।১।
আমদের সময়ে কোরান তেলওয়াত প্রতিযোগিতা বলে একটা জিনিস ছিল। এর দায়িত্বে থাকতেন ইসলামিয়াতের আব্দুর রব স্যার। কলেজে যতো প্রতিযোগিতা ছিল এর মধ্যে এটাই সবচেয়ে বোরিং টাইপ। এমনিতেই মসজিদ খুব গুরুগম্ভীর জায়গা। খুব বেশি ফাজলামি দুষ্টামি করার সুযোগ নাই। তার উপর কোরান তেলাওয়াত। কয়েক ঘন্টা চুপ চাপ বসে থাকা ছাড়া আর কিছুই করার নাই।
সেবারও একই ঘটনা। একজন একজন করে তেলাওয়াত করছে আর বাকিরা সবাই ইচ্ছায় অনিচ্ছায় সেটা শুনে যাচ্ছে। আমরা কয়েকজন ফাজিল অবশ্য জুনিয়রদের পাঞ্জাবিতে গিট্টু দিয়ে সময় পার করার চেষ্টা করলাম, কিন্তু সেটাও আর কতক্ষণ?
এমন সময় একজনের তেলাওয়াত শেষ হলো। হঠাৎ কে যেন তালি দিয়ে দিল। ব্যাস আর যায় কোথায়। সবাই একসাথে তালি দেওয়া শুরু করল। এইবার সবাই একটু মজা পাওয়া শুরু করল। একজন করে তেলাওয়াত শেষ করে আর আমরা সবাই একসাথে তিন তালি মারি।
আব্দুর রব স্যার দেখলেন মহা সমস্যা। মসজিদে সবাই তিন তালি মারছে। তাও আবার উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবে। কিছু একটা তো করতে হবে। স্যার দাঁড়িয়ে বললেন
-কেউ তালি দিবে না। উৎসাহ দিতে চাইলে ‘মারহাবা’ বলবে।
এইবার সবাই আরো মজা পেলো। একজন তেলাওয়াত শেষ করল। আর আমরা সবাই একসাথে জোরে জোরে বললাম
-‘মারহাবা, মারহাবা মারহাবা’।
আওয়াজের চোটে এর পরে যে তেলাওয়াত করতে আসলো সে নার্ভাস হয়ে গেল। অর্ধেক সুরা বলে বাকিটা ভুলে গেল। আর কিছুই বলতে পারে না। বুকে হাত বেঁধে মাইকের সামনে চুপ চাপ দাঁড়িয়ে আছে। আমরা সবাই তার দিকে তাকিয়ে বললাম
-‘মারহাবা, মারহাবা মারহাবা’।
আব্দুর রব স্যার দেখলেন মহা সমস্যা। উনি আবার উঠে দাঁড়িয়ে বললেন
-কেউ ভুলে গেলে তাকে মারহাবা বলতে হবে না। কেউ ভুলে গেলে তখন সবাই চুপ থাকবে।
কিন্তু কে শুনে কার কথা। স্যারের কথা শেষ হওয়ার সাথে সাথে আমরা সবাই একসাথে বললাম -‘মারহাবা, মারহাবা মারহাবা’।
শুধু পিছন থেকে কে যেন একজন বলল ‘বহোত খুব’।
২।
বাংলার সৈয়দ নুরুল ইসলাম স্যার ছিলেন পুরোপুরি সাহিত্যিক। আমরা ক্লাস সেভেনে কলেজে গিয়ে শুনি ইতিমধ্যেই স্যারের অনেকগুলি বই প্রকাশিত হয়েছে। আমদের প্রথমে বিশ্বাস হয়নি। কারণ আমরা স্যারকে দেখি বিকাল বেলা স্যার সানগ্লাস চোখে মোটর সাইকেলে করে কলেজ চক্কর দেন। আমদের ফুটবল মাঠের পাশের রাস্তা দিয়ে শো শো করে সিলেট শহরের দিকে বেরিয়ে যান। এই রকম একজন যে সাহিত্যিক হতে পারে সেটা আমরা ধারনা করতে পারিনি। আমদের ধারনা ছিল কবি সাহিত্যিকরা আবার মোটর সাইকেল চালায় নাকি?
স্যারের বেশ কয়েকটা বই কলেজ লাইব্রেরিতে ছিল। খুঁজে খুঁজে আমরা সেই বইগুলি বের করে পড়ে ফেললাম। আমদের কাছে সবচেয়ে প্রিয় ছিল স্যারের ‘প্রহরী’ নামে একটা উপন্যাস। সাহিত্যের ভালো মন্দ বুঝার মতো বয়স অবশ্য তখনো আমদের হয়নি। ‘প্রহরী’ ভালো লাগার কারণ হচ্ছে এই বইটিতে কিছু রগরগে লাইন ছিল। আমরা পরমানন্দ নিয়ে লাইব্রেরি ক্লাসে গিয়ে ঐ বইটা খুঁজতাম। আমদের আগে সিনিয়র ব্যাচের ভাইয়ারাও যে এই বইটা অনেকবার পড়েছেন সেটা আমরা বুঝতাম কারণ এর বিশেষ বিশেষ লাইন গুলি লাল কালি দিয়ে আন্ডারলাইন করা ছিল। কেউ কেউ শুধু সেই লাল কালি দিয়ে দাগ দেয়া অংশ গুলি পড়তো। আমরা যারা নিজেদের একটু সাহিত্যবোদ্ধা মনে করতাম তারা পুরো বইটা পড়তাম, তারপর লাল কালির অংশ গুলি আরেকবার চোখ বুলিয়ে যেতাম।
সৈয়দ নুরুল ইসলাম স্যারের সবচেয়ে মজার ঘটনা হচ্ছে একবার উনি আমদের সিনিয়র এক ব্যাচের বাংলা পরীক্ষা নিয়েছিলেন। খাতা দেখানোর দিন ক্লাসে এসে সোজা এক ভাইয়া কে ডাকলেন। কাউকে কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়ে ইচ্ছামতো তাকে পিটালেন। প্রথমে বেত দিয়ে সেটা ভেঙে যাওয়ার পর হাত দিয়ে।
ঘটনা আর কিছুই না। স্যার রচনা লিখতে দিয়েছিলেন ‘আমার প্রিয় সাহিত্যিক’। ভাইয়া লিখেছেন – আমার প্রিয় সাহিত্যিক জনাব সৈয়দ নুরুল ইসলাম। উনাকে আমার ভালো লাগে কারণ উনি খুব সুন্দর মোটর সাইকেল চালান। সানগ্লাস চোখে দিয়ে মোটর সাইকেল চালিয়ে উনি যখন কলেজ ক্যাম্পাসে চক্কর দেন তখন উনাকে নায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনের মতো লাগে……..।
সেদিন আমরা বুঝলাম কবি সাহিত্যিকরাও মানুষকে পিটাতে পারেন।
=D> দোস্ত কঠিন লিখছ।আমরা বলতাম মারথাবা মারথাবা......
=D>
আমি একটা ব্যাপার খেয়াল করলাম.. শফি ভাই শুধু মন্তব্য করেই খালাস।
ভাইয়া আপনি লিখেন না কেন?
😀
এই শালা তুই এতদিন পর? দেশে আসতেছিস কবে?
মামা on line আছো নাকি এখন..................
হাহাহাহাহা..ফাট্টাফাটি.... =))
:)) ভাই আপনাকেও মারহাবা।
আপনারা জুনিয়রদের পাঞ্জাবীতে গিট্টু দিতেন কিভাবে? জুনিয়ররা কি পিছনে বসতো না??
আমদের কলেজে ক্লাস ১২ সবার পিছনে বসতো। তারপর ৭, ৮, ৯, ১০, ১১ এইভাবে।
পিছনে না বসলে নামাজের সময় কাঁঠাল চুরি করা যেতো না যে ।
=)) =)) =)) :)) :)) :))
ভাই বেশি বস হইছে।
আমরাও মসজিদে মারহাবা মারহাবা বলতাম । পরে বিকৃত করে "মাইর খাবা" "মাইর খাবা" বলা শুরু হলো ও এনিয়ে প্রচন্ড হাসাহাসি হলো । স্যারেরা পিছন থেকে কিছুই বুঝতে পারলো না। খালি তেলোয়াতকারী জুনিয়রটা ভয় পেয়ে গেলো 😀 :D:D:D
Nurul Islam Sir er khata ta akhon kothae ke jane......
Amar nam likha ache okhane..........
সেই রকম!
তারাবীর নামায কম্পোলসারী করার পর মসজিদে এত আকাম করছি আল্লাহ জানে কোন দোজখে যাই।
আর লাইব্রেরীতে সবার আগে গিয়ে দাগানো বই গুলাই খুঁজতাম।
একটা বই ছিল, নীল ছবি, মহেশ্বতা দেবী।
এই বইটা মনে হয় প্রথম দাগানো বই যেটা পড়ছিলাম।
নামের কারণেই বই হিট।
আমদের সময় আমদের সবার প্রিয় বই ছিল সৈয়দ শামসুল হকের ‘খেলারাম খেলে যা’ ।
পড়া আছে? নইলে পড়ে নিও। মজা পাবা।
লাইব্রেরিতে আমরা একটা বই প্রায়ই পড়তামঃ আহমদ ছফার 'গাভী বিত্তান্ত'। প্রচন্ড সুড়সুড়িদায়ক হাবিজাবি কাহিনী ছিল ওইটায়।
আমাদের মধ্যে আরেকটা ফেবারিট বই ছিল মোপাসার ছোট গল্প।
আর আমার পড়া জীবনের অন্যতম খাইস্টা বই আলাউদ্দীন আল আজাদের সম্পাদিত "খসড়া কাগজ" 🙂
আহা, দিনগুলা কি দুর্দান্তই না ছিল !!
সাতেও নাই, পাঁচেও নাই
জটিল ১টা বই। কলেজে এইটার ইস্যু করার সিরিয়াল অনেক লম্বা ছিলো ।
আমাদের লাইব্রেরীয়ান ছিল মাওলানা টাইপের মানুষ। ইস্যু করার সময় যখন তার হাতে বইটা দেয়া হইতো তার চেহারা হইতো দেখার মত। =))
সাতেও নাই, পাঁচেও নাই
শেষ লাইন টা পড়ে আর হাসি আটকানো গেলো না। খিক খিক :))
খসড়া কাগজ কি রগরগে একটা বই।
ভুলেই গেছিলাম বইটার কতা। >:)
অনেককিছু মনে পড়ে গেল।
কাম্রুল ভাই,
অনেক মজাক পেলুম...। 😀
‘বহোত খুব’ :))
হুমমমম, কিছু ভাল বই এর নাম পাওয়া গেল এই ব্লগটাতে 😀
x-( x-( x-( 😀 😀 😀 😛 😛 😛 🙂 🙂 🙂
Proud to be an ex-cadet..... once a cadet, always a cadet
=)) =)) :pira:
আমি তবু বলি:
এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..