খুব ভোরে প্যারিসে পৌঁছালাম। সকাল ৮ টা। ইন্টারন্যাশনাল বাস টার্মিনালের অপেক্ষাগারে ক্লান্ত ও বিধ্বস্ত হয়ে বসে বসে ঠিক করে নিচ্ছি আজকের দিনের পরিকল্পনা। কোথায় আস্তানা গাড়বো সেটা নিয়ে আলোচনা চলছে আর এর মাঝেই এক আগন্তুকের আবির্ভাব। আগন্তুক আমাদেরকে তার বাসায় পেইং গেষ্ট হিসাবে থাকার প্রস্তাব করলো। প্রতিদিন ২০ ইউরো দিতে হবে বিনিময়ে থাকা এবং খাওয়া। ফ্রড হতে পারে এইকথা মাথায় থাকার পরও কেমন করে যেন আমরা রাজি হয়ে গেলাম। হয়তো লোকটার কোন সম্মোহনি ক্ষমতা ছিল আথবা আমরা এতই ক্লান্ত ছিলাম যে সিদ্ধান্ত নেবার মানসিক শক্তি আমাদের ছিল না। ভয়ে ভয়ে আমরা আগন্তুকের সাথে চললাম তার বাসার উদ্দেশ্যে। আগন্তুকের নাম চনো, কোরিয়ান নাগরিক। তার বাসায় পৌঁছার পর দেখলাম হুলুস্তুল ব্যাপার। এটা তাদের পারিবারিক ব্যবসা। বাসায় দুটা রুম আলাদা করে রাখা হয়ে টুরিস্টদের জন্য। প্রতি রুমে ৬ জনের থাকার ব্যবস্থা। চনো আর তার ভাই বাস টার্মিলান এবং ট্রেন স্টেশন থেকে টুরিস্ট সংগ্রহ করে নিয়ে আসে আর পরিবারের সবাই মিলে আদের আদর আপ্যায়ন করে। বাসার পরিবেশ দেখে আমাদের বেশ শান্তি শান্তি অনুভুতি হল। আমরা প্রথম যে কাজটা করলাম তা হল আয়েশ করে একটা ঘুম দিয়ে নিলাম। আমরা প্যারিসে ছিলাম চার দিন। এই চারদিন আমরা অনেক মজা করেছি। কোরিয়ান এই পরিবারটির সাথে বেশ ভাল বন্ধুত্ব করে ফেলেছি। ওরা আমাদেরকে চপ স্টিক দিয়ে খাওয়া শেখালো, ওদের কাছে আমরা প্রতিদিন রাতে কোরিয়ান ভাষা শিখতাম। অনেক অনেক মজা করেছি আমরা।

কোরিয়ান পরিবারটির সাথে আমি আর তৌহিদ

অপেরা হাউজের সমনে চনো'র সাথে আমি আর তৌহিদ
প্রথমদিন দুপুরে খেয়ে দেয়ে আমরা বের হলাম অন্নদাশংকরের “পারী” নগরী দেখতে। আসলেই ছবির মত একটা শহর। বিশাল বিশাল রাস্তাগুলো দেখে আমার প্রথমেই মনে হয়েছিল ছোট্টবেলায় পড়া ‘পারী’ গল্পটার কথা। শহরের যেকোন প্রান্ত থেকেই দেখা যায় পৃথিবী সপ্তাশ্চার্যের একটি আশ্চার্য সৃস্টি ‘আইফেল টাওয়ার’। বিশ্বাস করুন আর নাই করুন আমরা জেনারেল লাইন অব ডিরেকশন ধরে হাটতে হাটতে পৌঁছে গেলাম আইফেল টাওয়ারে। যেতে যেতে শহরও দেখা হল আবার যাতায়াত খরচটাও বেঁচে গেল। টাওয়ারের সর্বোচ্চ বিন্দুতে উঠে মনে হলো যেন বিশ্বজয় করে ফেলেছি। সেই অনুভুতি বর্ণনা করার মত ভাষা আমার জানা নেই।

আইফেল টাওয়ারের সামনে...

আইফেল টাওয়ারের উপর থেকে
পরদিন দেখতে গেলাম লুভর মিউজিয়াম। লুভর যে এত বড় যাদুঘর তা আমি স্বপ্নেও কল্পনা করিনি। দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার পর প্রবেশ করলাম যাদুঘরের ভিতরে। চারিদিকে এত সুন্দর সুন্দর শিল্পকর্ম দেখে আমরা নির্বাক হয়ে গেলাম। ম্যাপ হাতে নিয়ে ঘুরে ঘুরে দেখছি আর দেখে ফেলা অংশটুকু কেটে দিচ্ছি। একসময় আমাদের গন্তব্য ‘মোনালিসা’র নিকট পৌঁছে গেলাম। মোনালিসাকে ছুঁয়ে ফেলার দূরত্ব থেকে দেখতে পারার যে অনুভুতি তা বর্ণনা করার সামর্থ্য কি আমার আছে? ৭-৮ ঘন্টা ধরে দেখার পরও মনে হয় শেষ করতে পারলাম না লুভর দর্শন। শুধুই ভাল লাগা আর ভাল লাগা নিয়ে বের হলাম।

দ্যা লুভর

লুভরে সংরক্ষিত অরিজিনাল মোনালিসা

লুভরেরে ভিতরে...

এসো প্রনাম করি

আকর্ষনীয় শিল্পকর্ম
তৃতীয়দিন সকাল ৮ টা থেকে রাত ৯ টা পর্যন্ত পুরাটায় পার করলাম ‘ওয়াট ডিজনি ল্যান্ড’ এবং ‘ডিজনি স্টুডিও’তে। তারপরও সবগুলো রাইডে চড়তে পেরেছি কিনা আমার সন্দেহ আছে। যে প্যারিস ঘুরে এসেছে কিন্তু ডিজনি ল্যান্ডে যায়নি তার প্যারিস ভ্রমনই বৃথা। সবগুলো রাইডের কথা এখন আমার মনে নেই কিন্তু সেই অনুভুতিগুলো এখনো স্মৃতি ভেসে বেড়ায়। ভয়ঙ্কর ভয়ঙ্কর সব রাইড আর অভূতপূর্ব সব সৃস্টি শুধু মুগ্ধই করেনি সাথে দিয়েছে নির্মল আনন্দ যা আমি সারাজীবন বয়ে নিয়ে যেতে পারবো। ডিজনি স্টু্ডিও কোন অংশে ডিজনি ল্যান্ডের চেয়ে কম নয়। এই স্টুডিওর ভেতরেই তৈরী করা আছে পৃথিবীর বিখ্যাত বিখ্যাত সব শহর এবং যেখান থেকে ঐসব শহরের সব শ্যুটিং করা সম্ভব। এত সুন্দর ব্যাবস্থাপনা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন।

ডিজনি ল্যান্ড

ডিজনি স্টুডিও

ডিজনি স্টুডিও'র মধ্যে মাস্তি
প্যারিস দর্শনের শেষদিনে আরো কিছু ছোট বড় যাদুঘর দেখলাম। এর মধ্যে অপেরা হাউজ, নটরডেম বিল্ডিং, ন্যাশনাল মিউজিয়াম, প্যারিস গেট উল্লেখযোগ্য।

নটরডেম বিল্ডিং

প্যারিস গেট
প্যারিস দর্শনের মাধ্যমে আমাদের প্রথম পর্বের ইউরোপ ভ্রমন শেষ করতে হলো। চতুর্থদিন রাতের বাসে আমরা রওনা হলাম লন্ডন অভিমুখে। সারারাত বাসের মধ্যে ঘুমালাম। সকালে লন্ডন পৌঁছে গেলাম। বুকের মধ্যে কেমন যেন ফাঁকা ফাঁকা অনুভব করলাম, মনটা খারাপ হয়ে গেল। আর মাত্র দুইদিন পরেই সেকেন্ড টার্মের ট্রেনিং এর জন্য একাডেমিতে যোগদান করতে হবে। ভয় লাগছে, সবাই দোয়া করেন… (সময়টা ছিল এপ্রিল ২০০৪)
হমম....প্যারিস আসলেই অন্যন্য । এখন আসলে বরফে ঢাকা শুভ্র প্যারিস দেখতে পেতে।
দেখা ইচ্ছা ছিল ভাইয়া... তবে সময় করে উঠতে পারিনি...
তবে ইংল্যান্ডে মিলিটারি ট্রেনিং এর সুবাদে বরফে ঢাকা পাহাড় ও জঙ্গলে অনেকদিনই থাকতে হয়েছে...
মেহেদী,
ফ্রী ফ্রী প্যারিস ঘুরিয়ে আমার জন্য অনেক ধন্যবাদ। 🙂
ছবি সমেত লেখনী চমৎকার লাগলো।
:clap:
সৈয়দ সাফী
ধন্যবাদ ভাইয়া... ইনশাল্লাহ আগামীতে আরো কিছু শহর ঘুরিয়ে নিয়ে আসবো...
:'( paris jaite monchay :'(
সেই দিন খুব বেশি দূরে নয়... আসতে দাও, অপেক্ষা কর...
চ্রম তো! খুব ভাল্লাগলো পড়ে। একটানে প্যারিস!
হুম, একটানে...... ভাল লাগার জন্য ধন্যবাদ...
মনে হচ্ছিল চোখের সামনে সব দেখতে পাচ্ছি!!
ওফ টপিক-ইয়ে মেহেদী ভাই,ফরাসী তন্বীদের দিয়ে দুয়েক ছত্র লেখা যায়না? উনাদের কত সুনাম শুনেছি দাদা :shy: :shy:
আমি নিজেই চোখের সামনে ভাসা ভাসা দেখতে পাচ্ছি... অনেক দিন তো হয়ে গেল...
মাস্ফ্যু,যাও আইফেল টাওয়ারের সাথে লং আপ হয়ে থাকো x-(
ইয়ে বস,একটা টাইপো আছে মনে হয় 🙁 এইডা তো মনে হইতেছে নটরডেম বিল্ডিং-ঐ যে হাঞ্চব্যাক অফ নটরডেমের 🙁 একটু খিয়াল কৈরা দেইখেন আর আমার কমেন্ট মুইছা দিয়েন 🙁
তুমি ঠিকই বলেছ... বানানটা ভুল হয়েছে... ঠিক করে দিচ্ছি... ধন্যবাদ
ভালই এক্সারসাইজ হচ্ছে তাহলে...
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
হুম!! ভালই চলছে... তোর কি খবর...???
মেহেদী,
ফ্রী ফ্রী প্যারিস ঘুরিয়ে আমার জন্য অনেক ধন্যবাদ। :clap: :clap:
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
আপনাকেও ধন্যবাদ ভাইয়া...
প্যারিস .... ;)) ;))
প্যারিস গেটের পাশ দিয়ে লুভর পর্যন্ত যে রাস্তাটা চলে গেছে তার নাম বোধহয় Champs Elysee। অনেক সিনেমাতে এই রাস্তাটাকে দেখিয়েছে। এই রাস্তাটার উপর দিয়ে কি হেটে গেছ না টুরিস্ট বাসে ছিলে?
“Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
― Mahatma Gandhi
আপু, পুরাটাই হেটে গেছি... অনেক অনেক ভাল লেগেছে...
চমৎকার বর্ণনা, সাথে ছবিগুলো দেখে ভালো লাগল। :thumbup:
ধন্যবাদ ভাইয়া, আপনাদের উৎসাহ আছে বলেই তো টিকে আছি...
লেখা ভালো, জায়গা সুন্দর, চরম অভিজ্ঞতা; খালি একটাই ডাউট ছিল। কোরিয়ানদের রান্না করা খাবার খাইলা কেমনে? কুত্তা টুত্তা খাওয়ায়ে দেয় নাই তো?? 😕
অসম্ভব সুন্দর একটা ডাউট, আপনাকে ধন্যবাদ।
আসলে ওদের কাজই ছিল ট্যুরিস্টদের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করা, তাই এইদিকটা নিয়ে ওরা অনেক সচেতন ছিল, আমাদের তেমন কোন সমস্যা হয়নি......
আর রয়েল মিলিটারী একাডেমিতে এক বছরে যে আমি কি কি খেয়েছি তার কোন ঠিক ঠিকানা নেই... সেই সব কথা মনে না করাই ভাল, ঐ সময়টাতে মনে হয় আমি সর্বভুক হয়ে গেয়েছিলাম... হা হা হা হা...
very nice expedition
অনেক ধন্যবাদ ... 😀
দেরী হয়ে গেলো ভাইয়া মন্তব্য করতে,
চমৎকার লাগলো 🙂
আছো কেমন?
ভাল আছি ভাবীপ্পু... দিনকাল কেমন যাচ্ছে...??? ট্যুর কি শেষ, কেমন হল...??
যাওয়া দরকার দেখি