সিংহভাগ
সিংহ, গরু, ছাগল আর ভেড়া মিলে অনেকগুলো পশু শিকার করেছে। গরু৷ ছাগল ও ভেড়াকে সিংহ বুঝালো শিকার করে জড়ো করে রাখা সমস্ত পশুই সিংহের প্রাপ্য। এটাকেই সিংহভাগ বলে। এমন সময় দৃশ্যপটে হাজির হলো তিনটে শেয়াল।
তাদের একজন বললো, ” আমি এই শিকারের তিন ভাগের এক ভাগ জরিমানা করলাম। কারণ সিংহ মশাইয়ের শিকারের লাইসেন্স নাই।”
আরেক শেয়াল বললো, ” আমি তিন ভাগের এক ভাগ নিচ্ছি সিংহ মশাইয়ের বিধবা স্ত্রীর জন্য। কারণ আইনে এমনটাই বলা আছে। ”
সিংহ বললো, ” আমার তো বিধবা স্ত্রী নেই। ”
তৃতীয় শেয়াল বললো, ” চুল বা লোম ভাগ করা ঠিক হবে না। আকালের বছর বিধায় আমি ৩য় ভাগটি বকেয়া খাজনা হিসেবে আদায় করলাম।”
সিংহ হুংকার দিয়ে বললো, ” কিন্তু আমি পশুদের রাজা।”
” ওহ্ মহোদয়! তাহলে তো আপনার হরিণের শিংও দরকার নেই। মুকুট আছে যেহেতু। ” এই বলে তারা হরিণের শিংটিও নিয়ে চলে গেল।
গল্পের নীতিকথা: সিংহভাগ নেয়া এখন অতটা সহজ নয় যতটা সহজ মনে হয়।
মূল: The Lion and the Foxes by James Thurber
তাঁতী ও রেশম পোকা
একটি তুঁত গাছে রেশম পোকার সুতার গুঁটি তৈরি করা দেখে বিস্ময়ে এক তাঁতির চোখ বড়বড় হয়ে গেল। সমীহের সাথে সে জিজ্ঞেস করলো, “ এটা তুমি কোথায় কোথায় পেলে?” রেশম পোকা সাগ্রহে জানতে চাইলো, “ তুমি কি এটা দিয়ে কিছু করতে চাও?” তার পর তাঁতি ও রেশম পোকা যারযার পথে চলে গেল। তারা দুইজনই ভাবলো অন্যজন তাকে অপমান করেছে। মানুষ কিংবা পোকা, আমরা এমন এক সময়ে বসবাস করছি যখন, ধরতে গেলে প্রত্যেকটি কথার অর্থ যে কোন কিছু হতে পারে। এই যুগটা নোংরা কথা, দুই রকম মানে আর ধাপ্পা।
গল্পের নীতিকথা: জ্ঞানীদের উদ্দেশ্যে বলা একটি শব্দই যথেষ্ট নয় যদি তা অর্থহীন হয়।
মূলঃ The Weaver and the Worm by James Thurber
মোটামুটি বুদ্ধিমান মাছি
মাছি ধরবার জন্য একটি বড় মাকড়সা একটি পুরোনো বাড়িতে সুন্দর জাল তৈরি করলো। প্রতিবার যখন কোন মাছি ঐ জালে বসে আর তাতে আটকে পড়ে, মাকড়সাটি তাকে খেয়ে ফেলে। যাতে অন্য মাছি আসলে মনে করে বিশ্রাম করার জন্য জালটি শান্ত এবং নিরাপদ। একদিন একটি মোটামুটি বুদ্ধিমান মাছি সেই জালের চারপাশে অনেকক্ষণ ধরে ভনভন করে উড়তে থাকলো। এই দেখে মাকড়সাটি বের হয়ে এসে বললো, “নেমে এসো হে, বসো, আমার বাড়িতে আজ মাছিদের দাওয়াত।” কিন্তু মাছিটি তার জন্য একটু বেশিই চালাক ছিল। সে বললো,“ যেখানে অন্য মাছি নেই সেখানে আমি কখনই বসবো না। আর আমি তো তোমার বাড়িতে অন্য মাছিদের দেখছি না।” তার পর সে উড়ে চলে গেল সেখানে, যেখানে সে অনেকগুলো মাছি দেখতে পেলো। সে যখন সেখানে বসতে যাচ্ছিল একটি মৌমাছি তাকে গুনগুনিয়ে ধমক দিয়ে বললো, “ থামো, বোকা। ওটা মাছির ফাঁদ ফ্লাইপেপার। মাছি গুলো ঐ ফাঁদের আঠায় আটকে পড়েছে।” মাছিটি রেগে গিয়ে বললো,“বোকার মত কথা বলো না। ওরা নাচছে।” তারপর সে অন্য মাছিদের কাছে গিয়ে বসলো এবং তাদের মতোই ফ্লাইপেপারের আঠায় আটকে বন্দী হয়ে পড়লো।
গল্পের নীতিকথা: সংখ্যায় বেশি হলেই নিরাপদ নয়, কিংবা অন্য কিছুতেও নয়।
মূল: The Fairly Intelligent Fly — James Thurber
অনুবাদ: টিটো মোস্তাফিজ