ক্যাডেট কলেজে শিক্ষকরা এক একজন দারুণ চরিত্র। দোষ-গুণ নিয়ে এরা আছেন, থাকবেন। বাইরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের সঙ্গে পার্থক্য এটাই যে ক্যাডেটরা এদের সঙ্গে দিনের ২৪ ঘণ্টা, বছরে ৩০০ দিন এবং ছয়টা বছর কাটায়। কাছ থেকে মানুষগুলোকে দেখে। এদের কাউকে কাউকে নিয়ে রীতিমতো উপন্যাস লেখা যায়। কেউ মজার, কেউ আমুদে, কেউ ভিলেন, কেউ ক্লাউন, আবার কেউবা একেবারে বাবার মতো মানুষ।
ক্যাডেটদের বিনোদনের একটা বড় অংশ জুড়েই আছেন শিক্ষকরা। তাদের যে কোনো আলোচনা, গল্প-গুজবে তাই শিক্ষকদের উপস্থিতি অনিবার্য। এই যে ২৮ বছর আগে কলেজ ছেড়েছি, এখনো বন্ধুদের আড্ডায় শিক্ষকরা ভালোভাবেই উপস্থিত থাকেন। গতকাল রাতেও প্রবাসী বন্ধু কামরুলের সম্মানে আয়োজিত আড্ডায় মি. দেলোয়ারকে নিয়ে সে বেশ মজা করলো।
এরকমই একজন শিক্ষক ক্যাপ্টেন বাচ্চী খান। সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধে সে সময়ের পশ্চিম পাকিস্তানের খেমকরণ সেক্টরে যুদ্ধ করেছিলেন। আমরা কলেজ ছেড়ে বেরিয়ে আসার পর বাচ্চী খান আরো কয়েকটি ক্যাডেট কলেজে চাকরি করেছিলেন। তো বাচ্চী খান আমাদের পড়াতেন সামরিক বিজ্ঞান। একমাত্র ক্যাডেট কলেজে সে সময় এই বিষয়টি পড়ানো হতো। ইন্টারমিডিয়েটে আমরা সামরিক বিজ্ঞান চতুর্থ বিষয় হিসাবে নিতাম নম্বর তোলার জন্য।
বাচ্চী খান ক্লাসে পড়ানোর সময় উদাহরণ হিসাবে মানুষের শরীরকে নিয়েআসতে বেশি ভালবাসতেন। সামরিক বাহিনীতে চাকরি করার কারণেই তার এই শরীর প্রীতি বলাবাহুল্য।
যেমন ’উপত্যকা’ বিষয়টি আমরা পাহাড়ের মাঝে সমতল ভূমিকে বুঝি। বাচ্চী খান উপত্যকা বোঝাতেন ‘ক্লিভেজ’ উদাহরণ দিয়ে। কিশোরদের উপত্যকা শেখানোর এরচেয়ে আর ভালো উদাহরণ হয় না।
তো একবার ক্লাসে তিনি আমাদের বিয়ের মাহাত্ম্য বোঝাচ্ছেন। তিনি বলছেন বিয়েটা দারুণ বিষয়। নারী-পুরুষের এই সম্পর্কটা চিরন্তন। এই সম্পর্কে শরীর যে একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে তাও তিনি ব্যাখ্যা করেন। এরকম আলোচনার এক পর্যায়ে আমাদের বন্ধু দারুণ দুষ্টু ইজাজ আহমেদ আলোচনাটা দীর্ঘায়িত করতে চাইলো। নিজেকে বেশ বোকাসোকাভাবে উপস্থাপন করে ইজাজ দাড়িয়ে বললো,
“কিন্তু স্যার আমি তো বিয়ে করবো না।”
হতভম্ব বাচ্চী খান কিছুটা সময় নিলেন, তারপর ইজাজকে কাছে ডাকলেন। বললেন, “তুমি বিয়ে করবে না? কেন? তোমার বাবা-মা আছেন?”
ইজাজ বললো, “জি স্যার, আছেন।”
বাচ্চী খান : তারা কি নিজেদের মধ্যে ঝগড়াঝাটি করেন?
ইজাজ : না, স্যার।
বাচ্চী খান : তাহলে, তোমার বড় ভাই আছেন?
ইজাজ : জি স্যার।
বাচ্চী খান : সে কি বিয়ে করেছে?
ইজাজ : জি স্যার করেছে।
বাচ্চী খান : তোমার ভাই আর ভাবী কি ঝগড়াঝাটি করেন?
ইজাজ : না স্যার। তারা ভালো আছেন।
বাচ্চী খান : তোমার বোন আছে?
ইজাজ : জি স্যার।
বাচ্চী খান : সে কি বিয়ে করেছে?
ইজাজ : জি স্যার করেছে।
বাচ্চী খান : তোমার বোন আর দুলাভাই কি ঝগড়াঝাটি করেন?
ইজাজ : না স্যার। তাদের খুব সুখের সংসার।
বাচ্চী খান এতোসব শুনে রীতিমতো বিষ্মিত। কিছুতেই হিসাব মেলাতে পারেন না কেন ইজাজ তাহলে বিয়ে করবে না।
ক্ষুব্ধ বাচ্চী খান এবার তার শেষ প্রশ্ন করলেন, “তাহলে কেন বিয়ে করবে না তুমি। তোমার কি ‘উইপনে’ সমস্যা আছে?”
স্যারের শেষ প্রশ্ন বা মন্তব্য শুনে আমরা পুরো ক্লাস হো হো হাসিতে ফেটে পরেছিলাম।
=)) =)) =)) =)) =)) =))
হাহাহাহাহহাহাহাহহা
তাইলে স্যার পাহাড় বুঝাইতেন কি দিয়া?
ভাইয়া পুরা সেইরকম। এইটা কি দিলেন, আমার মনটাই ভাল হইয়া গেল। এতো দেখি পুরা আমাদের ইসহাক আলি স্যার। 😀 😀 😀 উনিও কথায় কথায় আমাদের মনিকা লিউনেস্কি, ম্যাডোনা, পামেলা এদের উদাহরন দিতেন।
১৯৯৭ এ আমরা যখন সেভেনে তখন বাচ্চি খান স্যার রংপুর ক্যাডেট কলেজের প্রিন্সিপাল ছিলেন...গুরুগম্ভীর এই লোক ভিতরে ভিতরে যে এত রসিক সেইটা তো জানতাম না!!!
অফ টপিক-ঝাতির বিবেকের কাছে প্রশ্ন,উইপন মানে কি????? =)) =)) =)) =)) =))
মাসরুফ, প্রশ্নটা বাচ্চী খানকে করেত পারো।
"মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"
আমি বিএমএ'তে "উপত্যকা" এইভাবেই শিখছিলাম 😛 😛 ।
:)) =)) =)) =)) ।
বাচ্চি খান স্যারকে কলেজে আমরা একটুর জন্য মিস করেছি।
ভাইয়া, খুব মজা লাগল।
Life is Mad.
আমরাতো বেশ ভাগ্যবান, কারণ আমরা বাচ্চি খান স্যার এবং ইসহাক আলী স্যার দুইজনকেই পাইছিলাম 🙂 🙂
বস্, লেখাটার জন্য অনেক ধন্যবাদ। আপনেকি এখন দেশের বাইরে নাকি? 😉
সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!
ভালো খোচাইতে পারো @ ফৌজিয়ান! গতকাল বন্ধুদের আড্ডায় বাচ্চী খানকে নিয়ে পোস্ট দেব বলে কথা দিয়েছিলাম।
"মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"
কামরুল এবং সায়েদ, ধন্যবাদ তোমাদের। ভালো থেকো।
"মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"
@সায়েদ ভাই
উপত্যকা কি ভাইয়া? আমাদের একটু বুঝাইয়া দেন না কি শিখছিলেন :grr: :grr: :grr:
@ কামরুল
বান্দর পোলা 😛 😛 মেসেঞ্জারে আস 😉 😉 ।
Life is Mad.
সানাউল্লাহ ভাই,
চমতকার লেখা।
বাচ্চি খান স্যার আমার হাউস মাস্টার ছিলেন। আমাদের ইতিহাস পড়াতেন। ভীষন মুদে মানুষ মনে হয়েছে আমাদের কাছে। অনেক গুলো টুকরো টুকরো ছোট ছোট কাহিনী মনে পড়ছে স্যারকে নিয়ে।
মন ভালো করার মত একটা পোস্ট দেয়ার জন্য ধন্যবাদ।
@সানাউল্লাহ ভাই-ক্যাডেট সারা জীবন ক্যাডেটই থাকে।এখনো আমাদের ইলেভেনের বড়ভাইগো দেখলে কেমুন ডর ডর লাগে সেই সেভেনের মত-আর ইনি তো প্রিন্সিপাল।এই বয়েসে ইডি লাগাইলে বাচাইবো কেডা?আপনে তো বস মজা লইবেন তখন।সিনিয়র ছাত্র হিসেবে আপনেই জিগান না 😛
@সায়েদ ভাই-খালি কামরুল ভাই কেন আমি কি দুষ করছি?আমিও ভূগোল শিখুম :((
মাসরুফ
আয় , মেসেঞ্জারে আয়। সায়েদ ভাই আমারে অনেক কিছু সম্পর্কে বলছে।
উপত্যকা, পাহাড়, পর্বত, গিরিপথ। সব তোরে কমু। 😉 😉
=))
হা হা হা। কঠিন ডায়লগ!
www.tareqnurulhasan.com
সেই রকম হইছে ভাইয়া...।।
"তাহলে কেন বিয়ে করবে না তুমি। তোমার কি ‘উইপনে’ সমস্যা আছে? "
😀 😀 😀 😀
উইপেন!!!!!
হাহাহাহ...। :))
আমরা ক্লাস টেন-ইলেভেনের (৯৭-৯৮) সময় বাচ্চি খান সিসিআর এর প্রিন্সিপাল ছিলেন।
“তাহলে কেন বিয়ে করবে না তুমি। তোমার কি ‘উইপনে’ সমস্যা আছে? ”
:gulli:
বস কঠিন হইসে লেখা টা। বহুত মাজা পায়া ।
=))
শোনা কথাঃ আর সি সি-র কোন ভুগোলের ম্যাডাম নাকি ইন্ডাইরেক্টলি গিরিখাত বুঝাইতেন উপত্যকা স্টাইলে 😮 😮
সানা ভাই, :boss: :boss: :boss:
জটিলস্য জটিল লেখা। =)) :)) :((
(হাসতে হাসতে চোখে পানি চলে আসছে, তাই শেষ স্মাইলিটা)
বস, নদী বুজাইতেন ক্যামনে উনি? জানতাম চাই......।।
ধন্যবাদ তোমাদের সবাইকে।
বাচ্চী খানের আরেকটা গল্প বলি। তখন আমরা ক্লাস ইলেভেনে। রবীন্দ্র হাউসের হাউস টিউটর তিনি। লাইটস অফ হয়েছে ১০টায়, রাত ১১টা বাজে বাচ্চী খান তবুও বাসায় যাচ্ছেন না। এক সময় তিনি হাউস ছেড়ে বের হলেন, কিছুদূর গেলেনও। এ সময় অন্ধকারে আমাদের রুম থেকে হাসিবুল, মঞ্জুর ওয়াহিদ বাচ্চী খানের উদ্দেশ্যে চেচিয়ে ওঠলো। সেই শব্দ শুনে ফিরে এলেন বাচ্চী খান। এসেই চিৎকার করে হাউস রেয়ারাকে ডাকলেন, "কালাম, কালাম, আমার ডান্ডা নিয়ে আস।"
আমরা তো রুমের ভেতরে ছিটকিনি লাগিয়ে ঘুমের ভান করে আছি। বাচ্চী খান এসে দরজা ধাক্কা দিতেই হাট করে সেটা খুলে গেল। লাইট জ্বালিয়ে তিনি আমাদের বিছানা থেকে তুললেন। তারপর শুরু হলো খালি হাতে চড়-থাপ্পর আর কিল। কারণ বেয়ারা কালাম ভাই তখনো বাচ্চী খানের ডান্ডা আনেত পারেন নি। একে একে পিটাতে পিটাতে বাচ্চী খান এলেন মুজাদ্দিদের কাছে। লম্বা মুজাদ্দিদকে পিটাতে পিটাতে তিনি চিৎকার করে বলতে থাকলেন, "তোমার ভাই আমার ছাগল খেয়েছে। আর তুমি আমার সাথে বেয়াদবি কর।"
মুজাদ্দিদের ভাই আমাদের এক ব্যাচ সিনিয়র। তারা কয়েকজন মিলে বাচ্চী খানের পালা ছাগল চুরি করে রান্না করে সাবাড় করে দিয়েছিলেন। মুজাদ্দিদকে পিটিয়ে সেই ছাগল চুরির শোধ তুলেছিলেন স্যার। আমার যতদূর মনে পড়ে সেদিনও আমি বাচ্চী খানের পিটুনি থেকে বেঁচে গিয়েছিলাম। সম্ভবত আম ঘুষ দিয়ে সম্পর্ক ভালো রাখার কারণে।
"মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"
=)) :duel: :salute:
আমাদের এক বড় ভাই আছিলো, বাজার থেইকা ইলিশ মাছ কিন্না আইনা হাউজ মাস্টাররে দিয়া কইতো 'স্যার, নেন আমাদের পুকুরের ইলিশ।' 😀 😀
সেই স্যারের কোনদিন মাথায়ও আসে নাই যে পুকুরে ইলিশ মাছ হয় না। :)) :))
@সানাউল্লাহ ভাই
দুর্দান্ত লেখা। :boss: :salute:
@কামরুল
তেলের পুকুরে দেখি ইলিশও হয় =))
আপনারে আমি খুঁজিয়া বেড়াই
সানাউল্লাহ ভাই... আম দিলেন কিভাবে ?
@ মিল্টন : কোনো এক 'প্যারেন্টস ডে'তে আমার বাবা স্যারের জন্য আম নিয়ে এসেছিলেন। এ নিয়ে বন্ধুরা আমাকে খ্যাপাত।
@ টিটো, কামরুল, সাইফ, ফয়েজ, তৌফিক, ছন্নছাড়া, রেজওয়ান, বাহলুল, হাসনাইন, মঞ্জুর, তারেক : সবাইকে জটিল ধন্যবাদ।
বাকি যাদের নাম লিখি নাই, তারা এক্সট্রা ড্রিলের জন্য তৈরি হও।
-"ওস্তাদ (হাবিলদার) হালিম, ওদের ভাল মতো রগড়া দেন।"
"মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"
বস, নোটিশ বোর্ডে নাম ওঠার আগেই চলে আসলাম... 😀
আপনারে আম খাওয়াতে চাই...
তা, আপনার কোন জাতের আম পছন্দ??? 😀
ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ
আমি ল্যাংড়া আম খামু 😛
"""“তোমার ভাই আমার ছাগল খেয়েছে। আর তুমি আমার সাথে বেয়াদবি কর।”"""
ভাই ছাগল খাবার কাহানিটা বলেন্;;বেস মজার হবে...
""""‘স্যার, নেন আমাদের পুকুরের ইলিশ।’""""
দারুন কাহানি বানাইছেন আর ২/৩ বানানঃ)
I really miss cadet college very muchhhhhhhhhhhh
“তোমার ভাই আমার ছাগল খেয়েছে। আর তুমি আমার সাথে বেয়াদবি কর।”
:goragori: :goragori: :goragori: :goragori: :goragori: