বহু ঝামেলা করে কখন যে চন্ডীগড়ে পৌঁছলাম, এতদিনে আর মনে নেই। চন্ডীগড় ভারতের দুটি রাজ্যের রাজধানী, হরিয়ানা আর পাঞ্জাব। এ শহরের মূল বৈশিষ্ট্য হল, এর পুরোটাই পরিকল্পনা করে গড়ে তোলা। স্থাপত্যের মানুষদের খুব কাছের একটি নাম হলো লি কর্ব্যুসিয়ের। শুরুটা ফরাসী, কিন্তু পরে পুরো বিশ্বের স্থাপত্যের ধারা বদলে দেয়াতে অবদান রাখায় স্থাপত্যের মানুষজন তাঁকে বিশাল গুরু মানেন। এই বিখ্যাত স্থপতির নকশায় গড়ে উঠেছে চন্ডীগড় শহর। কর্ব্যুসিয়ের এর বৈশিষ্ট্য ছিল যে তিনি অত্যন্ত ডিটেইলে কাজ করতে পছন্দ করতেন। আপনি যদি কোনদিন এ শহরে যান, অলসভাবে রাস্তায় হাঁটতে গিয়ে এ শহরের ম্যানহোলগুলির দিকে তাকিয়ে দেখেন, দেখবেন প্রতিটি ম্যানহোলের ঢাকনাও ডিজাইন করা!
শহরের মানচিত্রটি দেখুন, পুরোটাই ছোট ছোট ব্লকে ভাগ করে করা, স্থাপত্যের ভাষায় একে বলে ‘গ্রিড-আয়রন প্যাটার্ন’।
ভারতের স্বাধীনতার পর পরই উনিসশো পঞ্চাশ সালে এ শহর গড়ে ওঠে। চন্ডীগড়ে দেখার মত জায়গা হলো রক গার্ডেন, সুখা লেক, রোজ গার্ডেন, পার্লামেন্ট ভবন আর হাইকোর্ট। ইচ্ছে হলে পুরো শহরটাও ঘুরে ফিরে দেখতে পারেন, তবে খুবই হতাশ হবেন। বারে বারে ঢাকা কিংবা কোলকাতার সাথে তুলনা চলে আসবে, কারণ এ শহরে প্রাণ নেই একদমই। রাস্তায় খেলে বেড়ানো দুষ্ট কোন বাচ্চা নেই, টিংটিং হর্ন বাজানো সাইকেল ওয়ালা নেই, ঝালমুড়ি ওয়ালা, প্রেমিক-প্রেমিকা, খবরের কাগজ-কিছুই নেই। মনে হবে আমি যেন সাজানো গুছানো এমন এক রাজ্যে চলে এসেছি যেখানে দৈত্যেরা সবাইকে খেয়ে শেষ করে দিয়েছে।
আমরা প্রথমে গেলাম রক গার্ডেনে। রক গার্ডেন হলো অদ্ভুত ধরণের কিছু পাথরেরর সংগ্রহশালা, এতে আরও আছে পাথর আর এখানে ওখানে ফেলে দেয়া জিনিসপাতি দিয়ে বানানো অসংখ্য মজার মজার ভাস্কর্য। চল্লিশ একরের এই পুরো বাগানটি আসলে ঝর্ণা, বিভিন্ন ধরণের গাছ, উঁচু নিচু পথ আর গেট সম্বলিত একটি গোলকধাঁধা, যার পুরোটাই বানিয়েছেন নেক চাঁদ।
নেক চাঁদ ছিলেন একজন সরকারী রোড ইন্সপেকটর। কাজের ফাঁকে ফাঁকে তার সখ ছিল অদ্ভুত অদ্ভুত পাথর সংগ্রহ করা। এছাড়াও এখান ওখান থেকে ফেলে দেয়া মাটির হাঁড়ি, কিংবা চুড়ি…ইত্যাদি হেন জিনিস নাই যা তিনি সংগ্রহ করেননি। সাতান্ন সাল থেকেই তিনি এসব দিয়ে বিভিন্ন ভাস্কর্য বানানো শুরু করেন। কিন্তু এদেরকে রাখবেন কোথায়? সুখা লেকের পাশে তাঁর খুব প্রিয় একটি জায়গা ছিল, এখানে তাঁর এই কাজগুলো করতেন তিনি। পিছনের বন জঙ্গল আর এপাশের শহরের মাঝখানে একটা বাফার বা ট্রানজিশনাল এই জায়গাটিতে সরকারী আইন মতে কোন স্থাপনা বা কিছুই বানানো যাবে না। তাই তিনি এই কাজটি করতেন অত্যন্ত গোপনে। ৭৫ সালে প্রথম যখন তাঁর এই কাজকর্ম কতৃপক্ষের নজরে আসে, ততদিনে তিনি ১২ একর জায়গা জুড়ে সুরঙ্গ কেটেকুটে এক গোলকধাধা তৈরি করে রেখেছেন, যার প্রতি বাঁকে বাঁকে অসংখ্য ভাস্কর্য, ঝর্ণা। নাচিয়ে, গাইয়ে, ভারতীয় ঐতিহ্যধারী পুতুল, মায় বান্দর পর্যন্ত আছে!
বাঁয়ের এই ঘরে বসে বসেই নেক চাঁদ তার অধিকাংশ কাজগুলো করেছেন।
নিয়মানুযায়ী কর্তৃপক্ষের এই বাগান ভেঙ্গে ফেলার কথা…কিন্তু চন্ডীগড়ের অধিকাংশের মত এ বাগানটি রক্ষার পক্ষে গিয়েছিল, তাই নেক চাঁদ এ যাত্রা বেঁচে গেলেন। ৭৬ সালে সাধারণের জন্য উন্মুক্ত হলো এই বাগানটি। নেক চাঁদকে ৫০ জন সাহায্যকারী দেয়া হলো, যেন তিনি আরও যত্ন করে গড়ে তুলতে পারেন তার এই বাগান। কিছু বেতনও জুটলো তার কপালে। নেক চাঁদ শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে ফেলে দেয়া জিনিসপাতি দিয়ে নতুন উদ্যমে শুরু করলেন বাগানের কাজ।
একা একা বিশাল এই ভাস্কর্যের বাগান কিভাবে যে নেক চাঁদ গড়ে তুলেছিলেন, সেটা একটা বিষম আশ্চর্যের বিষয়। আর মজার বিষয় হলো প্রতিটি ভাস্কর্যই কোন না কোন শিল্পবর্জ্য বা ফেলে দেয়া জিনিস থেকে তৈরি। চন্ডীগড়ে রক গার্ডেন মিস করা একটা আফসোসের ব্যাপার, এইটা কেউ কইরেন না।
ছবিসূত্রঃ ১। নেটবাজী, ২,৬। উইকি কমন্স, ৫। আজরিন আলম।
যাক ! অবশেষে ৪ বের হল।
যাই , এখন পইড়া আসি......... 😀
ফাষ্টু হইলাম নাকি ???? 😀
🙂
স্যাম্পু, লেখা সাবলীল চলছে। সাথে ছবিগুলো বোধহয় ভ্রমণ কাহিনীকে আরো জীবন্ত করেছে।
অফটপিকঃ গোপন সূত্রে জানতে পারলাম, আপনি নাকী আমার উপ্রে রাগ কর্ছেন? 🙁
আমি তবু বলি:
এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..
হ করসি, এইবার যা, সুপারম্যানের মতন বাস্কেটবল গ্রাউন্ডে দশ চক্কর দিয়ে আয়।
শেষ করে বলে যাইস ক্যান রাগ করসি।
😀
"মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"
পুরাটা পইড়া আর ছবিগুলা উপভোগ কইরা আসতে আসতে ধরা.............. B-)
"মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"
:grr: :grr:
বাহ। এই পর্বটাও ভাল লাগলো। মন দিয়ে পড়তেছি। পড়ার সাথে সাথে ঘুরান্তি হয়ে যাচ্ছে! 🙂
থেঙ্কু আন্দা ভাই 🙂 (সম্পাদিত)
সুন্দর ট্রাভেলগ হয়েছে।
:thumbup:
আর্কিটেক্ট আফাগো, কর্বুসিয়ের আঙ্কেলরে নিয়া আরেকটু বেশি কইরা লেখতি পার্লামেন্ট বিল্ডিংটার ছবিটবি দিয়া B-)
জমা জুরির আগে ৩৬ দিন শেষ কইরা দেশে ফিরতে পারবি কিনা ভাইবাইতো টেনশন লাগতাসে ...
সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!
চোখে পানি দিয়া এক্কারে ফ্রেশ হইয়া আসলাম; তাও তো ভুল দেখতাছি মনে হয়। কাইয়ুম ভাইয়ের নাম দেখায় ক্যান? :grr: :grr:
আমি তবু বলি:
এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..
চামে আর্কিদির সাথে ইন্ডিয়া ঘোরা হয়ে যাচ্ছে...একটু সো-লো-লি হচ্চে, বাট হচ্চে তো... 🙂
নেক চাঁদ বাংলাদেশে এইরকম কিছু করলে 'কর্তৃপক্ষ' তাঁর কি হাল করত ভাবছি... 😕
পরবর্তীর পর্ব সিসিবির একযুগ পূর্তি উৎসবের আগেই দেবার জন্য অনুরোধ জানিয়ে গেলাম... 😀
ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ
দৈত্যের প্রতি বিরক্তিতেই কী চন্ডিগড়ের বর্ণনা কম? 😀
নেক চাঁদের মতো পাবলিক হৈতে মঞ্চায় 🙁
এইবার পরের পর্ব দে 😀
চমেতকার! লেখা এবং ছবি। তবে একটু ফাঁকিঝুকি ব্লগ, এই যা 🙂
আমার বন্ধুয়া বিহনে
অনেক ভাল লাগল আপা 🙂 ওই বাগানে যেতে ইচ্ছে করছে !