গত কয়েকটাদিন ধরে আমার মাথা ঠিকমতো কাজ করছেনা। হয়তো এর কারন আমি সারাক্ষণ কেনাকাটা আর গোছগাছ নিয়েই বেশি ভাবছি। ফ্লোরিডার সুদীর্ঘ
৫ বছরের পড়াশোনা আমার শেষ হয়ে এলো প্রায়। আর একটি মাত্র মাস, এরপর আমি ফিরে যাব আমার দেশে, আমার ভালবাসার দেশ, বাংলাদেশে! ও আমার মা,
আমার আমার প্রিয় জন্মভূমি, কবে আবার তোমার দেখা পাবো, পাবো তোমার স্নেহের স্পর্শ! কবে তমার বুকের শিশিরভেজা ঘাসের মাঝে হেঁটে বেড়াবো। কবে আসবে সেই দিন, যেদিন তোমার উন্মত্ত বৃষ্টিতে আমি ভেসে যাব তোমার সাথে!
আর তর সয়না আমার, তোমার ভাবনাই আমাকে সারাটিক্ষণ ঘিরে রেখেছে।তাই যখন শেষ প্রতিবেদনটার বিষয়টি আমার হাতে এল, একদম অকুল পাথারে পড়ে গেলাম। বিষয়টি হলো “একটি স্বর্গের পথে যাত্রা” যদিও এটি তৈরী করা আমার জন্যে খুব দরকারী ছিলো, তবুও জানিনা কেন,ক্লাস থেকে বের হতেই ব্যাপারটা আমি বেমালুম ভুলে গেলাম। বাইরে ঝকঝকে রোদ। ওপরে তাকালে দেখতে পাই মেঘমুক্ত সুনীল আকাশ, আচ্ছা, আকাশ টা কি বাংলাদেশ থেকেই বেশী সুন্দর দেখায় না?ভেবে নিজের মনেই হাসলাম। এরপরে গেলাম আমার অফিসে, যেখানে আমি পার্টটাইম কাজ করি।সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে কিছু কেনাকাটা করে বাসায় ফিরলাম। এই কাজ টা মনেহয় আমার কোনদিন এ শেখা হবেনা! এলিসা, আমার বন্ধু তাই সবসময় খুব সাহায্য করে।
যতদিন যায়,তত বাড়ে আবেগ, উৎকন্ঠা। আরো উতলা হয়ে উঠছি দেশে ফেরার জন্য।জীবন এখানে সত্যিই রঙ্গিন। তবুও মন কে টানে সেই ছোট্ট দেশটি,আর টানে
পথ চেয়ে বসে থাকা দুখিনী মা আমার।চখে আজও ভাসে সেই দিন, যেদিন মা আমার চোখের জলে বুক ভাসিয়েছিল। আর না মা, তোমার জন্য অপার গর্ব আর আনন্দ নিয়ে ফিরে আসছি আমি।
ডেনমার্কের এলিসা,কলোরাডোর রিটা,ইন্ডিয়ার অনিতা আর আমি, একসাথে ছোট্ট একটা বাসায় থাকি।ওরা সবসময় আমার হোমসিকনেস নিয়ে হাসাহাসি করে। কিন্তু ওরা না থাকলে হয়ত আমি কখনই আমার পরিবার ছেড়ে এত দূরে এসে বেঁচে থাকতে শিখতাম না।যদিও একে অপরের থেকে অনেক ভিন্ন, তবুও আজ যেন হৃদয় গুলো একই সুরে গায়, একই গান। ওরা বলে আমার নাকি কোনোদিনই বড় হয়ে ওঠা হবে না!অনিতা বলে আমার গল্পের ঝুড়ি নাকি এতই বড়, প্রশান্ত মহাসাগরের নিচেও তার জায়গা হবেনা!
ওদের সাথে শেষ দিনগুলো আমার বেশ হেসেখেলে চলে যাচ্ছে।হঠাৎ একদিন ফাইল ঘাঁটতে গিয়ে হাতে আসলো সেই প্রতিবেদন টা। ভয়ে তো আমি শেষ, কারণ জমা দেয়ার শেষ তারিখ কাল। এমন অবস্থা, কি যে করব বুঝতেই পারছিনা।
ঠিক তখনই চোখে পরলো টেবিলের উপরে রাখা বাংলাদেশের একটা পোস্টকার্ড।এক অজানা আনন্দে শিহরিত হলাম! ভাবলাম, আমার দেশ টা কি স্বর্গের চেয়ে কিছু কম? তখনই কাজে বসলাম। রাত জেগে তৈরী করলাম একটা লিখিত রিপোর্ট, একটা ভিডিও ক্লিপ,আর কিছু সাউন্ড ট্র্যাক। ব্যাস, কাজ শেষ। প্রশান্তি নিয়ে ঘুমাতে গেলাম।
একটু পরেই এলার্ম বেজে উঠলো প্রবলভাবে।তাড়াতাড়ি করে উঠে তৈরী হয়ে নিলাম,রওয়ানা হলাম আমার ইউনিভার্সিটির উদ্দেশ্যে আমার আজ প্রতিবেদন প্রেজেন্টেশনের দিন।একের পর এক সবাই যাচ্ছে……আমার ও পালা এলো। দুরুদুরু বুকে এগিয়ে গেলাম। সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে সিডীটা প্লেয়ার এ দিলাম প্রজেক্টরের সুবাদে ছবিটা পুর দেয়াল জুড়ে দেখা যাবে।একে একে সব বাতি নিভিয়ে দেয়া হলো।
সে এক অন্য আলো আঁধারের খেলা।আবছা সেই আঁধারে অদ্ভুত, মুগ্ধ করা একটি অতি পরিচিত সুর ধীরলয়ে বেজে উঠল। আবেগে যেন আমার দু চোখ বুজে আসে।বেশী না, হয়তো দুটি মুহুর্ত।আত্মবিশ্বাসে নিজেকে ভরে নিয়ে চোখ খুলি।প্ররদায় দেখা যাচ্ছে আমার দেশের পতাকা।এক বিস্ময় ভরা সরল চিত্র।আমি শুরু করলাম, “অসাধারন, তাইনা?আমাদের দেশের জাতীয় সঙ্গীত এটই। আর এটা আমার দেশের জাতীয় পতাকা।আমি খুব ছোট্ট একটা দেশ থেকে এসেছি যার নাম বাংলাদেশ।আর আমি মনে করি আমার দেশটি সেওরগের চেয়ে কোন অংশে কম নয়।এই সেই দেশ,যেখানে মাঠের সবুজ আর আকাশের নীল মিলেমিশে হয় একাকার,সৃষ্টি করে সেই স্বপ্নিল আবেশ,যা তাকে করেছে স্বর্গের চেয়ে সুন্দর।“ এরপর আমি শুধু বলে গেলাম।চখদুটো আমার স্বপ্নীল হয়ে ওঠে,মন হারিয়ে যায় তারই মাঝে। আমি জানিনা আমি কোথায় আছি,শুধু জানি আমার অনুভূতি।কথা বলছি আমাদের ভাষা আন্দোলন নিয়ে।মুক্তিযুদ্ধ,শহীদ,সাধারন মানুষ,নদী,পাহাড়,ক্ষেত নিয়ে, না হয় বলছি গান,ভাষা,রীতি প্রথা, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য,সমাজ নিয়ে,আরো না জানি কতো কি নিয়ে।চোখে বারবার পানি চলে আসে।আমার কন্ঠ বাকরুদ্ধ হয়ে আসে।কিন্তু আজ তার পরোয়া করিনা।
আমি শুধু জানি আমি কতো খুশি,আমি সেই স্বর্গের দেশে ফিরে যাচ্ছি।শেষে আমি বললাম, হয়তো আমরা নিখুঁত নই, হয়তো অনেক খারাপ।হয়তো আছে দূর্নীতি, দারিদ্র। তবুও সব জেনেই আমি এই দেশটাকে ভালবাসি।একে নিয়েই স্বপ্ন সাজাই।কারন এই বাংলাদেশ আমার জন্মভূমি।আর মায়ের প্রতি সন্তানের এই অধিকার আমার থেকে কেউ ছিনিয়ে নিতে পারবেনা।আমি চোখ খুললাম।বাতিগুলো
জ্বলে উঠল।প্রতিটি চোখে আমি দেখলাম আনন্দ,বিস্ময় আর ভালোবাসার অশ্রু।তালিতে ফেটে পড়লো পুরো ক্লাস।আর যেন থামতেই চায়না!
জেনি নামের একটি মেয়ে আমাকে বলল,’এত সুন্দর দেশটা ছেড়ে তুমি এতো দূরে কিভাবে ছিলে?”
আমি হেসে বললাম,আর দেরী না, আমি অনেক অপেক্ষা করেছি। এবার আমার ফেরার পালা।
:thumbup:
অসাধারন ...... তুমি তো দেখি গল্পও দারুন লেখো ......
তুমি তো দারুন লেখো আপু :clap: :clap: :clap: :clap:
কবিতা গল্প সবই জোশ :thumbup:
থ্যাঙ্কু থ্যাঙ্কু ভাইয়া! অনে------ক থ্যাঙ্কু!
নিজে যেমন, নিজেকে তেমনি ভালবাসি!!!
আপু আই এম সো প্রাউড অফ য়ু! :boss: :boss:
পড়লাম এবং অবাক হলাম তোমার প্রকাশ ভংগী দেখে।
বুকে আলোড়ন তুললো, অসাধারণ!! অসাধারণ!!!
:hatsoff: :hatsoff:
হিংসা!হিংসা! 😛
কবিতা লেখা ছেড়ে দাও।গল্প লেখবা খালি!
:boss: :boss:
People sleep peaceably in their beds at night only because rough men stand ready to do violence on their behalf.
আমার আম্মু আমাকে এটা লিখতে অনে----------------ক হেল্প করেছে। তাই আমার আগে আম্মু ক্রেডিট পায়!
নিজে যেমন, নিজেকে তেমনি ভালবাসি!!!
কী......আন্টির গল্প মাইরা দিসো??...বাহবা!
People sleep peaceably in their beds at night only because rough men stand ready to do violence on their behalf.
মারিনাই...... লিখে বাসায় নিয়ে আসছিলাম, কলেজে কাউকে দেখাইনাই...।আম্মু খুব ইন্সপায়ার করলো......আর কয়েকটা জায়গা ঠিক করায় দিল...... পুরা ভাব ই বদলায় গেল!
নিজে যেমন, নিজেকে তেমনি ভালবাসি!!!
আন্টিকে অনে—————-ক শুভেচ্ছা, সাথে তোমাকেও। 🙂
ভালো হয়েছে গল্পটা।
ঐ
ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ
আপু তোমার কবিতাগুলোতে ইচ্ছে করেই কমেন্ট করিনাই... গল্পে করলাম।
হয়তো একদিন দূর দেশে তুমিও এই গল্পের মতই ভাবতে পারবে।
আন্টিকে সালাম।
অসাধারন অসাধারন অসাধারন!!!
বিদেশ বিভুইয়ে বসে লেখাটা পড়ছি। একারণেই কি চোখটা একটু ভিজে গেল?
৫তারা অবশ্যই।
উত্তর জানা নেই। :(( :((
আপু, তুমি দেখছি শুধু কবিই নও; অসাধারণ গল্পকারও। ভালো লেগেছে বললে বোধহয় কম বলা হয়। :salute:
আমি তবু বলি:
এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..
ছোট আপু তুমিতো শুধু ভালো কবিতা লিখোনা সুন্দর গল্পও লিখো।
খুব সুন্দর হয়েছে। 🙂
আন্টিকে সালাম আর শুভেচ্ছা।
চমৎকার লিখেছ।
ঠিক তিনমাস আগে বাংলাদেশের উপর এমনই একটা উপস্থাপনা করেছিলাম আমি । সেখানে সবাই খুব আগ্রহ নিয়ে শুনেছে। আমি যখন স্লাইডে দেখিয়ে বর্ণনা করছিলাম কিভাবে উৎসবে উৎসবে আমাদের মেয়েদের শাড়ীর রং ও সাজসজ্জা বদলে যায় সবাই খুব অবাক হয়েছিল। সবাই আমাকে অসংখ্য প্রশ্ন করেছিল ৭১ নিয়ে, ভাষাদিবস নিয়ে, শহীদ মিনার নিয়ে, বাংলা নববর্ষ নিয়ে। সত্যিই আমার ঠিক তোমার গল্পের মতই অনুভূতি হয়েছিল।
সবচেয়ে মজা হয়েছিল, আগের প্রেজেন্টেশনে ইথিওপিয়ার একছেলে দুই তারের একটা বাদ্যযন্ত্র দেখিয়ে গর্ব করে বলেছিল যে মাত্র দুটি তার দিয়েই সেই যন্ত্র চমৎকার সুর তোলে। তাকে আমি যখন একতারা দেখিয়ে বলেছিলাম যে এটি একতারেই চমৎকার সুর তোলে তখন তার গর্ব ভেঙ্গে চুরমার ।
প্রেজেন্টেশনের একটা ছবি শেয়ার করলাম :
ধন্যবাদ মান্নান ভাই শেয়ারের জন্য
:boss:
চ্যারিটি বিগিনস এট হোম
বুকে আলোড়ন তুললো, অসাধারণ!! অসাধারণ!!!
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
পড়লাম। 😀
আমার মাথাটা বুঝি গেল.......গল্প যে এটা খএয়ালই করিনি......মাথায় ঢুকছেনা কি করে বর্তমান একজন ক্যাডেট ৫বছর বাইরে পড়ছে....... ~x( ~x(
যাক দারুণ লাগলো ভাইয়া... :clap: ...আরো লেখ...... :thumbup:
থ্যাঙ্কু ভাইয়া! ভালো লাগছে এতো সাড়া পেয়ে!
নিজে যেমন, নিজেকে তেমনি ভালবাসি!!!
বেশ ঝরঝরে লেখনী তোমার :thumbup:
পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না
আমি আসলে বুঝলামনা!
নিজে যেমন, নিজেকে তেমনি ভালবাসি!!!
গল্পের বিষয়টা খুব সুন্দর৷
কিন্ত আপু, গল্পটা পড়ে বিষয়ের 'সুন্দর'টা ঠিকমতো উপভোগ করা গ্যালো না৷ তবে এও বোঝা গ্যালো, গল্পকারের পরের গল্পগুলো অনেক বেশি ভালো লাগবে৷
তোমার পরের গল্প পড়ার অপেক্ষায় রইলাম৷ 🙂
দিবো ভাইয়া , পরের ছুটিতে
নিজে যেমন, নিজেকে তেমনি ভালবাসি!!!
অনেক সুন্দর। অনেক অনেক অনেক সুন্দর। 🙂 🙂
বেশ কয়েকটা টাইপো আছে, ঠিক করে নিয়ো। টাইপোর জন্য ভাবটা ঠিকমতো নেয়া যায় না অনেক সময়। 🙂
ক্রেডিট কার? লুবজানার নাকি আন্টির?
লেখাটা খুবই ভাল হয়েছে। :hatsoff:
চ্যারিটি বিগিনস এট হোম
তোমার লিখাটা খুব ভালো লাগলো. আরো অনেক লিখা চাই.তুমি কি সদাচার???.তোমার সাথে আমার নামের মিল আসে.আমি লুবনা জাফরিন 952.
জাফরিন আপা!!! কেমন আছেন আপনি?? কোথায় এখন আপনি?
আমি সদাচার!!! আপা আপনার নাম দেখসি! অনার বোর্ডে!
নিজে যেমন, নিজেকে তেমনি ভালবাসি!!!