প্রিয় হুমায়ূন আহমেদ

প্রিয় হুমায়ুন আহমেদ,

অনেক আবেগ জমে গেলে আমি লিখতে পারিনা। শ্রাবন মেঘের দিনে তোমার চলে যাওয়াটাও মানতে পারছিনা। এই শ্রাবনে তোমার কোথাও যাবার কথা ছিলনা। শঙ্খনীল কারাগার কিংবা নন্দিত নরক কেউ তোমাকে পাওয়ার যোগ্য নয়। তুমি কৃষ্ণপক্ষের চাঁদ হয়ে আমাদের জোছনা ও জননীর গল্প শোনাবে। তেতুল বনে যে জোছনার রূপ ঝরে পড়বে। মধ্যাহ্নের তীব্র রোদে হিমু হেঁটে চলবে ঢাকার রাস্তায়,তুমি রূপাকে চিরদিনের জন্য তাঁর করে দেবে। মিসির আলির অমীমাংসিত রহস্যের জট খুলে যাবে। ছায়াবিথীর ছায়ায় তুমি ক্লান্ত হয়ে জিড়িয়ে নেবে। লিলুয়া বাতাস এসে তোমাকে শীতল করবে। মেঘের ওপারে বাড়ীতে আমাদের ছেড়ে তুমি থাকতে পারবেনা। থাকতে পারোনা। তুমি বৃষ্টি বিলাস করবে পৃথিবীর মাটিতে। বাদল দিনের দ্বিতীয় কদম ভুল বরন করবে তোমায় বহুব্রিহী আনন্দে। কেউ কোথাও নেই তবুও তোমার অয়োময়তা পূর্ন করবে আমাদের। তাই যদি মন ডাকে তুমি চলে এসো এক বরষায়। হুমায়ুন আহমেদ তোমার জন্য কাঁদার মত আবেগ প্রকৃতি আমাকে দেয়নি।

…………………………………………………………………………………..

২০০৫ সালের কোন এক বৃষ্টির দুপুর। সপ্তম মানের একটি ক্যাডেট বেড কভার মুড়ি দিয়ে কাঁদছে। একটু আগেই সে মেঘ বলেছে যাবো যাবো নামে একটি বই শেষ করেছে। বইয়ের শেষে হাসানের মৃত্যু সে মেনে নিতে পারেনি। তিতলী এবং লেখক দুজনের উপর ই তার প্রচন্ড মেজাজ খারাপ হল। ছেলেটি সচরারচর গল্পের বই পড়েনা। হাউস প্রিফেক্ট শুভ্র নামে দ্বাদশ মানের একটি ক্যাডেট হাউস লাইব্রেরীর জন্য বই আনতে বলেছে। হাউস প্রিফেক্টকে খুশী করতে অনেকেই শুভ্র নামধারী অনেক গুলো বই এনেছে। কিন্তু এই ক্যাডেট এনেছে মেঘ বলেছে যাবো যাবো। তার কেন জানি মনে হচ্ছে এই বইটি হাউসপ্রিফেক্টের পছন্দ হবেনা। ক্যাডেট কলেজ নামক শঙ্খনীল কারাগার ইতোমধ্যে তার কাছে নন্দিত নরকে পরিনত হয়েছে। না না দ্বিধা দ্বন্দ কাটিয়ে সে বইটি নিজের কাছে রেখে দিল। সিনিয়রদের চোখ এড়াতে বইটির স্থান হল লকারের শেষ ধাপে জুতো রাখার থাকে। গভীর রাতে সবাই ঘুমিয়ে গেলে সে করিডোরের আলোয় চুপেচুপে বইটি পড়ে। অনেক রাত নির্ঘুম কাটানোর পর সে এই মাত্র বইটির শেষ অধ্যায় পড়লো। তাঁর চোখের কোনে চিকচিক জল জমছে। একবার ভাবল সে কাঁদবেনা। একজন ক্যাডেটের চোখে পানি মানায়না। কিছুক্ষন পর তার মনে হল কিছু আবেগ আছে যা ঝড়িয়ে দিতে হয়। তাই সে কাঁদলো। বেডকভার মুড়ি দিয়ে নীরব কান্না।

হুমায়ূন আহমেদ এর সাথে আমার পরিচয় এভাবেই। এরপর তাঁর জগতে খুব সহজেই ঢুকে পড়ি। তাঁর জন্য জমানো আবেগটা আগের চেয়েও তীব্র এবং প্রখর। তাই মিফতাহ জামানের গানের সুরে বলতে হয়, কেঁদোনা তুমি একা অসহায়, এই তো চিরপরিচিত বিষ্ময়. . . .

চিরপরিচিত মৃত্যু কেন মানতে পারিনা. . . . . . . [:-(]

১,৩১০ বার দেখা হয়েছে

৬ টি মন্তব্য : “প্রিয় হুমায়ূন আহমেদ”

  1. রকিব (০১-০৭)

    লেখার শিরোনামটা বাদ পড়েছে।
    আর নামের বানানটা শুধরে দিও- হুমায়ূন আহমেদ হবে।

    শান্তিতে ঘুমান হুমায়ূন আহমেদ...


    আমি তবু বলি:
    এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..

    জবাব দিন
  2. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    বিদায় হুমায়ূন আহমেদ, গত কয়েক বছর তার লেখা পড়া হয়নি, ভাল লাগার পরিমানও কমতে শুরু করে ছিল। কিন্তু প্রথম যখন তার অসুস্থতার কথা শুনলাম তখন থেকেই সেই পুরোনো হুমায়ূন আহমেদকেই মনে পড়ছিল, যার গল্প, উপন্যাস আর নাটক আমার কৈশরকে আনন্দময় করে রেখেছিল। গত সপ্তাহতেই 'কোথাও কেউ নেই' নাটকটা রিভিশন দিলাম, আর আজ শুনি উনি নিজেই আর নেই, খুব বিষন্ন লাগছে।

    ভাল থাকুন হুমায়ূন আহমেদ, হিমু, বাকের ভাই, মিসির আলি, শুভ্র... এদের ভেতর দিয়ে বেচে থাকুন আমাদের মাঝে।


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন
  3. রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)

    তার লেখা কোন কোন বইয়ে হুমায়ুন আহমেদ ও লেখা হইছে।
    যাই হোক মানুষটা নাই এইটাই জরুরী খবর। আব্বা টেXট করে জানিয়েছিলো।


    এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ

    জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।