(আমার ‘অতীত বয়ান কেউ যদি শুনতে চায়’ সিরিজটার নাম বদলে ‘জীবনের টুকরো দেশবিদেশে’ করলাম। বানান চেক করতে পারিনি। দুঃখিত সে জন্য।)
১
দেশে আসলাম প্রায় তিন বছর পর। প্রবাসে দেশে যাচ্ছি বললেই এরকম কথা শোনা যায়
‘গরমে সিদ্ধ হবে।’
‘মশার যন্ত্রণা।’
‘আইন শৃখংলা পরিবেশ খুব খারাপ। আমার অমুক আত্মীয় দেশে যাওয়ার পর পরই ডাকাতী/ছিনতাই এর কবলে পড়ে।’
‘কোথায় যাওয়া যায় না। জ্যামে আটকা পড়ে থাকতে হয়।’
ইত্যাদি ইত্যাদি।
এসব কথায় বাচ্চাদের জন্য অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বণ করি। আমাদের উত্তেজনা দমে না। আমরা তো জানিই দেশে যাচ্ছি। দেশ-মায়ের কাছে। ছুটি কাটাতে ক্যারাবিয়ান দ্বীপপুঞ্জে তো যাচ্ছি না।
রাত দুটোয় ল্যাগেজ নিয়ে বের হয়ে আসি। প্রতিবারের মতো এবারেও কোন হয়রানি ছাড়া বন্ধ ব্যাগ-ব্যাগেজসহ আমরা চারজন মানুষ এয়ারপোর্ট থেকে বের হয়ে আসি। এতো রাতে মা অর্থাৎ শ্বাশুড়িকে বার বার মানা করা সত্ত্বেও এসেছেন। আর ছিল বোন আর ভাগ্না-ভাগ্নি। সবাই মিলে শ্বশুর বাড়ি পৌছে দিল। রাসীন-রাইসা ওদের দাদাভাইকে দেখে ঊনার বুকে ঝাপিয়ে পড়লো। কয়েকমাস আগে বাবা অর্থাৎ শ্বশুরের একটা বড় ধরনের রোড এক্সিডেন্ট হয়েছিল। উনাকে দেখে মনে হল রিকভারী ভালই হয়েছে। পরের দিনের পরিকল্পনা করে রাত চারটার সময় বোনের পরিবার বিদায় নিল।
পরেরদিন (টেকনিক্যালি সেদিনই) হরতাল। তেসরা জুলাই। জাতীয় সম্পদ রক্ষা কমিটির অরাজনৈতিক হরতাল। কেমন হলো জানার উপায় রইলো না। টেলিভিশন আর পত্রিকা এই দুই মিডিয়াতে বিষয়টাতে বলতে গেলে একদমই প্রচার করলো না। তবে সরকার যে কাজটাতে পারদর্শী এই সময়টাতে সে কাজটাই আবার করে দেখালো। আমজনতার দৃষ্টি সরানোর জন্য ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলার চার্জশীট দিয়ে দিল। ৩০ জন আসামী। একজন আমজনতার অংশ হিসেবে খবরটা দেখে আমিও শুধুমাত্র সাসপেন্সের তারণায় পরবর্তী খবরের অপেক্ষায় থাকতাম। কিন্তু এক্ষেত্রে আমি শুধুমাত্র খবরভোক্তা থাকতে পারলাম না। আমার ছোট খালু শ্বশুর এই ৩০ জন আসামীর একজন। প্রাক্তন আইজিপি শহূদুল হক। নির্ঝররা উনাকে কুটি খালু বলে ডাকে। সেই মানুষটি এবং তার পরিবার দুদিন আগেও আমাদের আসার অপেক্ষায় উত্তেজিত ছিল। দুদিন পর পুরো পরিবারের দৃশ্যপট বদলে গেল। নির্ঝর কুটিখালুর খুব স্নেহের ভাগ্নে। উনি চেয়েছিল বলে জেলে গিয়ে একদিন নির্ঝর দেখা করে আসলো। এসে বললো চার্জশীট পড়ে নাকি সে হাসি আটকে রাখতে পারছিল না। একটা মানুষকে জেলে আটকে রাখার মতো কোন আইনানুগ যুক্তিই সেখানে নেই। সবচেয়ে বড় অপরাধ দায়িত্ব পালনে অবহেলা। কিন্তু আদালতে এই অভিযোগ প্রমানিত না করে তো কেউ কাউকে জেলে ঢুকাতে পারে না। এ তো রীতিমতো মানবাধিকার লংঘন। এদেশের হবুচন্দ্র রাজা আর তার গবুচন্দ্র মন্ত্রীর দল কারো কারো জীবনে তাদের চরম দুঃসময়েও হাসির খোরাক যোগাচ্ছে। দুঃখটা আরোপিত আর হাসিটা বোনাস। কোন না কোন ভাবে জীবনটা ব্যালেন্স করে দিচ্ছে।
২
তেসরা এপ্রিল হরতাল ভাংগতেই দুইবোন এলো। ভাগ্না ভাগ্নিরা এলো। আমরা বোনরা মিলে গল্প করতে লাগলাম। বোনরা আমার থেকে বেশ বড়। তাদের থেকে শুধু আদরই পাই। আর ভাগ্নিদের সাথে বান্ধবীর মতো সম্পর্ক। যদিও ওরা আমার অনেক ছোট। দুই ভাগ্নি আর আমি মিলে চটপটি আর ফুচকা খেতে বেরুলাম। আমার মতো আর বাকী দুই ভাগ্নিও প্রবাসী। একজন থাকে কানাডার অটোয়ায়। আরেকজন আমার কাছে। ছুটিতে এসেছে। লেকের পাশে একটা চটপটির দোকানে আসলাম। একদিকে চেয়ার টেবিল পাতা আছে। সেখানে বসে ধানমন্ডির সেই বিখ্যাত জাহাজের আদলে বানানো বাড়িটাকে দেখা যায়। ভ্যানের মধ্যে চটপটির সব তৈজষপত্র। দোকানে ভীড় উপচে পড়ছে। বাংলাদেশে পা দিয়েই এই এক জিনিস দেখার মতো। মানুষজনের উপচে পড়া ভীড়। এয়ারপোর্টের বাইরে মানুষের স্রোত আটকানোর জন্য গরাদের মতো প্রাচীল তুলে দেওয়া হয়েছে। সেই প্রাচীলের মোটা মোটা রড ধরে রাত দুটোর সময়ও হাজার হাজার মানুষ দাঁড়িয়ে আছে। রাত আড়াইটার সময়ও এয়ারপোর্ট রোডে মানুষ আর গাড়ির কোলাহল,ব্যস্ততা। বিষয়টা নাকি পরেরদিনের হরতালের প্রভাব। হরতাল পার্টি ডালে ডালে চড়তে পারলে আমজনতাও পাতায় পাতায় চলতে শুরু করে দেয়। এদেশের মানুষ শিখে গেছে কিভাবে বাঁচতে হয়। বায়ুদূষণ,ফরম্যালিনযুক্ত খাবার কিছুই এদের আটকে রাখতে পারে না। আমিও খুব সহজে এদেশের ভীড়ের মধ্যে মিশে যাওয়া একজন। দেশে পা দেওয়ার সাথে সাথেই আমার গা থেকে প্রবাসের খোলস ঝরে পরে। তারপরও চোখের সামনে খালি হাত দিয়ে টিপে টিপে খোলের মধ্যে পুর ভরবার দৃশ্য দেখে আমার ফুঁচকা খাওয়ার শখ মিটে গেল। তাও সাহস করে চটপটির অর্ডার দিলাম। এবং অদ্ভুত ব্যাপার লেবুর গন্ধে মৌ মৌ এক চামচ চটপটি স্বাদ মুহূর্তের মধ্যে আমার অবশিষ্ট প্রবাসী স্বাস্থ্যবিধি এক ফুৎকারে উড়িয়ে দিল। ছন ছন করে ভেঙ্গে পড়লো সব প্রবাসী আভিজাত্য। এইসব ভ্যানের চটপটির স্বাদের রহস্য কী? মনে হয় চটপটির সাথে একটু ধূলাবালি না মিশলে বোধহয় এর স্বাদ পূর্ণতা পায় না। আমরা যখন খাচ্ছিলাম তখন এক টোকাই গ্রীলের দেয়ালের ওপাশ থেকে কিছু টাকা চাচ্ছিলো।
বললাম, ‘টাকা দিয়ে কি করবে?’
‘আফা (খালাম্মা যে বলে নাই তাতে আমি খুশিতে ডগমগো) খুব ক্ষুধা লাগছে। কিছু খামু?’
‘কি খেতে চাও বলো? আমি কিনে দিচ্ছি।’
‘আফা একটা কোক দেন।’
দুনিয়া আর আগের মতো নেই। টোকাইরাও এখন ডিজুস হয়ে গেছে। গতবার এসে দেখেছিলাম কাজের বুয়া লুকিয়ে লুকিয়ে সেলফোনে প্রেমালাপ করছে। অথচ একদিন আগে সেই বুয়া আমাকে শুনিয়েছিল তার স্বামীর পরকিয়ার গল্প।
৩
হরতাল না থাকলেই আত্মীয় স্বজনদের বাসায় ঘুরে বেড়ানো হয়। দেশে এসে যে পরিমান বিয়ে খেতে হচ্ছে তা থেকে বেশ বুঝতে পারছি বাংলাদেশে তরুনদের সংখ্যা গরিষ্ঠতা। ছুটছি শহরের এ মাথা থেকে ও মাথা পর্যন্ত। আমাদের সাথে সাথে রাসীন-রাইসাও তাল দিয়ে চলছে। দেশে এসে ওরা খুব উত্তেজিত। একদিন গেলাম মুগদাপাড়ায়। সেখানকার রাস্তাগুলো খুব সরু। সে রাস্তায় অনেকটা পথ হাটতে হয়েছে। সরু রাস্তার এখানে সেখানে ময়লা আবর্জনা জমে থাকলে তা পাশ কাটানো খুব কঠিন হয়ে পড়ে। বিশেষ করে তার থেকে ঠিকরে পড়া দুর্গন্ধ। আড় চোখে বাচ্চাদের দিকে তাকিয়ে দেখি। না, ওরা বেশ স্বাভাবিক। কিন্তু ট্যাক্সিতে উঠেই বাচ্চারা একজন আরেকজনকে ফিসফিস করে বলে উঠলো,
‘আমি এক মিনিট দম বন্ধ করে ছিলাম।’
‘আমি আরো বেশি। মনে মনে কল্পনা করছিলাম যে পানির নিচে ডুব সাঁতার দিচ্ছি।’
আমি ওদের দিকে তাকাতেই আমার দিকে এমন এক হাসি দিল যার মানে দাঁড়ায় ‘আমাদের কিছু গোপন কথা আছে সেটা তোমার কাছ থেকে লুকোতে চাইছি।’ওরা কিভাবে কিভাবে জানি বুঝে গেছে এই দেশে এসে কোন কিছু নিয়ে অভিযোগ করলে আমি খুব কষ্ট পাব।
১৯৯৫ সালের দিককার কথা। আমার বড়ভাই ক্যালিফোর্নিয়া থেকে দেশে আসবে। কয়েকদিন ধরে বাসার সবাই দিনরাত খেটে ঘরবাড়ি পরিস্কার করছি। এমনই দুঃখ যে আমার সাহেবী ভাই বাসায় পা দিয়েই ন্যাস্টি ন্যাস্টি করা শুরু করলো। সাহেবী ভাইয়ের দেশের আর কিছুই ভাল লাগে না। আবার সেসময় আমার এক আমেরিকান ককেশিয় মামিকে দেখেছিলাম বাংলাদেশে এসে যা কিছু দেখছে তাতেই মুগ্ধ হচ্ছিলেন। অল্পতেই মুগ্ধ হতে পারাটা আসলে একটা মস্ত বড় গুণ। এতে জীবনে আনন্দ ধারণের ক্ষমতা বেড়ে যায়।
এখন পর্যন্ত মোটামুটিভাবে ভাবে আমরা অনবরত ঘোরাঘুরির মধ্যে আছি। এই পর্যন্ত চিটাগাং,কক্সবাজার,পটুয়াখালী,কুয়াকাটা আর বরিশাল গেলাম। যা দেখছি তাই ভাল লাগছে। দেখে যাচ্ছি পথের ধারে কিম্বা দূরের সীমারেখার গছপালার সবুজ বেড়া,মাঠ জুরে সদ্য ডগা তুলে দাঁড়ানো ধানের জমি, মাঁচার উপর আরাম করে এলিয়ে থাকা সব্জির বাগান,ভরা দিঘি,টইটুম্বুর পুকুর,স্রোতস্বিনী নদী,সমুদ্রের ঢেঊ, বর্ষার ঝালর আর মানুষের ভালবাসা। বাচ্চারা রেস্টরুম খারাপ দেখলে হয়তো সেখানে যাবে না কিন্তু কোন অভিযোগ করবে না। তবে অদ্ভুত ব্যাপার হলো যেই গরম, মশা বা যানজটের কথা শুনেছিলাম তার তেমন কিছুই টের পাচ্ছি না। আশ্চর্যজনকভাবে এবার মশা খুব কম মনে হচ্ছে। বৃষ্টির জন্য গরম বুঝতে পারছি না। যানজট খুব বেড়েছে। কিন্তু কিভাবে কিভাবে জানি সময়মতো যেখানে যাওয়ার সেখানে পৌছে যাচ্ছি। ঢাকা শহরে এখন সময় নির্ধারণ হয় যানজটের কথা মাথায় রেখে। আর আমি তো এখন এ শহরে আগন্তুক। আমার অফিস-আদালত, স্কুল-কলেজের ঝামেলা নেই। বাইরে বেরুতে হলে নিজের সুবিধা মতো বেরুতে পারি। যানবাহন হিসেবে গাড়িকে খুব অসহ্য লাগে। মনে হয় খাঁচার ভেতর আটকে থাকা। এ শহরে ফুটপাথটা পরিষ্কার থাকলে পদব্রজই সবচেয়ে ভাল বাহন।
একদিন বোনের আর ভাগ্নির সাথে গেরিলা দেখতে গেলাম। সেদিন স্কয়ার হাসপাতালের সামনের যানজটে গাড়ি আটকে গেল। সিনেমা সাতটায় শুরু। সাতটা প্রায় বাজে বাজে। তিনজন মিলে গাড়ি থেকে নেমে নির্বিঘ্নে কাদা,নর্দমার ধার,ভাংগা ফুটপাথ,কাঁচা বাজার,স্থবির হয়ে যাওয়া গাড়ির সারি পেড়িয়ে অবশেষে সিনেপ্লেক্সে পৌছলাম। সিনেমার প্রথম পনের মিনিট দেখতে পায়নি। পরে ড্রাইভারের কাছ থেকে জেনেছিলাম গাড়ি নাকি বসুন্ধরায় পৌছেছিল আরও এক ঘন্টা পর। ঢাকা শহরে একজন খানদানীর জীবন আর জেলখানার ভিআইপি বন্দির জীবন মোটামুটি একই মানের।
৪
আসার পর প্রথম দু সপ্তাহে একটার পর একটা হরতাল লেগেই আছে। হরতালের দিনকে রাসীন নাম দিয়েছে ‘নো বীপ ডে’। আশেপাশে স্কুল,ভার্সিটি আর ক্লিনিক থাকার দরুণ সাধারণ দিনে সারাক্ষণই হর্ণ বা বীপ শুনতে হচ্ছে। এক হরতালের দিনে সকালবেলা রাসীন খুব অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করছে ‘ আজকে কেন বীপ শোনা যাচ্ছে না?’ তারপর থেকেই ‘নো বীপ ডে’। হরতালের মধ্যেই একদিন সপরিবারে রিক্সা করে বেরুলাম শাহবাগের যাদুঘর দেখাবো বলে। কিছুদূর যাওয়ার পরই ঝমঝম বৃষ্টি নেমে এলো। সেদিন আমাদের ধানমন্ডি-শাহবাগ-ধানমন্ডি এইটুকু রিক্সাভ্রমনেই সন্তুষ্ট থাকতে হলো। যাদুঘর বন্ধ। অথচ তার আগের দিন হরতালের মধ্যেও যাদুঘর খোলা ছিল। সেদিন সাথে বাচ্চারা ছিল না। দুই টোনাটুনি হেঁটে হেঁটে সারা ঢাকা শহর চষে বেড়িয়েছিলাম। খুব ভাল লেগেছিল। তবে মনের মধ্যে শুধু একটাই প্রশ্ন জাগছিল – ওয়ার্ড কমিশনরা করে কী? কিছুদিন আগে পেপারে দেখলাম ঢাকা সিটি করপোরেশনের মেয়র প্রায় পৌনে তিন হাজার কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করলেন। এতোসব টাকা যায় কই? রাস্তাঘাট ভাংগা, অপরিচ্ছন্ন। উন্মুক্ত ম্যানহোল। এখানে সেখানে ময়লা-আবর্জনার ডিপো। একটা বিল্ডিং হচ্ছে তো সামনের ফুটপাথ পুরো জ্যাম। আর সেই নির্মানাধীন বিল্ডিঙ্গের নেই কোন নিরাপত্তা। সেই সাথে ফুটপাথের উপর ঝুলছে স্তুপ স্তুপ ক্যাবল তার। অপর্যাপ্ত এবং অপরিকল্পিত ট্রাফিক সিস্টেম। ধানমন্ডির মধ্যে দেখলাম যে জায়গাটায় চারটা রাস্তা এসে মিলে গেছে সেখানে যানজটের চূড়ান্ত। দিনের বেলা কম্যিউনিটি পুলিশের দেখা মিললেও বেলা বাড়লে সেখানে আর কোন নিয়মের বালাই নেই। যেন শহরের নীতিনির্ধারকরা ধরেই নিয়েছে যে আমজনতা পারস্পরিক বোঝাপড়ার মাধ্যমে এরকম বটলনেক এলাকা একে একে পার হয়ে যাবে। ফলশ্রুতিতে আবাসিক এলাকার মধ্যে মধ্যে যানজটের গিট্টু। অথচ আমেরিকায় এ ধরনের সমস্যা চাররাস্তার মাথায় চারটা ‘থামুন’ সাইনবোর্ড লাগিয়ে ওরা এর সমাধান করেছে। আমাদের দেশেও একই নিয়ম খাটিয়ে এ অবস্থার কিছুটা উন্নতি করা যেত। প্রথমেই ‘থামুন’ সাইনবোর্ড দেখে প্রত্যেকটি বাহন আলাদা আলাদাভাবে তিন কি পাঁচ সেকেন্ডদের জন্য থামবে। তারপর আগে থামলে আগে যাবে এ ভিত্তিতে একে একে বাহনগুলো চলতে শুরু করবে। কোন বাহন চলতে শুরু করার আগে তার যাতায়াতের পথ নিরাপদ কিনা তা অবশ্যই মাথায় রাখবে। দুজন কড়া ধাঁচের ট্রাফিক পুলিশের মাধ্যমে দুমাস অনুশীলন করালেই আস্তে আস্তে নতুন নিয়ম সবার অভ্যাস হয়ে যাবে। ট্রাফিক পুলিশকে যদি বলা হয় যে নিয়ম ভাংগবে তাকে সাথে সাথে দুশ টাকা জরিমানা করবে এবং এই টাকার ৫০ ভাগ সেই ট্রাফিক পুলিশ পাবে তাহলে তারাও সর্বদা কর্মতৎপর থাকবে। সেই সাথে থাকবে ট্রাফিক কোর্ট। যেখানে জরিমানার বিপক্ষে বাদী তার আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ পাবে। এই পদ্ধতি কাজে না লাগলে আরো উন্নত পদ্ধতি বের করতে হবে। মোট কথা কিছু একটা শুরু তো করতে হবে। এরকম বিশৃখংলা আর কতদিন সহ্য করা যায়।
পরিব্রাজকের মতো শহরের চারপাশ ঘুরে ঘুরে মনে হলো এখানে অনেক বেকারত্বের সমস্যা থাকতে পারে। কিন্তু সেই সাথে আছে কাজ সৃষ্টির ব্যাপক সুযোগ। শহর পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার ঠিকাদারী ব্যবসাতেই তো হাজার হাজার কর্মসংস্থান তৈরী হতে পারে। আমজনতাকে মেয়র ভবনের সামনে প্ল্যাকার্ড হাতে কাজ না চাইতে হবে। নইলে উন্নয়নের সব হাজার কোটি টাকার ভাগ-বাটোয়ারা হয়ে যাবে। কমিশনাররা সে ভাগ পেতে খুনোখুনি করে মরবে। আর মন্ত্রী-মেয়রদের পেট মোটা হতে থাকবে।
তবে দু একটা খবর দেখে মনে হলো মানুষ তার হীনমন্যতা দূরে সরিয়ে রেখে অধিকার আদায় করতে শিখে গেছে। নদীর বাঁধ ভেঙ্গে গেছে তো দল বেঁধে গ্রামের লোক পাউবি (পানি উন্নয়ন বোর্ড)ঘেরাও করেছে। এরপর রাস্তা ভাংগা থাকলে রোডস এন্ড হাইওয়ে বা এলজিইডি ঘেরাও হবে। তাহলে আর দেখতে হবে না ঠিকাদারের ঘুষের টাকায় প্রকৌশলীরা সপরিবারে বিদেশ ভ্রমন করছে।
৫
দেখতে দেখতে তিন সপ্তাহ চলে গেল। আরও চার সপ্তাহ বাকী আছে। অনেকের সাথে দেখা করার ইচ্ছে আছে। আরো অনেক জায়গায় যাওয়ার ইচ্ছে আছে। এক সময় এই চার সপ্তাহও শেষ হয়ে যাবে। মনে হচ্ছে বয়স যতো বাড়ছে তত আমরা সূর্যের কাছাকাছি চলে আসছি। সময় খুব দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে। অথচ ছোটবেলায় মনে হতো দিন যাচ্ছে একটি একটি করে। এখন কাটাচ্ছি ফাস্ট ফরোয়ার্ডের দিন। অনলাইনে সর্বসাকুল্য দু-তিন মিনিট বসেছিলাম। তাও গত বার বছরের মধ্যে এবারই প্রথম দেশে এসে এতোদিন থাকছি। আমার এক নানি আছেন। জাতিতে বার্মিজ। প্রায়ই বাংলা বলার সময় ক্রিয়াপদে তালগোল পাকিয়ে ফেলেন। সেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে নানার সাথে ঢাকায় এসেছিলেন। তারপর থেকে এদেশেই আছেন।এক খালার বাসায় দেখা হলো। জিজ্ঞেস করলেন, ‘বাবা-মা নেই তুমি দেশে আসে কেন?’
‘দেশে আসি দেশের জন্য। আপনাদের সবার জন্য। বাবা-মারা তো বিদেশেই যেতে পারে। তাদের জন্য তো শুধু দেশে আসার মানে হয়না।’
মনে হলো নানি একটু দীর্ঘনিশ্বাস ছাড়লেন। বললেন,’কতোকাল আগেই তো আমার কাছে আমার দেশটা মরে গিয়েছে। এখন তো শুধু ওপাড়ে যাওয়ার অপেক্ষা। তারপরও মাঝে মধ্যে খুব ছোটবেলার কথা মনে হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপানীরা বোম ফেলে শহরটা একদম ধবংস করে দিয়েছিল। খুব সুন্দর ছিল সে শহরটা …’
নব্বই বছরের নানি তার স্মৃতির শহরে ডুবে গেলেন। আর আমি বর্তমানে দাড়িয়ে মনে মনে বললাম, দেশ মানে আমার কাছে শুধুই কতগুলো স্মৃতির সমাহার হবে না। আমি বার বার এখানে ফিরে আসতে চাই। এখানেই মরতে চাই।
সবাইকে শুভ কামনা।
প্রথম হইলাম! 😀 :tuski:
খুবই ভাল লাগল। দেশে যাইতে ম্ঞ্ছায় 🙁
ঈদ না করেই ব্যাক করবেন?? তাইলে কেম্নে কি??
অ ট ২ এর প্রথম লাইনে তেসরা জুলাই হবে মনে হচ্ছে।
বাচ্চাদের স্কুল খুলে যাবে। তাই ঈদের আগে ফেরা। হ্যা তেসরা জুলাই।
“Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
― Mahatma Gandhi
"ওরা কিভাবে কিভাবে জানি বুঝে গেছে এই দেশে এসে কোন কিছু নিয়ে অভিযোগ করলে আমি খুব কষ্ট পাব।"
"এক হরতালের দিনে সকালবেলা রাসীন খুব অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করছে ‘ আজকে কেন বীপ শোনা যাচ্ছে না?’ তারপর থেকেই ‘নো বীপ ডে’।"
Apu Oshadharon laglo.Rassen nd Raissa bujhe gese oder Maa er ai desh ta aktu ogochalo, oporissoonno holeo Desh ta kintu joss jotilzzz......
Sotti e amra amader desh ta k kotto sundor kore shajate pari kintu amader e sodissa r ovab e aj ai durobostha.
এরই নাম জীবন।!?
চ্যারিটি বিগিনস এট হোম
।!?
“Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
― Mahatma Gandhi
দেশে যাবার গল্পের পোষ্টে কইষা মাইনাচ মাইনাচ মাইনাচ।
খালি ২০১২ আসতে দেন, আমিও পোষ্ট দিমু এইটা নিয়া। :grr:
আমি তবু বলি:
এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..
ঐ
তখন দেখবনে।
“Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
― Mahatma Gandhi
শান্তা আপা, আপনি তো দেখি চরকির মতো ঘুরে বেড়াচ্ছেন! ঘুরতে ঘুরতে লিখে ফেলাই ভাল তাহলে বৈসাদৃশ্য এবং পরিবর্তনগুলো ধরা যায় চমৎকার। চলুক।
আমার বন্ধুয়া বিহনে
চরকির মতোই ঘুরা হয়েছে। তোমার ভ্রমনকাহিনী কোথায়? আমি অবশ্য অনেকদিন নেট বিচ্ছিন্ন।
“Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
― Mahatma Gandhi
আমার দেশে ফেরার গল্প আপনার মতো বর্নাঢ্য ছিলো না। ভ্রমন কাহিনী যদি লিখি তাহলে লিখতে হবে কতবার বাসা থেকে ডেন্টিস্টের কাছে গেলাম সেই গল্প এবং একই কথা বার বার "আরেকটু বড় করে হা করেন" 🙁 🙁
আমার বন্ধুয়া বিহনে
লেখা ভাল পাইছি।
দেশে যাইতে মঞ্চায়। 🙁 🙁 (সম্পাদিত)
কবে আসতেছো?
“Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
― Mahatma Gandhi
আসতেসি না এই বছর। 🙁 🙁
আপা,
সময় করে একদিন সাভারে চলে আসেন । ঘোরাও হলো আর পিচ্চিদের স্ম<তিসৌধ দেখাটাও । আর চা আমার বাসায় ।
আমার কি সমস্ত কিছুই হলো ভুল
ভুল কথা, ভুল সম্মোধন
ভুল পথ, ভুল বাড়ি, ভুল ঘোরাফেরা
সারাটা জীবন ভুল চিঠি লেখা হলো শুধু,
ভুল দরজায় হলো ব্যর্থ করাঘাত
আমার কেবল হলো সমস্ত জীবন শুধু ভুল বই পড়া ।
এই জুলাই মাসের ত্রিশ তারিখ সাভার যাচ্ছি। দুপুরে একটা বিয়ের দাওয়াত। তোমার সাথে যোগাযোগ করবো কিভাবে?
“Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
― Mahatma Gandhi
FB এ req গেছে আপু ।
আমার কি সমস্ত কিছুই হলো ভুল
ভুল কথা, ভুল সম্মোধন
ভুল পথ, ভুল বাড়ি, ভুল ঘোরাফেরা
সারাটা জীবন ভুল চিঠি লেখা হলো শুধু,
ভুল দরজায় হলো ব্যর্থ করাঘাত
আমার কেবল হলো সমস্ত জীবন শুধু ভুল বই পড়া ।
অনেক দিন পর একটা নির্ভেজাল ব্লগর ব্লগর পড়লাম, দারুন লাগলো। :hatsoff: :hatsoff:
আপনার লেখা পড়ে আমি তো দেশে থেকেই সব কিছু মিস করা শুরু করেছি। এমনিতে ছুটিছাটার হিশাব নিকাশ মেলাতে পারছি না... সব কিছু বাদ দিয়ে ঘুরতে বেরিয়ে পড়তে মন চাচ্ছে। এমনকি ঢাকা শহরকেও হালকা পাতলা মিস করছি... কতদিন সিনেপ্লেক্সে মুভি দেখি না, লেকের পাড়ের ফুঁচকা খাই না 🙁
পরের লেখার অপেক্ষায় থাকলাম 🙂
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
সিনেপ্লেক্স ভাল লাগলো। চটপটি ফুঁচকা তো চালিয়ে যাচ্ছি।ঢাকার বাইরে খুব ভাল লাগছে। বিশেষ করে চৌদ্দগ্রামে তৈরি হওয়া রিসর্ট গুলো তো খুবই সুন্দর।
“Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
― Mahatma Gandhi
বাংলাদেশের ঢাকা ছাড়া আর সবকিছুই সুন্দর। ঢাকায় এত মানুষ, বাপরে বাপ। মনে হয় হাট বসেছে।
সময়টুকু সুন্দর কাটুক, এই কামনা করি। 🙂
পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না
কথা ঠিক। ঢাকায় মানুষ মানুষ মানুষ।এ দেশের ফুটপাথ দিয়ে হাটলে লাস ভেগাসের কথা মনে হয়।পার্থক্য হলো এখানে দেখা যায় নোংরা-আবর্জনা আর ওখানে নোংরা ফ্লায়ার।
“Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
― Mahatma Gandhi
দেশে যাইতে মঞ্চায় 🙁 জামাই টিকেট কিনলে আমি একটা বড় ক্যালেন্ডার কিনব আর দিন গুনব 😀
দেশের মজাই আলাদা।
“Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
― Mahatma Gandhi
কবে যে আপনার মত দেশে যাওয়ার কাহিনী লিখতে পারবো 🙁
কতদিন বাবা-মাকে দেখিনা, ক্লাস্মেট গুলা গেট টু গেদার করে, অ্যাঁর আমি খালি ছবি দেখি 🙁
আপু আপনার লেখা বরাবরের মতই ভালো লাগলো 🙂
যখন সময় হবে তখন আমরা তোমার দেশের অভিজ্ঞতার কথা পড়বো। তোমার লন্ডনি সিরিজ অনেকদিন ধরে বন্ধ।
“Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
― Mahatma Gandhi
সহমত !
🙂 🙂 🙂
“Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
― Mahatma Gandhi
লেখা বরাবরের মতই :thumbup:
একটা জিটুজি হওয়া দরকার, সঙ্গে জম্পেশ আড্ডা। বহুত দিন ধইরা অভুক্ত আছি। রোজার মধ্যেই হোক, ইফতারসহ। শান্তা রাজি তো? প্রবাস থেকে আর কেউ কি এর মধ্যে ঢাকা আসছে?
"মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"
ভাইয়া, আম্মো অভুক্ত, শুকায় গেছি 😀 । ভেন্যুঃ আপনার চারতলায় (যদি আপনি না পিটান)। ডেট ঠিক করেন।
জমায়েত ছোট হলে সানা ভাইয়ের চারতলায় করা যায় - যদি কারো অসুবিধা না হয়।
“Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
― Mahatma Gandhi
লাবলু ভাই আপনার এই মন্তব্য আমার জন্য কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা হয়ে গেলো।
আসবো সব ফাইনাল করে ফেলছিলাম প্রায় আগস্টের সেকেন্ড উইকে। পরে কিছু ঝামেলায় পইড়া এই বছরই আর আসতে পারতেসি না। 🙁 🙁 🙁
শান্তাপা...বারবার সুন্দর সুন্দর বলতে বলতে আমি বিরক্ত, মাঝে সাঝে একটু খ্রাপ লেখা দিয়েন। বিজ্ঞের মত ক্রিটিসাইজ করতে পারব 😀
জিটুজির ডেট ঠিক করেন তাড়াতাড়ি 😀 😀
শান্তাপার ব্লগ, ঢাকা শহরের জ্যামজট, আর দুর্গন্ধের কথা পড়তে পড়তেও মন্টা কেমন ফুরফুরা হয়ে গেল।
সাতেও নাই, পাঁচেও নাই