দেশ, ভাষা, ঐতিহ্য আর সংস্কৃতিঃ আমাদের যা কিছু আছে…..

(লেখাটা সি সি বি এর সব প্রবাসী সদস্য আর পাঠককে উৎসর্গ করলাম। আমার লেখা! তাও আবার উৎসর্গ!!! এই ধৃষ্টতার জন্য নিজেই নিজের …. চাই :bash: :bash: )

পৃথিবীর অনেক দেশেই মানুষ বাংলাদেশকে চিনত দারিদ্র, জনসংখ্যা, বন্যা আর জলোচছ্বাসের মাধ্যমে। এখনও অনেকে ওভাবেই চেনে। তবে দিন অনেক বদলে গেছে। জাতিসঙ্ঘ শান্তিরক্ষা মিশনের বাংলাদেশী সেনাদল, নোবেল বিজয়ী ডঃ ইউনুস আর বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের কল্যাণে আজ বাংলাদেশের নাম অনেক দেশেই শ্রদ্ধার সাথে উচ্চারিত হয়। ঘূর্ণিঝড় আর জলোচছ্বাসের দেশ হিসাবে মানুষ এখন আর আগের মত করুণা নিয়ে আমাদের দিকে তাকায় না, বরং সিডর-বিধ্বস্ত জনপদের ঘুরে দাঁড়ানো জেনে ও দেখে তারা আমাদের এখন মর্যাদা দেয় এক অমিত শক্তির আত্মবিশ্বাসী জাতি হিসেবে। অনেকেই জেনে অবাক হয়, ১৫ কোটি জনগণের এই ‘গরিব’ আর ‘নিরক্ষরের’ দেশে মাত্র ১৪ মাস সময়ে সবার জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র করা হয়েছে। এই দেশ বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দায় অস্তিত্বহীন হবার পরিবর্তে শত প্রতিকূলতা নিয়েও মাথা তুলে দাঁড়িয়ে থাকতে পেরেছে। আমাদের অর্জন তাই কম নয়।

রহমানের “আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস” উপলক্ষ্যে কিছু কথা লেখাটা পড়ে মনে হল লিখে ফেলি আমাদের কিছু কর্তব্যের কথা।

আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে রাজনৈতিক কিংবা অর্থনৈতিক দিক থেকে আমাদের দেশ ও দেশের ভাষাকে এগিয়ে নিয়ে যাবার ব্যাপারটা নিঃসন্দেহে বেশ কষ্টসাধ্য। তবে আমার মনে হয় আমরা সবাই মিলে একটু একটু করে চেষ্টা করলে একদিন এই কাজটায় অনেক অগ্রগতি হবে। ছোট্ট দুটা গল্প বলিঃ

১৯৯৬-৯৭ এর কথা। আমি তখন তুরস্কের ইস্তাম্বুলে। আট মাসের ভাষা শিক্ষা ও এক বছরের বেসিক কোর্সে। আমাদের চিফ ইন্সট্রাকটর লেফটেন্যান্ট কর্ণেল চায়েজী একদিন ক্লাসে এসে তাঁর অবসর নেবার কথাটা জানালেন। তিনি আরও বললেন যে তিনি আমাদের কত ভাল জানতেন, আমাদের কত শ্রদ্ধা করেন ইত্যাদি। কথাগুলোকে গতানুগতিক বিদায়ী বক্তব্যের মতই শুনছিলাম। তবে শেষের দিকে আমাদের ভুল ভাঙল। তাঁর একটা কথা আমাদের একেবারে বুকের ভিতর গেঁথে গেল। তিনি আবেগজড়িত কাঁপা কাঁপা কন্ঠে আমাদের বললেনঃ

“আমি এখন মুক্ত। আমি এখন মক্কায় হজ্জ্বে যাব। আর ওখান থেকে যাব বাংলাদেশে। আমি দেখতে চাই, যে দেশের মানুষরা এত ভাল, সে দেশ না জানি কত সুন্দর”

পরের বছরের কথা। আমি গেলাম আংকারায় বেসিক কোর্সে। প্রধান ফটকে ডিউটি এন সি ও’র কক্ষে অপেক্ষা করছি। তুরস্কের সেনাবাহিনীতে এই এন সি ও’রা বেশ জাঁদরেল টাইপের হয়ে থাকে। মূলতঃ এরাই সেনাবাহিনীর প্রধান চালিকাশক্তি। এক পর্যায়ে ডিউটি এন সি ও এল। দায়সারা গোছের একটা স্যালুট দিয়ে বসল। কিছুক্ষণ পর তিনি আমাদের সবার (বিদেশী অফিসারদের) নামধাম ও দেশের পরিচয় নেয়া শুরু করলেন। আমার পালা এলে আমি আমার নাম বলে, দেশের নাম বললামঃ বাংলাদেশ। সাথে সাথে যেটা ঘটল তার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। এই এন সি ও টি মুহূর্তে আমার পাশে এসে বসে আমার হাতে চুমু খেলেন (তুর্কি সমাজে মুরুব্বী এবং শ্রদ্ধার ব্যক্তিদের হাতে চুমু খাবার রেওয়াজ প্রচলিত)। পরের ১৫-২০ মিনিট আমি শুনলাম (এবং জানলাম!) আমরা বাংলাদেশীরা কত ভাল, কত ভদ্র ইত্যাদি। কারণ আর কিছুই না, আমার আগে আসা তিন বছরে তিনজন অফিসার। আমি এই দুর্লভ সম্মানকে প্রাণপণে ধরে রাখতে চেষ্টা করেছি। বিদায়ের সময় তাই বাসস্টান্ডে আরেকটা দুর্লভ সম্মান পেয়েছিলাম। প্রায় ২৫-৩০ জন তুর্কি অফিসার আমাকে স্যালুট করে দাঁড়িয়ে ছিল, আমার বাস স্টেশন থেকে বেরিয়ে যাওয়া পর্যন্ত।

উপরের ঘটনা দুটি আমার তরুণ মনে স্বাভাবিকভাবেই অনেক গভীর দাগ কেটেছিল। দেশের বাইরে যেয়ে কি এমন করি আমরা যার জন্য ভিনদেশীরা আমাদের এই সম্মান দেয়? উত্তরটা খুব সহজ। আমাদের আন্তরিকতা আর আতিথেয়তা। স্বার্থের তোয়াক্কা না করে আমরাই হয়তো একমাত্র জাতি যারা যে কোন ভিনদেশীকে আপন ভাবি, তার ভাষা শিখতে চাই, তার সংস্কৃতি সম্পর্কে অনেক প্রয়োজনীয় (এবং অপ্রয়োজনীয়) বিষয় জানতে চাই। তার পরিবারের সম্পর্কে খোঁজখবর নেই। তাকে আমাদের দেশি কোন খাবার খাওয়াতে উঠে পড়ে লাগি। খাবারের স্টলে নিজের খাবারের সাথে তার বিলটাও পরিশোধ করে দেই নিঃস্বার্থভাবে। এমনি অনেক ছোট ছোট কাজের মাধ্যমে অজান্তেই আমরা জয় করে ফেলি ওদের মন।

অন্য জাতির প্রতি ভালবাসাটা খুব বেশি রেসিপ্রোকাল। আমি লক্ষ্য করেছি আমরা এই ব্যাপারটাতে অনেকখানি এগিয়ে। আফ্রিকার অনেক অনুন্নত দেশেই আমরা কোন স্বার্থ ছাড়া, কর্তব্য-বহির্ভূত অনেক জনকল্যাণমূলক কাজ করেছি। আমি তাই দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি আমাদের অন্যদের প্রতি ভালবাসা, আন্তরিকতা আর আতিথেয়তা এই বৈশিষ্ট্যগুলো কাজে লাগিয়ে আমরা সারা বিশ্বে নিজেদের ভাষা, ঐতিহ্য আর সংস্কৃতিকে ছড়িয়ে দিতে পারি।

সি সি বি এর অনেক পাঠক ও সদস্য দেশের বাইরে থাকেন। এঁরা প্রত্যেকেই আমাদের আ্যাম্বাস্যাডর। আমাদের খোলা মন, আন্তরিক মানসিকতা, নিঃস্বার্থ আতিথেয়তা ইত্যাদিকে সম্বল করে, নিজের পারিপার্শ্বিকতায় সম্পূর্ণ নিজের মত করে আমরা আমাদের দেশকে, দেশের ভাষা আর সংস্কৃতিকে ছড়িয়ে দিতে পারি। কাজটা কি খুব কঠিন?

২,৩৫৯ বার দেখা হয়েছে

৩৭ টি মন্তব্য : “দেশ, ভাষা, ঐতিহ্য আর সংস্কৃতিঃ আমাদের যা কিছু আছে…..”

  1. রকিব (০১-০৭)
    আমাদের খোলা মন, আন্তরিক মানসিকতা, নিঃস্বার্থ আতিথেয়তা ইত্যাদিকে সম্বল করে, নিজের পারিপার্শ্বিকতায় সম্পূর্ণ নিজের মত করে আমরা আমাদের দেশকে, দেশের ভাষা আর সংস্কৃতিকে ছড়িয়ে দিতে পারি।

    অসাধারণ একটা লেখার জন্য ইউসুফ ভাইকে ধন্যবাদ। :salute:
    আগে কতটুকু করতাম জানি না, কিন্তু আজ থেকে নিজের দায়িত্ব ভেবেই করতে চেষ্টা করবো।


    আমি তবু বলি:
    এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..

    জবাব দিন
  2. আদনান (১৯৯৭-২০০৩)

    অফটপিক (নাকি অনটপিক, বুঝতেসিনা... যাই হোক):

    এই দেশ বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দায় অস্তিত্বহীন হবার পরিবর্তে শত প্রতিকূলতা নিয়েও মাথা তুলে দাঁড়িয়ে থাকতে পেরেছে।

    কোথায় জানি সেদিন শুনেছিলাম, কে যেন বলছিলঃ "বড় একটা হাতিকে ১০০ তলা বিল্ডিং-এর উপর থেকে ফেলে দিলে সে হাতিভর্তা হয়ে যাবে, কিন্তু একটা পিঁপড়ার সেই দশা কখনো হবেনা। ... যে অর্থনৈতিক মন্দার ঝড় এখন বিশ্বব্যাপী আক্রমণ করতে আসছে, আমাদের সেখানে খুউউব একটা ভয় পাবার দরকার নেই।

    জবাব দিন
  3. ইউসুফ মামা,এই এত কষ্টের মাঝেও আপনার মত পাগলা টাইপ কিছু মানুষ-যারা বাংলাদেশ ছাড়া আর কিচ্ছু বোঝেনা-এদের জন্যই কিন্তু আমরা এখনো জাতি হিসেবে মাথা তুলে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখি।এই রকম আরো কিছু পাগল দরকার আমাদের...সেলাম এদের প্রতি

    জবাব দিন
  4. মান্নান (১৯৯৩-১৯৯৯)

    ইউসুফ ভাইয়ের প্রতিটি কথাই সত্য। বাইরে আমাদের আন্তরিকতা, আতিথিয়তাই অন্য সবার চেয়ে আমাদেরকে জনপ্রিয় করে রাখে। আমি নাইজেরিয়া ছেড়ে যাওয়ার সময় আমার ড্রাইভার এয়ারপোর্টে আমাকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদেছে। ঐমূহুর্তে আমি খুব অপ্রস্তুত হয়ে গিয়েছিলাম। একই রকম আন্তরিকতা আমি পেয়েছি কেনিয়াতেও। অন্যান্য জায়গাগুলোতেও অভিজ্ঞতা খুব ব্যতিক্রম নয়। আমাকে এক লেবানিজ মেয়ে জানিয়েছিল তাদের বাসার কাজের মেয়েটা বাংলাদেশি এবং সে কত ভদ্র। সেও আমাকে একই প্রশ্ন করেছিল, যে বাংলাদেশে সবাই এমন ভদ্র নাকি ? বাংলাদেশিদের নিরহংকার সাদাসিধে জীবনযাপন, আন্তরিকতাই বাংলাদেশিদের জনপ্রিয়তার একটা বড় কারন।

    জবাব দিন
  5. শার্লী (১৯৯৯-২০০৫)

    আমার দেশ আমার মায়ের মত। আমি কি আমার মায়ের সম্মান বর্ধন করব না?!? সেদিনের আগে যেন আমার মৃত্যু হয় যেদিন আমার জন্য আমার দেশ আমার মাকে কেউ খারাপ বলবে।

    জবাব দিন
  6. সানাউল্লাহ (৭৪ - ৮০)

    ইউসুফ এবং রহমান : তোমাদের লেখা দুটি পড়ে এতো আবেগাপ্লুত হয়েছি যে চোখটা ঝাপসা হয়ে আসছে। একটু অসুস্থ বলে আজ অফিসেই কিছুটা বিশ্রামে আছি। কিন্তু তোমার লেখাটা আমাকে প্রতিক্রিয়া জানাতে বাধ্য করলো। তোমাদের জন্য :hatsoff: ।

    তোমার লেখা এবং পাশাপাশি অন্যদের মন্তব্যের সঙ্গে বিন্দুমাত্র দ্বিধা নেই। আমাদের গুণেরও শেষ নেই। অতিথিপরায়ন, বন্ধুবৎসল, পরোপকারী এমনসব লিখে চলা যায় পরপর। আর আমাদের সামরিক বাহিনী যে দেশের রাষ্ট্রদূতের কাজ করে যাচ্ছে সেটা তো তুলনাহীন। মিশনে যারা যায়, তারা ভালো কিছু অর্থ পায়, জীবনযাত্রাটা উন্নত হয়- কিন্তু বিনিময়ে তারা যার যার নিজের কাজ, পেশাদারিত্বের মাধ্যমে দেশকে যেভাবে সম্মানিত করে সেটার কোনো জবাব নেই।

    কিন্তু একটা বিষয় আমাকে বোঝাও- বিদেশে আমাদের সামরিক বাহিনী এতো প্রশংসিত হলেও দেশে সমানভাবে বা বেশিরকম সমালোচিত কেন? কেন দেশের মানুষের সঙ্গে তাদের আচরণ একইরকম নয়? ১/১১ পরবর্তী সময়ে আমি তত্ত্বাধায়ক সরকার ও সেনাবাহিনীর পক্ষে একরকম জোরালো সমর্থন দিয়ে গেছি। টিভি টক শোতে তো অবশ্যই। অনেকেই বিশেষ দলবাজরা সেটা পছন্দ করে নি। আমার তাতে কিছু আসে যায় না। কিন্তু দেশে তোমরা যখন বেসামরিক লোকজনের সংস্পর্শে আসো তখন তোমরা আমাদের "ব্লাডি সিভিলিয়ান" বলে মনে করো। আমাদের দিক থেকেও যে কোনো সমস্যা নেই তা নয়। আমরা সেনাবাহিনীকে প্রতিপক্ষ মনে করে এসেছি সেই পাকিস্তান আমল থেকে। আর তোমাদের একটা সংস্থার তো যথেষ্ট দুর্নাম। নামটা বললাম না কারন বুদ্ধিমানের জন্য ইশারাই যথেষ্ট। পাকিস্তানের আদলে রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ, ছাত্ররাজনীতির সমস্ত পান্ডাদের লালন-পালন, দল ভাঙ্গা-গড়া, অতিরিক্ত ইসলাম প্রীতি- এসব নানা অভিযোগ আছে। আমি বুঝি খোলা বারান্দায় এসব আলোচনা ঠিক নয়। তবে প্রশ্নগুলো রেখে গেলাম কারণ, আমি বুঝি নি যে সেনাবাহিনী বিদেশে এতো সমাদৃত, দেশে কেন তারা ততটাই সমালোচিত??


    "মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"

    জবাব দিন
    • ইউসুফ (১৯৮৩-৮৯)

      সানাউল্লাহ ভাই, আমার লেখা পড়ে আপনার মত মানুষের চোখ ঝাপসা হয়েছে, এটা পড়ে আমার চোখটা কেমন যেন করছে…আমার জন্য এর চেয়ে বড় আর কি কম্প্লিমেন্ট হতে পারে - আমি বাকরুদ্ধ।

      কিন্তু দেশে তোমরা যখন বেসামরিক লোকজনের সংস্পর্শে আসো তখন তোমরা আমাদের “ব্লাডি সিভিলিয়ান” বলে মনে করো।

      এই ব্যাপারটাকে এড্রেস করবার মত যথেষ্ট ভাষা আমার নেই। আমি শুধু এই ধরনের মানসিকতার মানুষ আমাদের মাঝে থাকার জন্য লজ্জিত এবং তাদের অংশ হবার জন্য আন্তরিকভাবে ক্ষমা চাই। যেখানে আমাদের নিজেদেরই ভাই/বোন, পিতা/মাতা, পুত্র-কন্যারাই সশস্ত্র বাহিনীতে কর্মরত সেখানে এধরনের সম্বোধন নিজের রক্তকেই কলংকিত করা নয় কি?

      তবে দিন বদলেছে ভাইয়া, অনেক বদলেছে। আরো বদলাবে এইটুকু আমি বলতে পারি। পারস্পরিক সন্মানবোধের সুফল আমরা অনেকেই বুঝতে পারছি।

      তবে একটা কথা। আমাদেরকেও শুধুমাত্র ‘হাটুবুদ্ধি’ হিসাবে দেখাটা অমানবিক নয় কি? আমরা কি আসলেই কিছু বুঝি না? সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা এখন সবাই নিদেনপক্ষে একজন গ্রাজুয়েট। আর আমাদের আজকাল কায়িক পরিশ্রমের পাশাপাশি অনেক পড়াশুনাও করতে হয়। এটা বড় ব্যাপার না। যেটা গন্য সেটা হল, সামরিক জীবনের পাশাপাশি আমাদের অনেক ধরনের প্রাতিষ্ঠানিক-অপ্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নিতে হয়, অনেক রিসার্চ করতে হয় এবং আক্ষরিক অর্থে এর প্রয়োগ ঘটাতে হয়। আমাদের মধ্যেও অনেকে বেসামরিক ক্ষেত্রে ব্যাপক সন্মানে ভূষিত হয়েছেন। তাই আমরাও বোধহয় সামান্য কিছুটা সন্মান পেতে পারি।

      আপনি আর বাকি যে বিষয়গুলো অবতারনা করেছেন, তার ব্যাপারে আমি সংগত কারনেই কিছু বলতে অপারগ।

      শুধু একটা কথা বলতে চাই - ক্ষমতা মানুষকে বিনয়ী হবার যে অমূল্য সুযোগ দেয়, সেটা সবারই গ্রহন করা উচিত। যে ব্যাক্তি একাধারে ক্ষমতাবান এবং বিনয়ী, এ পৃথিবীতে সেইই ঈশ্বরের কাছাকাছি সন্মান পেতে পারে।

      আপনাকে এবং সবাইকে (যারা পোস্টটি পড়েছেন ও মন্তব্য করেছেন) অনেক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা। :salute:

      জবাব দিন
  7. ইউসুফ ভাই,আমি ছোট তাই এখানে কিছু বলাটা ধৃষ্টতার মত দেখায়, তারপরেও ছোট মানুষ বলেই একটা বিষয় বলছি,বেয়াদবী মনে হলে মাপ করে দেবেনঃআপনি যে "হাটু" সুলভ ব্যাপারটি বললেন, অন্তত এই ব্লগে সেটি বলা হলেও নির্দোষ আমোদের কারণেই বলা হয়ে থাকে,কোনভাবেই আপনাদের খাটো করে দেখার জন্যে নয়।এই যেমন আমাকে "গাছ"(এই রে,ইয়ে মানে আপনি নিজেও তো আমার বা জুনা ভাইয়ের মত...)বলে ডাকার মানে কিন্তু আমাকে খাটো করে দেখা না...ঠিক তেমনই অন্ততঃ সিসিবিতে যখন সায়েদ ভাই উনার ভাগ্নের দ্বারা "বুদ্ধি কোথায়?হাঁটুতে"(টুশকি দ্রষ্টব্য) ধরণের ঘটনার কথা বলেন তখন তার মানে কিন্তু নির্দোষ আমোদ, আর কিছু নয়।আসলে হয়েছে কি,আমাদের মধ্যে স্টেরিওটাইপ করে ফেলার প্রবণতাটা খুব বেশি-এই যেমন আমি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শুনলেই "কিরে ক'টা মেয়ের সাথে শুয়েছিস(আমি দুঃখিত এত খোলাখুলিভাবে এ কথাটি বলার জন্যে) " অথবা "তোদের ক্যান্টিনে নাকি ইয়াবা বিলি করা হয়" জাতীয় প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়।এগুলো এখন আর গায়ে মাখিনা।সেনাবাহিনীতে গুটিকয়েক "ব্লাডি সিভিলিয়ান" মানসিকতার মানুষ যেমন রয়েছে তেমনি এই ব্লগেই রয়েছেন ফেরেশতার মত কিছু মানুষ(নাম উল্লেখ সঙ্গত কারণেই করছিনা)।আর এঁদের সংখ্যাও কিন্তু কম নয়।আরো একটা উদাহরণ দেই,পুলিশ শুনলেই আমরা ভাবি "প্রতারক,লম্পট,শয়তান"(প,ল,শ) কিন্তু আমার পরিচিত একজন এসপি রয়েছেন যিনি নিজের স্ত্রী গর্ভবতী থাকাকালীন ডাক্তার দেখাতে বিয়ের সময়ে পাওয়া গহনা বিক্রি করেছিলেন(আমার আরেক আত্মীয়ের দোকানে,আর সেখান থেকেই আমি ঘটনাটা জানি)।এরকম মানুষ কিন্তু ব্যতিক্রম নয়,খোদ পুলিশ বা কাস্টমসেই অনেকে রয়েছেন।

    আমি জানি আমার ক্যাডেট ভাই বোনেরা স্টেরিওটাইপ ধারণা থেকে মুক্ত।আমরা সবাই স্টেরিওটাইপ ধারণার বাইরে এসে পরস্পরকে শ্রদ্ধা জানাবো,এটাই আসলে আমার ক্ষুদ্র মস্তিষ্কের কামনা।

    জবাব দিন
  8. ক্ষমতা মানুষকে বিনয়ী হবার যে অমূল্য সুযোগ দেয়, সেটা সবারই গ্রহন করা উচিত। যে ব্যাক্তি একাধারে ক্ষমতাবান এবং বিনয়ী, এ পৃথিবীতে সেইই ঈশ্বরের কাছাকাছি সন্মান পেতে পারে।
    ইউসুফ ভাই, আমার মনের ডায়েরীতে সোনার অক্ষরে লিখে নিলাম আপনার এ কথাটা।অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া এত্ত অসাধারণ একটা কথার জন্যে।

    জবাব দিন
  9. কামরুল ভাই তো পলায় বিয়া করব, আমি সাক্ষী আর তুই উকিল-বিবাহোত্তর সংবর্ধনা হইব রেডিও এবিসির অফিসে, সানা ভাই উনার আব্বা আম্মারে(আব্বা বন্দুক নিয়া গুল্লি করতে আইবো)ম্যানেজ করবেন 😀 😀 😀

    জবাব দিন
  10. সায়েদ (১৯৯২-১৯৯৮)
    আমার পালা এলে আমি আমার নাম বলে, দেশের নাম বললামঃ বাংলাদেশ। সাথে সাথে যেটা ঘটল তার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। এই এন সি ও টি মুহূর্তে আমার পাশে এসে বসে আমার হাতে চুমু খেলেন (তুর্কি সমাজে মুরুব্বী এবং শ্রদ্ধার ব্যক্তিদের হাতে চুমু খাবার রেওয়াজ প্রচলিত)।

    :salute: :salute:


    Life is Mad.

    জবাব দিন
  11. ওবায়দুল্লাহ (১৯৮৮-১৯৯৪)

    স্যার,
    সালাম।
    এই পোস্টটি পড়েছি অনেক আগেই।
    অসাধারন। :thumbup:
    কিন্তু আর কি লিখবো বুঝতে পারছিলাম না।

    লাবলু ভাইয়ের মন্তব্য এবং আপনার জবাবটুকু পড়ে অনেক কিছু বলতে চাইলেও এই পরিসরে হয়তো বলা হয়ে উঠবে না। তথাপি... :-B

    @লাবলু ভাই,
    সহমত আপনার বক্তব্যের অনেকাংশের সাথেই। আর সেজন্য লজ্জিতও বটে।
    আসলে ভাইয়া, দিন বদলেছে বলতে এইটা বলতে চাই না যে আগে আকাশ শুধু কালো মেঘেই ঢাকা ছিল। দিন দিন অনেক ক্ষেত্রেই উন্নতি এওবং উত্তরন হচ্ছে। আর এ কথাও সত্যি যে - সেনাবাহিনীর মানুষগুলো কিন্তু আমাদের দেশেরই সন্তান। কারো ভাই - কারো ছেলে (এখন মেয়েরাও আসছে)।
    যে কোন সংস্থা বা ক্ষেত্রেই সব রকমের মানুষই থাকে। হাতের পাঁচ আঙ্গুল যেমন সমান নয় - আবার প্রত্যেকের ভিন্ন ভিন্ন দরকারও আছে। একটা সিস্টেমে সব ধরনের উপাদানই থাকে। তাই বলে ইতিহাস থেকে গুটি কতক ভুলের মাশুল যখন সমষ্টিগত ভাবে একটি জেনেরালাইজড ডিডাকশন এ আসে তখন মনটা খারাপ হয়ে যায়। সমস্যার সমাধান অবশ্যই আছে। আমাদের তো দেয়ালে পিঠ ঠেকেনি। কিংবা ঠেকলেও এ জীবন কখনও থমকে যাবে না। আমাদেরকে ধনাত্মক হতে হবে - ভবিষ্যত নিয়ে ভাবতে হবে। সেইমত কাজ করতে হবে।
    স্বাধীনতার পর থেকেই আমদেরকে প্রতিপক্ষ ভেবে আসছেন বা এ পক্ষ থেকেও একই ধরনের মনোভাব দেখানো হয় বলেই হয়তো পারস্পরিক সমঝোতা বা সহমর্মিতা গড়ে ওঠে না। তবে ভাইয়া, এই দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনের সময় এসেছে কিন্তু আমাদের সবার ভালোর জন্যই।

    বিদেশের মাটিতে আমদের সুনামের কারন মিশনচলাকালীন দেশের মানুষেরাই
    ভাল বলতে পারবে। আর - এখানে হয়তো; জাতিসংঘের ব্যানারে অন্য কোন ধরনের প্রভাব ছাড়াই কাজ করার অবকাশ আছে।

    আমি মনে প্রাণে বিশ্বাস করতে চাই - সত্যিকারের আন্তরিকতা এবং দেশের জন্য গঠনমূলক পদক্ষেপ নিতে পেশা- শ্রেণী নির্বিশেষে একযোগে ভাবতে হবে এবং নিঃস্বার্থভাবে সেইমত পথ চলতে হবে। এক্ষেত্রে সবাইকেই এগিয়ে আসতে হবে বিচক্ষনতার সাথে। সে আশাই করি সব সময়। ইনশাআল্লাহ সে ইন্ট্রিগেশন একদিন সফল হবে।
    আপনি অনেক সিনিয়র ভাইয়া। আশাকরি আমায় ভুল বুঝবেন না। আমার ছোট মাথায় যা এলো - তার কিছুটা প্রকাশ করতে এখানে প্রয়াসী হয়েছি মাত্র।
    দোওয়া করবেন ভাইয়া।

    @ইউসুফ স্যার,
    মন্তব্য বেশী বড় হয়ে গেল।
    সীমানা অতিক্রান্ত হলে মুছে দিয়েন প্লীজ।
    :salute:


    সৈয়দ সাফী

    জবাব দিন
    • যেসব বুদ্ধিজীবী বাংলাদেশের সিভিল-মিলিটারি সম্পর্ককে পাকিস্তানের সাথে তুলনা করে আত্মতৃপ্তির চোঁয়া ঢেঁকুর তোলে, তাদেরকে আমাদের সিসিবির এই ব্লগ আর তার সাথের কমেন্টগুলো(বিশেষ করে এটি) ধরে পড়ানো যায়না? পড়া শেষ হলে একটা পাক্ষিক পরীক্ষারও ব্যবস্থা করা যেতে পারে...

      জবাব দিন
  12. ওবায়দুল্লাহ (১৯৮৮-১৯৯৪)

    ইউসুফ স্যার,
    :salute:
    এইটা সহ আমার আগের মন্তব্যটা মুছে দিয়েন প্লীজ।

    নিজের উপর ঘেন্না হচ্ছে অনেক।
    আমার ইন্ট্রিগেশনের আশা কোনদিনই সফল হবে না।


    সৈয়দ সাফী

    জবাব দিন
    • মাহমুদ (১৯৯০-৯৬)

      ভাইয়া,

      মনোবল হারাবেন না। এই পোষ্টটা আমাদের দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে আর্মি সম্পর্কে জমে থাকা অনেক ভুল ধারণা ভেঙ্গে দিবে।

      সামনের দিনগুলোতে আমরা এই বিষয়টাকে সিসিব'তে তুলে নিয়ে আসবো যা'তে বিশেষ স্বার্থ-গোষ্ঠির আর্মি-বিরোধী প্রচারণার বিপরীতে আর্মির দেশপ্রেমিক আসল রুপটা দেখানো + জানানো যায়।

      আর্মি আর জনগণের মাঝে অবিশ্বাসের এই প্রাচীর ভাংতেই হবে। আমাদের সকলের স্বার্থেই।


      There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx

      জবাব দিন
    • তৌফিক

      ওবায়েদ ভাই, মাসরুফের এই পোস্টটা পড়বেন নিশ্চয়ই। আশা হারাবেন না, বাংলাদেশ আপনাদের সাথেই আছে। আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে যতোটুকু বুঝতে পেরেছি এই কদিনে, বাংলাদেশের সরকারী সংস্থগুলোর মধ্যে আমাদের সেনাবাহিনীকে নিয়ে গর্ব করার মতো ব্যাপার অবশ্যই আছে। সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নেতৃত্বের প্রতি আনুগত্য দেখিয়ে আপনারা দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, যদিও সেই নেতৃত্বের দূরদর্শীতা আজ প্রশ্নের সম্মুখীন। এটা সবাই জানবে। আমরা আছি আপনাদের সাথে। এখন থেকে আমি ব্যক্তিগতভাবে আপনাদের কথা বলার সময় সবসময় বলবো আমাদের সেনাবাহিনী। সবচেয়ে কম করে হলেও এতোটুকুই দিতে পারি আপনাদের।

      জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।