জয় বাংলা বাংলার জয়, শুভ হোক দু’হাজার নয়

নতুন বছরের শুরুতে নাকি যা করা হয় পুরো বছর জুড়ে তার পুনুরাবৃত্তি হয়। তাই লিখছি….

এমনিতে আমার আলস্য প্রবাদসম। গড়িয়ে চলি গড়িয়ে খাই, কচ্ছপকে হার মানাই। তাতে কিছু সুবিধা পাই, কিছু হারাই। সুবিধা হল কাজের কথা কেউ সহজে বলে না। অসুবিধা হল আমার নিজের প্রয়োজনীয় অনেক কাজ যা দিয়ে আমার ভবিষ্যত তৈরী হতে পারে তাও আর করা হয় না।

একবার ভার্সিটির হল বদলের সময় আমার বন্ধু আহসানের(আমার আগের ক্যাডেট নম্বর ওর ছিল) কিছু সার্টিফিকেট আমার ব্যাগে রযে যায়। ও বার বার করে সেটা ফেরত পেতে চায়। আলস্যের কারণেই সেটা আনা হয় না। কষ্ট করে ব্যাগ খুঁজে বের কর, তারপর আরো কষ্ট করে সেটার চেইন টানো, তারপর পকেটগুলি হাতরাও, হাতরে যদি বা কিছু কাগজ পাওয়া যায় তার মধ্যে শুধু সার্টিফিকেট আলাদা কর( ওর অন্য কাগজপত্রও ছিল…..সেগুলি একসাথে কিন্তু দেয়া যাবে না। কারণ ও শুধু সার্টিফিকেট চেয়েছে), তারপর সেগুলির ভার বহন করে টিএসসিতক নিয়ে আস…..উফ মহা হ্যাপা।
আসাদ আমার দীর্ঘদিনের কলেজ রুমমেট। ও খুব ভালই চেনে আমাকে। আহসানকে ও পরামর্শ দিয়েছিল অবশ্য, টিটোর কাছ থেকে সার্টিফিকেট নেয়ার চেয়ে বোর্ড থেকে অনেক সহজে তুলতে পারবি। তবু আহসান চেষ্টার ত্রুটি করেনি । ফলাফল এখনও ওর সার্টিফিকেট আমার কাছে বেশ আরামেই আছে(যেহেতু আমি একবারও ধরিনি)। এ ঘটনায় আহসান কেন টিএসসি সার্কেলের আর কেউই কিছু আমার কাছে দেয়ার চেষ্টা করেনি। আমিও বেঁচে গেছি এমন ভারী বোঝা বহনের হাত থেকে।

আর একবার দুঘন্টা লেটের কারণে এক জাস্ট ফ্রেন্ডকে হারাই, চির দিনের জন্য। প্রডিউসার হারিয়েছি, চাকরী হারিয়েছি, প্রোগ্রামে স্পন্সর হারিয়েছি এর উদাহরণ তো ভুড়ি ভুড়ি। এমনকি অতি সাম্প্রতি মনিটর হারিয়েছি। নষ্ট হয়েছিল। দোকানে অনে……..ক কষ্ট করে সারাতেও দিযেছিলাম। আলস্যর কারণে আনা হচ্ছিল না। তা ব্যাটা বদমাশ মাত্র দু’মাস ওয়েট করেই সেরে সুরে নাকি বিক্রি করে দিয়েছে।
(কামরুল তোর বাসায় জ্যাকেট রেখে এসেছি। আলস্যের কারণে যাওয়া হচ্ছে না। তুই যেন দোকানীর মত হোস না। ভাই না ভালো.. )

এ তো গেল সুবিধা অসুবিধার কথা। এবার সম্ভাবনার কথায আসি। সম্ভাবনার কথা এলেই আমার একটি অনু কাব্য মনে পড়ে।
আমি বললাম সম্ভাবনা
তুমি বললে সম্ভব না

ইতিহাসে আছে অনেক বিখ্যাত লোকেরই কঠিন আলস্য ছিল। আমি বিখ্যাত না হলেও এইসব গল্প শুনে ভারী তৃপ্তি পাই। একদিন আমারো কিছু হবে….একদিন আমিও ইত্যাদি ইত্যাদি। সেই সব সম্ভাবনার কথা চিন্তা করেই লেখালিখিটা চালু রাখতে চাই। আর তাই এই লেখা । আর তাই না চাইলেও সারা বছর ঝরঝর করে লেখা আপনা আপনি লেখা হয়ে যাবে এই ভরসায়ই মূলত লিখছি।

হ্যা দু হাজার নয়ে যেন আলস্য ছেড়ে কিছু একটা করতে পারি। কারণ
গেল দু হাজার আটে
ছিলাম অনেক বাটে

ভুলে যাই সেসব
দু হাজার নয় যেন সুন্দর কাটে।

তিন বছরের বেশি প্রেমের বয়স হলে প্রেমিক প্রেমিকারা নাকি ভাইবোন হয়ে যায়। আমার কোন বোন ছিল না। তা প্রেমের কল্যানে একটা বোন পাওয়া গিয়েছিল গেল বছর( প্রেমের তিন বছর ছিল)। যেহেতু একটা বোন পাওয়াই গিয়েছিল কাজেই সেটিকে স্থায়ী করার জন্য ২৯ ফেব্রুয়ারী বিয়েই করে ফেললাম । জীবনে করবী স্থায়ী হল অথবা করবীর জীবনে আমি(১০০% গ্যারান্টি দিচ্ছি না) ।পারিবারিক ভাবে কেউই আমাদের মেনে নেয়নি, তাতে কি আমরা তো চেষ্টা করেছিলাম! নতুন জীবনে পুরাতন প্রেমকে নতুন নতুন লেগেছিল। সেও গেল বছর।
কিছুই গোছাতে পারিনি …গোছানো হয়নি এরকম কথা যেন গেল বছরের জন্যই পড়ে থাকে। এবছর ঠিকই গুছিয়ে নেবে করবী( অলস আমাকে দিয়ে ভরসা নেই)। পরিবারের অমতে বিয়ে করার মত একটা কারণই সারাবছর বাটে থাকার জন্য যথেষ্ট।

এবছর খুব শিগগিরই ছোট খাটো ফিল্মের কাজে হাত দেব, অথবা নাটক কিংবা টেলিফিল্ম। গড়িয়ে গড়িয়েই হয়ত দুহাজার নয়কে কার্যকর করার চেষ্টা নেব।

কলেজ থেকে বেরুলাম নটি বছর। কত কি এ জীবনে হয়ে গেল। কিছু দিন সাংবাদিকতা, কিছুদিন ফান ম্যাগাজিনে লেখালেখি, কিছুদিন ফিল্ম বানাবার চেষ্টা কিছুদিন শুধুই কাল ক্ষেপন…আর এখন চাকরী। তবু লেখালেখির অভ্যাসটা চলেই গিয়েছিল প্রায়….বছর চারেক তো হবেই। বিভিন্ন ব্লগে কয়েকদিন লিখলামও তা কেন যেন ভাল লাগা স্থায়ী হয় না।
তখনই রায়হান এই ব্লগের কথা জানায়। আসি …লিখি .. মজা পাই তবে জুতসই হয কিনা জানি না। কিন্তু এর কল্যানে লেখার অভ্যাসটা আবার হচ্ছে। সিসিবির প্রতি তাই কৃতজ্ঞতা অশেষ

ব্লগ নিত্যদিনের কম্ম, আলস্য এখানে কাম্য নয়। তবু যত দ্রুত ভাবতে পারি, প্লট তৈরি করতে পারি,তত দ্রুত লেখা হয় না। আলস্য লাগে।কোনমতে আইডিয়াটা প্রকাশ করতে পারলেই মনে হয় বাঁচি আরকি! এমনকি বানান ঠিক করতেও ইচ্ছা হয় না। গল্পে তাই কমতি রয়ে যায়।
সবচেয়ে ভাল হত মাথার সাথে একটা প্রিন্টার জুড়ে দেয়া গেলে। যা ভাবতে পারি তাই যদি লেখা হয়ে যেত। দেশে পরিবর্তন এসেছে,মানুষের সচেতনতা বেড়েছে এসবের ভিত্তিতে তখন লিখতাম গনতন্ত্রে প্রতিষ্ঠা কিংবা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বিষয়ক রুপক গল্প। নতুন সুন্দর দিনের কথা লিখতাম। শুধুই লিখতাম।
বাস্তবে তা হয় না, তাই দু হাজার সাতের পর আটেও বাটে থাকি। দুহাজার নয়ে প্রত্যাশা করি
জয় বাংলা বাংলার জয়
শুভ হোক দু’হাজার নয়

২,৬৫১ বার দেখা হয়েছে

৩৩ টি মন্তব্য : “জয় বাংলা বাংলার জয়, শুভ হোক দু’হাজার নয়”

  1. তানভীর (৯৪-০০)

    টিটো, দারুণ লেখছিস!

    আশা করি তোরা এবছরের শুরুতেই সংসারটা আরো গুছিয়ে নিতে পারবি।

    আমার মাথায় প্রিন্টার গজাইলে আরো ভালো হইত। গত দুই বছর ধরে একটা লেখা লিখব লিখব করেও লেখা হচ্ছে না! 🙁

    জবাব দিন
  2. ফয়েজ (৮৭-৯৩)

    কবরী জন্য আমার একটু একটু মায়াই হচ্ছে। 😀

    এর কল্যানে লেখার অভ্যাসটা হচ্ছে।সিসিবির প্রতি তাই কৃতজ্ঞতা অশেষ

    ঘাবরো মাত, আমরাও জানি, আমরা একদিন গর্ব করে বলব, "আরে টিটো, ও তো আমাদের ঘরের (সিসিবি) ছেলে"


    পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না

    জবাব দিন
  3. মান্নান (১৯৯৩-১৯৯৯)

    আমি আপনার মাথায় প্রিন্টার চাই না, চাই একটা প্রজেক্টর। যা দিয়ে আপনার কল্পনার দৃশ্যগুলো পর্দায় দৃশ্যমান হবে। ২০০৯ এ আপনার কাছে খুব সুন্দর একটা ফিল্ম কামনা করছি, যা হবে সিসিবির ( সারা দেশবাসীর তো বটেই) গর্বের বিষয়।

    শুভকামনা ২০০৯ এর জন্য

    জবাব দিন
  4. টিটো রহমান (৯৪-০০)

    ভাই আপনার অবস্থান সময়কাল: ১৯৯৩-১৯৯৯. সুতরাং চোখ বন্ধ কইরা তুই দিয়া শুরু করতে পারেন

    তা হইত.........তবে বছ্ছরের পয়লা দিন ফিল্ম বানাইতে পারলাম না এই দুষ্ক কই রাখি?
    আপনার শুভ কামনার জন্য ধন্যবাদ


    আপনারে আমি খুঁজিয়া বেড়াই

    জবাব দিন
  5. কামরুল তোর বাসায় জ্যাকেট রেখে এসেছি। আলস্যের কারণে যাওয়া হচ্ছে না। তুই যেন দোকানীর মত হোস না। ভাই না ভালো..

    আমিতো ওইটা পইড়া রেগুলার দাওয়াত টাওয়াত খাইয়া বেড়াইতেছি। 😉 জানোসই তো আমার শীতবস্ত্র নাই। খুব কাজে দিচ্ছে। 😉 😉 😉

    সাম্নের বৈশাখে নিয়া যাইস। 😡 আয়রন কইরা রাখুম নে। :grr: :grr:

    আপাতত নতুন বছরের শুভ কামনা। :clap: :clap: :clap:

    জবাব দিন
  6. রেজওয়ান (৯৯-০৫)
    গড়িয়ে চলি গড়িয়ে খাই, কচ্ছপকে হার মানাই।
    তাতে কিছু সুবিধা পাই, কিছু হারাই।
    সুবিধা হল কাজের কথা কেউ সহজে বলে না।
    অসুবিধা হল আমার নিজের প্রয়োজনীয় অনেক কাজ যা দিয়ে আমার ভবিষ্যত তৈরী হতে পারে
    তাও আর করা হয় না।

    কি কাব্য...কি অন্তমিল... 😛 😛 😛
    ঝঠিল হইছে ভা...শুভকামনা আপনার এবং ভাবির জন্য :boss: :boss: :boss:

    জবাব দিন
  7. টিটো রহমান (৯৪-০০)

    বড় ভাইয়ের গভীর আবেগকে কাব্য বলার অফরাধে তোরে জীবনের গল্প নামক দুইটা ইবি দেয়া হইল

    অফটপিক: ভাবীর জন্য আসলেই শুভ কামনার দরকার আছে...আমার লাগত না 😀


    আপনারে আমি খুঁজিয়া বেড়াই

    জবাব দিন
  8. হাসনাইন (৯৯-০৫)

    ফিল্ম বানাতে শুরু করে ফেলেন ভাই। একবার শুরু করলে শুভাকাঙ্খীর অভাব হবে না। খালি আমাদের মত কিছু নাদানদের জন্য ফ্রি শোয়ের ব্যবস্থা কইরেন কইলাম। 😀

    জবাব দিন
    • হাসনাইন (৯৯-০৫)
      জয় বাংলা বাংলার জয়

      এই ডায়লগ দিয়া ফাপড়ে পড়ছিলাম বগালেক যাওয়ার পথে। চান্দের গাড়ির ছাদে চইড়া চারপাশের ব্যাপকতা দেখে মনের আনন্দে এই ডায়লগ মারলাম, নিচের সিট থেকে এক বান্দা ছাদের উপর উপস্থিত। তিনি নাকি মনে করছিলেন আমি নির্বাচনী প্রচারনায় নামছি আওয়ামীদের পক্ষে, ওরে পরে বুঝাইতে পারলাম আমার মোহ আওয়ামীতে না; আমার মোহ বাংলাদেশের সৌন্দর্যে। B-)

      জবাব দিন
  9. সানাউল্লাহ (৭৪ - ৮০)

    টিটো তো আমারে বোকা বানাইলো! জয় বাংলা দেইখ্যা আম্লীগ মার্কা পোস্ট মনে কইরা ধারে-কাছে দিয়া যাই, ঢুকি না। শেষমেষ ঢুইক্যা-পিড়া তো তব্ধা খাইয়া গিলাম।

    স্টিফেন হকিংরে লিখবা নাকি? হেই বেডা মিরলে হের চিয়ারটা যুদি তুমারে দিয়া যায়! তবে হালার ব্যাডা যে তিড়াতাড়ি মিরবো তা মনে লয় না। অহনও বাইচ্যা থাকে ক্যামনে!!


    "মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"

    জবাব দিন
  10. কাইয়ূম (১৯৯২-১৯৯৮)
    তখনই রায়হান এই ব্লগের কথা জানায়। আসি …লিখি .. মজা পাই তবে জুতসই হয় কিনা জানি না। কিন্তু এর কল্যানে লেখার অভ্যাসটা আবার হচ্ছে

    খুব জুতসই হয় :boss:
    সারাবছর সিসিবিতে লেখালেখি চালু রাখিস, তাইলে নেক্সট টাইম কেকের পুরা পিসই দিয়া দিমুনে 😀

    তোর আর করবী, দুজনের জন্যই অনেক অনেক শুভকামনা।


    সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!

    জবাব দিন
  11. ভুইলা গেছি, তাই :frontroll:

    আপনার আর ভাবীর জন্য শুভকামনা।

    আমার কেস একটু অন্যরকম, নীল নক্সা, সূক্ষ্ণ ও স্থূল কারচুপি এবং ইঞ্জিনিয়ারিং + ডক্টরিং করে বাবা, মাদের রাজি করাইছিলাম। ইনশাল্লাহ আপনাদের ফ্যামিলিও মেনে নেবে খুব দ্রুত।

    জবাব দিন
  12. মুসতাকীম (২০০২-২০০৮)

    আপনার আর ভাবীর জন্য শুভকামনা। :salute:


    "আমি খুব ভাল করে জানি, ব্যক্তিগত জীবনে আমার অহংকার করার মত কিছু নেই। কিন্তু আমার ভাষাটা নিয়ে তো আমি অহংকার করতেই পারি।"

    জবাব দিন
  13. আহ্সান (৮৮-৯৪)

    টিটো,
    তোমার এই লেখাটি পড়ে আমার এক বন্ধু (ইফতেখার, পিসিসি) আমাকে উপদেশ দিচ্ছিল এই বলে, "এই ছেলেটির লেখা দেখে শেখ, কি করে লিখতে হয়। অখাদ্য, কুখাদ্য না লিখে এইরকম সুন্দর করে লিখতে শেখ।"

    আশা করি এই মন্তব্যটিই স্পষ্ট করে বলে দিচ্ছে যে কেমন হয়েছে তোমার লেখাটি।

    প্রত্যাশা রইলো, নতুন বছরটি যেন তোমার মনের মত করে ধরা দেয় তোমার কাছে। তোমার ছবি/নাটকের প্রতীক্ষায় রইলাম। ভাবীকে সালাম দিও। ভাবীর জন্য রইল অনেক অনেক শুভ কামনা।

    ও হ্যা, ইফতেখারও তোমাকে অনেক ধন্যবাদ জানিয়েছে তোমার এত সুন্দর লেখাটির জন্য।

    জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।