খুশকি – ৩

সায়েদের সুপার ডুপার বাম্পার জাম্পার হিট “টুশকি” দেখে লোভ সামলাতে না পেরে অনেকটা নকল করে, অনেকদিন আগে আমি সাহস করে লিখেছিলাম “পুশকি”। তাতে বেশ ক’জনার উৎসাহ পেয়ে পরে আরেকটা লিখেছিলামঃ “ঠুশকি”। তখন অনেকে উপদেশ দিল একটা সিরিজ করে ফেলার জন্যে। কিন্তু আমি পড়লাম উভয় সঙ্কটে। প্রথমতঃ সায়েদের মতো আমার ষ্টক এতো অফুরন্ত এবং ষ্ট্যান্ডার্ড নয়, আর দ্বিতীয়তঃ সিরিজ করার মতো ভাল কোন নামও খুজে পাচ্ছিলাম না। আজ অনেকদিন পর টুকিয়ে টুকিয়ে অল্প কিছু লেখা জমা দেয়ার চেষ্টা করছি। আগেই বলে রাখি, সায়েদের টুশকির তুলনায় আমার এই লেখাগুলো নিতান্তই শিশুতোষ। তাই তাইফুরের সেই পুরনো খোচাঃ কোয়ান্টিটি নয় কোয়ালিটি কাম্য” শোনার জন্য আমি আবারো প্রস্তুত 😐 । আসলে সিসিবিতে না লিখলে আমার মাথাটা খুব চুলকায়, মাথার খুশকিও বেড়ে যায়। তাই ভাবলাম যদি সিরিজ করতেই হয়, তাহলে “খুশকি” ই হোক আমার সিরিজের নাম।

এখানে একটা কথা বলে রাখি; কুমিল্লার ১০০ এবং ২০০ তম পোষ্টদুটো আমারই লিখা ছিল। কাকতালীয় ভাবে এবার ৩০০ তম পোষ্টটাও আমার হয়ে গেল :awesome: !!! আমি ক্রিকেটে খুব দূর্বল হলেও সিসিবিতে এসে কিভাবে কিভাবে যেন আমি সেঞ্চুরীর কোটা ঠিকই পূরন করে ফেলি B-) B-) B-) । যাউজ্ঞা আর প্যাচাল না পাইড়া এইবার আমার ফ্লপ খুশকি গুলো সবার সাথে শেয়ার করিঃ

১। ক্লাস এইটের ঘটনা। একদিন আমাদের কলেজের ড্রয়িং এর শিক্ষক ক্লাসে ফুলদানী আঁকতে দিলেন। তিনি নাঁকী সুরে কথা বলতেন। আমাদের এক ক্লাসমেট ফুলদানী না একে অন্য একটা বস্তু আঁকা শুরু করলো। তার পাশে যখন স্যার এসে দাড়ালেন তখন ড্রয়িং আকা দেখে রাগ হয়ে তাকে প্রশ্ন করলেনঃ “ ক্বী মিঁয়া বঁদ, এঁইটা ক্বী আইঁকতেঁছ?” উত্তরে আমার সেই দুষ্ট বন্ধুটি বললঃ “স্যাঁর, এঁকটা ব্যাঁঙ আইঁকতেঁছি”

সাথে সাথে স্যার তার কানের পাশের চিপ (চুল) ধরে প্রচন্ড জোরে টেনে ক্লাসের বাহিরে নিয়ে গেলেন এবং বললেনঃ “এঁইবার ব্যাঁঙ জাম্প (ফ্রগ জাম্প) শুরু করো”।

সেই থেকে স্যারের নিক নাম হয়ে গেলো “ব্যাঙ”

২। ক্লাস নাইনের ঘটনা। প্রেপ আওয়ারে একদিন ঘুমাতে ঘুমাতে আমার আরেক ক্লাসমেটের মুখ দিয়ে লালা পড়া শুরু করল। প্রেপ ডিউটি মাষ্টার এসে তার কান ধরে টেনে উঠিয়ে লালা দেখিয়ে জিজ্ঞাসা করলেনঃ “ঘুমাচ্ছ কেন, আর এসব কি?” উত্তরে সেই ক্লাসমেট ঘুম জড়ানো কন্ঠে ঠোট মুছতে মুছতে বললঃ “স্যার, আমি তো ঘুমাইনি, আমার চোখ দিয়ে পানি পড়েছে”। শুনে তো ডিউটি মাষ্টার আকাশ থেকে পড়লেন। আবার জিজ্ঞাসা করলেনঃ “তা তোমার চোখের পানি কি আঠালো?” জবাবে আমার বন্ধুর নির্বিকার উত্তরঃ কেন স্যার? লালা ছাড়া কি শরীরের আর কোন পানি আঠালো হতে পারেনা?

এবারে স্যার মহা ক্ষেপে গিয়ে স্কেল দিয়ে তাকে পেটানো শুরু করলেন, আর বলতে লাগলেনঃ “এবার তোমার শরীরের সব আঠালো পানি একসঙ্গে বের করবো”
বলা বাহুল্য মার খেয়ে আমার সেই বন্ধুটির পানি বের হলো ঠিকই, কিন্তু তা আঠালো ছিলনা। …

অর্থাৎ স্যার সত্যি সত্যিই তার চোখের পানি বের করে ছাড়লেন :-B ।

৩। এবারের ঘটনা আমার এক কোর্সমেটের। সে অবশ্য নন ক্যাডেট। বিএমএর ফার্ষ্ট টার্মের ঘটনা। আমার সেই কোর্সমেট খুব বেশি ঘুম কাতুরে ছিল। একবার কেমেষ্ট্রী ক্লাসে ঘুমানোর জন্য মেজর মঈন (এইসি) তাকে মাথার উপরে ডেস্ক নিয়ে দাড় কড়িয়ে রাখলেন। কিছুক্ষন পর আমরা সবাই বিকট এক শব্দে পিছনে ফিরে তাকালাম। তাকিয়ে দেখি ডেস্ক মাথায় নিয়ে ঘুমাতে গিয়ে সে ডেস্ক সহই হুড়মুড় করে পরে গিয়েছে। সেই থেকে আমরা তার নাম দিলাম “ঘোড়া”।

একই বন্ধুর আরেকটা মজার কাহিনী বলি। এটাও ফার্ষ্ট টার্মের ঘটনা। সারা রাত পানিশমেন্ট খেয়ে শেষ রাতে ঘুমাতে যাওয়া ছিল তখন এক ধরনের রুটিন। তো আমার সেই বন্ধু একরাতে বেশি দেরী করে ঘুমিয়ে ভোরে পিটির সময় কোনমতে উঠল। উঠে চোখ বন্ধ করেই রুমের মধ্যে হাটতে হাটতে দেয়ালের কাছে গেল। এরপর স্লিপিং ট্রাউজারের জিপার খুলে দেয়ালের উপরেই ছোট কাজটা সেরে ফেলল। কিছুক্ষন পরেই তার রুমমেট ব্যাপারটা টের পেয়ে তাকে ধাক্কা দিয়ে জাগালো। ততক্ষেনে রুমে বন্যা বয়ে গিয়েছে। তাড়াতাড়ি অর্ডারলী (ব্যাটম্যান) ডাকা হলো রুম পরিষ্কারের জন্য। ফলে ঘটনা রটে গেল সারা কোম্পানী জুড়ে।

আমার সেই বন্ধুটি এখনো খুব ঘুম কাতুড়ে, তবে এরপর আর কখনো এ ধরনের ঘটনা সে ঘটায়নি।

৪। বিএমএতে সেকেন্ড টার্মের ঘটনা। সবেমাত্র সিনিয়র হয়েছি। এরই মধ্যে জয়েন করলো একটি স্পেশাল (শর্ট সার্ভিসেস কোর্স) ব্যাচ। আমাদের ব্যাচ তো মহা আনন্দিত। পাঙ্গানোর জন্য আরো কিছু ক্যাডেট (ইনফেক্ট ওরা ছিল টিও, অর্থা ট্রেইনী অফিসার) পাওয়া গেল। আমি তাদের পাঙ্গা না দিলেও একদিন গেলাম তাদের পাংঙ্গা খাওয়া দেখতে। গিয়ে দেখলাম একজন স্পেশাল টিও (ট্রেইনী অফিসার) কে শাউটিং ফলিন দেয়া হয়েছে। কারন সে শুদ্ধভাবে “স্পেশাল” শব্দ টা উচ্চারণ করতে পারতনা। সে বলতোঃ “স্পেশিয়াল”। তো তার পানিশমেন্ট ছিল শাউট করে কন্টিনিউ বলে যেতে হবেঃ “শিয়াল দুই প্রকার, খেক শিয়াল এন্ড স্পেশিয়াল; সো আই এম ওয়ান টাইপ অফ শিয়াল”

৫। এবার আমার নিজের ঘটনা বলি। বিয়ের প্রায় ৬ মাস পরের কথা। আমি, আমার স্ত্রী আর আমার শ্বাশুড়ী টিভিরুমে বসে আমার সাথে কথা বলছিলেন। হঠাৎ টিভির একটি নতুন এ্যাড আমাদের সবার নজর কাড়লো। গল্প থামিয়ে সবাই মনযোগ দিয়ে এ্যাড টা দেখতে লাগলাম। এ্যাডের কথাগুলো এ রকমঃ “ হুম নায়িকা বিয়া করছে, দেখুম নে” আমি উৎসুক ভাবে জিজ্ঞাসা করলাম এইটা আবার কোন নায়িকা? চিনি নাতো”। আমার শ্বাশুড়ী বললেনঃ “হবে হয়তো নতুন কোন নায়িকা” তখনো কেউ বুঝিনি কি ঘটতে যাচ্ছে, কারন ঐ এ্যাডটি সেদিন আমরা সবাই প্রথম দেখছিলাম। … কিছুক্ষন পর এ্যাডে দেখা গেল এক ভাই আরেক ভাইয়ের ঘরে গিয়ে জিজ্ঞাসা করছে “কেমনে, কেমনে?” তারপরই দেখা গেলো … “হিরো থাকলে টেনশন নাই, … আসল পুরুষ…” এই জাতীয় কিছু বাক্য। আমার শ্বাশুড়ী এক দৌড়ে রান্না ঘরের দিকে গেল, আমি গেলাম বারান্দায় :bash: আর আমার স্ত্রী চ্যানেল পালটানোর দায়িত্ব নিল।

এরপর থেকে আমার শ্বাশুড়ী আর কখনো আমার সামনে টিভি রুমে যায়নি।

৪,০৬০ বার দেখা হয়েছে

৪৫ টি মন্তব্য : “খুশকি – ৩”

  1. জিহাদ (৯৯-০৫)

    শেষের ঘটনা নিয়া আমারও ঘটনা আছে।
    আমরা সপরিবারে টিভি দেখতেসিলাম। মানে আমি, আব্বা, আম্মা আর আপু।
    এইটাইমে ঐ এড দেখানো শুরু হইলো। আমরা কেউই আগে দেখিনাই। আমি দেখে বলতেসি - হায় হায় এই এড কবে থেকে শুরু হইলো, কিসের এড এইটা? এইটুক বলে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতেসি নায়ক নায়িকার কাহিনী জানার জন্যে।
    এড দেখা শেষের পরিস্থিতির কথা এখন আর মনে নাই। ভুইলা গেসি। 😀 😀


    সাতেও নাই, পাঁচেও নাই

    জবাব দিন
  2. আমিন (১৯৯৬-২০০২)

    কালকে রাত্রেই পড়ছিলাম মোবাইলের মাধ্যমে। আমার মোবাইলের কী বাটনে সমস্যার কারণে রিপ্লাই করা হয় নাই। ফ্লপেটর ভাব ধইরা বিনয় দেখানোর জন্য রহমান ভাইয়ের ব্যঞ্চাই।
    😀 😀

    তয় লেখাটা সেইরকম হইছে।

    জবাব দিন
  3. মুসতাকীম (২০০২-২০০৮)
    এরপর থেকে আমার শ্বাশুড়ী আর কখনো আমার সামনে টিভি রুমে যায়নি।

    =)) =)) =)) =)) =)) =)) =)) =))
    ভাইরে কি দিলেন :goragori: :goragori: :goragori:


    "আমি খুব ভাল করে জানি, ব্যক্তিগত জীবনে আমার অহংকার করার মত কিছু নেই। কিন্তু আমার ভাষাটা নিয়ে তো আমি অহংকার করতেই পারি।"

    জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।