বর্ষবরণ

৩১.১২.২০১৩                        সকাল ৮টা

টুকুনঃ এই আজকে কি অফিসে অনেক জরুরী কাজ আছে ?
টিটোঃ কেনগো ?
টুকুনঃ তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরবে। আজকে থার্টির্ফার্ষ্ট।
টিটোঃ বসের সাথে দেখা করতে হবে।চোখের সমস্যাটা বেড়েছে। মনে হয় চশমা পাল্টাতে হবে।
টুকুনঃ অন্যদিন যাও।
টিটোঃ আজ ছাড়া আর ফাঁকা দিন কই।হরতাল অবরোধ কবে কাটবে কে জানে ? আচ্ছা দেখি তাড়াতাড়ি ফেরা যায় কি না ।
টুকুনঃ তুমি আসলে আমাদের নিয়ে ভাবনা। শুধু অফিস আর নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত !

৩১.১২.২০১৩                        বেলা ১২টা

টুপলুঃ হ্যালো আব্বু তুমি কোথায় ? কখন আসবে ?
টিটোঃ আব্বু আমি ডাক্তারের কাছে । চোখ দেখাচ্ছি । চশমা বদলাতে হবে ।
টুপলুঃ আচ্ছা তাড়াতাড়ি চলে আস। আমাদের জন্য বেলুন, পার্টি স্প্রে আর কালোজাম আন।
টিটোঃ ঠিক আছে আব্বু । ভাইয়াকে দেখে রাখ। আম্মুকে জালাবে না।

৩১.১২.২০১৩                        বিকাল ৩টা

টুকুনঃ হ্যালো জান তুমি কোথায় আছ ? আসছ না কেন ?
টিটোঃ রাজশাহী আছি সোনা।এক ঘন্টা পর চশমা দিবে । তার পর আসব ।
টুকুনঃ বাচ্চাদের জিনিস পত্র আর ২০১৪ সালের পিএসসি পরীক্ষার গাইড নিয়ে তাড়াতাড়ি  আস।
পিচ্চির সাথে কথা বল।
টুকলিঃ আব্বু তাড়াতাড়ি আস। আমার জন্য কোয়েল পাখির ডিম আর বেলুন আন।

৩১.১২.২০১৩                        সন্ধ্যা ৬টা

টুকুনঃ আসসালামু আলাইকুম।
টিটোঃ ওয়ালাইকুম আস সালাম।
টুকুনঃ বাব্বাহ তুমি কত্ত ভাল। কত্ত কিছু নিয়াসছ আমাদের জন্য, দেখি।
টিটোঃ দেখ । টুপলু আর টুকলি কই ?
টুকুনঃ ওরা পিকনিকে গেছে । এত দেরী করলে কেন ? এ কী ? গাইড আননি কেন ?
টিটোঃ ২০১৪ সালের গাইড বের হয়নি এখনও।
টুকুনঃ ২০১৩ সালেরটা আননি কেন ? কেমন বাবা তুমি ? ছেলের জন্য কোন চিন্তা ভাবনা নাই!
টিটোঃ দেখ তুমিই তো বলছিলে ২০১৪ সালের গাইড নিতে। বৃহঃ বারে বললে ২০১৩ সালের বইয়ে চলবে না ২০১৪ শিক্ষা বর্ষের বই লাগবে। বই যদি না চলে তাহলে গাইডে চলবে কি করে?
টুকুনঃ কৃপন, ফকির।
টিটোঃ দেখ ক্লাস শুরু হবে জানুয়ারী মাসে । এখন গাইড না হলে কি হবে ? আগে বই একটু পড়ুক।
টুকুনঃ সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর দেয়া কত কঠিন যান তুমি ? গেল বারের প্রশ্ন দেখছ ? বই দেখছ ? খালি এস নিজে করি।
টিটোঃ দেখেছি তো। বেশ কঠিন। বই ও দেখলাম। কিছু আলোচনা না করে সরাসরি কাজ আর প্রশ্ন আছে অনেক জায়গায়। তেনারা প্রাইমারীর ছাত্রদের কি মনে করে? নোট বইয়ের বদলে টেক্সট যাতে বেশি পড়ে সেজন্য না কি সৃজনশীল চালু করছে ।এখন দেখছি নোট বইয়ের উপর আরও বেশি নির্ভরশীল হতে হচ্ছে। আমাদেরই সমস্যা হচ্ছে তাহলে ভেবে দেখছ গরীব ছাত্রদের কি অবস্থা ? একেকটা গাইডের দাম কত ?
টুকুনঃ কয়েকটা টাকার জন্য বই আনলেনা ? তুমি আসলেই ফকির একটা !
টিটোঃ আচ্ছা বাবা থাম।হরতাল অবরোধ কেটে গেলে প্রথম দিনেই এনে দেব গাইড। ইয়ে বাবুদের ওখানে যাই চল।ওখানে কতক্ষণ থাকতে হবে ? আমি কিন্তু রাত ১২টা পর্যন্ত ঐ ঠান্ডার মধ্যে থাকতে পারব না।
টুকুনঃ তুমি আসলে আমাকে ভালবাসনা।বাচ্চাদেরও না।অফিস , কম্পিউটার, মোবাইল ফোন, ডিজিটাল ক্যামেরা, ইন্টারনেট, ফেসবুক এসব নিয়েই থাক রোবট কোথাকার।আবগে অনুভূতি কিচ্ছু নাই। বুড়া হাবড়া,  টাকলে , কানা ! চুল আর চোখের সাথে সব গেছে তোমার।
টিটোঃ দেখ সারাদিন বাইরে ছিলাম। একটু ক্লান্তি বোধ করছি। সন্ধ্যা থেকে রাতদুপুর কি করে ঘরের বাইরে থাকব বল?
টুকুনঃ ইতর , ছোটলোক, আনকালচার্ড ! সবাই কত মজা করছে আর উনি কুনোব্যাংয়ের মত মুখ গোমড়া করে ঘরের মধ্যে থাকবেন।
টিটোঃ ভুল বলছ জান। আমিও মজা করতে চাই। লেপের মধ্যে থার্টফার্ষ্ট করতে চাই। বাচ্চাদের ঘুম লাগিয়ে দিয়ে পানি গরম করতে দিও।
টুকুনঃ অসভ্য ।
টিটোঃ দেখ জান আমার আইডিয়া কিন্তু খারাপ না। নিরাপদ উষ্ঞতায় ২০১৩ সাল থেকে ২০১৪ সালে চলে যাব। এর চাইতে ভাল উদযাপন আর কিভাবে হতে পারে বল ?
টুকুনঃ আচ্ছা ওদের একটু দেখে শুনে ব্যবস্থা হবে। রেডি হয়ে নাউ।

৩১.১২.২০১৩                        রাত ৭টা

টিটোঃ বাহ্ ছেলেরা তো বেম মজা করছে । গানের ক্যান , ডিসকোলাইট, টর্চ , বেলুন টেলুন সব নিয়ে চলে আসছে ।
টুকুনঃ তোমার ছেলেরা তোমার মত রাম গরুড়ের ছানা নাকি ?
টিটোঃ এই টুপলু টুকলি তোমরা কিন্তু শেডের বাইরে যাবেনা। একটু সাবধানে নাচানাচি কর। পড়ে যেও না।
টুকুনঃ এই বাবুর আব্বু ,তোমার তো টায়ার্ড লাগছে । তুমি একটু মদন ভাইয়ের বাসায় রেষ্ট কর। আমি ওদের দেখছি। লাপটপটা আনলে পারতে !

 

৩১.১২.২০১৩                        রাত ৮টা

মদনঃ ভাই কি করেন ?
টিটোঃ এই তো একটু ফেসবুক দেখি। দায়িত্বশীলতার সাথে উদযাপন বিষয়ে একটা স্ট্যাটাস দিচ্ছি। কি যে হবে আজ ? সেই বাঁধনের মত ঘটনা যেন আর না হয়। লেখলাম-
No more dirty burst
Enjoy responsibly
On the thirty first.

মদনঃ বাহ বেশ লেখছেন তো। দেখবেন অনেক লাইক পড়বে।
টিটোঃ না রে ভাই। এই স্ট্যাটাসে আর কয়টা লাইক পড়বে । আমি কি ফেসবুক সেলিব্রেটি ? স্টাটাস দিব আর সমানে লাইক পড়বে ।
মদনঃ আরে কি হয়েছে ? কান্নার শব্দ । টুপলুর আম্মু পড়ে গেছে ।
টিটোঃ অ্যাঁ, ওর প্রেসার বেড়ে গেছিল নাকি । যাই দেখি।

বাচ্চাদের সামলে নিয়ে টুকুন ভাবীদের সাথে মজা করছিল । মদন ভাবীর অনুরোধে স্যান্ডেল পায়ে নাচতে গিয়ে পা পিছলে যায়। খলি পা সামনের দিকে ভাঁজ হয়ে ঘাসের মধ্যে লুকিয়ে থাকা ইটে লাগে। সাথে সাথে প্রচন্ড ব্যাথা। ও আর উঠতে পারেনি। রাতের বেলা ডায়াগনোষ্টিক সেন্টার বন্ধ থাকায় এক্সরে করা যায়নি। নতুন বছরের প্রথম দিনে এক্সরে করে দেখা যায় পায়ের দুইটা হাড় ভেংঙ্গেছে। প্লাস্টার অ্যান্ড বেড রেস্ট।

[ প্রথম প্রকাশ  ৫ জানুয়ারি ২০১৪]

 

[ ক্লাশ ফাইভের বিজ্ঞান বইয়ের তিনটি পৃষ্ঠা ]

৩,৯২৩ বার দেখা হয়েছে

২১ টি মন্তব্য : “বর্ষবরণ”

  1. রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)
    মদনঃ ভাই কি করেন ?
    টিটোঃ এই তো একটু ফেসবুক দেখি। দায়িত্বশীলতার সাথে উদযাপন বিষয়ে একটা স্ট্যাটাস দিচ্ছি। কি যে হবে আজ ? সেই বাঁধনের মত ঘটনা যেন আর না হয়। লেখলাম-
    Thirty First

    No more dirty first
    Enjoy responsibly
    On the thirty first.

    😀


    এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ

    জবাব দিন
  2. রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)
    নতুন বছরের প্রথম দিনে এক্সরে করে দেখা যায় পায়ের দুইটা হাড় ভেংঙ্গেছে। প্লাস্টার অ্যান্ড বেড রেস্ট।

    🙁


    এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ

    জবাব দিন
  3. মোকাব্বির (৯৮-০৪)

    বিদেশী ছাত্রজীবন ছেড়ে আসার পরে বছর শেষের এই অলস সময়টুকু মিস করবো নিশ্চিত। ব্যস্ত শহরে থাকবে না দম ফেলবার ফুসরত!


    \\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
    অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\

    জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।