“shit man …its a shit to be born as poor. Do you see any european here???? all the poor people we are here to learn some shit…….”বোতসোয়ানার জন বান্টুর কথাটা প্রায়ই ভাবি। আমরা এখানে চীনের ঝ্যাংঝউতে যারা আছি, সবাই হয় আফ্রিকান, না হয় দক্ষিন অথবা দক্ষিন-পূর্ব এশিয়ার লোকজন, যারা চীনের তৈরীকৃত সস্তা অস্ত্র ব্যাবহার করি,আর নিজেদের সান্ত্বনা দিয়ে বলি “it’s not the gun, rather it’s the man behind the gun.” সেই সাথে অপেক্ষা করে থাকি- কখন একটা অস্ত্রের উপর কিছু শিখানোর জন্য আমাদের মত গরীব দেশের লোকদের ডাকবে। ডাকার পর তাদের শেখানটাও হয় তাদের ইচ্ছামতই। আমাদের কী শেখা দরকার, ছাত্র কী জানতে চাচ্ছে , মাঝে মাঝে খানিকটা ব্যতিক্রম থাকলেও অনেক সময়ই তারা তার ধার ও ধারে না ।
গরীর হয় জন্মানটা অপরাধ নয়, তবে বাংলাদেশের মত দেশে মধ্যবিত্তের ঘরে জন্মানটা খানিকটা অপরাধ তো বটেই । এখানে জন্মালে সাধ্যের বাইরে পৌঁছানোর স্বপ্ন দেখতে হয়, আবার খেয়াল রাখতে হয় সাধ আর সাধ্যের যেন একটা সমন্বয়ও থাকে, অন্যথায় সেই স্বপ্ন দেখার আগেই ঘুম থেকে জগে উঠে বসে বাস্তুবতার মুখোমুখি হতে হয়।
এখানে এসে প্রথমদিকে আমরা বাঙ্গালীরা খুব ভাব নিয়ে চললাম, ভাবলাম এখানকার অধিকাংশ দেশেই অভাব,অনটন, অশান্তি ভরপুর। অনেক দেশেই বাংলাদেশের সেনারা শান্তিরক্ষীর কাজ করে এসেছে । অনেকের কাছেই বাংলাদেশী বলে আলগা খাতিরও পেয়েছিলাম। বলা বাহূল্য ক’দিন পর যখন আন্তর্জাতিক খবরে বাংলাদেশের হরতাল আর ইসলামী আন্দোলনের খবর প্রচার শুরু হল, হাজার হাজার মানুষ রাস্স্তায়, চারদিকে কেবলই জ্বালাও পোড়াও, স্থানীয় পত্রিকাতেও তার বিস্তারিত ইতিহাস ছাপাতে লাগল- তখন কাকে কী বলে এর ব্যাখ্যা দিব- এই চিন্তাতেই দিশেহারা হতে থাকলাম। তার পর এল রানা প্লাজার ট্রাজেডি। যা সভ্য পৃথিবীর ইতিহাসেরই এক বিস্মরণ্ময় কলঙ্ক । ফ্রেঞ্চভাষাভাষী উত্তর আফ্রিকার লোকরা ভাঙ্গা ইংরেজীতে জিজ্ঞাসা করে “shible, how did it happen ? what did the govt do while constructing the building ?”
উত্তর কী দেব ভেবে পাচ্ছিলাম না যখন, তখন তৌহিদ স্যার এক গল্প শুনালেন। তার এক কাজিনের মেয়ে । বয়স হবে… ২ অথবা আড়াই বছর । তো সে প্রায়ই প্যান্ট না পরেই মেহমানের সামনে এসে হাজির হয় । যদি তাকে জিজ্ঞাসা করা হয় “ এই মেয়ে তুমি এভাবে সবার সামনে আস, তোমার লজ্জা করে না ?” তার সপ্রতিভ উত্তর “ তোমার লজ্জা লাগলে তুমি চোখ বন্ধ করে রাখ, তাহলেই তো আর লজ্জা লাগবে না ।” গল্পের শিক্ষা অনুযায়ী এর পর আমরাও সে পন্থা অবলম্বন করতে থাকলাম । দু’এক দিন পরই আমাদের লজ্জাও মাটিতে মিশে গেল ।
বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মানোর আর এক সমস্যা হল অন্যের চোখ বন্ধ করা যায় না । নিজেকেই কাপড় পরে বের হত হয় । আমরা অভাবের দোহাই দিয়ে কম কাপড়েরে পোষাক পরতে পারি না, আবার আধুনিকতার নাম করে ছোট সাইজের পোশাক পরেও বাইরে আসতে পারি না । নিজেদের সংশোধিত হয়েই আমাদের সমস্যার সমাধান করতে হয়, তা নিজের ইচ্ছা থাকুক আর নাই থাকুক, সেটা নিজের মনমত হোক, আর নাই হোক । আমাদের সেটাই করতে হবে, যেটা সমাজের চোখে নিয়ম, কর্তব্য । ডেন্টিস্টের পুরো ফি দিতে না পারলেও সহজ চিকিৎসা দাঁত ফেলতেও তাই আমাদের আপত্তি । শুরু হল কম্প্রোমাইজের খেলা । আমাদের সমাজ ব্যবস্থাতে আমাদের পরিবার আর কিছু শিক্ষা দিক আর না দিক, কম্প্রোমাইজের শিক্ষাটা আমরা ছোটবেলা থেকেই পেয়ে আসছি । কখনো মার খাবারের প্লেটের দিকে তাকিয়ে, কখনও বা বাবার আফিসের জুতাটার দিকে তাকিয়ে সে শিক্ষায় স্বশিক্ষিত হবার দিক্ষা আমাদের একেবারেই জন্মগত । অনেক সময় আমাদের বাবা-মাও ধরেই নেন “আকালমান্দকে লিয়ে ইশারাহি কাফি” ।
অনেক সময়ই সন্তান সে ইশারাটা বুঝতে পারল কিনা,তাকে আরও খানিকটা বুঝিয়ে দেয়া দরকার কিনা, এটা অনেক বাবা-মায়েরই খেয়ালের বাইরে থেকে যায়। বিশেষ করে আমাদের বাবাদের ।
ছোট্ট একটা উদাহরণ দেই। আমাদের দেশে সন্তানরা যখন বয়ঃসন্ধিতে উপনীত হয়, তখন অনেক সময় মা-দের খানিকটা ভূমিকা রাখতে দেখা যায়, বলাই বাহূল্য তা শুধু মেয়ে সন্তানের মাঝেই সীমাবদ্ধ । ছেলেরা যেন কোন দৈববানী পেয়ে যাবে, অথবা সমবয়সী কাজিন বা বন্ধুবান্ধব তো আছেই । তাই অনেক বাবাকেই এ বিষয়ে কখনো কথা বলতে দেখা যায় না । অভাগা ছেলেটাও তখন নিজের মত করেই খানিকটা শিখে নেয় । সে শিক্ষাটা অনেক সময়ই যে সঠিক নয়, তা বোধ হয় ব্যখ্যা না করলেও চলে। অনেক পাঠক নিজের জীবনের অভিজ্ঞতার দিকে তাকালেই বুঝতে পারবেন আশা করি । ছেলে কত বড় হল, তার এখন চাহিদা কী- এসব নিয়ে অনেক বাবারই ভাবার সময় খুব একটা দেখা যায় না। বাবারা যদি আর একটু সচেতন হতেন, তাহলে আমাদের সমাজের সন্ত্রাস, মাদকাসক্তি অনেকটাই বোধহয় কমে যেত ।
এই বাবাদের অনেকেই অনেক উচ্চশিক্ষিত, উঁচু পদে চাকরী করেন, অনেক লোকের ভবিষ্যত তার স্বাক্ষরের উপর নির্ভর করলেও বাসায় এসে ছেলেটার পাশে বসে তাকে খানিকটা সময় দিতে, বা ছেলের ভবিষ্যত পরিকল্পনা জানার সময় অনেকেই পান না । কেননা তিনি তার সন্তানের ভবিষ্যত সুরক্ষার চিন্তাতে বিভোর- তা ভেতরে ভেতরে সে সন্তান অন্ধকারের দিকেই যাচ্ছে কিনা হয়তো সেদিকেও কখনো তাকানো হয়নি । পরীক্ষার পর রেজাল্টশীটটা সাইন করার সময় ঠিকই বলতে দেখা যায় “এই বিষয়ে নম্বর এতো কম কেন ?” অথচ বিষয়ে ছেলের সমস্যা দেখার জন্য তো প্রাইভেট টিচার আছেই, যার বেতন বাবাই মাসে মাসে পরিশোধ করেন ।
মিডিয়া আর ফেসবুকের কল্যানে আমরা সবাই জানি আজ বাবা দিবস । বাবারাও হয়তো বসে আছেন আজ তার সন্তান তাকে হয়তো সুন্দর কোন উপহার দেবে । প্রিয় মেয়েটা হয়ত প্রিয় একটা ব্রান্ডের ঘড়ি নিয়ে এসে গলা জড়িয়ে ধরে বলবে “ বাবা………তোমায় অনেক ভালবাসি”।
তার পরও আজ বাবা দিবসেই আমি সব বাবাদের প্রশ্ন করছি – কোন দিন আপনার ছেলেটার সাথে বসে তার কল্পনা জানতে চেয়েছেন কী ? তার স্বপ্নের রঙ অনুভব করার সময় হয়েছিল কী আপনার ? জীবনে বেশিরভাগ ছেলেই তার বাবাকে আদর্শ করে বড় হয়ে ওঠে , সেখানে ছেলের চোখে কখনো নিজেকে দেখতে পেয়েছেন কী ? ছেলের কোন অপরাধের জন্য অপমান সয়ে বাড়িতে আসার পর গায়ে হাত না তুলে, হার্টের রোগ না বাধিয়ে পাশে বসিয়ে ছেলেকে জিজ্ঞাসা করে দেখেছিলেন কি -আপনার আদর্শে বড় হয়ে ওঠা ছেলেটা এ অন্যথা কেন ঘটাল ? সে পরিস্থিতে ওই অন্যায়টা না করে তার কী করা উচিত ছিল সে বিষয়ে তাকে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন কী ?
হয়তো এখনো খুব বেশি দেরি হয়ে যায় নি । কাছে আসার সুযোগ দিন । হয়ত আপনার ছেলেটাও এই সুযোগের অপেক্ষায় আছে । আজকের এই বাবা দিবসটা না হয় বাবা-ছেলের দূরত্ব মোচনেই স্বার্থক হয়ে উঠুক ।
একদম সময়োচিত কিছু কথা বলেছেন। আমার নিজের অভিজ্ঞতাও একই রকম। পিতা পুত্রের সম্পর্ক টা তে সম্মানের চেয়ে ভয় ই মনে হয় বেশি কাজ করতো। বিষয় গুলো নিয়ে এট লিস্ট আমাদের ভাবার সময় এসেছে। লেখা ভালো লাগছে।
যৌক্তিক কিছু বিশ্লেষণ। ভাল ছিল ভাইয়া।
খাঁটি কথা। :boss: :boss:
বাপ-মা হবে সবথেকে ভালো বন্ধু। কিন্তু বেশীরভাগ যায়গায় দেখি 'বাপ-মা রে যমের মতো ডরায়!
ছোট হাতি
ভালো লেখা।
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ