দূর থেকে চোখে পড়ে লাল-নীল বাতি
জ্বলে-নেভে, নেভে-জ্বলে,
চোখ ধাঁধানো ফ্ল্যাশ।
আকাশ ছাড়িয়ে মহাকাশে
সদর্প সাদা আলোর তরবারি।
বুক-কান কাঁপানো
ধুপ-ধুপ-চিক-চিক। চ্যাউউউ!
পশ ধরনের বেইজ ও ট্রেবল
সবকিছুই যেন মহাকাশ ছুঁতে চাইছে।
এ এক অনন্য উচ্চতা।
ওখানে না গেলে, মিস হয়ে যাবে।
বুক ভরা আশা নিয়ে আমি হাজির হই।
কীসের আশা জানি না, তবে জেনে যাবো নিশ্চয়।
….
….এটি একটি চমৎকার ঝলমলে ড্যান্স ফ্লোর।
ওই যে, দূরে ঝিলমিল পোশাকে পশেরা নাচছে।
তাড়াতাড়ি ওখানে মিশে যাওয়া দরকার।
সবাই যেহেতু নাচছে, আমারও নাচা উচিত।
নইলে, মিস হয়ে যাবে।
কাছে গিয়ে দেখি, ওহ ইয়েস, নাচ জমেছে।
ধুন্দুমার নাচ।
সবচে’ রাম পশ জনাব লাল টাই
ঘুষি বাগাচ্ছেন ছন্দে ছন্দে।
সম্ভবত বক্সিং ভালোবাসেন তিনি।
পাশেই, সবুজ ব্লেজার প্রৌঢ়
ফ্রি কিক নিচ্ছেন অদৃশ্য ফুটবলে।
হতেই পারে। সামনে চ্যাম্পিয়ন্স লীগ।
কালো শাড়ি ভদ্রমহিলা,
একবার ছক্কা একবার ওয়াইড বলের সংকেত দিচ্ছেন-
ক্ষণে ক্ষণে অভিকর্ষের বিপরীতে গিয়ে।
ক্রিকেট ও নিউটনীয় চেতনার এক বিচক্ষণ সংমিশ্রণ তিনি।
মনে মনে তার উচ্চমার্গের প্রশংসা না করে পারি না।
হলের আরেক প্রান্তে মুগ্ধ হয়ে লক্ষ করি
দু’জন অন্তপ্রাণ কৃষককে।
এক হাঁটু গেড়ে কাস্তে দিয়ে ফসল কাটছেন অবিরাম।
কৃষিপ্রধান দেশের প্রতি তার এই
বিনম্র শ্রদ্ধায় আমিও বিনত হই।
হঠাৎ ওই কোণায় তিনজন অকস্মাৎ তড়িতাহত-
সভ্যতা বিকাশে বিদ্যুতের অবদান
যারা ভুলতেই পারছে না।
অসংখ্য ভেরিফাইড মানুষের ডেডিকেটেড নাচ দেখে
নিশ্চিত হই,
না এলে মিস হয়ে যেতো।
ড্যান্স ফ্লোর প্রচণ্ড আনন্দের জায়গা।
এখানে সবাই নাচতে আসে৷
নিঃসন্দেহে নাচে রয়েছে সুখের নিশ্চয়তা।
কী কেন কীভাবে ইত্যাদি
জানার প্রয়োজন নেই।
তবে নাচবার প্রয়োজন আছে নিশ্চিত।
কারণ সবাই নাচে।
নাচে খুব আনন্দ এবং নাচ সামাজিক।
সত্যি, না এলে মিস হয়ে যেতো।
আমি ঠিক নাচতে পারি না।
তবে জানি, নাচতে হবে।
সবার সাথে তাল মিলিয়ে,
নাচতে হবেই হবে।
সুতরাং-
দৃঢ় প্রত্যয়, দৃপ্ত চেতনা, সামাজিক দায়িত্ববোধ
ইত্যাদি সহকারে আমি
দক্ষ সাঁতারুর মত ব্যাকস্ট্রোক শুরু করি।
বহু চেষ্টাতেও সাঁতার আয়ত্তে আনতে পারিনি সুইমিং পুলে।
কেবল টুপ করে ডুবে যাই পাথরের মত।
বন্ধুরা হাসাহাসি করতো- “কীরে স্টোন সুইমার!”
ওরে চেয়ে দ্যাখ তোরা-
এই আমিই আজ ড্যান্স ফ্লোরে মাইকেল ফেলপস।
কী অর্জন! কী আনন্দ!
হাহাহা পায় যে হাসি। হাহাহা পায় যে হাসি।
ভেসে যাচ্ছি অনাবিল সুখের ফল্গুধারায়।
ঘামছি প্রচুর। ঘামে… ইয়ে, টক টক গন্ধ।
এই বেয়াদব ঘাম কী জানে না এটি একটি সুশীল স্থান!
যাই হোক- ঘামকে অর্জন হিসেবে ধরে নিলে
দুর্গন্ধকে কস্তুরীজ্ঞান করা যেতেই পারে।
বহু ঘণ্টা পর,
হল থেকে বেরুচ্ছি।
কেন যেন আরো ঘামছি ও ক্লান্ত লাগছে।
কী নাচলাম ঠিক জানি না। তবে শব্দ করে নেচেছি।
কারণ সবাই নেচেছে।
আর হ্যাঁ, যেজন্যে এত গল্প বললাম আপনাদের-
…জিতেছি কিন্তু।
কীসে জিতেছি জিজ্ঞেস করবেন না-
ব্যক্তিত্ববানেরা আজেবাজে প্রশ্নের উত্তর দেয় না।
তবে অবশ্যই জিতেছি, হুঁম?- নোট রাখবেন প্লিজ।
উফ!
না নাচলে, কী মিসটাই না হয়ে যেতো!