সভ্যতা

১.
পূবের আকাশ রক্তাভ। সূর্য উঠি উঠি।দূরে প্যারেড পিটির মৃদু আওয়াজ । এটা নবীন অফিসারদের ট্রেনিং এরিয়া। মেজর সাহেব বেড়িয়েছিলেন প্রাতঃভ্রমণে। ইদানিং ভূড়িটা একটু বেড়েই যাচ্ছে বুঝি! সকালের মৃদু হন্ঠনটাকে তাই লঘু দৌড়ে রূপান্তরের চেষ্টায় আছেন।

তবে আজকের দৌড়টা বোধকরি একটু বেশিই হয়ে থাকবে। বেশ ঘাম ঝরেছে। এখন বেশ হাপাচ্ছেনও। আজ নাভর্টা একটু বেশিই সচল। অবচেতন মন আজ বড় উত্তেজিত। চেতন মনের কাছে সে খবর হয়ত নেই।

হাপ ধরায় রেইনট্রিটার গোড়ায় জিড়োবেন বলে একটু থামলেন।আর তখনই খেয়াল করলেন গাছগুলির রং উঠে গ্যাছে। না গাছের আসল রং নয়। ক্যান্টনমেন্ট এরিয়ায় গাছের নিচে যে কৃত্তিম রং লাগানো হয়।মুহূর্তে অবচেতন মনের উত্তেজনা চেতনার পথ ধরে ক্রোধে রূপ নিল। নন কমিশন এক সাজের্ন্টকে ডেকে দিলেন এক রাম ঝাড়ি।
`চোখের জায়গায় কি ব*স নিয়ে ঘোরো? দেখো না গাছগুলো ন্যাংটো হয়ে আছে? এটা কোনো সভ্য এরিয়া হল? আজকের মধ্যে সব গাছগেলোকে হ্যাফপ্যান্ট পড়া অবস্থায় দেখতে চাই’।

২.
রাত সাড়ে বারোটার মত বাজে। টাকিলাটা তেমন একটা চড়েনি এখনও। পানের ক্ষেত্রে মেজর সাহেব কথনওই সীমা অতিক্রম করেন না। হালকা নেশা ভাবটা ভীষণ এনজয় করেন তিনি। এই মুহূর্তে তার মত আরো আনেক অফিসারই পান করে নিয়েছেন। কেউ বেশি কেই কম। দেশ সেবার একটা অংশ হিসেবে তারা এসাইনমেন্টে যাচ্ছেন।

এসাইনমেন্টটা তেমন কঠিন কিছুনা। ট্রেনিং এর অংশ হিসেবে নবীন নারী ক্যাডেটদের একটা বিশেষ দূবর্লতা থেকে মুক্ত করবেন তার। হ্যা, বলা তো যায়না কখন যুদ্ধ বেধে যায়! তখন যদি এই নারী ক্যাডেটদেরও সেই যুদ্ধে যোগ দিতে হয়! যদি তারা শত্রুর হাতে ধরা পড়ে যায়? তখ্য আদায়ের জন্য যদি তারা শারিরীক নির্যাতন করে? তবুও মুখ না খুললে যদি গণ ধর্ষণ করা হয়? তখন সহ্য হবে তো? তাই আগেই তাদের প্রস্তুত করা দরকার। সামান্য একটা দূর্বলতার জন্য দেশকে তো আর ঝুঁকির ভিতর ফেলা যায় না!

৩.
দেশের দায়িত্ব পালনে মেজর সাহেবের ভূমিকা যখন আসল তখন দু’জন সৈনিক শেষ গাছটায় হাফপ্যান্ট পড়াচ্ছে।

* লেখাটি সম্পূর্ণ কাল্পনিক।বাস্তবের সাথে এর কোনো মিল নেই। আর বাংলাদেশের কোন ঘটনার সাথে তো নয়ই।

* ইদানিং অনুগল্পের ধুম পড়েছে ব্লগে। তাই আমিও :grr:

৩,২১৮ বার দেখা হয়েছে

৫৩ টি মন্তব্য : “সভ্যতা”

  1. কামরুল হাসান (৯৪-০০)

    তোর কাছে প্রত্যাশার মাপকাঠিটা অনেক উঁচুতে থাকে। সেটা আমি যেমন জানি তুইও জানিস। সিসিবির প্রায় সবাই জানে।

    তোর অন্য গল্পের তুলনায় এটা কিছুই হয়নি। 🙁
    আমরা 'বউ কথা কউ'র গল্পকার টিটোকে চাই।


    ---------------------------------------------------------------------------
    বালক জানে না তো কতোটা হেঁটে এলে
    ফেরার পথ নেই, থাকে না কোনো কালে।।

    জবাব দিন
  2. আমিন (১৯৯৬-২০০২)

    টিটো ভাই আমি এমনিতেই আপনার বড় ফ্যান। একবার আপনার পায়ের ধূলা চাইতে গিয়া রবিন ভায়ের নাম নিয়া ফালায়া কি কাণ্ডই না করলাম। এক্সপেরিমেন্টাল লিখা হিসবে ভালৈ লেগেছে। এরকম গল্প আরো পড়তে চাই।

    জবাব দিন
  3. সানাউল্লাহ (৭৪ - ৮০)

    ফাঁকিবাজি করলা টিটো!! না হয় চাইয়া আরো ৪৮ ঘণ্টা সময় নিতা........ নাহ্ ইম্প্রেশন খারাপ হইয়া যাইতাছে।

    আগামী শুক্রবারের মধ্যে একটা গল্প চাই। যাতে মন ভরে, তৃষ্ণা মেটে। এইবার এক সপ্তাহ সময়....... :grr: :grr: :grr:


    "মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"

    জবাব দিন
  4. মাসরুফ (১৯৯৭-২০০৩)

    টিটো ভাই,

    গল্পটা বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বসিয়ে পড়তে গিয়ে মনে হচ্ছিল জাফর ইকবাল টাইপের লোকদের কথা যারা মনে করে আর্মি মানেই অনুভূতিবিহীন দানব-বিশেষ(আমি উনার সবকিছু খারাপ বলছিনা,খালি বলছি ক্যাডেট,আর্মি এদের নিয়ে অতি পক্ষপাতদুষ্ট আচরণের কথা-৫০ টা ক্যাডেট কলেজ নিয়ে কি ধুন্ধুমারটাই না হইল এই লোকের কারণে!)

    সঙ্গত কারণেই অবাক হয়ে গেছিলাম-এইটা কি গল্প লিখছে টিটো ভাই!!

    ডিস্ক্লেইমারটা পইড়া মাথায় ঢুকল। 🙂 🙂

    অনুগল্প হিসেবে ঠিকাছে-কিন্তু বস আমরা বউ কথা কও টাইপ চাই-একুশ কে নিয়ে পড়া আমার সেরা গল্প মানিক বন্দ্যেপাধ্যায়,শওকত ওসমান বা জহির রায়হানের কোন লেখা নয়-আপনার ওই গল্পটা।

    অপেক্ষায় রইলাম।

    জবাব দিন
  5. মনসুর আহমেদ (৯৪-০০)

    বন্ধু তোমার লেখা পড়লাম,ভাল বা মন্দ কোনটাই বলব না তবে লেখার মধ্যে অন্তরের গহিনে লুকিয়ে থাকা যে ঘ্রিনার ইঙ্গিত দেখলাম তার মুল খোজার জন্য তোমার অন্য সবগুলি লেখা পড়লাম।না উৎস পাইনি কিন্তু কেন যেন মনে হল আমার এই বন্ধুটির মাঝেও আমাদের তথাকথিত বুদ্ধিজিবীদের মত একটি প্রতিস্ঠান এর প্রতি সবার মাঝে এক ধরনের hatred infuse করার প্রবনতা । জানি তুমি disclaimer দিয়েছ অন্য সব লেখক রা যেভাবে দেয় ,আর আমি এটাও জানি লেখক রা পোস্টার লেখক নয় যে সবকিছু সরাসরি লিখবে!

    জবাব দিন
    • টিটো রহমান (৯৪-০০)

      @মনসুর
      না ..আর্মি নিয়ে আমার কোনো ঘৃণা বোধ নেই। সবচেয়ে বড় কারণ তারা আমারই কাছের বড় ভাই ..কেউ আবার বন্ধু বা ছোট ভাই। বাইরের অনেকে না জানলেও আমি তো জানি যে তারা কতটা কষ্ট করে। তাই লেখাটা ঘৃণা নিয়ে লেখা নয়। একটা আইডিয়া প্রকাশ করতে যেকোনো এলিমেন্টই ব্যবহার করা যায়।

      তবে কেউই শতভাগ পূর্ণ এটা বলা যায় না। কিছু দুর্বলতা সবারই তো থাকে।

      আর একটা ব্যাপার আমার সবসময়ই মনে হয়েছে ....শিক্ষকদেরও আর্মিদের সমান ফ্যাসিলিটিস থাকলে দারুণ হত


      আপনারে আমি খুঁজিয়া বেড়াই

      জবাব দিন
  6. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    বাংলাদেশের কোন ঘটনার সাথে তো নয়ই

    জেনে ভাল লাগল যে বাংলাদেশের বাইরেও গাছকে হাফপ্যান্ট পরানো হয়...


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন
    • মাসরুফ (১৯৯৭-২০০৩)

      আকাশদা-আসলেই হয় কিন্তু।ভারত বেড়াতে গিয়ে চন্ডীগড় সেনানিবাসে আর ওদের গুর্খা রেজিমেন্টের ট্রেনিং সেন্টারে এই জিনিস দেখছিলাম।

      আর ইয়ে-একটা কথা বলেই ফেলি।ডিস্ক্লেইমার দিলেও আমার কাছে মনে হয়েছে এই গল্পটায় আর্মিকে অকারণেই দানবচরিত্র আরোপ করা হয়েছে-যার কারণটা ঠিক বুঝতে পারছিনা।হয়তো স্যাটায়ারিক বা আয়রোনিক মনোভাবের প্রকাশ-কিন্তু পৃথিবীর কোন দেশের সেনাতেই এই প্র্যাকটিস আছে বলে আমি জানিনা(আমি জানিনা মানেই যে তা থাকবেনা এমনটি বলছিনা তবে এত ভয়াবহ কিছু থাকলে মিডিয়াতে অন্ততঃ কিছুটা হলেও আসাই স্বাভাবিক-যা এখনো চোখে পড়েনি।

      ইরাক যুদ্ধে "ফ্রেন্ডলি ফায়ার" অর্থাৎ পারস্পরিক সম্মতিতে যৌন মিলনের ফলে নারী সেনার গর্ভবতী হবার ঘটনা আছে-আছে বিচ্ছিন্ন ধর্ষণের ঘটনাও।তবে এরকম "ট্রেনিং" আকারে কিছু ঘটেছে বা ঘটে কিনা তা সেনাবাহিনীর কেউই ভাল বলতে পারবেন।

      সেনাবাহিনী কর্তৃক সাধারণ মানুষদের স্ত্রী-কন্যাদের ধর্ষণের বর্বরোচিত ঘটনাও প্রায় প্রতিটা যুদ্ধেই ঘটে-আর সে কারণেই এ গল্পে নৃশংসতাটা এসেছে এমনটাও হতে পারে।

      আমি জানি এটা নিছক গল্প-কিন্তু তার পরেও একজন পাঠক হিসেবে এবং আমার পরিচিত অনেক অনেক মানুষ সেনাবাহিনীতে থাকার কারণে গল্পটা "হজম" করতে খানিকটা কষ্ট হচ্ছে আরকি।

      তবে এতে লেখক বা কারো কিছু যায় আসেনা-আমি তা ভালমতই বুঝি এবং সম্মান করি।

      টিটো ভাই কিছু মনে করবেন না-ডিসক্লেইমার না দিলেই বরং মনে হত গল্পের প্রতি আপনার কমিটমেন্ট শতভাগ পূর্ণ হয়েছে।অবশ্য এটা আমার ব্যক্তিগত মতামত।

      জবাব দিন
      • কাইয়ূম (১৯৯২-১৯৯৮)

        উহু, অনেক কিছু নিয়েই দ্বিমত করছি।

        ডিস্ক্লেইমার দিলেও আমার কাছে মনে হয়েছে এই গল্পটায় আর্মিকে অকারণেই দানবচরিত্র আরোপ করা হয়েছে-যার কারণটা ঠিক বুঝতে পারছিনা।
        আমি জানি এটা নিছক গল্প-কিন্তু তার পরেও একজন পাঠক হিসেবে এবং আমার পরিচিত অনেক অনেক মানুষ সেনাবাহিনীতে থাকার কারণে গল্পটা “হজম” করতে খানিকটা কষ্ট হচ্ছে আরকি।
        ডিসক্লেইমার না দিলেই বরং মনে হত গল্পের প্রতি আপনার কমিটমেন্ট শতভাগ পূর্ণ হয়েছে।

        আর্মিকে কারণ অকারণ যেকারণেই হোক গল্পে একটা দানবীয় আকার দেয়া হয়েছে। সেটা দিলে সমস্যাটা কোথায় বুঝতে পারছিনা। পৃথিবীর কোন আর্মিতে এই প্র্যাকটিস থাকুক বা না থাকুক একজন লেখক তার কল্পনায় একটি রেজিমেন্টাল নিষ্ঠুরতা 'সভ্যতা'র স্যাটায়ারে দেখাচ্ছেন তাতে আমি ব্যক্তিগতভাবে পাঠক হিসেবে কোন সমস্যাই দেখছিনা।

        আমাদের ব্যক্তিগত পরিচয়ের পরিমন্ডলে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশায় অনেক কাছের মানুষ আছেন, এখন কোন গল্পে যদি আমি এই পেশার কাউকে বা কোন পেশাকে লেখকের কল্পনায় সিক কোন কাজে ইনভল্ভ দেখি তাতে হজমে হালকা কষ্ট হতে পারে। কিন্তু সেটিকে হাইলাইট করে লেখকের কল্পনায় বাধ আমি হয়তো সাধবোনা।

        আর শেষে এসে ডিস্ক্লেইমার দিয়ে লেখক কিভাবে গল্পের প্রতি নিজের কমিটমেন্টকে শতভাগের নিচে নামিয়ে আনলেন এটিও ঠিক বোধগম্য হলোনা 🙁


        সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!

        জবাব দিন
        • কাইয়ূম (১৯৯২-১৯৯৮)

          অনেক আগে দেখা 'ন্যাকেড উইপন' নামক একটা হংকং থ্রিলার মুভিতে সিমিলার থীম দেখেছিলাম কয়েকটা মেয়েকে এক রহস্যমানবীর গোপন ট্রেইনিং সেন্টারে কমান্ডো স্টাইলে ট্রেইনিং এর শেষ পর্যায়ে এই ট্রিট্মেন্ট দেয়া হয়।


          সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!

          জবাব দিন
        • মাসরুফ (১৯৯৭-২০০৩)

          কিন্তু সেটিকে হাইলাইট করে লেখকের কল্পনায় বাধ আমি হয়তো সাধবোনা

          পাঠকের মন্তব্যে লেখক আহত হতে পারেন(বা নাও পারেন)-কিন্তু তাতে তাঁর কল্পনায় বাধ রচনাই যে মন্তব্যের মূখ্য উদ্দেশ্য এমনটা ধরে না নেয়াটাই শ্রেয়-বিশেষ করে যখন পরিষ্কার ভাষায় লেখকের প্রতি সম্মানবোধটা উল্লেখিত হয়েছে।

          আর শেষে এসে ডিস্ক্লেইমার দিয়ে লেখক কিভাবে গল্পের প্রতি নিজের কমিটমেন্টকে শতভাগের নিচে নামিয়ে আনলেন এটিও ঠিক বোধগম্য হলোনা

          উপমহাদেশীয় সেনাবাহিনীর ক্ষেত্রে চোখে পড়ার মত ট্রেডিশন "গাছে রঙ করা" উল্লেখ করার পর যখন লেখক শেষে দাবী করেন যে বাস্তবের সাথে এর কোন মিল নেই তখন,আন্দালিব ভাই যেমনটি বলেছেন,লেখকের খানিকটা অস্বস্তি চোখে পড়ে।পাঠক হিসেবে আমার মনে হয়েছে এটি অনাবশ্যক-বিশেষ করে টিটো ভাইয়ের মত শক্তিমান লেখকের কাছে তো অবশ্যই।শতভাগ না পাওয়া বলতে এই অস্বস্তিবোধটাকে বুঝিয়েছি।পরিশেষে আবারো বলি-এটি ব্যক্তিগত মতামত এবং দ্বিমত অবশ্যই থাকতে পারে।

          জবাব দিন
  7. আন্দালিব (৯৬-০২)

    গল্পের অন্য সবকিছু বাদ দিয়ে যদি খালি বক্তব্য নিয়ে চিন্তা করি, তাহলে সেটা ফুটে নাই পুরোপুরি। বৈসাদৃশ্য হিসেবে আরো কড়া উদাহরণ আমি নিজেই জানি, কিন্তু তারপর আপনার ডিসক্লেইমার পড়ে মনে হলো আপনি নিজেও কিছুটা অস্বস্তিবোধ করছেন। এটার তো দরকার নাই, টিটো ভাই। তা ছাড়া, এমন ঘটনা বাংলাদেশ আর্মিতেও ঘটতে পারে, বিদেশের আর্মিতেও ঘটতে পারে। সেটা আসলে গল্পের প্রেক্ষিতে অপ্রয়োজনীয় চিন্তা।

    তবে আপনার বর্ণনা বা গঠন অতিসরল হয়েছে এখানে। আমি মনে করি আপনি এটাকে নিয়ে ভাবেন, যদি মনে করেন, আবার লিখতে পারেন। অনেক সময়ে একটু ভিন্নচোখে দেখলে লেখারও উপকার হয়! 🙂

    জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।