ে তালা খোলার দায়িত্ব নিল কাইয়ুম (আবারো আসল নামটা দিলাম না)। আমরা তিন হাউসের সব ক্লাসমেটরা গোমতী হাউসের টিভি রুমে গেলাম। যথারীতি এক্সপার্ট কাইয়ুম তার নেইলকাটার দিয়ে গুতিয়ে তালা খুলে ফেলল। আমরা ভিতরে গিয়ে সব জানালায় কম্বল লাগালাম। উৎসাহী ক্লাসমেটরা সবাই এসে টিভির সামনে বসে পড়ল। মিউট করে ছবিটা ছাড়া হলো। যেই প্রথম সিনটা আসল , অমনি কাইয়ুম চিৎকার করে লাফিয়ে উঠল “ কমন পড়ছে, কমন পড়ছে”।

প্রথমে না বুঝলেও পরে বুঝলাম, নীল ছবি কাইয়ুম এত বেশি দেখেছে যার কারনে এইবারেরটাও তার কমন পড়ে গিয়েছে :-B

২,৭০০ বার দেখা হয়েছে

৩৩ টি মন্তব্য : “পুশকির ছোট ভাই “ঠুশকি” (খুশকি -২)”

  1. ফয়েজ (৮৭-৯৩)

    তুমি যেমনে একের পর এক ছোট ভাই পয়দা করতেছ, কই গিয়া ঠেকবা, তারচেয়ে সিরিজ করলেই তো পার, কাউন্টিং এ সুবিধা।

    @ কাইয়ুম, দেখছ কান্ডটা, উলটা পালটা কিছু হইলেই পোলাডা তোমার পেটেন্ট নাম হায়ার করে, ইন্সাফ নাই দুনিয়ায়।


    পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না

    জবাব দিন
  2. জুনায়েদ কবীর (৯৫-০১)

    জটিল... :clap: :clap:
    রহমান ভাই, আপনার ব্যবহৃত 'টুশকি'র প্রায় সমোচ্চারিত শব্দ কিন্তু ধীরে ধীরে বিপজ্জনক হচ্ছে...
    তার চাইতে একই নামে সিরিজ করে ফেলান... O:-)

    ১ নং টা দেখে আমাদের কথা মনে পড়ে গেল... :dreamy:
    আমাদের মিল্কে একসময় হালিম এবং দুধ দিত... 😉
    আর কলেজে ঐ সময় ছিল ইংরেজীর...আর কমু না সবাই বুইঝালাইব... :-B


    ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ

    জবাব দিন
  3. সাকেব (মকক) (৯৩-৯৯)

    কবি ভাই,
    আমি নিদারুণ আনন্দ পাইসি... :))
    আসলেই... :boss:
    পোস্টটা পড়ার সময় এবং পড়ার পরেও ক্যালানি বন্ধ করতে পারতেসিনা... 😀


    "আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
    আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস"

    জবাব দিন
  4. রকিব (০১-০৭)
    নীল ছবি কাইয়ুম এত বেশি দেখেছে যার কারনে এইবারেরটাও তার কমন পড়ে গিয়েছে

    কাইয়ুম ভাইরে আগে কত্তো ভালা মনে করতাম... :no: :no:
    রহমান ভাই, জোশ হইছে :thumbup: :thumbup:
    সিরিজটা বানায়েই ফেলেন :clap: :clap:


    আমি তবু বলি:
    এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..

    জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।