যে ছিল দৃষ্টির সীমানায় : শাহনাজ রহমতুল্লাহ
“যে ছিল দৃষ্টির সীমানায়/ যে ছিল হৃদয়ের আঙিনায়/ সে হারালো কোখায় কোন দূর অজানায়/ সেই চেনামুখ কতোদিন দেখিনি……….” মিলনায়তন জুড়ে তখন পিনপতন নিস্তব্ধতা। বিষ্মিত শ শ মানুষ মুগ্ধ হয়ে তের বছর বয়সি এক বালকের কণ্ঠে বিরহ-বিষাদের প্রিয় গানটি শুনছে! আমাদের এই বালকটির নাম মাহবুবুল হক শিলার।
সময়টা ১৯৭৪ সাল শেষদিক। দিন-মাস মনে নেই। ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজের সপ্তম শ্রেনীর শিক্ষার্থীদের মেধার প্রদর্শনী হচ্ছে কলেজ মিলনায়তনে। খুবই পরিচিত গানটা গাইছিল শিলার। অদ্ভূত তার কণ্ঠ। কি একটা রহস্যময়তা, কেমন একটা জাদু খেলা করছিল তার কণ্ঠে! এরপর থেকে কলেজের সব অনুষ্ঠানে ওর গান গাওয়াটা নিয়মিত হয়ে গেল।
বন্ধুদের আর সবার মতো আমি ওই কণ্ঠ কখনোই ভুলবো না। এখনো এই ৩৬ বছর পরে প্রায়ই ওর কণ্ঠ, ওর গান আমার মাথায়, আমার স্মৃতিতে সময়ে-অসময়ে হানা দেয়। শাহনাজ রহমতুল্লাহ’র গাওয়া ওই গানটা আগে থেকেই আমার প্রিয় ছিল। এরপর শিলার তুই আমার প্রিয় গায়ক হয়ে গেলি।
শিলার বিষাদের গানই গাইতো বেশি। হয়তো অবচেতনভাবেই ওই বয়স থেকে ওর মধ্যে এক ধরণের বিষন্নতা কাজ করতো। আমরা যখন কলেজ ছেড়ে আসি, সম্ভবত তখনই শিলার গেয়েছিল বিখ্যাত নজরুল গীতি, “আমার যাবার সময় হলো দাও বিদায়”।
দাবি করতে পারবো না, আমি শিলারের ঘনিষ্ট ছিলাম। ৫৬ জনের প্রায় প্রত্যেকেরই নিজস্ব একটা না একটা বৈশিষ্ট্য ছিল। যারা ঘনিষ্ট ছিলাম সে সময় বা পরে যাদের সঙ্গে ঘনিষ্টতা বেড়েছে পথ-মত-পেশা নানা বৈচিত্র্য সত্ত্বেও তাদের অনেক কিছুই ভালো লাগে। এর বাইরেও কিছু বন্ধু থাকে যাদের শুধু একটা দিক, একটা বৈশিষ্ট্য থাকে বা তার সঙ্গে কোনো একটা মূহুর্ত সারাজীবনের জন্য হৃদয়ে গেঁথে যায়। শিলার ছিল এমনই একজন।
কলেজে থাকতেই শিলার তার বাবাকে হারিয়েছিল। তিন ভাই, এক বোনের সবচেয়ে বড় ও। কতোটা লড়াই করে, একটু একটু করে আমাদের মা শিলারসহ ছেলেমেয়েদের পড়িয়েছিলেন, বড় করেছেন তা গত ৩০ জুলাই শুক্রবার ওদের রায়েরবাজারের বাসায় গিয়ে প্রথম বুঝলাম। দীর্ঘদিন কানাডায় থেকে সম্প্রতি দেশে ফিরে এসে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগে যোগ দিয়েছে শাহীন। ঢাকায় এসেছিল কাজে। ওকে আটকে রাখলাম আমরা। মূলতঃ ওর তাগিদেই শিলারের বাসা আবিস্কার (!) অভিযানে গিয়েছিলাম।
শাহীনের সঙ্গে শিলারের বেশ ঘনিষ্টতা ছিল। যেতে যেতে পথে শিলারকে নিয়ে আমরা কথা বলছিলাম। কলেজ থেকে বেরুনোর পর শিলার বুয়েটে ভর্তি হয়। তারপর ওর সম্পর্কে তেমন খোঁজ রাখিনি। অল্প কয়েকজন বন্ধুর মধ্যে ও নিজেকে সীমিত করে এনেছিল। আসলে ওর বন্ধু কমই ছিল। একজন অন্তর্মুখী মানুষের ক্ষেত্রে যা হয় আর কি।
কলেজে থাকতেই শিলারের মধ্যে কিছু মানসিক সমস্যা তৈরি হয়েছিল। শাহীনের কাছে শুনলাম সেসব কথা। পরে বুয়েটে পড়ার সময় এই সমস্যাটা বাড়তে থাকে। বুয়েট থেকে বেরুনোর পর চরমে পৌঁছে। গত দু’সপ্তাহ ধরে আমাদের ফৌজদারহাটের ২১তম ব্যাচের গ্রুপ মেইলে শিলারকে নিয়ে আমাদের সবার স্মৃতিতে ভীষণ ঝড় বয়ে গেছে। সেসব মেইল পড়ে আরো নানা তথ্য জানছি ওর সম্পর্কে। এসব আমার অজানাই ছিল এতোদিন।
শিলারের সমস্যাটাকে চিকিৎসকরা কি বলবেন জানিনা, এক ধরণের মানসিক ভারসাম্যহীনতা বলে এখন মনে হয়। শাহীন বলছিল, শিলার একবার ওর বাসায় গিয়ে ওর তিনটি বই ছিড়ে ফেলেছিল। নিউজিল্যান্ড থেকে দোহা জানালো, রায়েরবাজার থেকে শিলার একবার ওদের সার্কিট হাউস রোডের বাসায় লুঙ্গি পড়েই চলে গিয়েছিল। আমার ছোট ভাই ফয়েজ জানালো, স্থাপত্য বিভাগের এক ছাত্রীকে একতরফা ভালোবেসে ক্যাম্পাসে রীতিমতো সমস্যা তৈরি করেছিল। ও যে একের পর এক সমস্যা তৈরি করে চলেছে, এই বোধটাই তখন তার নিজের মধ্যে কাজ করছিল না।
বুয়েট থেকে বেরুনোর বেশ কিছুদিন পর শিলার জানিয়েছিল, ওর সব পরীক্ষার সার্টিফিকেট হারিয়ে গেছে। পরে আমাদের দুজন বন্ধু ফৌজদারহাটে গেলে সেখানকার একাধিক শিক্ষক জানতে চেয়েছিলেন, শিলারের সমস্যাটা কি? ওরা অবাক হয়ে স্যারদের কাছে এমন প্রশ্নের কারণ জানতে চেয়েছিল। স্যাররা জানিয়েছিলেন, প্রিন্সিপাল বা ভাইস প্রিন্সিপালের নামে কলেজে একটা খাম পাঠিয়েছিল শিলার। প্রাপক খামটি খুলে দেখতে পান এর ভেতরে কুচি কুচি করে কাটা ওর সব সার্টিফিকেটের সঙ্গে একটা চিঠি। চিঠিতে শিলার লিখেছিল, “F…k your education.” ও আর সার্টিফিকেট তুলেনি। ফলে কোথাও চাকরির সুযোগ ছিল না। এক সময় ওর ছোট ভাই তুষার তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে শিলারকে একটা চাকরি দিয়েছিল।
এমন অবস্থায় মধ্যবিত্ত মানসিকতায় যা হয় তাই হলো। পরিবারের সবাই ভেবেছিলেন, ওকে বিয়ে দিয়ে দিলে সম্ভবত সমস্যাগুলো কেটে যাবে। কিন্তু বিয়ের অল্প কিছুদিন পর ওর স্ত্রী ওকে ছেড়ে যায়। তারপর ওর দাদি ওকে আবার অন্য একজনের সঙ্গে বিয়ে দেন। শিলারের একমাত্র ছেলে শিশিরের জন্ম নেয় ১৯৯৪ সালের ২১ আগস্ট। শিশিরকে সম্ভবত ২/৩ বার দেখেছিল ওর বাবা। কিন্তু ওর মানসিক সমস্যার কারণে শিশিরের মা ছেলেকে নিয়ে রংপুরে বাবার বাড়ি চলে যান। আর ১৯৯৫ সালের ২৬ জানুয়ারি নিখোঁজ হয় আমাদের বন্ধুটি। গত ১৫ বছরে ওর কোনো খোঁজ মেলেনি। ও বেঁচে আছে নাকি নেই, কেউ জানেনা, জানা যায়নি। ওর বিয়ের এবং শিশিরের জন্ম পরবর্তী সময় সম্পর্কে খালাম্মা আর ওদের একমাত্র বোন সুরমা আমাদের নানা তথ্য জানালেন।
জীবনের শেষ সময়গুলো শিলার একরকম বন্ধুহীন অবস্থায় কাটায়। ওর যারা ঘণিষ্ট ছিল শাহীন, দোহা- তারা তখন উত্তর আমেরিকা প্রবাসী। ওদের মতো আমরা বাকিরাও এই খবর জেনেছি অনেক পর। নিখোঁজ বন্ধুকে নিয়ে এতোদিন আমাদের কোনো মাথাব্যথা ছিল না। বাস্তবতাটা আমরা মেনে নিয়েছিলাম। আমরা বন্ধুরা শুধু হিসাব রাখছিলাম, “হারাধনের ৫৬ ছেলের একটি মৃত, একটি নিখোঁজ; বাকি রইলো ৫৪”! হঠাৎ করেই আমাদের মধ্যে আলোড়ন তুললো কানাডা প্রবাসী মাসুদ। গত মাসে ও দেশে এসেছিল। খুঁজে খুঁজে রায়েরবাজারে শিলারদের বাসাটা বের করেছে ও। তারপর গ্রুপে মেইল এলো।
মাসুদের দেখানো পথে গত সপ্তাহে শিলারদের বাসায় শাহীন আর আমি গেলাম। মাঝখানে বহুবছর সময় পেরিয়েছে। জায়গাটা অনেক বদলে গেছে। নতুন নতুন ভবন, হাট-বাজার দোকানপাট গজিয়েছে, ডোবা, নালা, নদী ভরাট করে জনবসতি গড়ে ওঠেছে। ফলে বাসা খুঁজে পেতে শাহীনকে বেশ সমস্যায় পড়তে হলো। শেষ পর্যন্ত মিললো। শিশির তখন বাসায় ছিল না। শিক্ষকের কাছে পড়তে গিয়েছে। আমরা খালাম্মা, সুরমা, শিলারের সবচেয়ে ছোট ভাই রুমি, ওর বউ- ওদের সঙ্গে গল্প করছিলাম। শিলার নিখোঁজ হওয়ার প্রায় তিন বছর পর ওর ছোট ভাই তুষার তার ভাবী রুবি আর শিশিরকে রায়েরবাজারের বাসায় নিয়ে আসে। রুবি এখন অসুস্থ বলে রংপুরে বাবার বাড়ি গেছে। রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে গেছে ওর। ওখানে চিকিৎসক বোন রুবির শারীরিক পরীক্ষাগুলো করিয়ে অসুস্থতার কারণ বের করবে।
কিছুক্ষণ পর শিশির এলো। নবম শ্রেনীর শিক্ষার্থী এই ছেলেটি ক্লাসে বরাবরই প্রথম হয়। শিলারের সঙ্গে ওর চেহারায় একটাই মিল খুঁজে পেল শাহীন। চোখের ভ্রুটা বাবার মতো পেয়েছে ও। আমাদের দেখে আর পরিচয় জেনে শুরুতে সম্ভবত হতভম্ব হয়ে গিয়েছিল ও। বিষ্ময় আর নিস্পৃহতা মিলে ওর চোখে-মুখে অন্যরকম একটা ছাপ দেখলাম। ভাষায় বোঝানো কঠিন। বয়সন্ধির এই বালকটি আমার ছেলের কাছাকাছি বয়সি। স্বাভাবিক হতে অনেকটা সময় লাগলো ওর। সুরমা জানালো, শিশির প্রায়ই বাবা সম্পর্কে জানতে চায়।
শাহীনের কথা জানিনা, ওই দিনের পর থেকে নিজের মধ্যে ভীষণ একটা অপরাধবোধ কাজ করতে শুরু করলো আমার। ১৫ বছরের বেশি হয়ে গেল শিলার নিখোঁজ। এতোগুলো বছর পর তাও শাহীনের তাগিদেই শিলারের বাসায় গেলাম। কেন নিজের মধ্যেই এই তাগিদটা আগে অনুভব করিনি! শিলারকে খুঁজে বের করার কোনো চেষ্টা আমরা বন্ধুরা কেউ করিনি। যদি মেনেও নিই, সেটা পারতাম না; তারপরও আমরা বন্ধুরা কেন ওদের পরিবারের পাশে দাঁড়ালাম না? তাহলে হয়তো খালাম্মা এবং ওদের পরিবারটা অনেক সাহস পেত, ভরসা পেত।
শিলার নিখোঁজ হওয়ার পর সম্ভাব্য সব জায়গায় ওকে খোঁজা হয়েছে। পুলিশ, হাসপাতালের মর্গ, নদী-নালা, স্বজনদের বাসা- কোথাও ওকে পাওয়া যায়নি। একটা জলজ্যান্ত মানুষ হঠাৎ গায়েব হয়ে গেলো! না মানুষটা, না ওর কাপড়-চোপড়, চশমা, সেন্ডেল বা পায়ের জুতো, ঘড়ি- কিছুই মিললো না!
নানা প্রশ্ন উঁকি দেয় আমাদের মনে। ওকি ইচ্ছে করেই নিজেকে আড়াল করে ফেলেছে? জীবনের শেষদিকে শিলার নাকি মসজিদ-মাজার, মন্দির, গির্জা-মিশন; এমনসব জায়গায় বেশি ঘুরাঘুরি করেছে। ওকি এমন কোনো দলের সঙ্গে মিলে গেছে? অখ্যাত-প্রত্যান্ত কোনো এলাকায়, কোনো গ্রামে গিয়ে ধর্ম বা এমন কিছু প্রচার করে বেড়াচ্ছে? এমন কোথাও গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে, যেখানে কেউ ওকে খুঁজে পাবেনা। ওকি বেঁচে আছে? নাকি আত্মহত্যা করেছে? অথবা কেউ ওকে গুম করে দিয়েছে! পরিচিত কেউ অথবা কোনো ছিনতাইকারী, খুনি?
খালাম্মা আর সুরমার কাছে শাহীন ওইদিন শিলারের শেষ দিনগুলোর কথা জানতে চেয়েছিল। বলেছিল, “খালাম্মা, আমরা তো এখন বড় হয়েছি। নিজেদের যোগ্যতা, যোগাযোগ বেড়েছে। আমরা কি শিলারকে আরেকবার খুঁজে দেখবো?” সায় দিলেন তিনি। এর আগে রায়েরবাজার যাওয়ার পথেই শাহীন এ নিয়ে আমার সাথে কথা বলছিল। সব ধরণের অশুভ আশংকার কথাও বলছিল্। আমি বললাম, যদি এমন কোনো সত্য বেরিয়ে আসে, যা আমাদের বা শিলারের পরিবার অথবা ওর বউ-ছেলের কাছে বিষয়টা অস্বস্তির হয়? শাহীন আমাকে “পরিণতিবাদী” বলে আখ্যা দিল। আমি বললাম, হয়তো সত্য ভীষণ কঠোর হতে পারে। আমাদের ‘তদন্ত’ হয়তো গত ১৫ বছর ধরে চলা ওদের আপাতঃ ঢেউহীন পরিবারে নতুন অশান্তির জন্ম দিতে পারে। হয়তো সে সত্য শিলারের ছেলের জন্য বড় সংকট হয়ে উঠতে পারে। কে জানে! বিতর্কের এক পর্যায়ে আমি নিজেই স্বীকার করলাম, হ্যা আমি পরিণতিবাদী। আমি প্রায় ক্ষেত্রেই যে কোনো কাজের সম্ভাব্য ফলাফল নিয়ে আগেই বেশি ভাবি। তবে আমার এই ভাবণার ধরণটাই সঠিক এমন দাবি করবো না।
তবে শিলারের ক্ষেত্রে আমি নিজের অবস্থান পরিবর্তন করতে রাজি, যদি ওদের পরিবারের সবার তাতে সায় থাকে। কারণ গত ১৫টি বছর আমরা যাকে নিয়ে ভাবিনি, যে পরিবারের সংকটের সময় তাদের পাশে দাঁড়াইনি, সেখানে হঠাৎ ঝড় তুলে দিলে সামাল দেওয়ার দায় কি আমরা নেব? কি জানি হয়তো আমি বেশি নেতিবাচক ভাবছি। হয়তো উল্টোটা হতে পারে।
আমরা কয়েক বন্ধু মিলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, শিশিরের এবারের জন্মদিনটা আমরা ২০ আগস্ট শুক্রবার ওদের সঙ্গে পালন করবো। শিলার তুই জেনে নিস, দেরিতে হলেও আমাদের অপরাধের জন্য ক্ষমা চাইছি বন্ধু। আমরা তোর বন্ধুরা সত্যি দুঃখিত।
বন্ধু হারানোর বেদনা এই অল্প সময়েই এত বার এসে আঘাত করেছে যে এখন আর কোন অনুভুতিই আসে না........
অনেক কিছুই অনেকবার লিখলাম আবার ব্যাকস্পেস মারলাম......
যেখানেই থাকুক ভাল থাকুক, আর দেখুক আপনারা তাকে একেবারেই ভুলে যান নি.......
রেজওয়ান, লেখাটা তৈরি করতে আমার বেশ কয়েকদিন লেগেছে। এর আগে সম্ভবত এতো সময় নিয়ে লিখিনি। লিখতে লিখতে বারবারই কিবোর্ডে আঙুল থমকে গেছে। বারবার ব্যাকস্পেস, ডিলিট, আবার নতুন করে লিখা......... এভাবেই এগিয়েছে। গত কয়েকটা দিন এ নিয়ে এতোটা আবেগাক্রান্ত ছিলাম যে, লিখেও তৃপ্তি পাইনি।
না, আর ভুল হবে না। শিলারকে খুঁজবো, ছেলেকে যদি মা শেষ পর্যন্ত না পান; উনি অন্ততঃ জেনে যাবেন তার আরো অনেকগুলো ছেলে আছে।
"মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"
আপনাকে গত বেশ কদিন একারনেই দেখেছি লগিন আছেন কিন্তু মন্তব্য নেই বা অন্য কিছুও নেই.....
আমি হয়ত কিছুটা হলেই বুঝতে পারছি ভাইয়া, কারন নিজের বন্ধু হারিয়ে আমিও ৩/৪ টা ব্লগ এভাবেই লিখেছি.........যাই লিখি না কেন, মনে হয়েছে মনের কথাটা বলা হল না......
মন খারাপ লাগতেসে... কেন এরকম হয় জীবন! শিশিরের মনের কষ্টটুকু অনুভব করে আরো বেশি খারাপ লাগতেসে-- বাবাকে কত আপন করে পেতে ইচ্ছা করে!!
ক্যাডেট বন্ধুরা আরো আগে খুঁজলে হয়ত এমন হত না। আপনাদের উচিত ছিলো আরো আগে খোঁজা, সত্যি অপরাধ হয়েছে... ...
আসলেই মাহমুদ, আমাদের ভীষণ অপরাধ হয়েছে। এই অপরাধবোধটাই গত দুই সপ্তাহ ধরে আমাদের কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে।
"মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"
শিলারের কি হলো তা আমাদের অনুসন্ধান করা উচিৎ। আমি মনে করি তা আমাদের দায়িত্ব, আর এ দায়িত্ব ওর পরিবার/ছেলে কে সাহায্য করার চেয়ে বড়।আর শিলার একটি বিষয়বস্তু। যদি দস্তভস্কি হতাম তাহলে ওকে নিয়ে বড় মাপের সাহিত্য সৃষ্টি করতে পারতাম
শাহীন, তুইই তো আমাদের মধ্যে ওকে অনেক ভালো করে জানিস। ওর সমস্যাগুলো, এর গভীরতা, ওর সরলতা; ওর চরিত্রের সব বাঁক, টানাপড়েন- তুই কাছ থেকে দেখেছিস। আসলেই একটা উপন্যাসের সব উপাদান ওর মধ্যে ছিল, আছে। সময় নিয়ে লেখাটা শুরু করে দে।
আর হ্যা, আমি তোর সাথে এখন একমত। পরিনতি যখন সামনে আসবে, তখন না হয় সামলাবো। শিলার সম্পর্কে সব সত্য জানতে হবে। চল শুরু করি।
"মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"
মনটা খারাপ হয়ে গেল।
দোয়া করি যেন তিনি ভাল থাকেন; তার পরিবার ভাল থাকে।
টিকে থাকুক আপনাদের বন্ধুত্ব।
চ্যারিটি বিগিনস এট হোম
বড্ড বেশি স্পর্শকাতর, ভীষণ রকম সরল একটা মানুষ ছিল। কোথায় লুকিয়ে আছে কে জানে। ধন্যবাদ আহমদ।
"মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"
মন ছুয়ে গেল। নিকটজনের হাড়িয়ে যাওয়া খুব কষ্টের ।
সহানুভূতির জন্য ধন্যবাদ আজাদ।
"মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"
প্রিন্স্যুস্যার...
অসাধারণ একটি লেখা দেয়ায়... এবং সহজ স্বীকারোক্তি প্রকাশ করায় লেখার গূণগত মান অসাধারণ হয়েছে।
থ্যাঙ্কু... :salute:
দোয়া করি, আপনাদের (এবং অবশ্যই আমাদের) ভাইটিকে আপনারা খুঁজে পান...
Proud to be an ex-cadet..... once a cadet, always a cadet
জুলহাস, তোমার লেখাটা পড়েছি। তবে এখন মন্তব্য করবো না।
শিলার ছায়ানটে গান শিখেছিল। একেবারে ভিন্নরকম একটা কণ্ঠ ছিল ওর। বিকেলে ব্লগটা পড়ে বন্ধু ইকরাম (শিলারের একই হাউজের) জানালো, ও চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেছিল্। মুক্তিযুদ্ধের পর নির্মিত বিখ্যাত চলচ্চিত্র ওরা ১১ জন-এ শিলার ছিল নায়িকা শাবানার ছোট ভাই। ওর বাবা সম্ভবত এফডিসিতে চাকরি করতেন। অর্থাৎ শিল্প-সংস্কৃতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন। বাবার মৃত্যুর পর ওদের পরিবারে ভীষণ ঝড় বয়ে যায়। ম যে কিভাবে সেটা সে সময় সামাল দিয়েছেন!
"মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"
লাবলু,
শিশিরের ছবিটা বড্ড মনে দাগ কেটেছে। অন্য দশটা ১৫ বছরের ছেলের মত না। মনের বয়েসে যেন সে অনেক বড় হয়ে গেছে।
তোমার আশক্ষার কারণ কিছুটা বুঝতে পারি। ভাল করতে যেয়ে কারো ক্ষতি হোক এটি চাও না। বুয়েটে যখন ছিল তখন তার রুম-মেট এবং অন্য পরিচিতদের সাথে যোগাযোগ করতে পার কিনা দেখ। যদি সম্ভব হয় তার স্ত্রীদের সাথে যোগাযোগ করে দেখ কোন নতুন কিছু জানতে পার কিনা।
আমি বুয়েটে পড়ার সময় আমার ৩ বছরের জুনিয়ার খালেদ নামে এক জনের সাথে পরিচয় হয়েছিল। তার মত ব্রিলিয়ান্ট ছেলে আমি দেখিনি। আলাপের প্রথম কিছুদিন আমাকে আপনি সম্মোধন করার পর কখন যে সে তুমি এবং তুইতে নেমে এসেছিল বুঝতে পারিনি। আমরা দু'জনেই ডিবেট করতাম। তার বাব ছিল এক জন উচ্চ পদস্ত সরকারী চাকুরে। এক বন্ধের পরে এসে শুনলাম - নিজের বাড়ীতে বন্দুকের গুলিতে মাথা উড়িয়ে দিতেছে সে। জীবনে বেচে থাকাটা অর্থহীন - এটা বেশী তাড়াতাড়ি বুঝে গিয়েছিল সে। সে ধরনের একটা নোটও বোধ হয় লিখে গিয়েছিল। কেন যেন শিলারের কথাতে আজ বহু দিন পরে খালেদের নাম মনে এলো।
সাইফ ভাই, শিশির সম্পর্কে ঠিকই ধরতে পেরেছেন। আর আমাদের ভয় সেখানেই। ওকে স্বাভাবিক বয়সে, কৌশরে ফিরিয়ে আনাটা জরুরি। ও নাকি সারাক্ষণ পড়াশুনা নিয়ে থাকে। এটা তো সুস্থতা না। এই বয়সি একটা বালক, হাসবে, খেলবে, গান গাইবে- কৌশরটা উপভোগ করবে।
শিলারের ছোট ভাই রুমি আজ ফোন করেছিল। ও জানালো, বিশেষ করে খালাম্মা আমাদের পেয়ে ভীষণ খুশি হয়েছেন। উনাকে যদি কিছুটা আনন্দে রাখা যায়, সেটাও একটা সুখের বিষয় হবে। আরো ভালো খবর জানালো, রুবি অর্থাৎ শিলারের স্ত্রীর বড় কোনো অসুস্থতা নেই। রক্তে লালকনিকার অভাব আছে।
"মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"
লাভলু ভাই, খুব ইমশনাল হয়ে পড়লাম লেখাটি পড়ে। বিশেষ করে শিশিরের ব্যাপারে। শিশিরের জন্য যদি কিছু করতে পারি খুব ভাল লাগবে।
You cannot hangout with negative people and expect a positive life.
শিশিরকে তার কৌশর ফিরিয়ে দেওয়াটা বড় কাজ হবে জিতু। বাসা কাছাকাছি হলে না হয় আমার ছেলের সঙ্গে বন্ধুত্ব করে দিতাম।
আর বাকিটা আমরা ওর বাবার বন্ধুরা আছি না!
"মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"
বেটার লেট দ্যান নেভার ভাইয়া, আর শিলার ভাইয়ার পরিনতি যদি এমন দেখেন যে পরিবার সহ্য করতে পারবে না সেটা, তখন তা উনার পরিবারের সংগে আর নাইবা শেয়ার করলেন। শুধু বন্ধুরাই জানলেন ব্যাপারটা।
পরামর্শ দিয়ে ফেললাম মনে হল, বেয়াদবী মনে হলে নিজ গুণে ক্ষমা করবেন এই ব্যাপারে নিশ্চিন্ত হয়েই বলেছি। 🙂
পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না
ফয়েজ, পরামর্শ দেওয়ার বয়স তো তোমার হয়েছে। তাই এ নিয়ে দুশ্চিন্তা করো না। ধন্যবাদ টিপসের জন্য। তারপরও ভয় একটাই, সত্য যদি ভীষণ কঠিন হয়, যা কল্পনাও করা যায় না!!
"মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"
"আজো কেউ জানে নাতো কোথায় সে হয়েছে নিখোঁজ,
জানি সে কোথায়
এই শহরের কোন বাগানে সে হয়ে আছে ফুল"
- একেবারেই অপ্রাসঙ্গিক গানটা, কিন্তু এই লাইনকটা কাল পড়ার পর থেকে বারবার মাথায় ঘুরছে।
[ভেবেছিলাম কোন প্রকার রেটিং করবো না, কেউ হয়তো এক দিয়েছেন তাই না পেরে পাঁচতারা জানিয়ে গেলাম।]
আমার বন্ধুয়া বিহনে
হ্যা রাব্বী, ফেসবুকে তোমার মন্তব্য পড়েছি। তুমি যে বেশ কিছুদিন ধরে আমাকে 'ফলো' করছো তাও জেনেছি। ধন্যবাদ।
শিলারের যে ছবিটা এই পোস্টে আছে, সেটা আমাদের খুব পরিচিত না। ওর একটা চশমা ছিল্। আর ওকে কখনো চশমা ছাড়া দেখেছি বলে মনে পড়ে না। ফর্সা, মাঝারি উচ্চতা, স্বাভাবিক ওজনের চশমা পরা শিলার দেখতেও ভীষণ সহজ-সরল ছিল। ওর কণ্ঠের মতো মুখটাও আমাকে গত কয়েকদিন ধরে ভীষণ টানছে।
"মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"
শিলার ভাই ফিরে আসুন। প্রিয়জনদের সঙ্গে এত অভিমান ভালো নয়। বন্ধুদের সঙ্গে তো নয়ই।
লাবলু ভাই
বন্ধুদের নিয়ে লেখায় আমি এমনিতেই আবেগপ্রবন হয়ে পড়ি। কোন কারণ ছাড়াই চোখ ঝাপসা হয়ে আসে। এটা পড়ে আর সামলাতে পারিনি। বারবার মন্তব্য করতে এসে তাই ফিরে যেতে হয়েছে।
মিরাকল-টিরাকলে বিশ্বাস নেই। তারপরও কেন জানি খুব ভাবতে ইচ্ছে করছে, শিলার ভাই ভালো আছেন। হঠাৎ একদিন আপনার সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলবেন, বন্ধু কী খবর বল?
---------------------------------------------------------------------------
বালক জানে না তো কতোটা হেঁটে এলে
ফেরার পথ নেই, থাকে না কোনো কালে।।
কামরুল, ও যদি বেঁচে থাকে, তাহলে মনে হয়না বলবে "বন্ধু কী খবর বল"। হয়তো বলবে, "আল্লাহ, ভগবান, যীশু আপনাদের মঙ্গল করুন"। তবুও ভাবতে ভালো লাগে, ও আছে কোথাও লুকিয়ে। একদিন ঠিকই পাবো ওকে। যেভাবেই থাকুক, যেখানে থাকুক- বন্ধুটা যেন বেঁচে থাকে, ভালো থাকে।
"মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"
:hatsoff: :hatsoff:
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
শিশিরের জন্যেই যত চিন্তা হচ্ছে ... ... বাবা-মা না থাকার কষ্টটা হয়ত অনুভব করতে পারিনা, তবে কষ্টটা কেমন হয় - সেটা জানি ... ... আমার দাদা ৭১ এ পাকিদের হাতে হঠাৎ নিহত হওয়ার ব্যাপারটা আমার বাবা কিছুতেই মেনে নিতে পারেননি, তখন বাবা মাত্র ক্লাস সিক্সের ছাত্র ... ... এরপর খুব দ্রুতই তার বড় রকমের মানসিক পরিবর্তন ঘটে ... ... ... ...
শিলার ভাইয়ের এত বড় একটা ঘটনার পরে তার ছেলে শিশিরের মানসিক অবস্থাটা কেমন হতে পারে, সেটা সহজেই অনুমেয়। আসলে "বাবা" শব্দটাতো শিশিরের কাছে অচেনাই রয়ে গেল ... ... ... কিছু কিছু "জীবন" বিধাতা কেন যে এমন নির্মমভাবে রচনা করে - পারলে কেউ আমার হয়ে বিধিতাকে এই প্রশ্নটা কোর ... ... ...
শিলার ভাই ফিরে এসে দেখুন আপনার ছেলেটা কত্ত বড় হয়ে গেছে...প্লিজ ফিরে আসুন
লাবলু ভাই,
আপনার লিখাটা কেন যেন শত চেষ্টা করার পরও macbook থেকে খুলতে পারছিলাম না. পড়তে দেরী হয়ে গেল. লিখাটা অদ্ভুতভাবে আমার মনকে ছুয়ে দিল.
ইন্টারনেট এর সুবাদে অনেকের সাথেই নিয়মিত যোগাযোগ হচ্ছে. তারপরও কয়েকজনের খবর একদমই জানিনা. শুধু একটাই প্রশ্ন মনে....." সবাই ভালো আছে তো?"
শিশিরের উজ্জ্বল জীবন কামনা করছি.
সানা,
তোর লেখাটা পড়ার পর মনের ভেতরের কষ্টটা আরও একটা বড় দীর্ঘশ্বাস হয়ে বেরিয়ে এলো. শিলারের হারিয়ে যাওয়া নিয়ে মাঝে মাঝে আমরা বিভিন্ন সময় চট্টগ্রামে এবং আমার নর্থ আমেরিকায় অবস্থান কালীন সময়ে কয়েক জনের সঙ্গে আলাপ হয়েছিল কিন্তু ওর সন্ধান বের করার জন্য ফলপ্রসু কিছু একটা করার মত সংঘ বদ্ধ হতে পারিনি. সর্বশেষ গোল্ডেন জুবলী রিউনীয়নে শেষ রাতেও আমরা কিছু একটা করার জন্য একমত হয়েছিলাম. কথা মালা অনেকতো হলো এবার ওর সন্ধানে কার্যকরী একসন plan তৈরী করে কাজে নেমে পড়তে হবে. নইলে শুধু দীর্ঘশ্বাস ফেলাই সার হবে. ও আমার রুমমেট ছিল. aami একাজে সর্বাত্মক সহযোগিতা করতে প্রস্তুত. আমি পেশাজীবী লেখক নই কিংবা সাংবাদিক ও নই তাই ভাষা সুন্দর হলনা বলে দুঃক্ষিত. তোর লেখা নাড়া দিয়েছে মনে ও মননে.
dr মইনুদ্দিন
neurosurgeon
২১ বাতচ ৭৪ - ৮০
এই লেখায় কি কমেন্ট দিবো জানা নাই।
ভাইয়া ফিরে আসুন এই কামনায়
দাদা আপনার সাথে যোগাযোগের কোন মাধ্যম দিলে খুব ভালো হতো । আমি আপনার সাথে যোগাযোগ করতে চাই । উদ্দেশ্য লেখালিখি বিষয়ক ।
অসাধারণ লিখছেন লাবলু ভাই।
আর যা নিয়ে লিখছেন তা নিয়ে কি বলবো বুঝতে পারি না।
এই লেখাটায় অনেকবার এসে ফিরে গেছি, কোন মন্তব্য করতে পারিনি।
শিলার ভাই- আপনি ফিরে আসুন তাড়াতাড়ি।
অনেক আগে থেকেই শিলার ভাইয়ের গান এবং উনার হারিয়ে যাওয়া নিয়ে লাবলু ভাইয়ের টুকটাক মন্তব্য সিসিবি'তে এবং ফেইসবুকে চোখে পড়ছিলো। রিউইনিয়নে গিয়ে সম্ভবতঃ সোহেল ভাই সহ ২১ ব্যাচের আর্কিটেক্টদের নিয়ে কথা বলার সময়ও একবার উনার নাম শুনেছিলাম লাবলু ভাইয়ের মুখেই। ফেইসবুকেই শিলার ভাইকে নিয়ে লাবলুভাইদের ব্যাচমেটদের ইদানিংকার চিন্তাভাবনা এবং তৎপরতাও হৃদয়দিয়ে অনুভব করতে পারছি কিছুটা হলেও। খুব মন খারাপ হলো লেখাটা পড়ে। জানিনা সামনে আপনারা উনার পরিবারের জন্য কোন শুভসংবাদ নিয়ে আসতে পারবেনকিনা, তবে সবসময়ই প্রার্থনা করছি শিলার ভাইকে যেন উনার এই বন্ধুগুলোই খুঁজে বের করে বুকে জড়িয়ে ধরতে পারেন।
খুব করে একটা মিরাকল চাইছি কি? 🙁
সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!
🙁 🙁 🙁 আল্লাহ ভাইয়া কে জলদি সুস্থ করে দেক এই ই কামনা :no: :no: :no: খুব খারাপ লাগছে
লেখাটা পড়ে তো ভাষা হারিয়ে ফেললাম মনে হছে সিনেমার কাহিনীর মত যদি শিলার ভাই ফিরে আসত উনি যেখানেই থাকুক ভালো থাকুক এই কামনা করি