ঠিক করেছিলাম আমার এই ব্লগের নাম পেশাগত জীবনের সাথে মিলিয়ে কিছু রাখব।কিন্তু পরবর্তীতে মনে হল সিসিবিতে তো আমি আমার পেশার পরিচয়ে আসিনি,এখানে এসেছি আমার ক্যাডেট পরিচয়ের সুবাদে।তাছাড়া এটি যেহেতু ব্লগ,নিজের ব্যক্তিগত কথাবার্তাও অবধারিতভাবে চলে এসেছে(যথারীতি পাঠকের বিরক্তির উদ্রেগ ঘটিয়…)।কাজেই,এখানে আমি যে নামে ”বিখ্যাত”(??!!) আমার সিরিজটি সে নামেই চলুক!
১ বছর মৌলিক প্রশিক্ষণ শেষে প্রত্যেক সিনিয়র পুলিশ অফিসারকে ছয় মাসের জন্যে বাস্তব প্রশিক্ষণ নিতে হয় যে কোন একটি জেলায়।আমার ক্ষেত্রে এই জেলাটি চুয়াডাঙ্গা হওয়ায় শুরুতেই একজনকে ফোন দিয়েছিলাম,কারণ তাঁর বাড়ি চুয়াডাঙ্গায়।মানুষটি এমন একজন,যাকে ছেলেবেলা থেকেই হিরো হিসেবে জেনেছি।সদাহাস্য এই মানুষটি আমার দেখা সেরা ক্যাডেটদের একজন।এই মানুষটি পারতেননা এমন কিছু আমি ক্যাডেট কলেজে দেখিনি।প্রতিটি খেলায় আক্ষরিক অর্থেই তিনি সেরাদের সেরা ছিলেন।ক্লাস সেভেনে প্রতিদিন সকাল বেলায় তাঁকে ঘুম থেকে ডেকে দেয়ার মাধ্যমে যে সম্পর্কের শুরু,সেই ১৯৯৭ সাল থেকে আজ ২০১২ সালে সেই সম্পর্ক কমে তো নি-ই বরং ঘনীভূত হয়েছে।এই মানুষটিকে নিয়ে হাজার হাজার গল্প শুধু আমার নয়,তাঁর সময়ে সবগুলো ক্যাডেট কলেজের প্রায় প্রত্যেকটি ক্যাডেটেরই থাকার কথা।
মনে পড়ে,এসএসসি ক্যান্ডিডেট থাকা অবস্থায় বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় বর্শা নিক্ষেপে তিনি এত দূরে বর্শা ছুঁড়লেন যে আমরা বলাবলি করতে লাগলাম উনাকে সার্ক প্রতিযগিতায় পাঠানো যায় কিনা।সারাক্ষণ কলেজের প্রতিটি সহশিক্ষা কার্যক্রমে ব্যস্ত এই মানুষটির বাবা-মায়ের একটাই আক্ষেপ ছিলো-ছেলের পড়াশোনার বারোটা বাজছে এগুলো করতে গিয়ে।ক্যান্ডিডেট অবস্থায় বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় ওরকম পারফরম্যান্সের পর পরীক্ষার মাত্র অল্প ক’দিন আগে কলেজের এ্যাডজুটেন্ট তাঁকে আইসিসি প্রতিযোগিতার জন্যে কলেজে রেখে দিলেন।কলেজের সুনামের জন্যে জীবনের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ সময়ের বেশ কিছুটা উৎসর্গ করা এই মানুষটি মাত্র সাত নম্বরের জন্য বো্র্ডে মেধাস্থান মিস করেছিলেন।
শুধু কলেজে নয়,বিএমএতেও তিনি ছিলেন আমার অন্যতম উৎসাহদাতা।কলেজে ক্লাস সেভেন থেকে তাঁর চলে যাওয়া পর্যন্ত যেমন তাঁর ছায়া পেতাম,বিএমএ তেও তাই।আমি সেনাবাহিনী থেকে চলে যাব-এটা শোনার পর তিনি কিছুটা মনক্ষুণ্ণ হলেও আমাকে উৎসাহ দিয়ে বলেছিলেন-”তুই বাইরেও ভালো করবি,টেনশন নিস না।”
গত পরশু উপজেলা চত্ত্বরে স্থানীয়দের সাথে ভলিবল খেলার সময়ে তাই যখন তাঁকে মটর সাইকেলে উপবিষ্ট দেখলাম,খুশিতে মোটামুটি বাক্যহারাই হয়ে পড়েছিলাম।আনন্দে ইচ্ছে করছিল ৫টা পুশ-আপ আর ৫টা ফ্রন্টরোল দিই-দিতামও হয়তো।কিন্তু আশেপাশে ভীড় দেখে তিনি নিজেই বললেন-”নাহ,তোর কোন পরিবর্তন নেই,সেই কলেজের মতই রয়ে গিয়েছিস।থাম শিগগির!”
প্রিয় পাঠক,এতক্ষণ যাঁর কথা বলছি তিনি আর কেউ নন,আমার ছেলেবেলার হিরো,আন্দা ভাইয়ের বেস্ট ফ্রেন্ড,ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজের ৩৩তম ব্যাচের দোর্দন্ডপ্রতাপ কলেজ প্রিফেক্ট ফয়সাল ভাই।
এই মানুষটির জীবনে দুটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটেছে মাসখানেকের মাথায়।তাঁর বাবা পরলোকগমন করেছেন,আর এই মর্মান্তিক ঘটনার মাত্র অল্প ক’দিনের মাথায় ভাবীর কোল আলো করে এসেছে বংশের নতুন প্রদীপ।
প্রিয় পাঠক,আপনারা প্লিজ আমার ছেলেবেলার নায়ক এই ফয়সাল ভাইয়ের জন্যে শুভ কামনা করবেন!
ফয়সাল ভাইয়ের সাথে দেখা হবার অল্প কিছুদিন আগে এখানে আমার বাবা-মা এসেছিলেন বেড়াতে।কর্মস্থলে যোগদান করবার পর এই প্রথম আমার এখানে তাঁদের আসা।বাংলাদেশের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে আমি অতি নগন্য মানুষ,হাজার হাজার সীমাবদ্ধতার ভেতরে থেকে আমাদের কাজ করতে হয়।এসব সীমাবদ্ধতার মুখোমুখি হতে হতে কখনও কখনও যে মন খারাপ হয়না তা-না।আমাদের পেশায় কোন দিন নেই,রাত নেই,ছুটির দিন বলে আলাদা কিছু নেই।এরকম শুধু এক দিন না,এক মাস না-বছরের পর বছর,যুগের পর যুগ চলছে এবং চাকুরিজীবনের শেষ পর্যন্ত চলবে।পুলিশ এবং পার্সোনাল লাইফ-দুটো যেন বিপরীত শব্দ-বাস্তবতা অনেকটা এরকমই।তাই বাবা-মা কে নিয়ে রেস্ট হাউসে পৌঁছে দেবার সময় যখন এগুলো ভাবছিলাম,তখন মন কিছুটা উদাস হয়ে গিয়েছিল।হঠাৎ শুনতে পেলাম মা বাবাকে বলছেন-”সারাজীবন তোমার গাড়িতে চড়ে এসেছি,দেখো এবার ছেলের গাড়িতে চড়ছি”।
মায়ের চোখে গর্বের যে ঝিলিক আমি দেখেছিলাম,তাতেই সে মুহূর্তে আমার নিজেকে পৃথিবীর সবচাইতে সুখী মানুষ বলে মনে হচ্ছিল।ক্ষুদ্র,তুচ্ছাতিতুচ্ছ এই আমিই যেন হয়ে উঠেছিলাম পৃথিবীর সফলতম মানুষ,মনে হচ্ছিল আমিই যেন বিল গেটস বা মার্ক জুকারবার্গ!নিমেষে উধাও হয়ে গিয়েছিল মনের সব মলিনতা!
যাঁদের কষ্টার্জিত অর্থে এই বিরল সম্মানের অধিকারী আমি হলাম-তারা এই দেশের খেটে খাওয়া মানুষ।প্রাইভেট ভার্সিটিতে পড়ার সুবাদে খুব অল্প বয়েসে সিভিল সার্ভিসে যোগ দিয়েহি আমি।আমার ব্যাচে আমার চাইতে বয়স,মেধা,মননে যোজন যোজন এগিয়ে থাকা মানুষদের সংখ্যাই ৯৯%। তাই মাঝে মাঝে খুব ভয় হয়-এই সম্মানের যোগ্য কি আমি আদৌ হতে পারব?
প্রিয় সিসিবিবাসী,আপনারা আমার ছাত্রজীবন থেকে বর্তমান চাকুরীজীবনে প্রবেশ পর্যন্ত পুরোটা সময়ই পাশে থেকেছেন।২০০৮ থেকে ২০১২-এই চার বছরে অনেক কিছু পরিবর্তিত হলেও অল্প যে কটি জিনিস পরিবর্তিত হয়নি সেটি হচ্ছে আপনাদের এই পাশে থাকা।আমার একান্ত ইচ্ছে-সামনের কঠোর চলার পথেও আপনারা আমার পাশে থাকুন।
সবাইকে ধন্যবাদ।
সবশেষে বাবা-মা এর সাথে আপনাদের মাস্ফ্যুর একটি ছবি দিয়ে শেষ করছি…
:brick: ফেলে প্রথম হইলাম 😀
আন্দা ভাইয়ের শেষ পোষ্টটাতেও ফয়সাল ভাইয়ের কথা ছিল। অভিনন্দর রইলো নতুন বাবার জন্য 😀
মাস্ফ্যুদা, সালমান খানের মতো ললনা পরিবেষ্টিত ছবি কবে দিবেন? ;)) ;))
আরো কিছু কইতে চাচ্ছিলাম; থাক কিছু জিনিস বোধহয় লেখে বলার দরকার পড়ে না। ফয়সাল ভাইয়ের মতোই বলি, আপনি ভালো করবেন, টেনশন নিয়েন না। :salute:
আমি তবু বলি:
এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..
আমি এখন সিঙ্গেল,হার্টব্রোকেন।আমি ললনা পরিবেষ্টিত ছবি দেইনা 😛
হার্টব্রোকেন কি? দাম কত? ফ্রী কি সাথে?
পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না
মাস্ফ্যুদা; সিঙ্গেল পাবলিকরাই কিন্তু ললনা পরিবেষ্টিত ছবি দেয়; ডাবল হবার পর আর ঐ চান্স থাকে না। লাভ-ভী ভাইরে দেখেন :grr:
আমি তবু বলি:
এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..
কীইইইইইইইইইইইইইইইইই???? 😮 😮
তুই এরাম ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান মার্কা লেখা শুরু করলি ক্যান, ভাইটু?! লিখবি খাইছি, ঘুমাইছি, পাবলিকরে পিডাইছি, ব্লগাইছি। প্রিয় দর্শক, প্রিয় শ্রোতা - পড়লে মনে হয় টিভি সেটের সামনে!
কেরু এন্ড কোং সম্পর্কে একটা লেখা কিন্তু চাই 🙂
আমার বন্ধুয়া বিহনে
জাস্ট এই এই কথা বলতে যাইতেসিলাম লাভবী ভাই...আমি ব্লগ পড়তে পড়তে খুবই অবাক হইসি মাস্ফু ভাই এর ভাষার এই পরিবর্তন দেখে। কিরাম জানি 'দূর দূর' মনে হচ্ছিল, মনে হচ্ছিল এ আমাদের মাস্ফু ভাই না। স্পেশালি মোটর সাইকেলে 'উপবিষ্ট'- এমন শব্দ আপনি কবে শিখলেন মাস্ফু ভাই? চুয়াডাঙ্গায় বুঝি আবুল হোসেন স্যারের পোস্টিং?
মাস্ফু ভাই, আপনি নিজের আগের ব্লগগুলা পড়ে আসেন যান। আর আমার জমা শেষ করে যা যা করব তার মধ্যে চুয়াডাঙ্গায় আসাও কিন্তু লিস্টির মধ্যে আছে। তাই রেডী থাইকেন।
আর এই তাহলে আন্দা ভাইয়ের বেস্ট ফ্রেন্ড!! উনাকে দেখে খুবই ভাল লাগল।
মাস্ফ্যু দেখি বাবু বাবু কথা বলা শুরু করছোস 😛
ফয়সালের কথা আর কি বলবো, অসাধারন একটা ছেলে।
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
প্রত্যাবর্তন হিসেবে খারাপ না, তবে এইটা মাস্ফ্যু মার্কা পোস্ট হয়নাই।
সামনে নিয়মিত লিখবি- এই প্রত্যাশায় রইলাম। 🙂
আমার ব্যাচের জেসিসির বেশিরভাগ ছেলেপেলের সাথেই আমার বেশ সখ্যতা। তবে ফয়সলের সাথে ওি লেভেলের পরিচয় নাই। আইসিসিএএম এর সময় হালকা পাতলা কথা হয়েছিল। তবে যাকে সবাই পছন্দ করে এমন মানুষরা কখনো খারাপ হয় না। মিশ্র সময়ের কথা আন্দার আগের পোস্টে জেনেও বলা হয়নি কিছু। বাবা মায়ের চলে যাওয়া হচ্ছে যে কোন সন্তানের জন্য জীবনের সবচেয়ে কষ্টের অনুভূতি। এর সাথে কোন কিছুর তুলনা নাই। উল্টা দিকে বাপ হওয়াও মনে হয় যে কারো জন্য অসামান্য আনন্দের অনুভূতি (বাপ হইনাই বলে ঠিক কতটুকু কইতে পারতেসি না)।
পোস্ট ভালো পাইচি।
টেনশন লইস না। তুই ভালো করবি মাস্ফ্যু।
শুভকামনা। 🙂
মাস্ফ্যু ভাই হার্টব্রোকেন কাহিনী শুনতে মঞ্চায় =(( =(( =((
"আমি খুব ভাল করে জানি, ব্যক্তিগত জীবনে আমার অহংকার করার মত কিছু নেই। কিন্তু আমার ভাষাটা নিয়ে তো আমি অহংকার করতেই পারি।"
অসাধারণ লেখণী...আর যে মানুষটিকে নিয়ে লিখেছিস তাকে এত অল্প পরিসরে বর্ণনা করাও কঠিণ..আমাদের কাছে অনেক বড় মাপের মানুষ তিনি..আর তুই আরো উচ্চতায় নিজেকে অধিষঠিত কর সে কামনা করি...।
মাস্ফ্যুদা, সালমান খানের মতো ললনা পরিবেষ্টিত ছবি কবে দিবেন? :grr: :grr:
প্রফেশনাল ব্লগিং হইছে এইটা, 🙂
পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না
১৯৯৬ থেকে খুলনার "কথা" ক্যাডেট কোচিং টাইম থেকে চিনি লোকটারে। সলিড মানুষ। ফাচুকিগিরি নাই।
আন্টি-আন্কেলের মত তুইও একখান কালা চশমা লাগাইতি B-) ... মানাইতো!
বিটিডব্ল্যু, ফয়সাল ভাই ঐখানে কি করে? ঐ এলাকাতে উনার পোস্টিং?
শালা, ১৯৯৬ থেকে উনারে চিনো আর এইটা জানোনা যে ফয়সাল ভাইয়ের বাড়ি চুয়াডাঙ্গা? x-( আর "ফাচুকিগিরি" কি রে দোস্ত? 😛
:clap: :clap: :thumbup: :thumbup:
ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ
.... মাস্ফ্যু ভাই এর লেখাতেও ভাব ঝরে পড়ছে ;))
তোরে আমি কোরবানি দিমু... x-(
হ ভাই,দিয়া ফালান। যখন কিছুই করার থাকপে না, ভাপতেছি আপনার থানায় গিয়ে বসে থাকপ, দুনিয়াদারী আর ভাল্লাগে না 🙁
মাসরুফ,
এত ভাল লাগলো উপরের কথাগুলি তা আমি বলে বোঝাতে পারবো না। আমি আশা করবো তুমি যেন তোমার মা-বাবার জন্যে অনেক গর্ব ও সুনাম বয়ে নিয়ে আসতে পারো।
ভাইয়া শত ব্যস্ততার মধ্যেও সময় করে আপনি আমাদের লেখাগুলো পড়েন-এইটা যে আমাদের জন্যে কত বড় অনুপ্রেরণা তা মনে হয় বলে বোঝানো যাবেনা।কৃতজ্ঞতা!
মাস্ফ্যু ভাই হার্টব্রোকেন কাহিনী শুনতে মঞ্চায় :(( :((
খুব ভালো লাগলো আপনার পোষ্ট দেখে 🙂
আর যাই করিস পুলিশ ছাড়িস না। লাইগা থাক।
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
ভাইয়ের গাড়িতে দরতে মঞ্চায় :dreamy:
You cannot hangout with negative people and expect a positive life.
মাস্ফ্যু রে, কেরু এন্ড কোম্পানীতে একটা "অফিসিয়াল ট্যুর" এ আমি চুয়াডাঙ্গা আইতাছি। কাল পরশুর মধ্যে।
ততক্ষণ সিসিবির সাথেই থাক।
আমারে ইমিডিয়েট কল দেনঃ ০১৭১২১৭৮১১১ এইটা সরাসরি আমার জুরিসডিকশনের মধ্যে পড়ে।যুদি দেখা না কইরা গেছেন তাইলে কইলাম সুইসাইড খামু।