পুবের মানুষ যখন পশ্চিমে – ৭


পূবের মানুষ যখন পশ্চিমে এমনিতেই একটি সিরিজ লেখা। তবে আজকের পর্বটি গত পর্বের ধারাবাহিকতা। গল্প একবার শুরু করলে শেষ হতে চায় না। লেখা শুরু করবার আগে আমি নিজেও জানি না যে আমার মধ্যে এতো গল্প জমে আছে। কেন আছে এর পেছনের কারণটি খুঁজে পেতে লক্ষ্য করলাম এই জীবন আমাকে অনেক রকম বৈচিত্র্যের মধ্যে দিয়ে ভ্রমণ করিয়েছে। জ্ঞান হবার পর থেকেই নানান রকম মানুষ আর ঘটনা এবং দুর্ঘটনা দেখে চলছি। সবকিছুই দেখেছি নিঃস্পৃহ ভাবে – দূর থেকে। তার কারণ আমি কখনও কোন পর্বের কেন্দ্রীয় চরিত্র ছিলাম না। আমাকে কেউ খেয়াল করছে না এমন একটা ধারণা নিয়েই আমি বড় হয়েছি। জীবনের পরবর্তীতে এটাই আমার স্বভাবে পরিণত হয় – ঘটনার কেন্দ্রবিন্দুতে না থাকা। আমি বৈচিত্র্য সন্ধানী। তবে তা খুঁজে নিই খুব নিস্পৃহভাবে, নীরবে, কাউকে কোনভাবে বিরক্ত না করে। এই যেমন বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়টুকু ছিল একই সাথে দীর্ঘ এবং বৈচিত্র্যহীন। তখন আমরা মিরপুরে থাকতাম। মাঝে মধ্যেই মিরপুর বার নাম্বার থেকে লাল রঙ্গের দোতলা বাসে উঠে পড়তাম। এমনভাবে সীটটা ঠিক করতাম যাতে আমি কিছুটা আড়ালে থাকি আবার কে উঠছে আর কে নামছে তাদেরকেও দেখা যায়। এভাবে মিরপুর থেকে গুলিস্তান পর্যন্ত যেতাম। আবার আরেক বাসে করে গুলিস্তান থেকে মিরপুরে ফিরতাম। এরকম কাজ আমি এখনও করি। তবে অন্য ফর্মে। এই আমেরিকাতে প্রায় সব জায়গাতেই স্বেচ্ছাসেবকদের দরকার হয়। অনেক প্রতিষ্ঠান তো স্বেচ্ছাসেবকদের উপর ভিত্তি করেই চলে। এরকম অনেক জায়গায় আমার কাজ করা হয়েছে। জানা হয়েছে অনেক গল্প। অপেক্ষায় আছি পাখী হওয়ার। দেখতে চাই পাখীর চোখে এই পৃথিবীকে। অনেকটা ‘Jonathan Livingston Seagull’ এর সেই সীগ্যালটার মতো।


গত লেখায় ডালাসের কথা ছিল। ডালাসের দ্বিতীয় স্টপেজ হলো আমার আরেক আত্মীয়। ধরা যাক তার নাম টম। সমর্পকে উনি আমার মামা এবং জাতে বাংলাদেশি হলেও উনার আসল নামটা কিন্তু আমেরিকান। এই মামার মা আমার আম্মার খালা। একমাত্র খালা। সেই গাদা গাদা সন্তান জন্মদানের যুগেও আমার নানীরা ছিলেন মাত্র তিন ভাইবোন। আর এই তিনজনেরই প্রত্যেকের পরবর্তীতে চারটি করে সন্তান হয়েছিল। সেই ব্রিটিশ আমলে নানীরা দুই বোনই লাইগেশন করিয়েছিলেন। চিন্তাভাবনায় সমসাময়িক মুসলিম সমাজের তুলনায় উনারা ছিলেন বেশ অগ্রগামী। অন্যদিকে আমার আব্বারা ছিলেন মাত্র দুই ভাইবোন। সেটা অবশ্য প্রাকৃতিক নিয়মে। কারণ আমার দাদি আর ফুপু দুজনকেই সময়ের তুলনায় চিন্তাভাবনাতে অনেক পেছানো ছিল। পরবর্তীতে যখন অনেক মানুষ দেখলাম তখন অবশ্য বুঝেছিলাম উনারা পেছানো নয়, উনারা আসলে সমসাময়িকদের মতোই ছিলেন। জন্মের পর থেকেই দেখে এসেছি আম্মার খালা আর আমাদের পরিবারটি খুব ঘনিষ্ঠ। দু’পরিবারের মধ্যে খুব আসা-যাওয়া ছিল। হয়তো এটার একটা কারণ আমরা বনানীতে থাকতাম আর উনারা গুলশানে থাকতেন। গুলশানে উনাদের বাড়িটি ছিল দেখার মতো। প্রায় দু’বিঘার উপর। ভেতরে একটা সুইমিং পুল ছিল। আর এমন কোন গাছ নেই যে সে বাসায় ছিল না। অবশ্য প্রায় সব প্রধান প্রধান ফলের গাছ আমাদের বাসার বাউন্ডারির মধ্যেও ছিল। শৈশবে আমার আম-জাম খাওয়া হতো গাছের নীচ থেকে কোচর ভর্তি করে ফল কুড়িয়ে কুড়িয়ে। পেয়ারা খেতাম সরাসরি গাছে উঠে। আর কাঁঠাল গাছে উঠে পাড়তাম মাচা। এরা হচ্ছে কাঁঠালের বাচ্চা – সদ্যই কুঁড়ি ফুটে কাঁঠালের আকৃতি পেতে শুধু করেছে। দৈর্ঘ্যে হয়তো হবে এক আঙ্গুলের সমান। এদেরকে ডলে পিষে লবণ, মরিচ মিশিয়ে ভর্তা বানাতাম। এই ভর্তা বানানো শিখেছিলাম আমার ফুপাত বোনের কাছে। ছোটনানীর মতো আমাদের সবচেয়ে কাছের আরেকটি পরিবার ছিল ফুপুর পরিবার। ফুপু হচ্ছে আব্বার একমাত্র বোন। উনি থাকতেন গ্রামে। স্কুলে বড় কোন ছুটি থাকলে সাথে সাথেই আমাকে ফুপুর বাড়িতে রেখে আসা হতো। রেল স্টেশন থেকে নেমে মেঠো পথ দিয়ে নেমে পাক্কা দু’মাইল হাঁটতে হতো। মধ্যে দিয়ে একটা বাঁশের সাঁকো পাড় হতে হতো। মনে আছে ছোটবেলায় আমার সবচেয়ে পছন্দের জায়গা ছিল ফুপুর বাড়ি। দ্বিতীয় পছন্দ ছোটনানীর বাড়ি। দু’জায়গাতেই প্রাণ জুরে দৌড়ানো যেত। সে তুলনায় আমাদের বাসা ছিল অনেক ছোট। মাত্র দশ কাঠা। অবশ্য ঢাকা শহরের বাস্তবতায় এইটুকু অংশকে এখন অনেক বড় শোনায়। এই বাস্তবতাকেও অনুধাবন করতে পেরেছিলাম সময়ের সাথে সাথে, খুব স্বাভাবিকভাবে। পরবর্তীতে আমাদের অবস্থায় অনেক পরিবর্তন এসেছিল। ছোটনানীদেরও। একটা পর্যায়ে আমাদের দু’পরিবারেরই প্রধান সোর্স অব ইনকাম ছিল সেই বনানী-গুলশানের বাড়িগুলো।
এবার আমেরিকার কথায় আসি। টম মামা আর মামির নিজস্ব ব্যবসা আছে। ক্লিনিকের ব্যবসা। মামি চিকিৎসক। আর মামার এমবিএ – স্বভাবে জাত ব্যবসায়ী। সেই সতের আঠারো বছর আগে, ১৯৯৬ সালের দিকে, আমেরিকাতে চিকিৎসকদের চাকরি পাওয়া সহজ ছিল না। পেলেও খুব প্রত্যন্ত অঞ্চলে চাকরি করতে যেতে হতো। সেসময় মামা-মামি ডালাসে এসে উনাদের প্রাইভেট ক্লিনিক খোলেন। মামি ডাক্তারি করতেন আর মামা ক্লিনিক ব্যবস্থাপনা আর একাউন্টিং দেখতেন। ১৯৯৮ সালের ডিসেম্বরে আমি যখন প্রথম ডালাস যাই তখন সদ্যই উনারা ব্যবসাটা গুছিয়ে নিয়েছিলেন। এখন তো তা আরও প্রসারিত হয়েছে। এখন উনারাই অন্য চিকিৎসকদের চাকরি দাতা। পনের বছর আগে যখন মামা-মামির বাসায় এসেছিলাম তখন আমি সদ্য বাংলাদেশ থেকে আগত। আমেরিকার যাই দেখি তাতেই মুগ্ধ হই। পনের বছর আগে ঢাকা শহরে তেমন ঝকমারি বিপণী বিতান ছিল না। তখনকার লেটেস্ট শপিং মল ছিল ইস্টার্ন প্লাজা। আর গুলশানের আড়ংটা সবে মাত্র চালু হয়েছিল। আমরা তখন ইতিমধ্যেই বনানী থেকে হিজরতে মিরপুরে থাকতে শুরু করেছি। কোরাইশদের ভয়ে নয় – অর্থনৈতিক কারণে। আমাদের বনানীর বাসার বিদেশী ভাড়াটিয়া সময় মতো আম্মার ব্যাংক একাউন্টে বাড়িভাড়ার টাকা জমা দিত। তাই দিয়ে আমাদের সংসার চলতো। মিরপুরে তখন পাঁচকাঠার প্লটে প্রতিটা ফ্লোরে ঠেসেঠুসে দু’টো করে ফ্ল্যাট বানানো। বাড়ির চারপাশে ফল-ফলাদির গাছ, সামনে খোলা জায়গা, তাতে মালীর হাতে যত্নে বেড়ে উঠা ফুলের বাগান তখন রূপকথার মতো শোনায়। আমাদের অব্যবহৃত গাড়িটা অকেজো হবার ঠিক আগ দিয়ে বিক্রি করে দেওয়া হয়। আমি তখন পাবলিক বাসে যাতায়াত করি। সেসময়ই বাসে খুব ভিড় হতো। অনেক সময় সীট না পেয়ে মাথার উপরে রড ধরে দাঁড়িয়ে মিরপুর-টু-নীলক্ষেত যেতে হতো। সেই সময়টাতেই শিখে যাই কোন বদলোক বদ মতলবে, আমাকে রিয়েল এস্টেট কিম্বা তেঁতুল মনে করে, এদিক-ওদিন খোঁচাখুঁচি করার চেষ্টা চালালে তাকে কিভাবে চোখ রাঙ্গিয়ে ধমকে দিতে হয়। সময়টা নব্বই দশকের প্রথম ভাগ। বিএনপি তখন ক্ষমতায়। বোধহয় সে সরকারের মেয়াদের শেষদিকে মোর্শেদ খান ঢাকা শহরে লাক্সারি বাস সার্ভিস চালু করেন। কিন্তু কিছুদিন পরে মিরপুর রুট উঠিয়ে নেওয়া হয়। এই রুটে নাকি খুব চাঁদাবাজদের উৎপাত ছিল। গতবার দেশে গিয়ে সেই মিরপুরকে দেখতে খুব ঝকঝকে লাগলো। আমার তারুণ্য বেলা কেটেছে মিরপুরে। ভাগ্যিস। ততদিনে বনানী-গুলশানের বাল্যবন্ধুদের দেখলে না ঘরকা না ঘাটকা বলে মনে হতো। আমার তরুণ বেলার বন্ধুরা অধিকাংশই মিরপুরের। আমরা সব বুয়েট বাসে একসাথে যাওয়া আসা করতাম। অনেকে একই ডিপার্টমেন্টে পড়তাম। মিরপুর তখন অসম্ভব সুন্দর একটি জায়গা। খোলামেলা। বিশেষ করে মিরপুর বারোর দিকটা। আমাদের মধ্যে একজন ছিল মহা পার্টিবাজ – বন্ধু অন্ত প্রাণ। ওর বাসায় প্রায়ই আড্ডার আসর বসতো। সে আসরে ওর আম্মা এসে আমাদের খোঁজ খবর নিয়ে যেতেন। তখন মধ্যবিত্ত সমাজে ছেলেমেয়েদের বন্ধুত্ব হচ্ছে বিষয়টি অতো স্বাভাবিক ছিল না। আর আমি ছিলাম বড়বোনের প্রভাবে বেড়ে উঠা। বড়বোন আবার দাদির মতো মহা রক্ষণশীল। আবার ছোটবেলায় দেখেছি টম মামাদের তারুণ্যের সময়টা। সেখানে তারা ঠিকই ছেলে আর মেয়েতে বন্ধুত্ব করছে। হই-হুল্লোড় করছেন। আমারও তাদের মতোই হল্লা-কল্লা করতে ইচ্ছে করে আবার কী একটা ব্যাপার জানি পেছনে টেনে রাখে। সব মিলিয়ে আমি হলাম মাঝামাঝি কিছু একটা। তাও তো আমার ছেলেদের সাথে অনেক মেশা হতো। কারণ ছেলেদের সাথে না মিশলে দিন-দুনিয়া সম্পর্কে কিছুই জানা যায় না। আমার আগ্রহটা ছিল সে জায়গাতেই। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা আর আমাদের কতটুকু শিক্ষিত করে? যতটুকু করে তা দিয়ে বড়জোর একটা চাকরি যোগার করা যায়। ব্যাস ঔ পর্যন্তই। একটা ডিগ্রী, চাকরি আর সংসার – এর বাইরেও যে এক অপরিসীম রহস্যময় জগত আছে আমার তো তার সন্ধানও পেতে ইচ্ছে করে। বাংলাদেশের অনেককেই, বিশেষ করে ছেলেদের, লেখিকাদের লেখা নিয়ে বিদ্রূপ মন্তব্য করতে দেখেছি। এর পেছনে যথেষ্ট কারণও আছে। মিরপুরে আমার মেয়ে বন্ধুদের নিয়ে আলাদা আরেকটা দল ছিল। তারা আবার ছেলেদের সাথে মিশত কালে-ভদ্রে। আমি দেখেছি মেয়েদের আড্ডায় হয়তো অনেক মজা করছি কিন্তু আমার নতুন কিছুই জানা হতো না। মেয়েদের আড্ডার প্রধান আকর্ষণ হলো বাইরের রক্ষণশীলতার আস্তরণ সরিয়ে একেবারে সহজ-স্বাভাবিকভাবে মিশতে পারা। আমাদের অনেক টুকরো টুকরো আনন্দ-বেদনার গল্প আছে, যেটা হয়তো ছেলেদের কাছে খুব আহ্লাদী-পনা বা ন্যাকামি বলে মনে হবে, যার গুরুত্ব শুধু আরেকজন মেয়েই বুঝতে পারবে। মেয়েদের জ্ঞানভিত্তিক আলোচনা হলো পরীক্ষার রেজাল্ট বিষয়ক। এই যেমন কে কতো জিপিএ পাচ্ছে – এই ধরণের। আর বাংলাদেশের একটা প্রধান সমস্যা হলো যা শেখার সেই স্কুল-কলেজেই শিখতে হতো। রাজনৈতিক কারণে যদি একটি বড় ছুটি পেতাম তবে মেয়েরা রান্না-বান্না আর সেলাই এই নিয়েই ব্যস্ত থাকতো। কেউ কেউ প্রেম করতো। প্রেম আর বন্ধুত্বের সম্পর্ক এক নয়। যাই হোক আলোচনা অন্যদিকে ঘুরে যাবার আগেই আবার আমেরিকার কথায় ফিরে আসি। আমেরিকায় এসে উঠেছিলাম বরের সংসারে। হ্যাঁ, বরেরই সংসার। সে সংসারটা আমার মনে হতে অনেকদিন সময় লেগেছিল। তা সেই বরের সংসারটা ছিল একবেড রুমের এপার্টমেন্ট। বিয়ের পর বুঝেছিলাম আমার শ্বশুর বাড়িতে সৌখিনতার চল তেমন নেই। তবে ওরা অসম্ভব শৃঙ্খলাবদ্ধ। ও পরিবারের মেয়েরা সব খালি চোখ-কান বুজে লেখাপড়া করতে থাকে। যেমনটা দেখতাম আমার আর বুয়েটের বান্ধবীদের। অবশ্য এটাই বাস্তবতা। বাংলাদেশের মানুষ ধীরে ধীরে সামনের দিকে যে এগিয়ে যাচ্ছে তার প্রধান কারণ তাদের এই শৃঙ্খলাবদ্ধ জীবন আর এগিয়ে যাবার আকাঙ্ক্ষা। সেই তুলনায় আমাদের বাসার পরিবেশ অনেকটাই হালকা, শৃঙ্খলহীন। বিয়ের পর আমার সাথে সাথে শ্বশুরবাড়িতে আর যে জিনিষটা আমি রপ্তানি করি তা হচ্ছে প্রাণোচ্ছলতার ভাইরাস। তাই প্রথম প্রথম বরের কাছে আমি মানুষটা হায়ারোগ্লিফিক্স হলেও সেটা গ্রহণ করতে তার সমস্যা হয়নি। ব্যাপারটা অনেকটা এরকম: আমি কিছুটা শৃঙ্খলবদ্ধ হই আর সে নিয়ম ভাঙ্গতে শেখে। তবে শেষ কথা হচ্ছে কোন কিছু ফর গ্রাণ্টেড ধরে নেওয়া বোকামি। সহজতা প্রাকৃতিক নয়। আমাদের যাত্রা বিরূপ প্রকৃতিতে মধ্যে শুরু হয়েছিল। সভ্যতা জীবনধারণকে সহজ করে দিলেও জীবনগুলোর সহাবস্থানকে কঠিন করে দিচ্ছে। এরজন্য দরকার হাকিমি দাওয়াই। একেকজনের ক্ষেত্রে একেক রকম। দাওয়াই মানে চিকিৎসার কথাই যখন আসলো তখন সেই চিকিৎসকদের কথাতেই ফিরে আসি।


আমেরিকা আসার একদম প্রথম দিকে, সেই ১৯৯৮ সালের ডিসেম্বর মাসের কথা, ডালাসে যাই। তখন টম মামাদের ব্যবসা মাত্র চালু হয়েছে। ডালাসে তেমন দেখার কিছু নেই। এক আত্মীয় নিয়ে গেলেন ডাইনোসর পার্কে। তা সেই ডাইনোসর তো আর নেই। টম মামা নিয়ে গেলেন জনপ্রিয় সিরিজ ‘ডালাস’ প্রধান চরিত্র জে-আরের যে বাড়িতে শুটিং করতেন সেখানটায়। ‘ডালাস’ হচ্ছে আশির দশকের একটি জনপ্রিয় টিভি সিরিজ। বাংলাদেশেও দেখাত। সেসময় ‘ডালাস’এর ববি ছিল আমার বোনদের হার্টথ্রব। ক্যালিফোর্নিয়া থেকে ডালাসে গেলে একটু পানসে লাগতে থাকে। একেবারেই সমতলভূমি। মাঠের পর মাঠ ধূ-ধূ খালি পড়ে আছে। সেসব ফাঁকা মাঠ দেখলে মনে হতো, ইসসরে বাংলাদেশ থেকে দুই প্লেন মানুষ এনে এই খালি মাঠের মধ্যে ছেড়ে দিলে আমেরিকার কীইবা এমন ক্ষতি হতো! সবাই খালি মুক্ত বাজার অর্থনীতির কথা বলে, ভিসাহীন শ্রম বাজারের কথা বলে না কেন? এই পৃথিবীতে এখন একটি পণ্যের যে স্বাধীনতা আছে, মানুষের তা নেই। আমরা একদিকে হীরক রাজার কবলে পরে যন্তর-মন্তরের শিখিয়ে দেওয়া বাধা বুলি আওড়াবো আর ওদিকে মাড়ওয়ারিরা এসে আমাদের সব ব্যবসা-বাণিজ্য দখল করে নেবে। এখন অবশ্য বয়স বেড়েছে। অভিজ্ঞতাও বেড়েছে। চিন্তা-ভাবনাও আগের থেকে বদলেছে। কেউ কারও অবস্থা বদলে দিতে পারে না। অবস্থা বদলাতে হলে সে প্রেরণা নিজের ভেতর থেকে আসতে হবে।
সব দেশেই গরীব-বড়লোক, সুখী-অসুখী মানুষ রয়েছে। একটি সুন্দর জীবনের জন্য দেশান্তরী হবার দরকার পড়ে না। এবার টম মামাকে দেখে এই কথাটা বেশ মনে হলো। টম মামার এবারের বাড়িটি প্রায় হোয়াইট হাউজের মতো দেখতে। খুবই বনেদী জায়গায় যেখানে সাধারণত আর কোন বাংলাদেশি থাকে না। বাড়ির সামনেটা একদম হোয়াইট হাউজের মতো। খুব বনেদী এলাকা। এখানকার বনেদী এলাকা মানে বাড়ি গুলো স্কুল ড্রেসের এক রকম দেখতে হবে না। একেক বাড়ির একেক নকসা। আর রাস্তাগুলো একটু আঁকাবাঁকা। দু’পাশে বড় বড় গাছের সারি। মামার বাড়ির লনের একটা অংশে বেড়া দিয়ে পোষা কুকুর মাক্স আর রেক্সের থাকার ব্যবস্থা করেছে। কুকুরদের থাকার বাড়িও বেশ রাজকীয়। শুধু মাক্স আর রেক্স যে অংশটুকুর মধ্যে থাকে তাতে ব্যাক ইয়ার্ডসহ আমাদের ক্যালিফোর্নিয়ার পুরো বাড়িটা এর মধ্যে এঁটে যাবে। এদেশে কুকুরদের খুব রাজকীয় জীবন। কিন্তু এতোসব কিছু ছাড়িয়ে মামার ভেতরের অস্থিরতাটুকু আমার চোখে পড়লো। অবশ্য এটি প্রবাসী হবার কারণে নয়। দেশে থাকলেও হয়তো তা থাকতো। জীবন তো একটা ভাসমান জাহাজের মতো। কিন্তু এই ভাসমান জীবন মাঝেমধ্যে কোথাও নোঙ্গর ফেলতে চায়। অন্তত ইচ্ছে হলেই নোঙ্গর ফেলতে পারবে এমনটা ভেবে কোন একটি বন্দরের সাথে একাত্মতা বোধ করতে চায়। আমার মনে হলো টম মামা এখনও সে বন্দর খুঁজে বেড়াচ্ছেন। এবার টম মামা পরিকল্পনা করছেন একটি বই লেখার। বিষয়বস্তু হলো খ্রিস্টান ধর্মের অসংগতি তুলে ধরা। তথ্য সংগ্রহের জন্য এখন উনি টার্কি যাবেন। আমি বললাম, ধর্ম নিয়ে এই বিষয়টা এখন খুব অতি ব্যবহৃত হয়ে গেছে। আর তাছাড়া ড্যান ব্রাউনের থেকে আকর্ষণীয় কিছু লিখতে না পারলে লোকে সে লেখা পড়তে নাও পারে। পরে মনে হলো মামা আসলে একটা কিছু নিয়ে ব্যস্ত থাকতে চাইছে। একটা নোঙ্গর গাড়ার জন্য বন্দর খুঁজছে। আমার বরং উনাকে একাজে উৎসাহিত করা উচিত ছিল। আসলে এই পনের বছরে আমি আসলেই অনেক বদলেছি। বদলেছে আমার দেখার দৃষ্টিভঙ্গি। মনে আছে প্রথমবার ডালাসে এসে টম মামার বাড়ি দেখে থ’ হয়ে গিয়েছিলাম। তখন মামা থাকতো আর দশজন ডালাসের পেশাজীবী বাংলাদেশিরা যেরকম বাড়িতে থাকতেন সেরকম বাড়িতে। কিন্তু তখন আমি ছিলাম এ্যপার্টমেন্টবাসী। আমার সামাজিকতাও তখন এ্যপার্টমেন্টবাসীদের মধ্যে। ফুল-লতা-পাতা আঁকা মসৃণ বার্ণিশের চায়নিজ রোজউড ফার্নিচার দিয়ে সারা বাড়ি খুব রুচিসম্মত করে সাজানো-গোছানো ছিল। উনার বর্তমান বাড়ির শোপিস গুলো পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে খুঁজে আনা। এখন আমার আগ্রহটা বদলে গেছে। তবে টম মামার রাঞ্চে গিয়ে মজা পেয়েছিলাম। বিশাল এক রাঞ্চ। হরিণ, গরু, ঘোড়া, গাধা, ভেড়া, হাস, মুরগী, মাছ, টার্কি, আমার পরিচিত সব গৃহপালিত পশু-পাখীর সমাহার সেখানে। একদিকে পাথর দিয়ে একটা নয়নাভিরাম ঝর্ণা। সেই ঝর্ণার সাথে একটি ছোট্ট লেক মিশে গেছে। আমরা সেই লেকের পাশে বসে চা খেলাম। এখান থেকে উনাদের কোন অর্থনৈতিক লাভ নেই। বরং বছর বছর গাদা খানেক টাকার ট্যাক্স দেন। টেক্সাসে রিয়েল স্টেট এখন পর্যন্তও স্বর্ণখনি হয়ে উঠেনি। তবে যে হারে এই স্টেটে মানুষ আসছে তাতে একদিন হয়ে উঠবে তাতে কোন সন্দেহ নেই। সেই পনের বছর আগে শুনেছিলাম শুধু ডালাসেই নাকি বাংলাদেশী ছিল দশ হাজার। শখের মূল্য লাখ টাকা। টম মামার নিজের কোন সন্তান নেই। তাই নানান রকম উদ্ভব শখ পূরণ করে বেড়ান। আমেরিকাতে গাড়ির নেইমপ্লেটে ইচ্ছে মতন নাম লেখা যায়। টম মামা গাড়ির নেইমপ্লেটে লেখা গুণ্ডা। আমাদের গাড়ি সেই গুণ্ডাকে অনুসরণ করতে করতে ডালাসের অনেক জায়গা চষে বেড়ালাম।আগেই বলেছি টম মামার পরিবারের সাথে আমরা ছিলাম খুব ঘনিষ্ঠ। আমার দুখী শৈশবের অনেক অংশই রঙিন হয়ে আছে সেই মামাদের মজাদার কাজ-কারবারে। আমার বড়বোনের কাছে একটা ঘটনা শুনেছিলাম। টম মামার ছোটভাই, ধরা যাক শাহী মামা, আমার বড় বোনদের কাছাকাছি বয়সের। ঘটনার সময়কাল ১৯৭১। মুক্তিযুদ্ধের সময়কার। ২৬শে মার্চের পর ঢাকা শহর তখন থমথমে। আব্বা আর আম্মা গেছেন ছোটনানীর বাসায়। করনীয় পদক্ষেপ নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে। আপু, আমার বড়বোন, দেখেন যে শাহী মামা উনার দু বন্ধুকে সাথে নিয়ে স্বাধীন বাংলার পতাকা বানাচ্ছেন। শাহী মামার তখন বয়স হবে হয়তো বার কি তের। পরিকল্পনা পতাকা বানানো শেষ হলে মিছিল করতে বের হবেন। এতে নাকি পূর্ব পাকিস্তান স্বাধীন হয়ে যাবে। পতাকা বানানো শেষে আমার দুই বোনসহ শাহী মামা বন্ধুদের নিয়ে রাস্তায় বের হয়ে আসলেন। তারপর জোর গলায় জয় বাংলা বলতে বলতে একেবারে রাস্তার শেষ মাথায় চলে গেলেন। ঠিক এতো টুকু শোনার পরই আমার হৃৎপিণ্ড বন্ধ হয়ে আসে। আপুরা কী ভয়ংকর অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে গেছ। আর আমার ছোটবেলার ভয়ংকর অভিজ্ঞতা ছিল অংক ক্লাসে হোম ওয়ার্ক না নিয়ে গিয়ে স্যারের হাতের বেতের বাড়ি খাওয়া।


ডালাস থেকে গাড়ি করে যাই জর্জিয়াতে। মধ্য দিয়ে লুসিয়ানা, অ্যালাবামা আর মিশিসিপি। এই তিনটা স্টেট আমেরিকার সাউথ বেল্টে। আরেকটা নাম বাইবেল বেল্ট। এই অংশ বেশ ধর্মপরায়ণ। এভান্জেলিক্যাল প্রোটেস্ট্যান্টের অনুসারী। সেই আশির দশক থেকে রক্ষণশীল রিপাবলিকানরা এই এলাকাগুলোতে ভোটে জিতে এসেছে। রিপাবলিকানরা ক্ষমতায় এসে বড়লোকদের সুবিধা দেয়। অথচ বাইবেল বেল্টের গরীব আমেরিকানদের ভোটটা তাদের জন্য নিশ্চিত। পলিটিক্স আসলেই জটিল ব্যাপার। ভিলেজ পলিটিক্স আরও জটিল। মিসিসিপি নদী দেখলেই মার্ক টোয়েনের কথা মনে হয়। মনে পরে টম সোয়ার আর হ্যাকলবেরি ফিনদের দুষ্টুমি। যে কোন নদীর সামনে দাঁড়ালে আমি সম্মোহিত হয়ে যাই। প্রথম প্রেম ডাকাতিয়া নদী। আমার ফুপুর গ্রামের বাড়ির পাশে ছিল এই নদী। যে ঘরে আমি থাকতাম তার জানালা খুললে এই নদীটি দেখা যেত। তারপর ঢাকার বুড়িগঙ্গা, ময়মনসিংহের ব্রহ্মপুত্র নদ, সিলেটের সুরমা, রংপুরের তিস্তা এরকম আরও কত নদীর সাথে ভাব। সেই ভার্সিটি জীবনে একবার আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে পাহাড় কাঞ্চনপুরে বেড়াতে গিয়েছিলাম। সেখানে এয়ার ফোর্সের একটা ক্যাম্প আছে। আমাদের এক বন্ধু তখন এয়ার ফোর্সে। পথে পড়লো একটা নদী। খুব সুন্দর নাম। ভুলে গেছি এখন। আমাদের গাড়িটি নদীর এক পাশে অপেক্ষা করছিল। ফেরীর জন্য। পায়ে হাটা যাত্রীদের জন্য একটা খেয়া নদীর এপার-ওপার করছিল। হঠাৎ আমাদের মধ্যে থেকে একজন ঝপ করে সে খেয়ায় নেমে গেল। সাথে সাথে আমিও তাকে অনুসরণ করলাম। তারপর আমরা নৌকা করে নদী পার হলাম। গাড়ি এসেছিল অনেক দেরীতে। ততক্ষণে আমরা নদীর পারে বেড়ার দোকানে বসে চা আর ডালপুরি গিলছিলাম। বিশের কোঠার সেই তরুণবেলা আসলেই খুব সুন্দর। অল্পতেই অনেক আনন্দ পেতাম। বেহিসেবী আনন্দ। হঠাৎ হঠাৎ অনেক কিছু করে ফেলা যেত। এখন সবকিছু করতে হয় হিসেব করে। কোথাও পৌছুতে ঠিকানা ভুল করা যাবে না। তাতে সময় নষ্ট হবে। দিন দিন সময় কমে আসছে। ভুল করে শুধরে নেওয়ার সময়।
দেশের বাইরে স্মরণীয় নদী ভ্রমণ টেক্সাসের স্যান এন্টোনিও রিভার, লন্ডনের থেমস নদী, নিউ ইয়র্কের হাডসন আর প্যারিসের সীন, ক্যালিফোর্নিয়ার স্যান্ক্রামেন্টো রিভার, এরিজোনার কলোরাডো রিভার, বোস্টনের চার্লস। কিন্তু তিনবার উপর দিয়ে পাড়ি দিলেও কখনও মিসিসিপিকে ছোঁয়া হল না। পনের বছর আগে যখন আটলান্টায় এসেছিলাম তখন সিরাজ ভাইয়ের বাসায় উঠেছিলাম। এর মাত্র ক’বছর আগে সিরাজ ভাই বাংলাদেশ থেকে আমেরিকায় অধিবাসী হয়ে এসেছেন। মধ্য বয়সে আমেরিকায় এসে স্থায়ী হওয়া খুব একটা সহজ কাজ নয়। সেসময় আমেরিকার অর্থনীতিও বেশ খারাপ ছিল। তারপরও অনেকে লেখাপড়া করে চাকরি নেয়। পেশায় সিরাজ ভাই প্রকৌশলী। দেশে থাকতে একটি নামকরা বিদেশি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। আমেরিকায় এসে সব ইগো-টিগো ঝেড়ে ফেলে ব্যবসার পথে গেলেন। প্রথমে দিলেন লন্ড্রির ব্যবসা। এই দেশে ব্যবসা করলে হয়তো চাঁদাবাজের দৌরাত্ব্য নেই কিন্তু ছিনতাই আছে। আমার পরিচিত দুই বাংলাদেশি এই ছিনতাই এর কবলে পরে মৃত্যুবরণ করেছেন। একজন ফ্লোরিডাতে আর একজন এরিজোনাতে। দু’জনেই রাতের বেলা গ্যাস স্টেশনের স্টোরে বিক্রেতার কাজ করছিলেন। অতর্কিত পিস্তল হাতে ঢুকে পড়ে দু’তিনজন আফ্রিকান-আমেরিকান ছেলে। কাউন্টারে গিয়ে বিক্রেতার কাছে ডলার দাবী করে। একটু দেরী হওয়াতে ঠাস-ঠাস করে ট্রিগার টিপে দেয়। আর যায় কোথায়। সাথে সাথে মৃত্যু। বাংলাদেশে যেমন মাস্তান, আমেরিকাতে তেমনি গ্যাং একটা বড় সমস্যা। বাংলাদেশের বহুল পরিচিত শব্দ ইভ-টিজিং এর মতো আমেরিকাতে বুলিংএর কারণে প্রতিবছর অনেক উঠতি বয়সী ছেলে-মেয়ে আত্মহত্যা করে। এবার জর্জিয়াতে এসে সিরাজ ভাইয়ের বাসায় আর থাকা হয়নি। তবে উনার বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলাম। আগেরবার উনি থাকতেন এপার্টমেন্টে। এবার গেলাম উনার বিশাল বাড়িতে। উনারও এক ছেলে এক মেয়ে। ছেলে অনেক আগেই আইটি সেক্টরে চাকরি করছে। পনের বছর আগে সিরাজ ভাইয়ের মেয়েটা ছিল চৌদ্দ বছরের। মেয়েটা এগার বছর বয়সে আমেরিকাতে আসে। আমেরিকাতে উঠতি বয়সের মেয়ে মানুষ করা হাজার ঝক্কির কাজ। তার উপর মধ্যবয়সে আমেরিকায় অধিবাসী হয়ে এসে সিরাজ ভাই আর তার স্ত্রী খুব ব্যস্ত ছিলেন। মেয়েকে বেশি সময় দিতে পারেননি। সিরাজ ভাই আমার শ্বশুরবাড়ি দিককার আত্মীয়। আগেই বলেছি ওদের পরিবারে লেখাপড়া এবং ধর্ম এই দুটি বিষয়ের উপর খুব জোর দেওয়া হয়। ওরা সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড থেকে দূরে থাকে। কারণ এতে লেখাপড়ার ক্ষতি হতে পারে। কার্য কারণ যাই হোক এই পরিবারে ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ারের সংখ্যা অনেক। এদের অনেকেই আমেরিকাতে সুপ্রতিষ্ঠিত। সিরাজ ভাই ছিলেন ব্যতিক্রম। একটি ধার্মিক পরিবারের সদস্য হয়ে প্রেম করে বিয়ে করেন একজন খ্রিস্টান মেয়েকে। পুরো পরিবারসহ ছায়ানটের নিয়মিত ছাত্র ছিলেন। সেই সিরাজ ভাইয়ের মেয়েটি ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার তো দূরের কথা লেখাপড়াতেই নিয়মিত ছিল না। তারপরও কয়েক বছর আগে হয়তো কোন রকমে লেখাপড়া শেষ করেছে। বিষয় ক্যালিনারি – সোজাসাপ্টা ভাষায় বাবুর্চিগিরি। পছন্দ করে বিয়ে করেছে আরেক বাবুর্চিকে। সে ছেলে আবার আফ্রিকান-আমেরিকান। বাংলাদেশি সমাজের কাছে এটি একটি আঁতকে উঠার মতো ঘটনা। অনেকে তো বলেই ফেললেন, আমরা তো জানতামই বেশি বেশি আর্ট-কালচার করলে ছেলে-মেয়েরা মানুষ হয় না। আমরা খুব সহজেই একজন আরেকজনের বিচার করে ফেলি। একটা উড়ন্ত পাখীর দৃষ্টিতে যদি এই লোকালয়ের দিকে তাকানো হয় তাহলে একজন চিকিৎসক আর একজন বাবুর্চির মধ্যে কী তেমন দূরত্ব থাকে? একটা সমাজে সব পেশার মানুষেরই সমান প্রয়োজন। সিরাজ ভাইয়ের মেয়ে আর মেয়ের জামাই দু’জনেই খুব মজাদার মানুষ। সিরাজ ভাইয়ের পরিবার এখনও বাসায় গানের আসর বসে। হই-হুল্লোড় হয়। সেই আসরে বেড়াতে আসেন অনেক গোমড়া মুখো ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার। দুঃখের বিষয় আমরা পাখী নই। মানুষ। আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি সমতলের মধ্যে সীমাবদ্ধ। দিগন্ত থেকে শুরু হয়ে দিগন্তে তা শেষ হয়। অবশ্য নগরের সীমারেখা এখন সে দিগন্তকে গ্রাস করেছে। সমতলের বাসিন্দাদের সমতল পছন্দ নয়। তাই তারা সামাজিক সিঁড়ি তৈরি করে – সে সিঁড়ি বেয়ে উঁচুতে উঠতে চায়। আসলে এখন কাব্য করে এসব লিখছি বটে কিন্তু ভেতরে ভেতরে আমি নিজেও খুব টেনশনে আছি। নিজের ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া না হলে আমার দিকেও লোকে একদিন আঙ্গুল তুলবে। বলবে, ঐ মহিলা এতো কিছু করলে ছেলেমেয়ে মানুষ হবে কি করে? শুধু ধর্ম-কর্ম, চাকরি-বাকরি,আর সংসারে মন থাকলে ছেলে-মেয়ের নিশ্চিত উন্নতি। না, পাঠকের ভয় পাবার কোন কারণ নেই। এখন পর্যন্তও আমি একজন আদরের বৌ। আমার শাশুড়ি উনার সব আত্মীয়-স্বজন আর বান্ধবীদের মধ্যে আমার বইয়ের পাবলিসিটি করেন। উনার সেই সার্কেলে তো আমি এখন দারুণ হিট। সেই বান্ধবীরা আমার সাথে সাক্ষাৎ করতে চায়। আমি তো বিদেশে। তাই আমার বোনকে ডেকে এনেছে বান্ধবীদের কৌতূহল মেটাবার জন্য। আমার বোনকে রীতিমতো উনারা আমার উপন্যাসের বিভিন্ন অংশ নিয়ে জেরা করে ছেড়েছেন। এই ঘটনা শুনে আমার আবার মন খারাপ হয়ে গেছে। কারণ আমি আর আমার বোনের মাঝে অনেক পার্থক্য। আমাদের পরিবারে প্রথম দিকে দাদির প্রাধান্য ছিল। আমার বড় দু’বোন চিন্তা-ভাবনায় একটু দাদি ঘরানার – সনাতনী। আর আমি নানী ঘরানার।
আমার মেয়েটা তার বাবাদের দিককার বৈশিষ্ট্য পেয়েছে। তাই আপাত দৃষ্টিতে মনে হয় তেমন চিন্তা নেই। কিন্তু ছেলেটা পেয়েছে মায়ের বৈশিষ্ট্য। ঝুঁকি-প্রবণ, ভাবুক, এক্সপেরিমেন্টাল। তার উপর ছেলে আবার ফান লাভিং মানে দুষ্টামি আর রসিকতা করতে পছন্দ করে। এমনিতে সে খুব জ্ঞানী এবং সৃষ্টিশীল – পৃথিবীর যে কোন বিষয় নিয়েই ওর সাথে জ্ঞানগর্ভ আলোচনা করা যাবে। কিন্তু পরীক্ষায় যে ভাল গ্রেড পেতে হবে এই ব্যাপারটাতে সে একদমই উদাসীন। এদিকে শ্বশুর মশাই প্রায় প্রতি সপ্তাহেই ছেলের গ্রেড জানতে ফোন করবে। রক্ষে যে আমার তিন ভাইয়ের মধ্যে দুই ভাই ইঞ্জিনিয়ার এবং এক ভাই এমবিএ ডিগ্রীধারী। স্বভাবে তারা খুব সৌখিন। বিশেষ করে বড়ভাই। একদিন ছেলে বাবাকে বলে, ‘ মামনিকে একটা সারপ্রাইজ স্পার টিকেট কিনে দাও।’ বর তো কোনদিন স্পার নাম শুনেনি। পরে স্পা কী জিনিস তা শুনে বলে, ‘ছেলে তো দেখি মামাদের মতো হয়েছে।’ এতে আমার আরও টেনশন বেড়ে যায়। মায়ের দায়িত্ব পালন করতে না পারলে মনে হয় এ জীবনের ষোল আনাই মিছে হয়ে যাবে। আমি তো আর খালেদা জিয়া নই যে ছেলেদের লেখাপড়া শিখাতে না পারলেও লোকে আমাকে মাথায় তুলে নাচবে।


আসলে একেকটা জীবন একেক রকম। একটা ধরা-বাঁধা চাকরি, সংসার, ধর্মপালন আর সন্তানপালন – এই চারের মধ্যে সীমাবদ্ধ থেকেও তো জীবনটা পরখ করেছি। আমার অতো ভালো লাগেনি। কিন্তু রুদমিলার (ছদ্মনাম) কাছে এটাই সুখ। এর বাইরে সে জীবনে আর কিছু পেতে চায় না। এমনকি প্রবাসী আমেরিকানদের সামাজিকতা থেকেও সে দূরে আছে। সপ্তাহান্তে সন্তানদের লেখাপড়া শেখাতে শেখাতেই তার সময় চলে যায়। রূদমিলা পেশায় চিকিৎসক। স্বামী সফটওয়ারের। আটলান্টাতে আমরা ওদের বাসাতেই উঠেছি। কাছের আত্মীয়। শ্বশুরবাড়ির দিককার। ওদের বাড়িটি একটি কান্ট্রি হাউজে। কান্ট্রি হাউজ হচ্ছে একটি এলাকার সবচেয়ে দামী অংশ। আমেরিকাতে সাধারণত ডাক্তারদেরকে ধনী শ্রেণি হিসেবে ধরা হয়। তবে সিলিকন ভ্যালিতে আমরা অনেক বড়লোক টেকী ধনী দেখে অভ্যস্ত। সেখানে হাজারটা হাই-টেক কোম্পানি। তাদের উত্থান পতনও ভিন্ন রকমের। হয়তো দেখা যাবে গুগল কোম্পানির একজন কেরানী মিলিয়নিয়ার। আবার ইন্টেল কর্পোরেশনের অনেক ডাইরেক্টরেরও আজ চাকরি গেলে কাল কি খাবে এই অবস্থা। আমার দু’বাসা পরে এক ডাক্তার মহিলা থাকেন। ভদ্রমহিলা ভারত থেকে ডাক্তারি পাশ করে আমেরিকাতে চাকরি করার সব প্রস্তুতি শেষ করেছেন অনেক আগেই। গত পাঁচবছরেও মহিলা সিলিকন ভ্যালিতে একটি ফুলটাইম জব যোগার করতে পারলেন না। একটা ফেসবুক বা টুইটার কোম্পানি পাবলিক হলে সিলিকন ভ্যালিতে নতুন নতুন মিলিয়নিয়ারের জন্ম হয়। প্রতিবছর এরকম কয়েকটা কোম্পানি পাবলিক হচ্ছে। আর একটা কোম্পানি পাবলিক হলে সেখানে হাজার হাজার ইঞ্জিনিয়ারিঙ জবের সৃষ্টি হয়। কিন্তু ডাক্তারদের জবের সংখ্যা সরল রৈখিক। জনসংখ্যার সংখ্যার সাথে সমানুপাতিক। সিলিকন ভ্যালি শহরগুলোর মতো জাঁকজমকপূর্ণ জায়গাগুলোতে সাধারণত আমেরিকার ভাল মেডিকেল কলেজ থেকে পাশ করা ডাক্তাররা কাজ পায় সহজে। অবশ্য এখানে খুব শক্ত চায়নিজ আর ইন্ডিয়ান নেটওয়ার্ক আছে। সেই চ্যানেলেও কেউ ঢুকতে পারে। মূলত আমেরিকার গ্রাম-গঞ্জের চিকিৎসাব্যবস্থা চলছে অধিবাসী ডাক্তারদের দিয়ে। রুদমিলার চাকরি হয়েছে গ্রামের একটি হাসপাতালে। সে যে বেতনে চাকরি করছে আজকাল সিনিয়র ওয়েব ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়াররা সে বেতনে চাকরি করছে। রূদমিলার ভাষায় চাকরি করে আসলে বেশি বড়লোক হওয়া যায় না। অনেক পয়সা করতে হলে নিজের ব্যবসা থাকতে হয়। সেটা তো যে কোন চাকরির ক্ষেত্রেই সত্য। আবার টম মামির সাথে কথা বলে বুঝলাম ডাক্তাররা ব্যবসা করলেই যে খুব একটা পয়সা করবে তাও নয়। কার্ডিওলজিস্ট পয়সা বেশি। যে কোন দেশের প্রাইভেট প্রাকটিসের ধরনটা একই রকম। এই যেমন কোন কোন ডাক্তারের পসার অনেক। অনেক টাকাপয়সা তাদের। দেখেন প্রতিদিন ৭০জন রোগী। ১০০০ টাকা করে ভিজিট। আবার কোন ডাক্তার ১০০ টাকা ভিজিটে ১০ টা রোগী পেলেই যথেষ্ট। টম মামীকে একটু চিন্তিত দেখলাম। কারণটা এখন আমেরিকাতে ওবামাকেয়ার শুরু হয়েছে। এতে সব রোগীকেই দেখতে হবে। তবে যে রোগী ওবামাকেয়ারের আন্ডারে আছে তার ভিজিট কম। ওবামাকেয়ার হচ্ছে প্রেসিডেন্ট ওবামা প্রবর্তিত একটি নতুন স্বাস্থ্যবিমা যা নিম্ন আয়ের আমেরিকানদের চিকিৎসা নিশ্চিত করবে। তবে আমি কোন কিছু তুলনা করলে একেবারে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তুলনা করতে চাই। কিন্তু অনেকেই তুলনা করে দেখে তার নিজের অবস্থার সাথে। যারা একটি খণ্ডচিত্র দেখতে চান তারা আমার বিশ্লেষণকে এড়িয়ে যেতে পারেন। তবে যা বুঝলাম তা হলো যে চাকরিজীবী সে বলে ব্যবসা না করলে পয়সা নাই। আর যিনি ব্যবসা করেন তার চোখে ঘুম নেই। বলে চাকরিতেই সুখ। আসল ব্যাপারটা হলো মাথার উপর থেকে কাঁচের দরজা ভেংগে উচ্চ-মধ্যবিত্ত অবস্থা থেকে ধনী শ্রেণীতে প্রবেশ করা অতো সহজ নয়। সামনের দরজা দিয়ে বড়লোক হতে হলে কাজটার সাথে কোন না কোন সৃষ্টিশীলতা জড়িয়ে থাকতে হবে – হোক তা ব্যবসা কিম্বা কোন বুদ্ধিবৃত্তিক প্রোপার্টি। এই যেমন ফেসবুক, টুইটার, এমনকি হ্যারি পটার ধরণের বই যেগুলো একবার সৃষ্টি করেই শেষ (তারপর অবশ্য ডেভেলপমেন্টের কাজ আছে, সে আবার অন্য কথা) – কিন্তু এসব প্রোপার্টির বিক্রি-বাটা বছরের পর বছর চলতে থাকবে। এখন যেমন অনেকে ছোট ছোট উপযোগী সফটওয়ার বানিয়ে বড়লোক হয়ে যাচ্ছে। আর সিলিকন ভ্যালি মানেই তো স্টার্ট-আপ, ডটকম, যত রকমের টেকী সৃষ্টিশীলতা। সে কাহিনী বয়ান করতে গেলে তো আরেক উপন্যাস লিখতে হবে। আজ থাক সে কথা। তবে ডাক্তারি পেশার সবচেয়ে ভাল দিক যেটি সেটি হচ্ছে এই চাকরিটি রিসেশন প্রুফ। আমেরিকার অর্থনীতি যখন ভাল থাকে তখন অন্যান্য অনেক সেক্টরে লাখে লাখে চাকরি তৈরি হয় বটে – ঠিক তেমনি লাখে লাখে চাকরি বাজার থেকে উধাও হয়ে যায় বাজে অর্থনীতির সময়। ইঞ্জিনিয়ারিং পেশা ক্ষতিগ্রস্ত হয় বেশি। কিন্তু ডাক্তারি পেশা তেমন ক্ষতির মুখে পরে না। কারণ লোকের পকেটে পয়সা না থাকলে হয়তো আইফোন কিনবে না, কিন্তু হার্টের অসুখ হলে চিকিৎসা তো করাতে হবে।
আজ এ পর্যন্তই। সবার জন্য রইল শুভ কামনা।

(যা লিখব বলে ঠিক করেছিলাম তাও এই পর্বে লেখা হলো না। কিম্বা এটাই হয়তো একেবারে যথার্থ ব্লগর ব্লগর। কিছু ঠিক করে লিখতে হবে এই নিয়ম হয়তো এখানে খাটে না।)

১,৮৩৯ বার দেখা হয়েছে

২২ টি মন্তব্য : “পুবের মানুষ যখন পশ্চিমে – ৭”

  1. সামিউল(২০০৪-১০)
    দুঃখের বিষয় আমরা পাখী নই। মানুষ। আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি সমতলের মধ্যে সীমাবদ্ধ। দিগন্ত থেকে শুরু হয়ে দিগন্তে তা শেষ হয়।

    ::salute::
    আপার একটা ব্লগ পড়লে অনেক কিছু সম্পর্কে জানা যায়। এত কিছু মাথায় নিয়া ঘুমান ক্যামনে?? 😛


    ... কে হায় হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগাতে ভালবাসে!

    জবাব দিন
  2. মাহমুদুল (২০০০-০৬)

    আপু আপনার বই কোথায় পাওয়া যাবে বাংলাদেশে? জানালে খুশি হব।

    আপনার ব্লগ শুরু করলেই শেষ হয়ে যায়। লেখা আরেকটু বড় করেন। 😛


    মানুষ* হতে চাই। *শর্ত প্রযোজ্য

    জবাব দিন
    • ওয়াহিদা নূর আফজা (৮৫-৯১)

      তুমি কি ঢাকায় থাক? এবারে ফেব্রয়ারির শেষের দিকে ঢাকায় আসছি। বই মেলায় যাবার প্লয়ান আছে। আগামি প্রকাশনির স্টোরে থাকব ইনশাল্লাহ।
      লেখা এমনিতেই অনেক বড় হয়ে যায়। লিখতে কোন সমস্যা নেই - সমস্যা হলো এডিট করে কাটছাট করার সময়।


      “Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
      ― Mahatma Gandhi

      জবাব দিন
      • মাহমুদুল (২০০০-০৬)

        আপাতত চাকুরীর সুবাদে নীলফামারীতে। তবে চাকুরী ছাড়ার প্রবল সম্ভাবনা আছে। তাহলে ফেব্রুয়ারীর শেষটা সম্ভবত ঢাকায়ই থাকবো। না থাকলেও সমস্যা কি? দেখা হবে আশা করি।

        এডিট করার কি দরকার? আশা করি সেটাও হবে সুখপাঠ্য। আসলেই আপনার ব্লগ পড়লে মনে হয় হাত ধরে ধরে একেক জায়গায় নিয়ে গিয়ে সেগুলোর, সেই মানুষগুলোর গল্প শোনাচ্ছেন...


        মানুষ* হতে চাই। *শর্ত প্রযোজ্য

        জবাব দিন
  3. শাহীন (৯৬-০২)

    আসলে আপনার লেখা পড়া শুরু করলে কোথায় যেন চলে যাই। শুরু হয় এক জায়গায় কিন্তু শেষ অন্য কোথাও। মনে হয় কত জায়গা, কত লোকের সাথে দেখা করে আসলাম। আমার অভিজ্ঞতা আছে অনেক, আমি অনেক জানি, এমন একটা ভাব চলে আসে।
    আপু, সুন্দর খুবই সুন্দর।


    The Bond Cadet

    জবাব দিন
    • ওয়াহিদা নূর আফজা (৮৫-৯১)

      এই যে তোমরা গল্প শুনতে চাও এই ব্যাপারটাই তো আমাকে লিখতে আগ্রহী করে তোলে। ভাগ্না-ভাগ্নি আর ছেলেমেয়েদেরর মধ্যে একজন গল্প বলিয়ে হিসেবে আমার কিঞ্ছিৎ চাহিদা ছিল। পরে সাহস করে ব্লগ লিখতে শুরু করি। মাঝে মধ্যে মনে হয় গল্প শোনানোর ইচ্ছেটি একটি অদ্ভুত খেয়াল।


      “Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
      ― Mahatma Gandhi

      জবাব দিন
  4. মোকাব্বির (৯৮-০৪)

    "ডালাস" এর কথা বলে অনেক কিছু মনে করিয়ে দিলেন। ৮৯-৯০ এর আবছা স্মৃতি মনে করার চেষ্টা করছি। তিন-চার বছরের শিশুর স্মৃতি হিসাবে বেশীদূর আগানো হলো না। কবে জানি কথার মাঝে মায়ের সাথে ডালাসের কথা উঠে এল। প্রায় ২০ বছর পরে শুধু হাইস্কুল গন্ডি পেরোনো মায়ের গড়গড় করে চরিত্রগুলোর নাম বলে যাওয়া দেখে হা করে তাকিয়ে ছিলাম। বাবা নাকি, কিছুটা লাইভ কমেন্টারী ও কিছুটা পোস্ট-কমেন্টারীর মাধ্যমে মাকে বিভিন্ন অংশগুলো বর্ণনা করতেন। 🙂

    কিছুটা অপ্রাসঙ্গিক, ঈসৎ প্রাসঙ্গিকঃ পড়ন্ত বিকালে নরসিংদী আইনজীবি সমিতির লাইব্রেরীতে চুপচাপ চা হাতে বসে থাকা আমার সিনিয়ার এ্যাডভোকেট স্বপন স্যার হঠাৎ বলে উঠেছিলেন, "মোকাব্বির, ডাক্তার একটা রোগীর কেইস ভুল করলে পরিবারে হয়তো একটা মর্মান্তিক মৃত্যু হবে। কিন্তু আমরা একটা কেইস ভুল করলে একটা পরিবার পথে বইসা যাইতে পারে। খুব সাবধান। এই দায় যাতে না নেয়া লাগে।" 🙂


    \\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
    অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\

    জবাব দিন
  5. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    সবসময়ের মতই দারুন লিখেছেন আপু, পরের পর্বের অপেক্ষায় :hatsoff:


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন
    • ওয়াহিদা নূর আফজা (৮৫-৯১)

      এখনও কি নেই? পোপ এবং ওয়ারেন বাফের একটা উক্তি এরকম ছিল যে এই পৃথিবী এই র্পযন্ত এগিয়েছে অর্ধেক ট্যালেন্টের উপর ভিত্তি করে। বাকী অর্ধেককে কাজে লাগানো হয়নি। আসলে এখন সময় এসেছে ছেলে-মেয়েদের সম্পর্ককে শুধুমাত্র সেক্সুয়্যআল পয়েন্ট অব ভিউ থেকে না দেখা।


      “Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
      ― Mahatma Gandhi

      জবাব দিন
    • মোকাব্বির (৯৮-০৪)

      ফেবুতে রান্না করা মাছের ছবিতে খালাতো ভাইয়ের কমেন্ট, "যাক তোর বউয়ের কষ্ট করে রান্না শেখা লাগবে না, তুই এত ভাল রান্না করিস।" উত্তরে বলেছি "বউয়ের রান্না করা লাগবেই বা কেন?"
      প্রথমে জেন্ডার রোল স্টেরিওটাইপিং, তারপরে জেন্ডার বায়াস, আর সেটাও যদিও উতরিয়ে আসতে পারেন সামনে আছে অনৈচ্ছিক স্টেরিওটাইপিং, - না চাইতেও যা বলছি ভুল বলছি কারণ ধরেই নিয়েছি এটাই সঠিক। মাঝে মাঝেই অনেককে এই কথাটা খুব বলতে দেখি বা ফেবুতে শেয়ার করতে দেখিঃ "দৃষ্টিভঙ্গী বদলান, জীবন বদলে যাবে।" কিন্তু যতদূর জানি ব্যাপারটা এত সহজ নয়। বললাম বদলে নিলাম কিংবা "বদলে যাও বদলে দাও" বললেই সেটা হয় না। আমি মনে করি আপনাদের সময় হতে আমাদের সময় পর্যন্ত যেই পরিবর্তনটুকু পুরুষের দৃষ্টিভঙ্গীকে ধ্রুব ধরে হয়েছে। অর্থাৎ মেয়েদের অংশগ্রহণ বাড়ছে, সমাজে অবদান বাড়ছে কিন্তু আমাদের মনোভাব ও দৃষ্টিভঙ্গীর খুব একটা পরিবর্তন হয় নি। যেটুকু মাঝে মধ্যে দেখি সেটা মরীচিকা।


      \\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
      অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\

      জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।