১.
শরীফ উদ্দিন স্যারের সাথে আমার প্রথম পরিচয় একদিন টার্ন আউট প্যারেডে । আমরা তখন ক্লাস সেভেনে। একেবারেই নতুন। প্যারেডে দাঁড়িয়ে আছি। আমদের পাশে ক্লাস এইটের ভাইয়ারা। হঠাৎ সেখান থেকে তানজিন ভাই আমদের আব্দুল্লাহ কে ডাক দিলেন
-আব্দুল্লাহ কাম হিয়ার
আব্দুল্লাহ দৌড়ে গেল। তানজিন ভাই বললেন
-ওই যে দেখতেছ বড়ো চশমা পরা একজন স্যার আসতেছে উনারে গিয়া জিজ্ঞেস করবা, স্যার ghost মানে কি? ঠিক আছে?
-জি ভাইয়া
-যাও ডাবল আপ
আব্দুল্লাহ দৌড়ে ওই স্যারের সামনে গেল।
-স্লামালিকুম স্যার।
-অলাস্লাম।
-স্যার ghost মানে কি স্যার?
স্যারের চেহারাটা দেখেমনে হলো রেগে গেছেন।কিন্তু গলার স্বর ঠাণ্ডা রেখে বললেন
– ghost মানে ভূত হে। ভূত। বুঝতে পেরেছ হে?
-জি স্যার। থ্যাংকু স্যার।
আব্দুল্লাহ চলে আসছিল। স্যার ডাক দিয়ে দাঁড় করালেন।
-শোনো হে। তোমার নাম কি হে?
-স্যার আব্দুল্লাহ স্যার।
-আব্দুল্লাহ হে, আব্দুল্লাহ।
বলে স্যার আব্দুল্লাহর থুতুনি টা ধরে একটু উপরে তুললেন। তারপর ফুলটাস বল পেলে ব্যাটসম্যানরা যেভাবে ব্যাট ঘুরায় ওইরকম হাত ঘুরিয়ে একটা চড় দিলেন। আব্দুল্লাহ ৩৬০ ডিগ্রি ঘুরে আবার জায়গায় চলে আসল। স্যার আস্তে আস্তে হেঁটে চলে গেলেন।
ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে আব্দুল্লাহ দাঁড়িয়ে থাকল। আমরা অবাক হয়ে দেখতে লাগলাম। আর ক্লাস এইটের ভাইয়ারা মুখ টিপে হাসাহাসি করতে লাগলেন।
আসল ঘটনা বুঝতে পারলাম এর কিছুদিন পরে। স্যারের টিজ নাম ছিল ‘ভূত’।
পুরা কলেজ জানে, স্যারও জানতেন, সেদিন থেকে আমরাও জানলাম।
২.
এর পর থেকে সুযোগ পেলেই স্যার কারণে অকারণে আব্দুল্লাহ কে মারতেন।
হাউসে আব্দুল্লাহর রুমে বসে আমরা সবাই আড্ডা দিচ্ছি। শরীফ উদ্দিন স্যারের চোখে পড়ল। স্যার দরজার সামনে এসে দাঁড়িয়ে বললেন
-বহিরাগত কে কে আছ বেরিয়ে আসো হে
আব্দুল্লাহ ছাড়া আমরা সবাই বেরিয়ে আসলাম। ফুলটাস বলের মত স্যার সবাইকে পিটালেন। তারপর স্যারের খেয়াল হল আব্দুল্লাহ কে তো মারা হয়নি।
-আব্দুল্লাহ বেরিয়ে আসো হে।
-স্যার এইটা আমার রুম স্যার। আমি বহিরাগত না।
-তাতে কি হে? তোমার রুমে এতো লোক কেন হে? তুমি কি লঙ্গরখানা খুলে বসেছ হে? আসো হে, আসো।
আবার সেই ফুলটাস বল, আবার ৩৬০ ডিগ্রি ঘুরা আর ভ্যাবাচ্যাকা আব্দুল্লাহ।
৩.
শরীফ উদ্দিন স্যারের ক্লাসে কখনো এদিক ওদিক তাকানো যেত না। ইচ্ছায় অনিচ্ছায় সবাইকে স্যারের দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে।
এইরকম একদিন ক্লাসে স্যার পড়াচ্ছেন। আমরা যথারীতি স্যারের দিকে তাকিয়ে আছি।
শুধু আমদের নকিব ডেস্ক এর উপরে হাত রেখে আঙুল দিয়ে টোকা দিচ্ছিল। স্যারের নজরে পড়ল। পড়া থামিয়ে বললেন
-একজন ক্লাসে বসে বসে ডুগডুগি তবলা বাজাচ্ছে। আমি একটু ওকে মাইরে আসি হে।
নকিব এর সামনে গেলেন
-আমি ক্লাসে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে পড়াব আর তুমি বসে বসে ডুগি তবলা বাজবে, এভাবে কেমিস্টি হতে পারে না হে। এভাবে কেমিস্টি হতে পারে না..
নকিবের থুঁতনিটা হাত দিয়ে তুলে ধরলেন। চড় খেয়ে নকিব চেয়ার সহ উল্টে পড়ল।
৪.
রসায়ন ক্লাস নিচ্ছেন শরীফ উদ্দিন স্যার। জারণ-বিজারণ চ্যাপ্টার। এদিক ওদিক তাকানোর উপায় নেই। আমরা মনোযোগ দিয়ে শুনছি। স্যার ক্লাস শেষ করে বললেন
-তাহলে আমরা বুঝতে পারলাম জারণ হল ‘এক’ আর বিজারণ হল…
আমরা সবাই একসাথে বললাম ‘দুই’।
-গাধা হে গাধা। জারণ হল এক আর বিজারণ হল আরেক।
আমরা এ ওর মুখ চাওয়া চাওয়ি করতে লাগলাম।
=))
্স্যারের চড় খেয়ে 270 না 360 ডিগ্রি ঘুরে সেটা আমার চে খুব কম মানুষই ভাল জানে। স্যারের হাতে টানা সাতটা চড় খাওয়ার রেকর্ড মনে হয়না আমি ছাড়া আর কারোর আছে।
আর বাকি কাহিনীগুলা পড়ে মনে হইতেসিল এইটা মির্জাপুরের কাহিনী। সব কাহিনি একেবারে সেম সেম 😀
সাতেও নাই, পাঁচেও নাই
‘বাকি কাহিনীগুলা পড়ে মনে হইতেসিল এইটা মির্জাপুরের কাহিনী। সব কাহিনি একেবারে সেম সেম’
একেবারে ঠিক কথা জিহাদ। ক্যাডেট কলেজের গল্প গুলির এই এক মজা। যে কোন ক্যাডেট গল্প শুনে বলবে আরে এটা তো আমদের কাহিনী।
কলেজ বদলায়, কিন্তু স্যার রা বদলান না।
ভাই, আমি একবার খাইসিলাম। ক্লাস ৮ এ। টানা ৬-৭ টা। পুরাই অকারণে। উনি মারে আর সামনে আগায়। আমি পিছনে যাই। মারে আর বলে, আমি যারে মারি কুকুরের মত মারি। সাইফুল ইসলাম স্যার ( ইতিহাস) । পরে অবশ্য ডেকে নিয়া অনেক ভাল ভাল কথা বলছিল।
ami ekbar jp'r kase khaisi..first 90 degree clockwise..erpor 180 degree anticlockwise...erpor continuous sine wave!!! =D> =D>
কামরুলের "কোথায় পাবো তাদের" সিরিয়ালটা পুরা 'সেইরকম' একটা সিরিয়াল.......এক কথায় দুর্দান্ত =D>
সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!
প্রশংসা শুনলে লজ্জা লাগে ভাইয়া। ধন্যবাদ।
আআআহ জীবনানন্দ(ঠিক হলো কি? :> ) বানান ভুলের জন্য রাবেয়া ম্যাডামের হাতের থাপ্পর...ভোলার না। আমি ভ্যাবাচেকা খেয়ে ভাবতেসিলাম কেন থাপ্পরটা খাইলাম..ক্যান্ডিডেট থাকাকালীন থাপ্পরটা খাইসিলাম, এক বছর পর ঠিক একই বানানের জন্য আবুল হোসেন স্যার আমার খাতা বাইরে ছুঁড়ে মারলেন...সেইবার পাঁচশ বার এই বানান লিখে ছাড় পাওয়া গেসিলো 🙁
আবুল হোসেন স্যারের কাছে আমি একবার ধরা খাইছিলাম। কলেজ লাইব্রেরির একটা ম্যাগাজিন থেকে বাংলা সিনেমার এক নায়িকার ছবি চুরি করে।
স্যার দেখে শুধু বলেছিলেন ‘ ছি! ’
=))
সাতেও নাই, পাঁচেও নাই
আমারে কোথাও কেউ অপমান করছে শুনলেই জিহাদ কেন জানি গড়াগড়ি দিয়া হাসে..
জিহাদ বিষয় কি?
পুরান দিনে ফিরে গিয়ে দেন ভাইয়া একখান পাংগা লাগাইয়া। আপনারে তো চিনেনা। চিনি তো খালি আমরা (অল্টারনেটিভ ব্যাচ ) :(( :((
আমার আজকে পরীক্ষা আছে তাও এখানে এসে কমেন্ট না করে পারলাম না। পুরা গুল্লি হইছে । কামরুল ভাই আপনি আসলেই জিনিস। কিন্তু আপনি কি কোয়ালিটি রাখার জন্য কোয়ান্টিটি কম রাখেন নাকি?
বেশি ছোট হয়ে গেছে ?
আচ্ছা পরের বার যদি লিখি বড় করে লেখার চেষ্টা করবো।
তোমার কি খবর? দেশে আসছ কবে? যোগাযোগ কইরো।
আমি সবসময় এই সিরিয়ালটার জন্য ওত পেতে থাকি।
অনবদ্য..........একেবারে হাসতে হাসতে খুন =)) ।
সত্যিই তো আর কোথায় তাদের পাওয়া যাবে??
কিপ ইউ আপ ব্রাদার। =D>
Life is Mad.
‘সত্যিই তো আর কোথায় তাদের পাওয়া যাবে??’
আসলেই পাওয়া যাবেনা ভাইয়া।
আমি আমার সব ক্যাডেট কলেজের স্যারদের খুব মিস করি। স্যাররা সবাই যে যেখানে থাকুন ,খুব ভালো থাকুন।
:))
পুরাটা সময় ধরে মুচকি মুচকি হাসছিলাম, শেষে এসে চেয়ার থ্যেকে উল্টায় পড়ে যাওয়া দশা হলো। ভাই আপনে পারেনো। সেই রকম হে।
bhai, ekebare same condition here. last e aisa kothin punch .
রায়হান তোমারে একটা কবিতা উৎসর্গ করছিলাম ‘ভালবাসি তোমাকে’ পোস্টে, একটা থ্যাংকস ও দিলানা।
সুন্দর লেখা। ছোট ছোট ব্যাপার......কিন্তু অনেক মজার......
আমি ঠিক ৩৬০ ডিগ্রী মার্কা চর খাইনি...কিন্তু ৭২০ ডিগ্রী মার্কা চর খাইতে দেখছি...। ওইটা দেইখা ই আমার কাজ হইয়া গেছিলো...।
কামরুল, ভাই রে তোমার নেক্সট এপিসোড কবে নামাবা? অপেক্ষায় থাকলাম।
ভালো থেকো ভাইয়া।
থ্যাংকস ভাইয়া। আপনার শরীর কেমন এখন?
ভালো থাকবেন।
আবার পুরান কথা লিখলাম(তুমি যা জিনিস গুরু..................)
তুই আজকাল কিপটা হইয়া গেছিস। অল্প কথায় কাম শেষ কইরা দেস।
hahahaha.... :)) =)) =)) ...... সহ্যের শেষ প্রান্তে গিয়া হাসি দিলাম ভাই.। চরম মজাক পাইছি.।
:shy:
ভাল লিখেছ দোস্ত ।। স্যার যে এত violent ছিল MCC তে আমরা টের পাইনাই ।
শেষদিকে এসে সব স্যারই কেমন যেন শান্তশিষ্ট হয়ে যান। কিন্তু প্রথম যৌবনে একেবারে যাকে বলে ‘এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়’ থাকে তো.
আমরা স্যারকে মনে হয় সেই সময়ে পেয়েছিলাম।
হাহাহা...এম্নিতে স্যার বেশি ঝামেলা করতো না :)) ...কিন্তু ক্ষেপে গেলে সে এক দেখার মতন দৃশ্য রে বাবা!!! 😛
কি জানি। আমারে দেখলেই মনে হয় স্যারের মাথা খারাপ হইয়া যাইতো। আব্দুল্লাহ্'র কথা তো বললামই।
হুম ।স্যারের রাগ উঠলে সেটা উত্টোরোত্তর বাড়ত।প্রথমে সিম্পলি শুরু হত পরে বাড়তে থাকত।
কী কারণে যেন আমাদের মর্তুজাকে প্রেপে এসে বললেন,তোমার সাহসের আমি তারিফ করি হে?এই কথা তিনি পুন পুন বলতে লাগলেন আর প্রতিবার বলার গতি স্লো হলো আর জোর বাড়তে লাগলো।শেষবারে একেবারে চিৎকার করে উঠলেন।
আরেকবার কেমিস্ট্রি ক্লাশে আমি একটু বাইরে তাকিয়েছিলাম তিনি বলে উঠলেন,ওদিকে কী ?রং তামাশা।কেমিস্ট্রি রং তামাশার ব্যাপার না ।বুঝেছো হে।
এমন সময় আমাদের রাসেল অবলীলায় বলে দিল স্যার কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ বলেছেন,বিদ্যা শিক্ষা করতে হবে আনন্দের সাথে।আর যায় কোথায় স্যার যেন উম্মাদ হয়ে গেলেন।ওফ।সেই স্মৃতি আমার চোখে ভাসে এখনও।