১.
ভুগোলের নুরুল হোসেন স্যারের একটা অভ্যাস ছিলো। যে কোন জায়গায় প্রিন্সিপাল সোহরাব আলী তালুকদার কে দেখলে উনার হাত কচলানি শুরু হইয়া যাইতো। প্রিন্সিপালের যে কোনো কথার জবাব স্যার দুই হাতের তালু একটা আরেক টার সাথে ঘষতে ঘষতে দিতেন। আমাদের বদ্ধমুল ধারনা ছিলো এই রকম হাত কচলানোর ফলে স্যারের হাতের রেখা বলতে কিছু নাই। সেই জন্যে স্যার ক্লাস নিতে আসলেই আমরা নানা ভাবে উকিঝুকি দিয়া তার হাতের রেখা দেখার চেষ্টা করতাম। এই রকম অভ্যাসের কারনে প্রিন্সিপালের কোনো কথায় স্যার কোনোদিন না বলতে পারেন নাই। কিন্তু স্যার পড়াতেন বেশ ভালো।
তো একবার সেই নুরুল হোসেন স্যার একবার আমাদের ভুগোল ক্লাস নিচ্ছেন। আমরা তখন একেবারে ছোট। খুব সম্ভবত নতুন ক্লাস এইটে উঠেছি। স্যার ক্লাসে পড়াচ্ছেন ‘সৌরজগত’ আমাদের কে বুঝচ্ছেন পৃথিবী কিভাবে সুর্যের চারদিকে ঘুরে। পৃথিবী নিজের অক্ষের উপরে ঘুরে আবার এইভাবে ঘুরতে ঘুরতে সুর্যের চারদিকেও ঘুরে। এইটা আমাদেরকে বুঝানোর জন্য স্যার করলেন কি, নিজেই ঘুরতে লাগলেন। আবার নিজে ঘুরতে ঘুরতে লেকচার ডায়াসের চারপাশেও ঘুরতে লাগলেন আর আমাদেরকে বলছেন মনে করো আমি পৃথিবী আর লেকচার ডায়াসটা সুর্য।
প্রিন্সিপাল সোহ রাব আলী তালুকদার যাচ্ছিলেন ফর্মের পাশ দিয়ে। তিনি হঠাত দেখলেন নুরুল হোসেন স্যার এই রকম অদ্ভুতভাবে ঘুরছেন। তিনি কিছুই বুঝতে পারলেন না। ক্লাসে ঢুকে বললেন
-কি ব্যাপার নুরুল হোসেন সাহেব মাথা ঘুরাইতেছে নাকি?
-না স্যার ,এই আর কি। স্যারের হাত কচলানো শুরু হইয়া যায়।
-এই রকম চরকির মতো ঘুরতেছেন যে?
-স্যার ওদের কে পৃথিবী কিভাবে ঘুরে দেখাইতেছিলাম।
-আমি ত ভাবলাম আপনার মাথা ঘুরাইতেছে, পইরা যাবেন যে কোন সময়।
-স্যার জি স্যার
-যান যান মাথায় একটু পানি দিয়া আসেন। কখন কি হয়ে যায়।
-জি স্যার।
ক্লাস থেকে বের হয়ে নুরুল হোসেন স্যার দৌড়ে গেলেন মাথায় পানি দিতে।
২.
চারুকলার দেবব্রত মল্লিক স্যার যখন প্রথম আমাদের কলেজে জয়েন করেন তখন তিনি বেশ গাট্টা-গোট্টা, ছোটখাটো টাইপের মানুষ। হঠাত দেখলে তাকে স্যার বলে মনে হইতো না। কেমন ক্লাস টুয়েলভ ক্লাস টুয়েলভ মনে হইতো। স্যার ছিলেন তিতুমির হাউজের সঙ্গে এটাচড। এবং গনহারে সবাইকে তুই করে বলতেন।
সেবার ইন্টার হাউজ ফুটবলের আগে আমাদের অল্টারনেটিভ জুনিয়র ব্যাচের একজন (অরা তখন মাত্র কলেজে এসেছে, ক্লাস সেভেন) তার গাইডকে জিজ্ঞেস করলো
-ভাইয়া আমি যদি হাউজ টিমে ফুটবল খেলতে চাই তাইলে কি করতে হবে?
-ওই যে কোনায় হাউজ প্রিফেক্টের রুম আছে। তার কাছে গিয়া বলবা ভাইয়া আমি ফুটবল ভালো খেলি, হাউজ টিমে খেলতে চাই।
-ভাইয়া আমি তো হাউজ প্রিফেক্ট কে চিনি না।
-আরে দেখবা একটু ছোটখাটো, মোটা সোটা একজন ভাইয়া আছেন। উনিই হাউজ প্রিফেক্ট। তাকে বললেই হবে।
সেই জুনিয়র হাউজ প্রিফেক্টের রুমের সামনে গেল। ঘটনাক্রমে ওইখানে তখন দাঁড়িয়ে ছিলেন দেবব্রত মল্লিক স্যার। সাইজ দেখে সে ভাবলো এইটাই হাউজ প্রিফেক্ট।
-স্লামালিকুম ভাইয়া।
-কি?? দেবব্রত স্যার আতকে উঠলেন তাকে কেউ ভাইয়া বলছে এইটা শুনে।
-ভাইয়া আমি খুব ভালো ফুটবল খেলি। হাউজ টিমে জুনিয়র গ্রুপে খেলতে চাই।
-এই তুই হ্যান্ডস ডাউন হ। বেন্ড হ। বেন্ড হ বলতেছি। স্যারের রাগ তখন দেখে কে।
আচমকা এই রকম আক্রমনে ওই জুনিয়রও দিশা হারা হয়ে গেল। সে হ্যান্ডস ডাউন হলো এবং কিছু না বুঝে বললো
-সরি ভাইয়া।
-আবার ভাইয়া বলে…
এইবার ওই জুনিয়র ভাবলো হাউজ প্রিফেক্টদের বোধ হয় ভাইয়া বলার নিয়ম নাই। সে অন্য ভাবে ট্রাই করলো।
-সরি প্রিফেক্ট । আমার ভুল হয়ে গেছে প্রিফেক্ট। আমি আসলে হাউজ টিমে খেলতে চাই এইটা বলতে এসেছিলাম।
-কি কইলি তুই? আমি প্রিফেক্ট। দাড়া… এই বাবুলাল বেত বের কর।
বাবুলাল আমাদের হাউজ বেয়ারার নাম।
এর পরে ওই বেচারার কি হইছিলো আশা করি সবাই বুঝতে পারছেন। হাউজ টিমে খেলার সখ তার সেই দিনই চলে গিয়েছিলো।
৩.
ইংরেজির এনায়েত হোসেন স্যার ছিলেন একটু পাগলা টাইপের। বাধা-ধরা পড়াশুনার ব্যাপারে স্যারের প্রবল আপত্তি ছিলো। বই পড়ানোর চেয়ে বইয়ের বাইরের পড়াশুনার প্রতি স্যার বেশ জোর দিতেন। ফলে স্যার পরীক্ষা নিলে তার প্রশ্নগুলিও ব্যাতিক্রম হতো। আর আসল ঝড়-ঝাপ্টা যেতো আমাদের উপর দিয়ে। আমরা গনহারে ফেইল করতাম।
সেবার পাক্ষিক পরীক্ষায় স্যার প্রশ্ন করলেন – why ‘আমার একটি কলম আছে’ should not be ‘my have a pen’ ? Why it is ‘I have a pen’ ? সোজা বাংলায় এর মানে হইল- ‘আমার একটি কলম আছে’ এটার ইংরেজি কেন ‘my have a pen’ না হয়ে ‘I have a pen’ হলো? প্রশ্ন পইড়া আমাদের মাথায় হাত। এর উত্তর কি? ফলাফল ২৭ জনের ২৭ জনই ফেইল।
২৫ নাম্বারের পরীক্ষা, তাতে ১০ পাইলে পাস। দুই একজন পাসের কাছাকাছি গেছিলো। বাকিরা ১ , ২ ০ এই রকম নাম্বার পাইছি। খাতা দেওয়ার পর আমাদের আরিফ গেল স্যারের কাছে।
-স্যার আমারে আর এক টা নাম্বার বাড়াইয়া দেন
-এক বাড়াইয়া দিলে কি পাস হবে? তুমি কতো পাইছ?
-স্যার ৪।
-এক দিলে কি হবে? তোমার তো পাস হবে না।
-স্যার ১ দিলে পাচ হবে। ৫ একটা রাউন্ড ফিগার। ৪ দেখতে কেমন দেখা যায়? রাউন্ড ফিগার হইলে দেখতে ভালো লাগবে।
এতো দুঃখের মধ্যেও আমরা পুরা ফর্ম হেসে দিলাম।
=)) সেইরকম, কামরুল, ম্যান, পুরা সেইরকম....
থ্যাঙ্কস ভাইয়া।
আমাদের কলেজে প্রিন্সিপাল স্যার যখন হাটতে বাইর হইত..তখন একদল স্যার লগে থাকত তেল মারতে..
দেখতাম আর টাশকি খাইতাম...
বুড়া বুড়া সব স্যার
হাটতে পারতেসেনা...
তাও খালি হাটতেসে আর হাটতেসে... :boss: :boss:
সেই প্রিন্সিপাল টা কে? 😛
principal doesn't matter 😉
তাদের অভ্যাসটা এখনো যায় নাই...এখনো হাটে......শুধু হাটে না,যে স্যারকে দেখতাম কোনদিন কলেজ মস্কে নামাজ পড়তে যায় না,তারাও প্রিন্সিপালের সাথে মস্কে গিয়ে হাজির...আর ,হাত কচলানো!সেইটা দেখার মত...ব্যাতিক্রম শুধু ফাইজুর রহমান স্যার!
People sleep peaceably in their beds at night only because rough men stand ready to do violence on their behalf.
:)) :))
=)) =))
কামরুল ভাই... :boss:
ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ
:boss:
কিছু না লেইখা, খালি কোট কইরা কমেন্ট দেউয়ার তীব্র প্রতিবাদ জানাই।
রবিন রে এই জন্যে দুইটা ব্লগ ইস্যু করা হইল।
দেবব্রত স্যারের আরেকটা কাহিনী , (রিপোস্ট)
:)) :)) :))
এখন অনেক ম্যাচিউর্ড হইসে স্যার। কয়দিন আগে মির্জাপুর গেছিলাম। দেখা হইসে স্যারের সাথে।
আমার সামনেই এই কথাটা সার তোরে জিজ্ঞেশ করসিল।
কেম দোস্ত,লাগে রাহো..................।ভালো ছিল মামা.........।বেশি করে লিখে যা............।।
কামরুল ভাই,আর হাসায়েন না...যত হাসি তত কান্না ... :)) :)) :))
আলদীন
তোর ছবিটা কোথায় তোলা? পুরা মাখন হইছে।
মাসরুফ
তোমার না আমার বাসায় আসার কথা? বই দিবা/নিবা না?
আসুম।আপনে এত সাধ কইরা মাল খাওনের কমেন্ট করছিলেন দেইখা মনে হইছিল -"আমিও মাল খাপো"
আফসুস,মাল তো মাল, সিগারেট ও সহ্য হয়না... 🙁
তোমার জন্য চক্লেট কিন্যা রাখছি। ওইটাতো সহ্য হয় নাকি?
মাসরুফ ভাইরে তো আমি চিনি..ইনার জন্য চকলেট মিল্ক কিন্যা ফিডারে ভইরা দিলে ভাল হয়.. :grr: :grr:
ফিডার কই পাওয়া যায়? আছে তোমার কাছে?
x-( কেন ফিডারে কেন?আমি কি গেলাসে খাইতে জানিনা? x-(
কি জানি। পাবলিকে কয় তুই ফিডারে খাস। পাবলিকের মুখ তো আর তুই বন্ধ রাখতে পারবি না মাসরুফ...একদিন না একদিন পাবলিক সত্যি কথা বলবেই।
কামরুল,
বরাবরের মত ফাটাফাটি হইছে...।
খুবই ভালো লাগছে...।
হাসতে হাসতে ওলট পালট অবস্থা...।
আরো ছাড়ো...
ভালো থাইকো...
আহসান ভাই আপনার কমেন্ট পড়লে মনটাই ভালো হইয়া যায়।
আপনিও ভালো থাইকেন। নতুন লেখা কবে আসবে?
কামরুল,
ভাইয়া, তোমাদের কমেন্ট গুলো পড়েই তো শেষ করতে পারছিনা...।
ইসসসস...। ঈদের পরেই বেসিক কমান্ডো কোর্স শুরু হবে। স্টুডেন্ট চলে আসলে আমার কি হবে...? এত্ত সুন্দর সুন্দর কমেন্টগুলা পড়ার ও ঠিক মত সময় পাবোনা হয়তো...। মেজাজটা তো এখনই খারাপ হইয়া যাইতেছে...।
ফাকিবাজি করেন। কলেজে যেমন করতেন।
দেবব্রত স্যারের কাহিনী আজও ভুলতে পারি নাই। তখন ক্লাস এইটে পড়ি। প্যারেন্ট্স ডে'র পরদিন চারুকলা ক্লাসে স্যার আমারে বলে, এই তুমি, গতকাল আমাকে দেখে সালাম দেও নাই ক্যান। সে কোনদিক দিয়া গেয়ে আমি খেয়ালও করি নাই। প্যারেন্ট্সের সাথে কোথাও যাওয়ার সময় হয়ত পাশে সে পড়ছিল। আমারে কিছু বলতেই দিল না। যে গুটিকয়েক স্যারের হাতে সরাসরি চড় খাইছি দেবব্রত তাদের একজন। উনি কখন যে কি করে ফেলতেন কেউ বুঝতেই পারত না।
ম্যাচিউরিটি আসছে জেনে ভাল্লাগল 🙂
ম্যাচিউরিটিটা আরেকটু আগে আসলে ভাল হইতো। আমি তার হাতে যে পাঁচটা না ছয়টা চড় খাইসি তার সবগুলাই ছিল আজাইরা। কোন রিজন ছিলনা। :grr:
সাতেও নাই, পাঁচেও নাই
এক্স-ক্যাডেটদের সাথে স্যারদের আচরন আর বর্তমান ক্যাডেটদের সাথে আচরনের অনেক পার্থক্য থাকে। কে জানে হয়তো আমি এক্স-ক্যাডেট বলেই স্যারের সাথে কথা বলার পর মনে হইছে, বাহ! স্যারের তো বেশ উন্নতি হইছে।
এখনকার স্যারের কোন ছাত্রকে জিজ্ঞেস করলে হয়তো বলবে, কিসের কি? যেই লাউ সেই কদু।
খাঁটি কথা
ওরে নারে...ওরে প্রিফেক্টরে...
হাসতে হাসতে শ্যাষ... :clap:
ওরে হ্যা রে...
ওরে রায়হান রে...
এইবার উঠ রে...।
:clap:
খালি তালি?
ইংরেজির এনায়েত হোসেন স্যার ছিলেন একটু বিকল্প ধারার মানুষ; পাগলা টাইপের না। একদিন বই পড়া নিয়ে কথা হইতেসে; স্যার জিগায় কি পরতেসো আজকাল। কইলাম "শেষের কবিতা"। আমারে জিগায় কি বুঝলা। আমিতো অমিতের প্রশংসা করতেসি। স্যার কয় কিস্যু বুঝ নাই। "শেষের কবিতা" এর নায়ক হইল শোভনলাল। এরপর বিভিন্ন সময়ে আমি "শেষের কবিতা" এই পরযন্ত ৮বার পরলাম। একেকবার মনে হইল একেক রকম। এখন আমি বিশষাস করি শোভনলালই "শেষের কবিতা" এর নায়ক। স্যারের সাথে পৃথু ঘোষরে নিয়েও কথা হইসে। তখন নিজেরে একটু আতেঁল প্রমান করের জন্য "শেষের কবিতা", "মাধুকরী" পরেছিলাম। অনেক কিছুই মাথার উপর দিয়ে গেসিলো। কিন্তু অনেকদিন পরে ২০০৫ এ আবার যখন "শেষের কবিতা" পরছিলাম, স্যারের কথা মনে পরসিলো, আসলে কিছু interesting স্যার ছিল; যাদের আর কোথাও পাওয়া যাবে না।
:khekz: :khekz:
আসলেই ভাই... কোথায় পাব তাদের?? 🙁
এই পোষ্ট পইড়া আমি কইলাম গ্রাড ল্যাব এর মধ্যে হাসতে হাসতে গড়াইয়া পইরা যাইতেসি ...
আশে পাশের শাদা আর কালা চামড়া গুলা আমারে পাগোল ভাবলে কইলাম আপনের দোষ।
তুমি কি খুইজা খুইজা আমার সব পুরান পোস্ট পড়া সুরু করলা?