অন্ধকার টানেল থেকে হঠাৎ নিজেকে আবিস্কার করি এক রেল স্টেশনে। সিঙ্গেল লাইন। পুব পশ্চিমে লম্বা। দক্ষিণে প্লাটফর্ম কিন্তু টিকিট ঘর বা যাত্রী ছাউনি নেই। নামফলকও নেই। সম্ভবত জরুরি প্রয়োজনে এখানে ট্রেন থামে। রেললাইনে স্লিপার দেখা যায় না। রেল বাদে বাকি স্থান ব্রকোলি রঙা পাথর বসিয়ে ঢাকা। স্টেশন থেকে উত্তরে নামার ঢালু পথ। তার শুরুতেই পূর্ব দিকে উত্তর-দক্ষিণে লম্বালম্বি একটি পুরোনো রেলের বগি। একটি বড় টবের মতো ব্যবহার করা হচ্ছে। তাতে মানকচুর গাছ আর দুই তিন ফুট উঁচু মাশরুমে ভরা। তিয়েন স্টেশন এর চেয়ে সুন্দর ছিল। টকেটকে লাল বগীতে ফুলেফুলে ভরা লাল শিমুল। সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য এই অঞ্চলেও পরিত্যক্ত যানবাহনের ব্যবহার আছে দেখছি। তবে এদের সৌন্দর্য বোধে স্থুলতা রয়েছে। এদের বাগানে হয়তো কেবল সব্জির গাছ শোভা পায়। রেল স্টেশনে আরো দশবারো জন ছিল। তারা প্রত্যেকে অন্যের সাথে কথা না বলে নিজে নিজের সাথে গভীর জ্ঞানের আলাপে মগ্ন। তাদের অনেককে চিনি মনে হচ্ছে কিন্তু কথা না বলায় অবাক হচ্ছি না।
চীনের কোনো একটা জায়গা হবে। একটি সম্মেলনে এসেছি মনে হচ্ছে। স্টেশন থেকে উত্তর দিকে বেশ কিছুক্ষন হাঁটার পর খানিকটা মিষ্টি কুমড়া আকৃতির একটি সাদা অডিটোরিয়াম চোখে পড়লো। কেন জানি সিন্দাবাদের সমুদ্রে যাত্রায় দেখা সেই রক পাখির ডিমের কথা মনে পড়ে গেলো। সেই ডিম বাড়ির মতো বড় ছিল। অডিটোরিয়ামের ভিতরে কোনো স্টেজ বা চেয়ার নেই। অনেকগুলো গোল গোল টেবিল। দেয়ালে ইংরেজিতে ওয়েলকাম লেখা। তার পাশে শিং যুক্ত ভাইকিং হেলমেট মাথায় পাতার পোশাক পরা দুটো শুয়োর মানব। এরা কি ট্যালাক্সিয়ান? নাকি অনেক ভালো খায়দায় তাই শুয়োরের মতো গোলগাল হয়েছে? তা হোক কিন্তু সম্মেলনে এনেছে কেউ স্বাগত জানালো না! অডিটোরিয়ামে আয়োজকদের কেউ-ই আসেনি। টেবিল গুলো সম্পূর্ণ ফাঁকা। কেবল দেয়ালে ওয়েলকাম লিখে দায় সারা?
ইতোমধ্যে খিদেয় পেট ব্যাথা করতে শুরু করেছে। নাস্তাপাতির খোঁজ নিতে বের হয়ে আসি। বাইরে কয়েকটি পিলারের ধার ঘেঁষে তিন-চার জনের গ্রুপে ফিসফাস। কিছু আলাপ চলছে। আমি রান্নাঘরের দিকে এগুতে থাকি। রান্না ঘরের মেঝেতে কেজি দুয়েক কচু পড়ে আছে। বটি, চুলা কিছুই নেই। তাহলে কি কাঁচা কচু খেতে হবে? তা-ই বা কি করে হয়। এত উন্নত একটা দেশ। খাবার সময় হলে নিশ্চয়ই ডাকা হবে। এর ফাঁকে একটু জায়গাটা দেখে নেয়া যাক। রান্না ঘরের বাইরে এসে মনে হলো এটা আসলে একটা কারখানা। অনেক দিন আগে তৈরি। কনভেয়ার বেল্টের মাধ্যমে জংধরা মরিচা পড়া যন্ত্রপাতি লোহালক্কড়, শিঙ, শুয়োরের মাথার খুলি, চামড়া নানাবিধ জিনিসপত্র টিনশেডে ঢুকছে। আরেকটু কাছে গিয়ে ভালো মতো দেখতে চাইলাম। শুওরের গায়ের ধুলো পড়লো চোখে মুখে। গা ঘিনঘিন করে উঠলো। থু থু ফেলে বাইরে যাবার চেষ্টা করি। কিন্তু বাইরে যাবার কোন পথ নেই। কনভেয়ার বেল্টের পাশের চিপা জায়গা দিয়ে ঐ টিনশেডেই ঢুকতে হবে। জানি না সেখানে কি অপেক্ষা করছে?
গায়ে লেগে থাকা ধুলো ময়লা পরিষ্কার করতে এখন গোসল করা খুব দরকার। বমিবমি ভাব নিয়ে কনভেয়র বেল্টের পাশ কাটিয়ে দ্রুত ঢুকে পড়ি টিনশেডে। এটি একটি ফুটবল মাঠের মতো বড় আর ছয়তলার মত উঁচু হবে। একপাশে খড়ের গাদা, অনেকগুলো বাক্সো, ড্রামে রাখা কাঠের গুঁড়ো, আলফালফা। বীচ কালারের কয়েকটি দরজায় লেখা NOR Chamber. চারপাশে দেয়ালে রোমান হরফে লেখা রিটার্ন হোম। কিন্তু সব দরোজা বন্ধ। টয়লেট হতে এমোনিয়ার গন্ধ আসছে। ওখানে যাওয়া যাবেনা। পেটে চাপ নিয়ে সিঁড়ি দিয়ে উপরে যেতে থাকি। দুই তলা তিন তলায় কোন টয়লেট নেই। চতুর্থ তলায় ছোট ছোট কিছু ঘর। একপাশে শুকনো পাতা দিয়ে ঘেরা ছোট টয়লেট। উচ্চতা এত কম মনে হয় পিগমিদের তৈরি। তারই একটা থেকে একটা মেয়ে চিৎকার করতে করতে দৌড়ে বের হয়। তার মুখ চীনা কাঠের পুতুলের মতো। পেটের চাপ কমে এসেছে। আর কাউকে দেখা যাচ্ছে না। বিশাল কারখানার ভিতর প্রায় অন্ধকারে আমি একা। আর কোন মানুষ কিংবা প্রাণী নেই। এবার আমি সিঁড়ির দিকে এগুতে থাকি। একটা যান্ত্রিক কণ্ঠস্বর ভেসে আসে – জিপিএস ট্র্যাকার একটিভ। ইওর মুভমেন্টস আর রেকর্ডেড। রিটার্ন হোম।
রিটার্ন হোম
©টিটো মোস্তাফিজ
[ ফিচার্ড ফটো চ্যাটজিপিটি দিয়ে প্রস্তুত করা ]
অনলাইন ম্যাগাজিন পরমপাঠে প্রকাশিত
ডিসটোপিয়ান সাইন্সফিকশন
অনুপ্রাণিত
পুরাদস্তুর বাঙ্গাল
ভালোই হচ্ছে ভাই। চলতে থাকুক।
মানুষ* হতে চাই। *শর্ত প্রযোজ্য
শুভকামনা মাহমুদুল
পুরাদস্তুর বাঙ্গাল