খাওয়া দাওয়া

খাওয়া দাওয়া টা অনেক important জিনিস। সবাই দেখি অনেক কিছু লিখে ফেলসে, punishment, stage compitition,হাবিজাবি। আমি আবার একটু খাওয়া দাওয়া পছন্দ করি, তাই…ব্লগটাও…আর আমি এইটা নিয়ে মোটেও লজ্জিত না।

বাইরে এসে মানুষজন বুঝে ক্যাডেট কলেজে রানী ভিক্টোরিয়ার হালে থাকতাম, খাওয়া দাওয়া তো কিছু পছন্দ হতো না ঐখানে (আমার অবশ্য হত! ), বিশেষ করে শুক্রবারের খিচুড়ি-ওফফ! ওইটা এমনকি আমারও পছন্দ হইত না। কিন্তু খেলা থাকলে আবার ওইটাই চুরি করে আনতাম। আমি এখনো বুঝিনা যেই খিচুড়ি ডাইনিং হলে খেতাম না সে খিচুড়িই হাউসে এনে খাওয়ার মাহাত্ম্যটা ঠিক কোন খানে। যাই হোক, আনতাম-সেইটাই বড় কথা। খেলা আর খিচুড়ি-দুইটা আসলে দারুণ যায়। আমি ক্রিকেট তেমন একটা বুঝতাম না। কিন্তু সুষমার ‘মাখানো’ খিচুড়ির লোভে সবার আগে কমন রুমে গিয়া জায়গা রাখতাম। সবার জন্য বরাদ্দ তিনটা চেয়ার-আমরা একেবারে বালিশ কাথা নিয়া চলে যাইতাম। আর সুষমা বেচারী ঘুরে ঘুরে লাটসাহেবগুলাকে মুখে তুলে খাওয়ায় দিত। ওফফ-কি যে মজা হত খেলা দেখার সময়টা- ৪ আর ৬ এর জন্য প্ল্যাকার্ড বানানো হইত। আর সবার গালে ক্যামেল কালারে আকা পতাকা। ম্যাডাম আসলে সবার গালে হাত। সবাই জ্ঞানী জ্ঞানী ভাব নিয়ে গালে হাত দিয়ে ক্রিকেট দেখতেসে!

বাংলাদেশ যেইদিন অস্ট্রেলিয়ার সাথে জিতলো সেইদিন আনন্দের চোটে আমরা কাচা কাঠাল খেয়ে ফেলসিলাম। কে জানি ভুল করে কাঠালটা পাড়ছিলো-বুঝে নাই যে কাচা। এরপর কোত্থেকে খবর আসলো কাঠালের মাথায় ফুটা করে একটু লবণ ঢেলে দিলে নাকি কাঠাল তাড়াতাড়ি পেকে যায়। আমরা সানন্দে তা বাস্তবায়ন করলাম। দিন যায়, সপ্তাহ যায়, কাঠাল আর পাকে না। এদিকে দুম করে বাংলাদেশ জিতে গেলো। আমরাও সেলিব্রেট করার কিছু না পেয়ে কাঠালটা খেয়ে ফেললাম।

আমাদের ব্যাচটা ছিলো একদম যাকে বলে হাভাতে। একবার ডাইনিং এ একটা নতুন আইটেম শুরু হল-তেহারী। যেহেতু নতুন, তাই মজা হোক আর না হোক, আমাদের সবার খুব প্রিয়। প্রতি বুধবার অনেক সখ করে ডাইনিং হলে যাই। তেহারী খেয়ে আসি। এদিকে কলেজ থেকে বের হওয়ার দিন চলে আসতেছে। আমরা যাব সোমবার, আর তেহারী দেয় বুধবার। আমরা অনেক ঝুলাঝুলি করে ওআইসি কে ধরে ডেটটা দুইদিন আগায় আনলাম। কলেজ থেকে বের হওয়ার আগে তেহারী খেয়ে দেয়ে বাইর হলাম। এবং বড় দুঃখের বিষয়, এই জন্য কারও মাঝে তেমন কোনো লজ্জা বা কৃতজ্ঞতা বোধ দেখা গেলো না, যেনো এইটাই আমাদের পাওনা ছিলো!

আর চানাচুর পার্টি-নিশ্চুই কেউ ভুলি নাই! ভুলবও না ইনশাআল্লাহ। বনিটা এমন শয়তান ছিলো- আজলা ভরে পানি নেয়না- ওইরকম করে দুইহাত ভর্তি চানাচুর নিয়ে ফার্স্টেই উপরটা চেটে দিত(খবিস একটা)- যাতে কেউ খামচি মারতে না পারে। আর ফারানা যা জোশ চানাচুর মাখাত(উমমম…), ঝালের চোটে চোখে পানি চলে আসতো। প্রথম প্রথম বাটিতেই চানাচুর মাখানো হত। পরে দেখা গেলো কেউ বাটি ধুতে চায়না। পরে ক্যাডেট নাম্বার wise ধুয়ার প্রথা চালু করা হলো। সেইটাতেও কাজ না হওয়ায় আমরা হাল ছেড়ে দিয়ে পেপারে মাখানো শুরু করলাম। খাওয়া যখন শেষ তখন দেখি পেপারের যেইটুকুর উপর চানাচুর ছিল সেইটুকু গোল করে ছিড়া। আমরা খামচা খামচি করতে গিয়ে কাগজ শুদ্ধা খেয়ে ফেলসি!

তারপরও অবশ্য বাটিতে আমরা ফেরৎ যাইনি। পেপার শুদ্ধাই খেতাম। আর আম পার্টি-ওফফফ-এর কথা আসলে লিখে বুঝানো যাবে না।

একবার আমি আর লিরা মিলে এক কোণায় একটা নতুন গাছ আবিষ্কার করলাম। গোল গোল ফল, দারুণ মিষ্টি। জিনিয়া আর তাসনীম কে দাওয়াত দেওয়া হলো (আমরা চারজন ছিলাম ফলচোর গ্রুপ)। খুব পার্ট নিতেসি দুইজনে মিলে। বললাম এই দেখ চিনিফল(আমাদের কোনো দোষ ছিলো না,দিদি বলছিলো ওইটার নাম চিনিফল।)। ফলটা দেখে ওরা দুইজনেই মুখ চাওয়াচাওয়ি করলো খাণিকক্ষণ। পরে তাসনীম আর চুপ থাকতে না পেরে বললো “এইটা তো সফেদা!”

জিনিয়া সেইদিন দাবী করসিলো ফলটা ওর বিশেষ পছন্দ হয় নাই, যদিও ও একাই তিনটা খেয়ে ফেলসিলো। আমরা পাইলাম দুইটা করে।

এইসব হাবিজাবি খেতে খেতে কিভাবে জানি কলেজটা কেটে গেলো।

শ্রাব্য এবং অনুভবযোগ্য খাদ্যও প্রচুর পেটে গেছে। সেগুলো খুব একটা সুখস্মৃতি না। আজকাল অবশ্য, মাঝে মাঝে খুব ইচ্ছা করে আর একবার সিতারা ম্যাডামের সেই বিখ্যাত বকা খাই। বলা বাহুল্য এই জিনিশটা প্রায়ই খেতাম। রি-ইউনিয়নে যেবার গেলাম, ম্যাডাম আমার সাথে এমন হাসিমুখ করে কথা বললেন যে আমার মোটামুটি শর্ট সার্কিট হয়ে গেলো। বুঝলাম,আর যাই হোক,এই জিনিশটার বরাদ্দ আমার জন্য শেষ। ব্যাপারটা আসলে খুশি হওয়ার মতো ছিলো, কিন্তু কেন যেন ঠিক খুশি হতে পারি নাই!

১,৪১৭ বার দেখা হয়েছে

৪ টি মন্তব্য : “খাওয়া দাওয়া”

  1. icclmm 2001 এ তোমাদের নাজমা ম্যাডাম এর সাথে দেখা হয়েছিল।খুব এ ভাল মহিলা(যদিও আমার কাজিন তামান্না আপা,১৭ ব্যাচ,এ ব্যাপারে ভিন্ন মত প্রকাশ করেন), কিকির সাথে কথা বলতে বাধা দেন নি(কিকি আর আমি দুইটাই চিটাগং এ থাকতাম)।

    রকিমুন্নিসা ম্যাডাম কে নিয়ে হাজারটা কাহিনি আছে ঝকক তে।পরীক্ষার পর লিখব আশা করি।

  2. এই ব্লগে আমার পদচারনা মাত্র দুদিনের। আজ এই লেখাটা পড়ে মনে হচ্ছে I am too late to join here.
    এতো সুন্দর করে লিখেছে মেয়েটা,আপনারা ওকে একটা পুরষ্কার দেন না কেন?
    প্রতিভার একটা সম্মাননা অবশ্যই থাকা উচিত।
    (Plz dont take otherwise)