আমার ভিতর-বাহিরে অন্তরে অন্তরে…

কালবেলা ভাইয়ার পোস্টটা পড়ে একটু মন খারাপের মতো হলো। কমেন্ট দিতে গিয়ে দেখলাম অনেক বড় হয়ে যাচ্ছে। বাধ্য হয়ে আলাদা পোস্ট লিখতে হলো।

ভাইয়ার বেশ কিছু বিষয়ের সাথে একমত হতে পারছিনা।

“ক্যাডেট কলেজে ক্যাডেট রা হল রাস্তার পাশে সারি সারি পাতাবাহারের মত…………………… পাতাবাহার গাছ গুলোকে কি করা হয় কিছুদিন পর পরই? কাঁচি দিয়ে ছেটে দেয়া ………………………এখানে নিজের মত করে বড় হবার সুযোগ নেই। নিজের মত থাকার সুযোগ নেই”।

আমি জানিনা ভাইয়া কোন বাংলা স্যার কথাটা বলেছিলেন। নামটা জানতে পারলে আমি নিজে স্যারকে ফোন করে বলতাম “স্যার আপনি পুরোপুরি ঠিক বলেননি”।
ক্যাডেটরা কখনোই রাস্তার পাশে সারি সারি পাতাবাহারের মতো না। ক্যাডেট কলেজেও নিজের মতো করে বড় হবার সুযোগ আছে। নেই কে বলেছে? হ্যা, কিছু নিয়ম-নীতি মেনে চলতে হয়, মাঝে মাঝে একটু বেশিই হয়তো। কিন্তু সেটা তো সব জায়গাতেই। আমরা যে পরিবারে বড় হই, আমাদের বাবা মা’রা তো আমাদের কিছু নিয়ম নীতির মধ্যেই বড় করেন। নাকি সব বাবা মা ছেলে মেয়েকে যা খুশি তাই করতে দেন? সব বাবা-মা ছেলে মেয়েদের এক ভাবে মানুষ করেন না, সেজন্যে সবার ছেলে মেয়ে একরকম হয়ও না। ক্যডেট কলেজে ভর্তি হবার আগে আমরা যে স্কুলে পড়তাম, বা ক্যডেট কলেজে ভর্তি হতে না পারলে যে স্কুল গুলিতে পড়তাম সেখানেও কি সবাইকে নিজের মতো করে সব করতে দেয়া হয়? মনে হয় না ভাইয়া। কিছু নিয়ম-নীতি সবাইকেই মেনে চলতে হয়। ক্যাডেট কলেজে হয়তো একটু বেশি কিন্তু সেটা কখোনই “একটি মেধাবী ছেলেকে সারা জীবনের জন্য অন্ধকারের মধ্যে ঠেলে দেওয়ার মতো” নয়।

এক টু আগে আমাকে বিশ্বজিত ভাইয়া বলে একজন ফোন করলেন। আমার সাথে তার পরিচয় নেই। কোনদিন নামই শুনিনি। বললেন,
-কামরুল বলছ ?
-জি
-আমি বিশ্বজিত, পিসিসি, টেনথ ব্যাচ
-স্লামালিকুম ভাইয়া
-আচ্ছা সিসিবি গেট টুগেদারটা কখন কোথায় হবে আমাকে বলতো

বুঝলাম জিহাদের কল্যানে আমি আর আমার ফোন নাম্বার বিখ্যাত হয়ে যাচ্ছে। আমি ভাইয়াকে জিহাদের দেওয়া সময় আর জায়গা বললাম। তারপর নানা আলাপ সালাপ। ভাইয়া ‘কেয়ার বাংলাদেশে’র অনেক বড় কর্মকর্তা। শুধুমাত্র গেট টুগেদারের জন্য কিশোরগঞ্জ থেকে ঢাকায় আসবেন। আমি কি করি, নাটক বানাতে কেমন লাগে এইসব।
কি সহজ-সরল, জড়তাহীন সম্পর্ক। উনি পিসিসি, টেনথ ব্যাচ বলার সাথে সাথে আমি বুঝি আমি উনার জুনিয়র, তাই শুরুতেই ‘আপনি’ আর উনিও শুরু থেকেই ‘তুমি’।
কোনদিন যাকে চিনতাম না, এক ফোনেই তাকে কতো আপন করে ফেলা।
এটা শুধু ক্যাডেট বলেই সম্ভব। অন্য কোথাও নয়। তাইনা কালবেলা ভাইয়া?

“আবার কেউ বা ৬ ছয়টা বছর ধরে চোখের আড়ালে কিছু জল আর বুকে পাথর চেপে নিয়ে পার করে দিয়েছে চুপিচুপি সময়”।

একটু বেশি নিষ্ঠূর হয়ে গেলো না ভাইয়া? ক্যাডেট কলেজের বন্ধুদের মতো এমন বন্ধু দুনিয়ার কোথায় পাবেন বলেন তো? এতো মায়া, এতো ভালোবাসা আর কে দিবে আপনাকে? চোখের জল মুছে দিয়ে, বুকের পাথর সরিয়ে দেওয়ার মতো বন্ধু আছে বলেই না আমি আপনি ক্যাডেট কলেজে পড়ার জন্য গর্ববোধ করি।

“কলেজের সবচেয়ে বড় একটিভিটি হচ্ছে পড়াশুনা। কলেজে লেখাপড়ায় যে ভালো সেই ই রাজা। এখানে ভালো করতে না পারলে সবদিক দিয়েই কষ্ট। একধরনের হীনমন্যতা কাজ করা শুরু করে। ক্লাসমেটদের মধ্যে চার-পাঁচ ধরনের অদৃশ্য স্ট্যাটাস/লেয়ার তৈরী হয়ে যায়। ভালো রেজাল্ট করা পোলাপান গুলো একদিকে, মিডিয়াম গুলো একদিকে, এক্কেবারে খারাপ করা গুলো হয়ত আর এক দিকে। ক্রমে ক্রমে সে নিজেকে নিজের মধ্যে ঢুকিয়ে ফেলতে শুরু করে। ভালো করতে না পারলে স্যার-ম্যাডামরাও তেমন একটা চেনে না ভালো করে”।

এটা কি ঠিক হলো ভাইয়া? অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্টানের চেয়ে ক্যাডেট কলেজে পড়াশুনাটা বরং একটু কম ইম্পর্টেন্স দেয়া হয়। আমাদের এক বড় ভাইয়া ছিলেন, অনেক দুষ্ট। শেষ পর্যন্ত কলেজ আউট হলেন দুষ্টামির কারনে, কিন্তু কিছুদিন পরে তাকে ফিরিয়ে নিয়ে আসা হল কারন উনি কলেজের সেরা বাস্কেটবল খেলোয়ার। স্পোর্টস, কালচারালের এতো ইম্পর্টেন্স আর কোথায় দেয়া হয় বলেন তো? ভালো ছাত্রদের ছাড়া অন্যদের স্যার ম্যাডামরা চিনেনা কথাটা একদম ভুল। আপনি বাংলা স্যারের নাম ভুলে যেতে পারেন কিন্তু গিয়ে স্যারের সামনে দাড়ান, আমার ধারনা স্যার আপনাকে ঠিকই চিনতে পারবে।
তার জলন্ত প্রমান আমি নিজে। আমার রেজাল্ট শুনলে আপনি হার্টফেল করবেন তাতে আমার কোন সন্দেহ নেই। এই আমি যখন কলেজে যে স্যারটি আমাকে সবচেয়ে বেশি মারতেন তার সামনে গিয়ে দাড়াই তখন উনি কি পরম স্নেহে আমাকে বুকে টেনে নেন।
এই জীবনে আমি আমার ক্যাডেট কলেজের স্যারদের ছাড়া আর কারো পা ছুয়ে সালাম করিনি। কারন আমি তো জানি উনি আমাকে সেই বয়সে অন্যদের চেয়ে কতোটা এগিয়ে দিয়েছিলেন। এখনো তাই আমি আমার সেই স্যারদের মিস করি আর একা একা বলি “কোথায় পাবো তাদের”।

আশিকের কমেন্টটা সবচেয়ে মনে ধরেছে আমারঃ
বাবা মার কথা রাখার জন্য দিনে তিনটা করে প্রাইভেট টিউটরের কাছে পড়ে যে ছেলেটা তার কৈশোরটাকে নষ্ট করে দেয়, তার থেকে বেড়িয়ে আসার সুযোগ করে দেয়। যে পড়তে চায়, সে পড়তে পারে। যে খেলতে চায় সে খেলতেও পারে। যার এক্সট্রা কারিকুলারে উৎসাহ থাকে সে সেটারও চর্চা করতে পারে। দেশের কটা স্কুল কলেজ এ সুযোগ করে দিতে পারে? পড়াশোনায় ভালো হয়ে বোর্ডে ফার্স্ট স্ট্যান্ড করাটাকে কিন্তু কিছুতেই সার্থক জীবন বলা যেতে পারে না। আমি তা মনে করি না।

আমিও না। ক্যাডেট কলেজ সবচেয়ে ফিটেস্ট মানুষ তৈরী করতে চেষ্টা করে। সেটা খুব একটা সহজ না। একটু কষ্ট তো করতেই হবে। আমাদের ব্যাচের সবচেয়ে খারাপ রেসাল্ট ছিল যে ছেলেটার সে এখন দুনিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম বহুজাতিক ব্যাঙ্কের কর্মকর্তা। ওই পর্যন্ত সে যেতে পেরেছে কারন ক্যাডেট কলেজ তাকে ওই ভাবে তৈরী করেছে।

আপনার লেখা পুরোটা শেষ হয়নি। তার আগেই এটা দেয়া বোধহয় ঠিক হলো না। ক্ষমা করবেন।

পুনশ্চঃ
কিছুদিন আগে আমার কলেজের এক বড় ভাইয়া(আমার ১০ ব্যাচ সিনিয়র)’র সাথে একটা বিষয় নিয়ে বিতর্ক করছিলাম। উনি একটা বলেন, আমি অন্যটা বলি। শেষে উনি রেগে গিয়ে আমাকে বললেন, Let me remind you, you are dealing with a different kind of animal here –‘Cadets’. One of the smarter groups of human species, if not the smartest!

কথাটা আমার খুব মনে ধরল। আমিও তাকে বললাম
ভাইয়া Let me remind you, you are also dealing with a different kind of animal here-Cadets. One of the smarter groups of human species, if not the smartest!

তারপর দুই জন হাসতে হাসতে সিগারেট ধরালাম।

৩,৬৬১ বার দেখা হয়েছে

২৯ টি মন্তব্য : “আমার ভিতর-বাহিরে অন্তরে অন্তরে…”

  1. ওবায়দুল্লাহ (১৯৮৮-১৯৯৪)

    প্রিয় কামরুল,
    ভাইয়া তোমার লেখাটা ভাল লাগলো।

    আমি তোমার সাথে একমত। ইনফ্যাক্টঐ লেখায় আমার মন্তব্যটা দেখলে দেখবে আমি বলেছি একই ক্তহা। ভাল খারাপ দুটি শব্দই বাস করে পাশাপাশি। আমার মতে অনেক ছেঁকে বেছে নেয়া ছোট ছোট ছেলেদের (মেয়েরাও আছে)কে আলাদা করে নিয়ে একটু ভাল সুযোগ দেয়ার প্রচেষ্ঠাকে আমি স্বাগত জানাই। এও মানি এর মাঝে কিছু ফুল ঝরে যায়। 'সিস্টেম লস' কোথায় নেই? কেননা ক্যাডেট কলেজ গুলো তো আর রোবট পরিচালিত নয়। বরং রক্ত মানুষের মানুষরাই চালায়। নরম কাদা কে যেমন শক্ত একটা চর্কিতে রেখে শিল্পীর হাতের পরশে তৈরী করা যায় উৎকৃষ্ট মৃৎশিল্প- এমনটিই ঘটে সেখানে।

    আসলে কালবেলার লেখাটা শেষ হয়নি- যা তুমিও লিখেছো। তাই অপেক্ষা করি সে কি ভাবে এই দিক গুলো নিয়ে ভাবছে।
    তার উদ্দেশ্যও কিন্তু ক্যাডেট কলেজ গুলোকে কি ভাবে আরও ভাল করা যায়।
    এই কৃত্রিম দরদ ক্যাডেট মাত্রেই স্বাভাবিক।
    🙂

    অনেক লিখে ফেললাম ভাইয়া।
    ভাল থেকো।


    সৈয়দ সাফী

    জবাব দিন
      • ওবায়দুল্লাহ (১৯৮৮-১৯৯৪)

        হুম্‌ম কামরুল,

        ব্যাপারটা মজারই বটে।
        কেননা, আমার কাছে মনে হয়-
        বীজ থেকে চারা করে যে গাছ কে লালন করা হয় ছয়টি বছর; সে গুলো একেকটি চমৎকার ফুলের বাগানের ফ্রেমে বাঁধা একটি সুন্দর প্রয়াস। এই সময়ে মালী'র নিয়মমাফিক যত্নাদি,কীটনাশক প্রয়োগ ইত্যাদি...চলে। এমন কি মাঝে সাঝে তার অবহেলাতে কিছু ফুল ঝরেও যায় বৈ কি ! আর যারা পরিপুষ্ট হয়ে আত্মপ্রকাশ করে; তাদের পরিপূর্ণ বৃক্ষ হয়ে আপন ভূমিকা পালনের পালা আসে...।
        🙂

        অনেক ভাল থেকো।


        সৈয়দ সাফী

        জবাব দিন
    • এই নিয়ম কানুন আর গতিময়তার মাঝে মরতে পারাটা যে জীবন ভাবিনি। কোথাও যদি কলঙ্ক না থাকে ঠিক যেন বাচতে ইচ্ছা করেনা। বার বার হারিয়া যাই ছেলে বেলায়, ছুটে বেড়ানো, সেই মাঠ, নদী, সাতার কাটা, পাশের বাড়ির মেয়েটির মৃদ্যু হাসি আজো নাড়া দেয়। মনেপড়ে ক্লান্ত মনে ঘরে ফিরেই মায়ের আচলে লুকাতাম। অনেক চেষ্টারপর বাবা আমাকে ক্যাডেটে দিতে পারিনি। আমার বড় ভাইয়া গিয়েছিল। মায়ের আচলে থাকার সময়ে তার কথা খুব মনে পড়তো।বাবার মৃত্যু আমার কোলে হয়েছিল। তভাওয়ার আসতে দেরী হয়েছিল। দুরত্ব আসলেই কখনো ভালোবাসা বাড়ায় না। ধীরে ধীরে যেন কিভাবে ভুলে গেলাম। সেও আমায় ভুলে গেলো।
      দেখা হয় কথা হয় কিন্তু আগের মতো কেন যেন হাসতে পারিনা। গ্রামে গেলে ভাইয়াকে কেউই চিনতে পারেনা। কিন্তু আমাকে পারে ।খুব পারে। কেউ কেউ জড়িয়ে ধরে। কতো কথা তাদের মনে।
      ভাইয়ার ওঠা বসা অনেক উপরের লেভেলে। পানীও আর সারাক্ষন সেজে থাকা মারান্তক সুন্দরী বউ যদি জীবন হয় তবে সে জীবন কে ঘৃনা করি।
      আটকে থাকার জন্য যদি আমাকে সৃষ্টি করা হয় তাহলে সৃষ্টিকর্তাকে ঘৃনা করি।

      জবাব দিন
  2. মাসরুফ (১৯৯৭-২০০৩)

    কালবেলা ভাই আর কামরুল ভাই দুজনের লিখাই পড়লাম।এবার আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা বলি।ক্যাডেট কলেজে যাবার কারণে আমার পড়াশুনা কিছুটা হয়তো ক্ষতি হয়েছে,বাইরে থাকলে হয়ত রেজাল্ট কিছুটা ভালো হতেও পারত(আমি আমার ব্যাচের সবচেয়ে খারাপ ছাত্রদের অন্যতম)।কিন্তু বুকে হাত দিয়ে এটা বলতে পারি,এখানে ৬ বছরে আমি যা যা শিখেছি,১০টা এমবিএ ডিগ্রী আমাকে তা দিতে পারবেনা।ক্লাস ১২ এ পড়া মাত্র ১৮ বছরের একটা ছেলে যখন হাতে কলমে শেখে কিভাবে কলেজ অথরিটিকে,ক্লাসমেটদেরকে আর জুনিয়রদের ডিল করতে হবে,সে যখন দেখে যে মেজর জেনারেল পদমর্যাদার অথবা বিমান বাহিনি প্রধানের মত কোন অতিথির উপস্থিতিতে যে ধরণের আদব কায়দা শেখা দরকার তা তাকে স্বভাবজাতভাবে রপ্ত করিয়ে নেয়া হয়েছে,সারাজীবন পার্বত্য অঞ্চলে কাটানো(আমার বাবা বন বিভাগে কর্মরত ছিলেন বলে নামী দামী কোনো স্কুলে পড়েছি বলে মনে পড়েনা)ছেলেটি যখন মুক্তভাবে সবার সামনে কথা বলতে শেখে,সে আরো যখন দেখে যে প্রথম স্টান্ড করা ভয়াবহ ধরণের ভালো ছাত্রটি সেই একই মানুষ যে কিনা তাকে কিভাবে ডাইনিং হলে খেতে হয় তা শিখিয়েছে(২০০০ সালে যশোর বোর্ডে ১ম হওয়া ফরিদ ভাই ক্লাস এইটে থাকতে আমার টেবিল-গাইড ছিলেন)--এ সব কিছু তার মধ্যে এক হিমালয়প্রতিম আত্মবিশ্বাসের জন্ম দেয়। এ কারণেই সর্বোচ্চ নিয়মে ৫ টার বদলে অভাবনীয় ৭ টা কোর্স নেবার সময় সে ছেলেটি বিভাগীয় প্রধানের চোখে চোখ রেখে বলতে পারে-"Sir, I am an ex-cadet.I am specially trained for these type of situations.I need to take 7 courses to catch this upcoming BCS exam.I know nobody has taken 7 courses ever,but I promise, I will not let you down."
    সেই একই কারণে,ছোট বোনের ভালো ফলাফলের সাথে তুলনা করে যখন কোন খালাম্মাশ্রেণীর মহিলা তাকে বলে যে ক্যাডেট কলেজে যাবার ফলে তার রেজাল্ট খারাপ হয়েছে,সে তখন তপ্ত লোহার মত নীরব কিন্ত রক্তিম লাল আক্রোশে প্রতীজ্ঞাবদ্ধ হয় সমুচিত জবাব দিতে।

    এটা সত্য যে ক্যাডেট কলেজে আর যে কোন প্রতিষ্ঠানের মতই ভাল মন্দ রয়েছে।কালবেলা ভাই যা বলেছেন সেটিও কিন্তু কলেজের একটা দিক যা কোনোভাবেই অস্বীকার করা যাবেনা।কিন্ত তার মানে এই না যে মুহম্মদ জাফর ইকবাল স্যাররা এ কথা বলে পার পেয়ে যাবেন যে এটি এমন একটি পরিবেশ যেখানে সঠিক বিকাশ সম্ভব নয়(আগ্রহী পাঠক কামরুলতপু ভাই এর ব্লগ"৫০ খানা ক্যাডেট কলেজে" জাফর ইকবাল স্যারকে লিখা আমাদের মেইল এবং উনার উত্তর দেখে নিতে পারেন।)

    ক্যাডেট কলেজের তিক্ত অভিজ্ঞতা আমাদের সবারি কম বেশি আছে।কি করে ভুলি অম্লান বদনে মিথ্যা বলা আর বিনা দ্বিধায় একজন ক্যাডেটের জীবনকে অনিশ্চয়তায় ঠেলে দেওয়া কিছু কর্কশ মানুষের কথা?আমার মনে হয় এ দিক গুলোও আমাদের ধীরে ধীরে পরিণত হতে চলা ব্লগে উঠে আসা প্রয়োজন।আর সে দিক থেকে ভাবলে কালবেলা ভাইয়ের পোস্টটি নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়।

    তবুও শেষ কথাটি ১৯৯৮ আইসিসিএলএমএম এ সেরা পার্ফরমার হওয়া আমাদের কলেজের আলী ভাইয়ের কাছ থেকে না বলে ধার করে নিয়ে বলছি-"If I am born three more times in this mother earth, three more times I will join Cadet College"

    পুনশ্চঃ এখানে মন্তব্য করতে গিয়ে আবেগ-প্রবণতার কারণে ব্যক্তিগত কিছু প্রসংগ চলে এসেছে।তপ্ত লৌহাকৃতি রোষ কিছুটা প্রশমিত করতে যাদের আমি আপন আত্মীয়দের চাইতেও কাছের বলে মনে করি তাদের সাথেই ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র আমার ততোধিক ক্ষুদ্র আবেগ কিছুটা প্রকাশ করলাম।আমার এ ধৃষ্টতার কারণ আর কিছুই নয়,এ ব্লগের সবার প্রতি আমার আবেগের পরম আত্মসমার্পন।

    জবাব দিন
  3. কালবেলা (৯৩-৯৯)

    প্রথমেই বলে নেই তোমার লেখাটা চমৎকার লেগেছে।
    প্রথমে আমার লেখাটি লেখার সময় ভাবিনি, এখন দেখছি বেশ একটা বড়সড় আলোচনা করার জিনিস পাওয়া গেছে। ভালোই লাগছে। চিন্তার জমিনে নিড়ানী পড়েছে। ফসল ফলবে ভালো।

    আলোচনা যাতে ফলপ্রসূ হয় সেকারনে জরুরী ভিত্তিতে কয়েকটি জিনিসের প্রতি হালকা চোখ রাখিঃ

    ১। আলোচনাটা কি নিয়ে? অর্থাৎ মূল প্রসংগ কি?
    ২। আলোচনা করতে গিয়ে আমরা সমবেত ভাবে কি কি জিনিসের সাথে একমত?
    ৩। আলোচনা করতে নিয়ে আমরা কি কি বিষয়গুলোর সাথে একমত হতে পারছি না বলে আপাতত মনে হচ্ছে? নাকি আদৌ কোন দ্বিমত নাই?
    ৪। নিজের নিজের ধারনা পুনর্বিবেচনা করতঃ, ধারনায় কিছু এ্যাড বা ডিডাক্ট করে নেওয়া।
    ৫। আলোচনা শেষে একটা ডেস্টিনেশন/ রেজাল্ট বের করে আনা।

    আপাতত চোখ এদিকে থাকুক, চাইলে মনও দিতে পারো... আমি ঐদিকে হাত দিয়ে পর্বটা শেষ করে আসি। ঘুমও পাইসে। 🙁

    জবাব দিন
    • ভাই আমারে মাফ কইরা দেওন যায়না?
      বেশি সিরিয়াস বিষয়ে আলোচনা করতে গেলে আমার ঘুম চইলা আসে।

      ও আচ্ছা, আমার যদি ভুল না হয় তাইলে আপনি রংপুরের খালেক ভাই। আব্দুল খালেক? ক্যাডেট নঃ ৮৯১। ১৯ তম ব্যাচ।

      আমিও সিলেটের ১৯ তম ব্যাচ।

      জবাব দিন
  4. আহ্সান (৮৮-৯৪)

    আমি বিমোহিত। অসাধারন সবার কলমের ধার। আমার মনে হয়, ক্যাডেট কলেজের প্রডাক্ট কি জিনিস তা বোঝানোর জন্য এ ব্লগ টা ই যথেষ্ট।

    You people are outstanding genius.

    অপেক্ষা করছি সামনের লেখা গুলোর জন্য......।।

    জবাব দিন
  5. বাহলুল (৯৩-৯৯)

    খুবই খাটি কথা বলছ। আমি তোমার সাথে একমট। ক্যাডেট কলেজে ৬ বছরে যেরকম বন্ধু তৈরি হইছে, আমার তো মনে হয় না অন্য কোথাও ১০০ বছরেও এইরকম বন্ধু হইতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে কলেজের বন্ধুরা আমাদের ফ্যামেলী মেম্বারদের থেকেও আপন। "Those were the best days of my life".

    জবাব দিন
  6. নাজমুল (০২-০৮)

    এখন কোনো কিছু বলবোনা যখন ভাল কোথাও যাবো তারপর বলবো ক্যাডেটরা আসলে কী??আমার ধারণা ক্যাডেট হয়ে কোনো ক্যাডেট এর আমরা কি ছিলাম তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে নিজেদের মনে।

    জবাব দিন
  7. রকিব (০১-০৭)

    মাঝে মাঝে যখন নিজের উপর বিরক্তি ধরে যায়, হতাশার একটা বাজে ধোয়া ছেয়ে নেয়, এই লেখাগুলো পড়ি। আপনা আপনি মন ভালো হয়ে যায়, নিজের সামর্থ যেন নতুন করে জেনে যাই।
    মাস্ফ্যুদার এই লাইন ক'টাও ইন্সপায়ারিং হয়ে থাকবেঃ
    Sir, I am an ex-cadet.I am specially trained for these type of situations.I need to take 7 courses to catch this upcoming BCS exam.I know nobody has taken 7 courses ever,but I promise, I will not let you down.


    আমি তবু বলি:
    এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..

    জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।