(মুজাহিদ নামক শূকরছানাটির ফাঁসি উপলক্ষে গল্পটি এখানে দিলাম)
“সুমিত্রা রহমান”- কি অদ্ভুত নাম এই বাংগালি মেয়েছেলেটার!
শুরুতে কেমন একটা হিন্দুয়ানী ভাব, শেষে মুসলমান টাইটেল|মাথায় আবার টিপও পরে!
সীতাপুর সাব ডিভিশনের দায়িত্বে আছেন মেজর শেহজাদ রাজা, জেনারেল নিয়াজী স্বয়ং হাতে তুলে এখানে পাঠিয়েছেন তাকে| ইস্ট পাকিস্তান এ্যাসাইনমেন্টের আগে তিনি ছিলেন চেরাটে, কমান্ডো স্কুলের ইন্সট্রাকটর হিসেবে| বাংগালিদের সম্পর্কে খুব একটা ধারণা নেই, শুধু জানেন, এই জাতটা কনুই পর্যন্ত ঝোলে ডুবিয়ে মাছ ভাত খায় আর দুপুর বেলা ঘুমায়|
এই বাকওয়াজ জাতটা কিভাবে পাক আর্মির বিরূদ্ধে অস্ত্র তোলার সাহস পায় মাথায় ঢোকেনা তার| সীতাপুর আসার পর একের পর এক অপারেশন করেছেন, মুক্তিবাহিনীর তিন তিনটা দলকে স্রেফ কচুকাটা করেছেন|
তার পদ্ধতিটা খুব কাজের| যে এলাকায় মুক্তির সংবাদ পান সেখানকার ঘরের মেয়েদের ধরে আনেন তিনি, বিলিয়ে দেন সৈনিক ক্যাম্পে| “যে করেই হোক শত্রুকে তার গর্ত থেকে বের করে আনো” চায়নিজ দার্শনিক সান জু এর “আর্ট অফ ওয়ার” বইটাতে পড়েছিলেন স্টাফ কলেজে থাকতে, ওটারই পাকিস্তানি ভার্সন বানিয়ে নিয়েছেন |
কান টানলেই মাথা আসে-এই বাংগালিগুলোও আস্তা গাধা, হাজার ঝুকি নিয়েও এই মেয়েগুলোকে উদ্ধার করতে আসে এবং আগে থেকে পেতে রাখ ফাদে টপাটপ ধরা পড়ে| আরে বেকুব, শত্রুর হাতে বেইজ্জত হওয়া আওরতের আবার কি দাম! এইসব খাওয়া মাল ফেরত নিয়েই বা কি করবি তোরা! বেকুবগুলোর গাধামিতে কিছুটা বিরক্তই হন তিনি ৷
তবে সে বিরক্তি সাময়িক, এই বেকুবিকে কাজে লাগিয়েই তো যত সাফল্য তার! মুক্তিগুলো একদিকে যেমন সাফ হয়েছে, নিয়মিত শরীর ঠান্ডা করতে পেরে সৈন্যরাও খুশি| নিয়াজী স্যার একজন অসাধারণ জেনারেল , লড়াইরত সেনাদের মন বোঝেন বলেই না এত বড় অফিসার হয়েছেন। ঠিকই তো বলেছেন স্যার, “আমার সেনারা ইস্ট পাকিস্তানে লড়াই করে জীবন দেবে আর দেহের ক্ষুধা মেটাতে যাবে ঝিলাম নদীর তীরে, তাই কি হয়?”
নিয়াজী নিজেই ইন্সপেকশনে এসেছিলন গতমাসের মাঝামাঝি| কি পদ্ধতিতে শেহজাদ মুক্তি ধরছেন খবর পেয়েছেন তিনি| প্রফেশনাল সৈনিক, এ নিয়ে শেহজাদকে না ঘাটিয়ে বরং উৎসাহই দিলেন| পুরো ডিভিশনে সীতাপুরের সাকসেস রেকর্ড সবচাইতে বেশি, এর পেছনে যে রয়েছে তাকে তো স্পেশাল কিছু উপহার দিতেই হয়! নিজের স্টাফ কারে ওঠার সময় শেহজাদের হাতে একটা বই ধরিয়ে দিলেন, ভারতের দেরাদুনে এনডিসি কোর্স করার সময় কিনেছিলেন এটি, জেনারেল হবার পরেও সাথে সাথেই রাখতেন| “Use it well, tiger!” যেতে যেতে চোখ টিপলেন শেহজাদের দিকে| সাদা পৃষ্ঠার ওপর হলদেটে দাগে ভরা বইটার মলাট দেখে ফিক করে হেসে উঠলেন শেহজাদ, নিয়াজী স্যার আসলেই একটা জিনিস!
লাল রং এর বাধাই করা বইটার ভেতরে বিচিত্র সব ছবি, আর মলাটের উপর সোনালি কালিতে বড় বড় করে লেখা, “The Illustrated Kama Sutra”!
বাংগালি ডিস্ট্রিক্ট জাজের বাসায় রেইড দিয়েছিলেন গত সপ্তাহে, ব্যাটার নাতি আর মেয়েজামাই নাকি ট্রেনিং নিতে ইন্ডিয়া গেছে| বাসার বিহারী গোয়ালা এসে পাকা খবর দিয়ে গিয়েছিল, আরো জানিয়েছিল-মেয়েটা নাকি পরীর মত সুন্দর|কি বেঈমানের জাত, পাক সরকার এত বড় পদে বসানোর পরেও কিভাবে নিজের পরিবারকে গাদ্দার বানায়! শাস্তিও পেয়েছে নগদেই, গোয়ালঘরে পেছনে গর্ত কেটে ওখানেই জবাইয়ের ব্যবস্থা করেছিলেন বুড়ো জাজ আর তার বউয়ের| গোয়ালাই ছুরি চালিয়েছে, ফিনকি দিয়ে ফোটাদুয়েক রক্ত খাকি ইউনিফর্মে লাগায় রাগ করে একটা লাথিও দিয়েছিলেন গোয়ালাটাকে|
ধুস! কি সব চিন্তা করছি এখন! একটু পরেই তো…
জিহবাটা লালায় ভরে উঠলো শেহজাদের, দেহের নিম্নাংশে উত্তাপ টের পেলেন একই সাথে| টেবিলের উপর থেকে বইটা টেনে নিয়ে পৃষ্ঠা উল্টাতে লাগলেন তিনি| হঠাৎ একটা পৃষ্ঠায় চোখ আটকে গেল| আরে, আজব তো! চ্যাপ্টার নাইন, “Aparishtaka”,এ আবার কি! যা বাব্বা, যেখানে যাবার কথা সেখানে না গিয়ে মৌখিক পথে কাজ চালানোর বর্ণনা দেখছি!
মালাউনগুলো আল্লা খোদা মানেনা, কিন্তু ব্যাটাদের রস আছে বটে! মনে মনে স্বীকার করলেন তিনি|
ঠোঁটের কোনে ভাদ্র মাসের কুকুরের মত লালাঝরা একটা কামুক হাসি ফুটে উঠলো শেহজাদের| “সেন্ট্রি, উস বাংগালি আওরতকো ভেজো হামারে পাস, জালদি!”
মেজরের সামনে দাড় করানো হল সুমিত্রাকে, যাবার সময় দরজা ঠেলে দিতে দিতে বাইরের গার্ডের দিকে তাকিয়ে চোখ টিপল সেন্ট্রি| মেজর স্যারের শরীর ঠান্ডা মানে সকাল সকাল ডিউটি নিয়ে গালি খেতে হবেনা | ছোটখাটো সুসংবাদই বটে!
একপাশে বাবা আর মায়ের দেহ থেকে যখন গরু জবাইয়ের ছুরি দিয়ে মাথাটা আলাদা করা হচ্ছিলো, আরেকপাশে তাকে ধরে ছিল জওয়ানেরা| দৃশ্যটা অবিশ্বাস করতে চাইছিলো সুমিত্রার মস্তিষ্ক, কন্ঠনালী কেটে ফেলার পর আশপাশের রাজাকার আর পাকসেনাদের হাসির শব্দ ছাপিয়ে ওর মাথায় শুধু ঘুরছে অদ্ভুত একটা শব্দ| ফ্যাস ফ্যাস ফ্যাস…
ছোটভাইটা ফুটবলে বাতাস ভরবার সময় পিস্টনাকৃতি পাম্পারের রডটা যখন উপরের দিকে টানত, শব্দটা কিছুটা ওরকম, তবে তার চাইতে অনেক আস্তে|কিন্তু তীব্রতা?! লক্ষ কোটিগুন বেশি!
একটা সময় পর থেকে সুমিত্রার মাথায় আর কোনকিছু কাজ করছেনা, কান্নাও ভুলে গিয়েছে ও| সারাটা সপ্তাহ কতগুলো হায়েনা ওর দেহটাকে খুবলে খেয়েছে মনে করতে পারছেনা,তার প্রয়োজনও ফুরিয়েছে মনে হয়| শারীরিক যন্ত্রণা বা অপমান বোধ, কিছুই যেন শরীরে বিধছেনা| চোখে শুধু ভাসছে মায়ের শাড়িতে লেগে থাকা রক্তের এক ভয়ংকর আল্পনা, বাবার ছিন্ন মস্তকের চোখে লেগে থাকা বিস্ময়| আর সারা মাথা জুড়ে, সমগ্র অস্তিত্ব জুড়ে ওই শব্দ- ফ্যাস ফ্যাস ফ্যাস…
মেজর সাহেব কি বলল কিচ্ছু মাথায় ঢুকছেনা সুমিত্রার| এটুকু শুধু বুঝেছে, দু:স্বপ্নের সমুদ্রে নতুন এক বালতি যোগ হতে যাচ্ছে কিছুক্ষণের ভেতরে| মেজর সাহেব হাতে লাল একটা বই তুলে ওকে দেখালেন, ভেতরের একটা পৃষ্ঠা দেখিয়ে কি জানি নির্দেশ করলেন|
“ঘাবড়ো মাত, মেরি জান, ইয়ে তসবিরকো ধ্যানসে দেখো| এ্যায়সে হি হামারে শেরকো পেয়ার দেনা চাহিয়ে| সামঝি?”
ঘাড় নাড়লো সুমিত্রা, বুঝে ফেলেছে কি করতে হবে| অফিসের টেবিলে হেলান দিয়ে দাড়ালেন মেজর শেহজাদ, কোমরের বেল্ট খুলে ট্রাউজার নামিয়ে আনলেন পায়ের কাছে| আর ছবির ভংগিমার মত হাটু গেড়ে বসল সুমিত্রা|
কামোত্তেজিত হলেও বোকা নন শেহজাদ, সতর্কতায় ত্রুটি রাখেননি| নিজের সার্ভিস রিভলভারটা ঠিকই ধরে রেখেছেন সুমিত্রার মাথায়, কোন চালাকি করলেই খুলি উডিয়ে দেবেন|
যতই সময় যাচ্ছে মেজর শেহজাদের কাছে গোটা সময়টা বেহেশতি গালিচার মত উপভোগ্য ঠেকছে| নাহ, এই খুবসুরাত বাংগালি আওরতটাকে যতদিন ইস্ট পাকিস্তানে থাকবেন শুধু নিজের জন্যেই রাখবেন- অনির্বচনীয় আনন্দ উপভোগ করতে করতে সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি| আনন্দের তীব্রতম মুহূর্তে রিভলবারটা হাত থেকে খসে পড়ল তার|
ঠিক সেই মুহূর্তে শরীরের সবটুকু আক্রোশ আর ঘৃণা একসাথে মিশিয়ে সর্বশক্তিতে দাতের দুপাটি এক করল সুমিত্রা, মেজর সাহেবের ভবিষ্যত বংশবিস্তারের হাতিয়ারটিকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলল শরীর থেকে|
যন্ত্রণায় গো গো করতে থাকা মেজর শেহজাদ সুমিত্রার মাথা বরাবর খসে পড়া রিভলবার তুলে পুরো ম্যাগজিন খালি করলেন| তারপর খেয়াল করলেন, তার দেহের ছিন্ন অংশটি সুমিত্রার ছিন্নভিন্ন খুলির সাথে মিলে উপহাস করছে তাকে|
সেন্ট্রিরা এসে পড়েছে ততক্ষণে | ঘটনাটা পুরোপুরি বুঝে ওঠার আগেই সবচাইতে কাছের সেন্ট্রির কোমর থেকে পিস্তল নিয়ে নিজের মাথায় গুলি করলেন লিংগহীন কমান্ডো শেহজাদ রাজা|
আর তার চুয়াল্লিশ বছর পর মৃত বড়ভাইয়ের লিংগহীন লাশের কথা স্মরণ করে কমেন্ট্রি দেয়া শুরু করল রমিজ রাজা| আজ বাংলাদেশ আফগানিস্তান ম্যাচ কিনা!
পড়েছিলাম আগে যতদূর মনে পড়ে।
আবারো পরে ভালো লাগলো।
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
ধারালো এবং বিষয়ের দগদগে ঘাটাকে বিভতস ভাবে দৃশ্যমান করা লেখা।
সবাই তো জানে না এসব বর্বরতার ইতিবৃত্ত।
সাধুবাদ অমন লেখার জন্য।
ভাল লিখেছো।
রাগে গা জ্বলছে.........
Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.
:boss: :boss: :boss: :boss:
মাস্ফু,
কি যে ভালো লাগছে তোমাকে নিয়মিত দেখে।
ফেসবুকে পড়েছিলাম লেখাটা।
এসব মুহূর্তে বিলার মত কিছু খুঁজে পাই না। গল্প ভালো লেগেছে এমন কথাও না।
কারণ গল্পটা গল্প নয় যে!