একঃ
ইলেকট্রিসিটি একবার ড্রপ করতেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে ২য় জেনারেটর চালু হয়েছে। টেকওভার করার আগে এত নিখুত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখে নেয়ার পরেও কিভাবে এমন অঘটন ঘটলো কারো মাথায় আসছে না। জ্বালানী হিসেবে এখনকার আধুনিক যানগুলোতে টেনটিনাম-৩ ব্যবহার করা হচ্ছে, সেখানে আমাদেরটায় টেনটিনাম-৫ ক্যাটাগরি ব্যবহার হচ্ছে। এত সহজেই ফুরিয়ে যাবার কথা না।
প্রফেসর সাইফুনো সবাইকে অভয় দিয়ে বললেন, “ঘাবড়ানোর কিছু নাই, ইভানা আর ইফতান গোলযোগ খতিয়ে দেখছে, রোবো-ফাইটারস্ নিচে পাঠানো হয়েছে, গ্রীন সিগন্যাল পেলেই ল্যান্ড করা হবে, তোমরা তৈরি হয়ে নাও।” B-)
জানালা দিয়ে নিচে তাকালাম, পুরো গ্রহটা সবুজ আর সবুজ। দুরের লাইট সোর্সটা খুবই পাওয়ারফুল মনে হয়। চারিদিক এত আলোকিত করে রেখেছে, আগের মত অতটা ভয়ংকর দেখাচ্ছে না আর। ওইদিকের বড় একটা পাহাড়ের মত জায়গা থেকে লিকুইড জাতীয় কিছু অনবরত নিচের দিকে পড়ছে, অদ্ভুত সুন্দর লাগছে, এই জিনিস আমি আগে দেখিনি! Hauka-13 এর নামে যত ভয়ানক সব কথা শুনেছিলাম, দেখে অতটা ভয়নক তো লাগছে না। আমার দেখেদেখি তাজিন, তৌফিন, রাহানও এসে তাকালো বাইরে। এখানে ভয়ানক কিছু আছে বলে মনে হয় তোমার, তাজিন??
তাজিনঃ জিকোন, বাহ্যিক বৈচিত্র্য দেখে ভেতরের বিচার করতে যেও না। রোবো-অভজার্ভারগুলো কি এমনি এমনিই আনডিটেক্টেবল হয়ে গেলো!!! x-(
তৌফিনঃ হুম, তাজিন ভুল বলো নি। অবশ্যই কোথাও ঘাপলা একটা আছে। তবে শুনলাম এই কিছুক্ষণ আগে নাকি আমাদের পাঠানো অবজার্ভার রোবোটের একটা থেকে অল্প কিছুক্ষণের জন্য একটা উইক সিগন্যাল পাওয়া গিয়েছিলো। ঐ সিগন্যাল ডিটেক্ট করেই তো এখানে ল্যান্ড করার সিদ্ধান্ত হলো।
রাহানঃ গ্রহের বাসিন্দা যেই হোক না কেন, এখন দেখার বিষয়, কিছু করার আগেই ওরা আমাদেরকে শ্ত্রু মনে করে না বসে। ওদের টেকনোলজির আওতা আমাদের তুলনায় কত শক্তিশালী সেটাও আমলে আনার মত ব্যাপার। :dreamy:
ওদের কারো কথাই আপাতত খুব একটা আমলে আনতে ইচ্ছে করছে না। আমার বিশ্বাস কোন ক্ষতি হবে না আমাদের। যাই হোক, সেলে এসে ড্রেস ইকুইপমেন্ট নিয়ে তৈরি হয়ে এলাম সবাই। শুধু সাইফুনোর আদেশের অপেক্ষায় আছি এখন। ইভানা আর ইফাতও এসে পড়েছে ইতোমধ্যে।
তাজিন চোখ টিপে বললো, কী!! মাইক্রোবায়োলজিস্ট আজকাল স্পেসশীপ এর মেকানিক্স নিয়েও পরাশুনা করছেন মনে হচ্ছে।;;;
ইফতান চোখ উল্টিয়ে ভেংচি দেয়ার মত একটা ভঙ্গি করলো। যার মানে সম্ভবতঃ “হ্যা, তোমার মাথা”। :chup:
আসলেই তাই, মাইক্রোবায়োলজিস্ট শুধু নামেই, অথচ ঐ সাবজেক্ট ছাড়া আর বাকি সব সাবজেক্টেই তার আগ্রহ একটু বেশিই অসীম। আর মোটামুটি পারেও সেগুলো। আসলেই পাগল কিছিমের এক চিড়িয়া।
সাইফুনো এসে গেছে। রোবো ফাইটার থেকে পাঠানো ডাটা রিসিভ করা হয়েছে। পরিবেশ অনুকুলই বলা চলে। এয়ার হিউমিডিটি, অক্সিজেন কন্সেন্ট্রেশন, কার্বন-ডাইঅক্সাইড অক্সিজেন অনুপাত, তাপমাত্রা সবই মোটামুটি কন্ট্রোল্যাবল। তবে কার্বন-ডাইঅক্সাইড এর পরিমাণ আমাদের থেকে ১১% বেশি দেখানো হয়েছে স্ক্রীনে। সেটা সমস্যা না অবশ্য। অপারেটিভ প্রসিডিউরে প্রত্যেক নভোচারীর ব্রেইনেই এনভায়ো-মডুলেটর চীপ স্থাপন করে দেয়া হয়। সেখানে কার্বন-ডাই-অক্সাইড আরো ২০% পর্যন্ত বাড়িয়ে দেয়া হলেও রেজিস্ট করার ক্ষমতা আছে। তার চেয়েও মজার আরেকটা যন্ত্র দিয়ে দেয়া হয়েছে আমাদেরকে। যন্ত্র না বলে যন্ত্রাংশ বলা উচিত। সাইজে ২-৩ সে.মি. হবে হয়তো। কানের পেছনে লুকিয়ে রাখা আছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত ব্যবহার করার অনুমতি পাওয়া যায় নি। এটা দিয়ে ইচ্ছা করলেই সামনের যে কোনও একজনের ইমেজ এ্যবজর্ভ করে নিমিষেই তার মত নাকি ডুপ্লিকেট হয়ে যাওয়া যায়। তবে সমস্যা হলো শুধুমাত্র একজনের-ই ইমেজ কপি করা যায়, একেকবার একেকজনের ডুপ্লিকেট হয়ে মজা করে বেড়াবো তার উপায় নাই। এখন পর্যন্ত পরখ করে না দেখলেও ব্যাপারটা দারুন লেগেছে। কিন্তু এই প্রযুক্তি কোথায় খাটানো যেতে পারে এখন পর্যন্ত আবষ্কার করতে পারি নি।
ডাঃ মিনির নির্দেশে ফিজিও-চেকআপ কেবিনে ঢুকলাম। গ্রহের মাটিতে নামার আগে শেষ চেক-আপ। ফিজিক্যাল ও নিউরোলজিক্যাল স্ট্যাটাস পর্যবেক্ষণের জন্য এই ব্যবস্থা। দুই থেকে তিন মিনিটের ব্যাপার। কেবিন থেকে বের হয়ে স্ক্রীনে নিজের হেলথ্ স্ট্যাটাস রিপোর্ট দেখে বেশ প্রফুল্ল লাগছে। “You are completely capable to survive. Your Blood Sugar OK, Oxygen Saturation Ok………etc etc” নিজেকে পরিপূর্ণ সুস্থ্য কল্পনা করতেও শান্তি। সাইফুনোর কেবিনের সামনের স্ক্রীনে রেড সিগন্যাল জ্বলছে, সাথে সাথে লেখাসহ যান্ত্রিক ভয়েজ- “Please take 1drip Insulin Spray immediately, your sugar level is vulnerable.” ইভানা আর তাজিনের মুখ চেপে রাখা মিচকে হাসি চোখ এড়ালো না। সবার সামনে কম্পিউটারের মুখে এমন গায়েবী বাণী পেয়ে সাইফুনো কিছুটা লজ্জাই পেলো মনে হলো। এতগুলো তরতাজা সুস্থ্য মানুষের ভিড়ে একলাই Vulnerable, তাও আবার সেইটা একটা যন্ত্রের মুখে ঘোষণা, লজ্জা একটু পাওয়ারই কথা। :p
“ও.কে. জেন্টেলম্যান, গো গেট ইট”- সাইফুনোর মুখ থেকে এমনি কোনো কমান্ড আশা করেছিলাম। কিন্তু সবাইকে নিরাশ করে দিয়ে কোনরকম আদেশের তোয়াক্কা না করেই হন হন করে মেইন গেটের দিকে রওনা দিলেন আমাদের চীফ। সবার হাতে আল্ট্রালেজার গান দেয়া হয়েছে। তাজিনেরটা আমাদের চেয়ে কিছুটা উন্নত জাতের মনে হচ্ছে। ক্যাপ্টেন মানুষ, আমাদের প্রতিরক্ষার দায়িত্ব তার কাধে, তাকে একটু স্পেশাল জিনিস দেয়া হবে এটাই স্বাভাবিক। জুয়োলজিস্ট রাহান এক মাঝারি সাইজের বেঢপ বাক্সের মত ব্যাগ কাধে নিয়েছে, ভেতরে কী আছে কে জানে। মিনি চিকিৎসক, স্পেশাল কোনও ড্রেস পড়া উচিৎ ছিলো, সাদা এপ্রনের মত কিছু একটা, কিন্তু সে পড়েছে আর্মি কম্ব্যাট ড্রেস, দেখে কেউ ভুলেও ডাক্তার মনে করার কথা না। ইফতান, তৌফিন-কে মোটামুটি নরমাল লাগলেও ইভানাকে চুড়ান্ত উৎসাহী লাগছে পুরোপুরি, চোখে-মুখে যুদ্ধ-পূর্ববর্তী একটা ভাব লেগে আছে, উদ্দীপনার আলো ঠিকরে বের হচ্ছে ওর মুখ থেকে, পুরনো আমলের বল্লম যুদ্ধের মত শুধু একটা “আক্রমণ” কমান্ডের অপেক্ষা করছে যেন, বলা মাত্র ঝাপিয়ে প্রাণ দিয়ে মহিলা-গাজী হয়ে যেতে প্রস্তুত এমন। মিনি, রাহান এর আগেও স্পেস-রিসার্চে অংশ নিলেও কোনও জীবনের চিহ্ন পাওয়া গ্রহে ল্যান্ড করার মত অভিজ্ঞতা আমাদের সবারই প্রথম।
পুরো যানটা একটা বেশ বড়সড় ঝাকুনি দিয়ে শেষে স্থির হলো। ইভানা ইঞ্জিন বন্ধ করে এসে পাশে দাড়িয়েছে। আবারো ওর উদ্দীপনাদীপ্ত আলোয় আরেকবার ঝলসে গেলাম।
-“জিকোন, ভয় পেয়ো না, ও.কে.?” পিচ্চি মেয়েটার কাছে আশ্বাস বাণী শুনতে হবে ভাবিনি। হাসবো না কাঁদবো বুঝলাম না। মুচকি হেসে বললাম, আচ্ছা ;;)
সুইচ টিপতেই হাইড্রোলিক ডোর চাপা একটা শব্দ করে খুলতে শুরু করলো। সাইফুনোর পিছে পিছে ভীরু পায়ে সাত যোদ্ধার সেই যে গ্রহে পদার্পণ। সামনে বিস্তীর্ণ জায়গা জুড়ে লম্বা লম্বা খাড়া করা এক ধরণের কিছু একটা। নিচে নামার পর বুঝতে পারলাম সবুজের উৎস কী। রাহান জানালো এসবের নাম ‘গাছ’। আমাদের জুপিটারে কখনো দেখিনি এমন। সারি সারি ঘন গাছের জন্যই উপর থেকে সবুজ কার্পেটের মত লাগছিলো জায়গাটাকে। রাহান কাধের বক্সের মত ব্যাগ নামিয়ে ওগুলোর স্যাম্পল কালেকশনে লেগে গেলো।
-যাক, এতক্ষণে একটা কিছু কাজ পেলে তাহলে। ইফতানের গলায় বিদ্রুপের ছোয়া। ;))
রাহানঃ “হ্যা, তোমার মত নিষ্কর্মা থাকতে বোরিং লাগছে যে। প্যাক প্যাক না করে এদিকে এসে একটু হাত লাগাও। ব্যাগ থেকে পেট্রিডিশটা দাও”। 😡
সবাই ইফতানের দিকে করুণ দৃষ্টি দিলাম, সেই দৃষ্টিতে যে ‘ব্যাপার না, বাঁশ মাঝে মাঝে খেতে হতেই পারে’-এইটা ছিলো সেটা ওর নিজেই বুঝে নেবার কথা। একটু দূরে জঞ্জালের একটা স্তুপ দেখা যাচ্ছে। রোবো-ফাইটারের দেখানো ইন্ডিকেটরে ওইদিক থেকে একটা সিগন্যাল আসছে খুব সম্ভবত। সামনে ক্যাপ্টেন তাজিন আর সাইফুনো ওই পথেই এগুচ্ছে মনে হলো। রাহান আর ইফতানকে ডাক দিয়ে বাকি সবাইও সেই পথ ধরলাম। এখন পর্যন্ত কোনও বিপজ্জনক কিছু চোখে পড়ে নি।
কাছাকাছি যেতেই সিগন্যালটা আরো জোড়ালো হতে লাগলো। সবার হাতে লাগানো ইন্ডিকেটর রিসিভারে বিপ্ জ্বলে উঠলো একসাথেই। মানে সবাইকে এলার্ট হতে বলা হচ্ছে, আশেপাশে প্রাণের চিহ্ন বড়জোড় এক মিটারের মধ্যেই। সামনে একটা পুরোনো বাড়ির কাছে পুরোনো যুগের রাস্তায় চলাচলের জন্য ব্যাবহার করা যানের মত একটা জিনিস দাড়া করানো। তার অর্থ আশেপাশে অবশ্যই কোথাও এর মালিককেও পাওয়া যাবে। তাজিনের নির্দেশে সবাই আগের চেয়েও এলার্ট হয়ে একপাশ দিয়ে একজন আরেকজনকে কাভার দিয়ে সামনে এগুচ্ছি। মাটির সাথে লাগানো মেটালের একটা দরজার মত অংশকে টান দিতেই খুলে আসলো। নিচের দিকে সিড়ি করা। আল্ট্রা-লেজার গানের লাইট অন করে তাজিনের নির্দেশে সবাই নিচে নামা শুরু করলাম। ফ্লাশের আলো জ্বলতেই নিজের চোখকে বিশ্বাস হলো না যেন। সামনে এক কোনায় সত্যিই জীবন্ত ছয়টা মানুষ। ওদের একজনের হাতে আমাদের সেই অবজার্ভার রোবটের একটা। সত্যিই তাহলে এই গ্রহে প্রাণের আবিষ্কার করতে পারলাম তাহলে আমরা!! হঠাৎ ওদের কেউ একজন কিছু একটা সজোড়ে ছুড়ে মারলো সাইফুনোর-র দিকে……
দুইঃ
কিছু বুঝে ওঠার আগেই হঠাৎ করেই সামনে পড়ে থাকা ইটটা তুলে ওদের দিকে ছুড়ে মারলো জ্যাকি। সামনের লোকটা নিমিষেই মাথা কাত করে নিজেকে বাচালো। আর সাথে সাথেই একটা প্রচন্ড উজ্জ্বল আলোয় চোখ ধাধিয়ে গেলো যেনো। সেই আলোয় সামনে আর কিছু দেখা যাচ্ছিলো না। যতক্ষণ জ্ঞান ছিলো নিহাদ প্রাণপণে চোখ খুলে রাখার চেষ্টা করেছিলো। অস্ত্রের লড করার শব্দ ছাড়া আর কিছু মাথায় ঢুকছিলো না। কেউ একজন এসে জ্যাকির মাথার কাছে একটা অস্ত্র ঠেকালো মনে হয়। এরপর সব ঝাপসা।
জ্ঞান ফিরে আসার পর চারদিকে তাকিয়ে বুক কেপে উঠলো সবার। সম্পূর্ণ নতুন আর অদ্ভুত একটা জায়গায় বন্দী ওরা। পাশাপাশি কয়েকটা বিছানায় তিতিনা, নিনি, দীপ, সান সবাইকে হাতে নাইলনের স্ট্রাইপের মত কিছু একটা দিয়ে বেধে রাখা হয়েছে। নিহাদের মনে হলো স্বপ্ন দেখছে না তো!! এটা কী সেই ক্রেনের লোকজনের কাজ। এখানেই নিশ্চই ফিদো আর ফারিনকেও ধরে আনা হইছে। আশে পাশে তাকিয়ে খুজতে শুরু করলো নিহাদ। তখনি চোখ পড়লো জ্যাকির উপর। জ্যাকিকে আলাদা করে একখানে বেধে রাখা হয়েছে। ওর মাথায় একটা ভয়ানক দেখতে অস্ত্র তাক করা। যে অস্ত্র ধরে আছে তার দিকে চোখ পরতে নিহাদের আত্মা উড়ে যাবার জোগাড়। অস্ত্র হাতে যে দাড়িয়ে আছে সে আর কেউ না, আরেকটা নিহাদ!!! পুরোপুরি এবার আশ্বস্ত হলো এটা শিওর স্বপ্নই হবে। কিন্তু কোথায় স্বপ্ন, কোথায় কী! ওর হাতের বাধন খুলে দিতে যে এসেছে সে আরেক জ্যাকি! সাথে সাথে চেয়ারে বাধা জ্যাকির দিকে তাকায় নিহাদ, সেখানে ঠিকই জ্যাকি বাধা!! চোখ বুজে চিৎকার করে ওঠে নিহাদ!!! সামনের স্টেজের মত উচু জায়গাটা থেকে সিড়ি দিয়ে নেমে আসতে দেখা গেলো আরেক নিনি, তিতিনা, দীপ, সানকে……!!!
(To be Cont…)
সায়েন্স ফিকশন লেখা খুবই কঠিন কাজ। যেহেতু এই দুঃসাহসী পদক্ষেপ নিয়েছো, তাই ধরে নিচ্ছি, তুমি সায়েন্স ফিকশনের বিশাল ফ্যান।
আমার কাছে যেটা মনে হয়, সায়েন্স ফিকশন গল্পগুলোর মূল চ্যালেঞ্জটা হলো, সম্পুর্ন আলাদাধরনের একটা বা কয়েকটা পৃথিবী বা সমাজ বা মানবগোষ্ঠীর বর্ণনা দেয়া। এবং কাল্পনিক ব্যাপারগুলোকে কিছুটা যৌক্তিকভাবে সাজানো। এই যেমন, তুমি যদি স্টার ট্রেক সিরিজ দেখে থাকো বা পড়ে থাকো তাহলে অবশ্যই জানো যে, ওদের স্টার শীপগুলো আলোর গতির কয়েকগুন বেগে চলতে পারে। এখন তোমার মনে যখন প্রশ্ন আসছে, কিভাবে এটা সম্ভব? তখনই ওরা কাহিনী নিয়ে যাচ্ছে ওদের ইঞ্জিয়ারিং রুমে, যেখানে ওয়ার্প ইঞ্জিন ওয়ার্প ড্রাইভ ব্যবহার করে এই অসাধ্য সাধন করে ফেলছে। তখন তুমি মনে মনে ওয়ার্প ড্রাইভ কিভাবে কাজ করে এত কিছু খুটিনাটি না গিয়ে ওদের আলোর গতির চাইতে বেশী দ্রুত যাবার ব্যাপারটাকে মেনে নিয়ে কাহিনী ফলো করে যাচ্ছো।
এই ব্যাপারটার উদাহরনটা দিলাম কারন, তোমার লেখা প্রথম পর্বটা পড়ে বছর কয়েক আগে দেখা একটা টিভি সিরিজের - ডিফায়িং গ্র্যাভিটি - কথা মনে পড়ে গেলো। গল্পের শুরুতেই চরিত্রদের পরিচয় করিয়ে দেয়া, টিভি সিরিজের জন্যে কিছুটা সহজ, কারন এখানে দর্শকেরা কাহিনীর পাশাপাশি ভিজুয়াল এফেক্টও পাচ্ছে। কিন্তু তুমি যখন গল্প লিখছো, তখন শুরুতেই এতগুলো চরিত্র একসাথে পরিচয় করিয়ে দেয়াতে, আমার কাছে একটু বোরিং লাগা শুরু করেছিলো। আর আরেকটা ব্যাপার।
তাহলে জিকোন ব্যাপারটা জানলো কিভাবে সেটা পরিষ্কার করোনি। আর প্রথম বা তৃতীয় পর্ব মিলিয়ে মিলিয়ে তুমি জীকোন চরিত্রটাকে অন্য চরিত্রগুলোর সাথে কোনোই ইন্টার্যাক্ট করাওনি, যেটা একটা টীমের দৃষ্টিকোন থেকে একটু অদ্ভুত ব্যাপার।
প্রথম পর্বে তুমি উল্লেখ করেছিলে যে বেশ কয়েকশ বছর আগেই গ্রহটা পরিত্যাক্ত হয়ে গিয়েছে। কিন্তু দ্বিতীয় পর্বটাতে তোমার বর্ণনাতে এই ব্যাপারটা আসেনি। বিশেষ করে ওই ছেলেমেয়েরা, (যেহেতু অন্য কোনো বর্ণনা দাওনি, সেহেতু ধরে নিচ্ছি যে নিচে যারা আছে এবং ওপর থেকে যারা নামছে, দুই গ্রুপই মানুষ) যখন জীপে করে যাচ্ছিলো, তখন পরিত্যাক্ত পৃথিবীর কিছু পরিবেশগত এবং সামাজিক বর্ণনা দিলে ভালো হত।
আর আরেকটা ব্যাপার একটু খেয়াল রেখো। তুমি যখন ডায়লগ লিখছো, তখন ইংরেজির ব্যবহার ঠিক আছে। এই যেমন -
যদিও ইংরেজী অংশটুকু পুরো ইংরেজীতে বা Anyway - টাকে অ্যানিওয়ে, লিখতে মনে হয় ভালো হত।
আবার বর্ণনার সময় ইংরেজী শব্দ বেশী ব্যবহার না করাই মনে হয় ভালো। সার্জারী বা অঙ্কোলোজী বা প্রাইভেট সিক্রেট এজেন্সী ইত্যাদি হয়ত ঠিক আছে। কিন্তু -
ইত্যাদি কিছু জায়গাতে মনে হয় ইংরেজী শব্দগুলো না ব্যবহার করলেও হত।
যাহোক, তোমার পরের পর্বগুলোর অপেক্ষাতে থাকলাম। আশা করি, রবিনের মতন দুই তিন মাস পর পর নতুন পর্ব না দিয়ে, একটু তাড়াতাড়ি পরের পর্বগুলো দেবে।