কলেজে থাকতে ডায়েরী লেখার অভ্যাস অনেকেরই থাকে, আমারও ছিল। তবে কখনোই নিয়মিত হতে পারিনি। একবার-দুবার নয়, চার-চারবার ডায়েরী লেখা শুরু করি। প্রথমটা ক্লাস সেভেনে। দ্বিতীয়টা মনে নেই, তৃতীয়টা ক্লাস নাইন-এর শেষ থেকে এস.এস.সি. পর্যন্ত। শেষবার ক্লাস টুয়েলভে।
প্রথমটায় ছিল ক্লাস সেভেন-এর এক বাচ্চা ক্যাডেট-এর সুখ(!)-দুঃখের কথা। এমনকি কোন সিনিয়রের কাছে কি পানিশমেন্ট খেয়েছি, পরিমাণসহ লেখা! তৃতীয়টা কিছুটা পরিপক্ক। তবে তৃতীয়টায় আর গতানুগতিক থাকতে ভালো লাগলো না, তাই শুরু করলাম কবিতা দিয়ে দিনলিপি।
আজ পুরনো ডায়েরীগুলো নাড়তে নাড়তে কবিতাগুলো চোখে পড়লো, তাই ভাবলাম একটু ভাগ (শেয়ার) করি।
বি.দ্র. আমি খুবই ফুটবলপ্রেমী, এমনকি বাসর রাতে কেউ খেলতে ডাকলেও হয়তো আমি একলাফে চলে যাবো। তাই কবিতায় ফুটবলের আধিক্য ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখতে অনুরোধ করা হলো।
১৩-০২-১০
রাত ১১:৪৫
শনিবার ছিল, প্যারেড ও ব্রেড, সকাল থেকেই জ্বালা,
বসন্তেরই প্রথম দিনেতে হলোনা ফুলের মেলা।
ফর্মে গিয়েই পড়তে বসেছি পদার্থবিজ্ঞান,
আলোক অংশ শেষ করে নিয়ে করি গাত্রোত্থান।
হঠাৎ ফর্মে বাতিক উঠলো ওয়ার্ল্ডকাপ ফুটবল,
ব্রাজিল বনাম আর্জেন্টিনা ফুটবল হবে, চল।
শাহরিয়ার ও আমার প্রয়াসে টিম হলো একখান,
শাকিল, নাসিফ, অনিক, আরিফ, সারজিল, ইমরান,
ফেরদৌস আর মাসুদও ছিল, সাথে ছিল তানভীর,
তারকাখচিত প্লেয়াররা সব টিমেতে করেছে ভীড়।
বড় আশা নিয়ে মাঠে নামলাম, খেলা হয়ে গেল শুরু,
কিছু পরে দেখি কাছে পানি নাই, চারিদিকে জেন মরু।
ওদের দলের রক্ষণভাগ জটিল রকম কড়া,
আমি ও শাকিল হলাম ওদের টার্গেট, দাম চড়া।
এছাড়া আরিফ গ্যাড়ানি দিয়েছে ওয়ান-টু-ওয়ানেতে,
তার চেয়ে বড় আমার গ্যাড়ানি, ব্যর্থ পেনাল্টিতে।
মাঝখানে কিছু এলোমেলো কাজ, ফাউল-টাউল হয়ে,
উচ্চবাচ্য কথা কাটাকাটি আনলো তা শুধু বয়ে।
খেলা শেষে ফল, এক-শূণ্যতে আমাদের হলো হার,
মনে মনে তবু নিজেরই মন নিচ্ছে দোষের ভার।
শেষ মিনিটের ওই কাল গোলে হেরে গিয়ে হলো মনে,
কালকের ম্যাচে আরো ভালভাবে খেলবোই সেইখানে।
রাত্রের প্রেপে মনটা কিছুটা খারাপ ছিল বটে,
বারবার শুধু ব্যর্থতাগুলো আসছিলো স্মৃতিপটে।
যাই হোক ভাই বারোটা বেজেছে, ‘ভ্যালেন্টাইন্স ডে’,
শুভ কামনায় সান্ত্বনা নিয়ে চলে যাচ্ছি যে বেডে।
১৪-০২-১০
রাত ১১:৫৭
চৌদ্দ তারিখ, আজকে বিশ্ব ভালবাসার দিবস,
অনেকেই বলে ভালবাসা ছাড়া জীবনটাই নীরস।
প্রেম বলে কিছু আমার জীবনে আসেনাই যে এখনো,
কতজনকেই লেগেছে যে ভালো, হৃদয়ে বসেনি কোনো।
প্রেমবিনা এই জীবনে আমার এদিনের নেই দাম,
চিঠি পাঠানোর লোক নেই মোর, আছে শুধু হাতে খাম।
যাই হোক ভাই, আজকের খেলা প্রসঙ্গে চলে আসি,
খেলা শেষে আজ খারাপ লাগলো, মুছে গেল মুখে হাসি।
ভেবেছিলাম যে শান্তভাবেই খেলাটার হবে শেষ,
কিন্তু খেলাটা সংগ্রাম হতে লাগলো এক নিমেষ।
কালকের সেই ‘কাল’গোলদাতা শামস তো খেলেনি ভালো,
ফাঁকতালে ওই রিফাত আবার এক গোল দিয়ে দিল।
আমাদের ভাই গোলদাতা কম, শাকিল শাহরিয়ার,
মাহমুদ দিলো নিজ জালে গোল করতে বল ক্লিয়ার।
আরমান সেটা শোধ দিয়ে দিলোকরে নিজে ‘ওনগোল’,
আব্দুল্লাহ দিলো এক গোল এক টানে নিয়ে বল।
খেলা শেষ হলো, তিন-তিন গোলে খেলা অমীমাংসিত-
মেহেদীকে ওই ফাউল্টা যদি না হতো, ভালই হতো।
নিজের দলের কয়েক প্লেয়ার খেলাটার দিল বাঁশ,
গতকাল মার খেয়ে পরে আজ মিটিয়ে নিয়েছে আঁশ।
যাই হোক, আর ভালো লাগছে না, পেন না চলতে চায়-
ঘুম চলে আসে, হাই উঠছে যে, বেডে শুতে চলে যাই।
১৬-০২-১০
রাত ১২:১০
যথারীতি আজ সূর্য উঠেছে, পশ্চিমে নয়, পূবে,
সন্ধ্যার দিকে আজানের আগে ঠিক সে গিয়েছে ডুবে।
ঠিক সেরকম স্বাভাবিক এক দিন করলাম পার,
দিনের শেষেতে দিনলিপি লিখি হয়ে কবি অবতার।
১৮-০২-১০
দুপুর ২:৪০
বিদায় ঘণ্টা ঢং ঢং করে বাজছে দোরের গোরে-
ছয়টি বছর পেরিয়ে এলাম কি জানি কিসের ঘোরে।
কাল ‘শেষ গেমস’ করে এসে পরে পি.টি.সু-র দিকে চেয়ে-
মনে পড়ে গেল সেইসব গেমস, সত্যি, নয় ফাঁকি এ।
শেষের গেমসটা এ ফর্ম বি ফর্ম ফুটবল দিয়ে শুরু-
হাত দিয়ে গোল দিলাম একটা সুনিপুণ ও সুচারু।
ম্যারাডোনার সে বিখ্যাত গোল রয়েছে সবার মনে-
আমার গোলটা আমার মনেই থাকবে খুব গোপনে।
ফুটবল খেলা হ্যান্ডবল হলো, তিন-একে জয়লাভ,
হ্যান্ডবল শেষে ভলিবল কোর্টে যাই দিয়ে এক লাফ।
তারপর ফের বাস্কেটবল, হকির-ও ইচ্ছা ছিলো-
ইনজুরি হবে-এইটা ভেবেই কেই নাহি যেতে দিলো।
ক্যামেরার জোরে শেষ গেমসটাও রয়ে যাবে স্মৃতিপটে,
নাগলিঙ্গমে দেরীতে হলেও ফুল একদিন ফোটে।
মন কেঁদে ওঠে যখনই মনেতে “গেমস নাই” কথা আসে,
দাঁত নাই যার, দাঁত বের করে কি করে বলো সে হাঁসে?
পুনশ্চঃ এরপরও কিছুদিন লিখেছিলাম, কিন্তু সেগুলো আর মানসম্মত নয়, ব্যক্তিগত পর্যালোচনা। তাই আর দিলাম না। তবে এগুলোর দাম আমার কাছে অনেক। এগুলো দেখলেই মনে পড়ে যায় কী সুন্দর দিনই না কাটিয়েছি! কোন কোন সময় কবিতার দুইটি লাইন এক বিশাল ঘটনার স্মৃতি মনে করে দেয়।
ক’দিন আগে “The Vow” ফিল্মটাতে ‘mnemonic’ নামে একটা ক্যাফে দেখে মনে পড়ে গেল, আরে! এই ওয়ার্ডটা তো আমি ইংলিশ স্পেলিং বী-র জন্য শিখেছিলাম। নূর মোহাম্মদ স্যার যেদিন অডিয়েন্স-কে প্রশ্ন করলো এই ওয়ার্ডটা কেউ পারে কিনা, আমি নিঃশব্দে বললাম, পারি। আর কারোর কোন জবাব না দেখে শামস-কে দিয়ে উত্তরটা দেওয়ালাম। ‘mnemonic’ হলো এমন ছড়া, ছন্দ, কথা বা মানসিক কৌশল যা মনে রাখতে সাহায্য করে। এই কবিতাগুলো আমার mnemonics ।
৬ তারা দেয়া যায় না ক্যান !!!
::salute:: ::salute:: ::salute::
যে জীবন ফড়িঙের দোয়েলের- মানুষের সাথে তার হয় নাকো দেখা
:shy: ধন্যবাদ।
আর তারা দিস না, কাঁধে যেই ১টা ছিলো, সেটাও তো রইলোনা। এত তারা-র ভার কি সইতে পারবো?
:ahem:
ভালা হইসে :thumbup:
thanx
:just: :thumbup: :hatsoff: ::salute::
"মরনের বীথিকায় জীবনের উচ্ছ্বাস,
জীবনের যাতনায় মৃত্যুর মাধুরী"
:pira: সাঁকো থেকে...
(সম্পাদিত)