দুই
লাবনীর আজকে সুমনের সাথে আশুলিয়াতে লং ড্রাইভে যাওয়ার কথা। কথা আছে এগারটার সময় গাড়ির মধ্যে থেকেই সুমন মিস কল দিবে আর সে নীচে নেমে যাবে। এখন প্রায় বারটা বেজে যেতে চললো অথচ সুমনের কোন খবর নেই। এদিকে হাসানকে বলে রেখেছে আজকে সাড়ে এগারটা থেকে তার দুটো কোচিং ক্লাস। হাসান তো ঠিকই তিনটা চারটার দিকে ফোন করে খোঁজ নেবে লাবনী বাসায় ফিরেছে কি না। এখন খুব অস্থির অস্থির লাগছে। কিছুক্ষন আগেও নীচে গিয়ে দেখে এসেছে সুমনের গাড়ির কোন পাত্তা নেই।
আশুলিয়া পৌছাতে পৌছাতে প্রায় একটা বেজে গেল। পথে সুমনকে অনেক লম্বা ফিরিস্তি বলে লাবনীর মান ভাঙ্গাতে হয়েছে। শেষে আসল কারনটা বলতে হলো। এটাতে বরং কাজই দিল। সি©ার প্রসঙ্গ আসাতে লাবনী একটু নড়ে চড়ে বসলো। আজ সুমনের ঘর থেকে বেরুতে যাবার মুখে সি©া এসে হাজির। ওকে সামলিয়ে এখানে আসতে একটু দেরী হয়ে গেল।
সুমন ভাবছিল দুটো মেয়েই যেভাবে ওর জন্য মরিয়া হয়ে উঠছে খুব শীঘ্রই ওকে একটা সির্দ্ধান্েত পৌছুতে হবে। আর তাছাড়া গত ছয়মাস টানা দেশে থেকে একদম একঘেয়েমী এসে গেছে। সুন্দরী সুন্দরী মেয়েদের সাথে প্রেম করা ছাড়া আর কোন বৈচিত্র্য নেই এখানে। স্টেটসসে একটু কিছুটা কষ্ট করতে হলেও মজা করার কতো উপকরন সেখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে বাবা সচিব পদ থেকে অবসর নেওয়ার আগে এতো কালো টাকা আমেরিকার ব্যাংক একাউন্টে সরিয়ে রেখেছে যে সুমন তো বটেই এমনকি ওর পরের প্রজন্মের ভবিষৎ বংশধরদেরও আর কাজ না করলে চলে যাবে। তবে ওদেশে প্রেম করে তেমন মজা নেই। সে প্রেমের ব্যাপারে এখনও রোমান্টিক এবং প্রাচীনপন্থি। সুন্দরী আমেরিকান মেয়েদের পেছনে অনেক খরচ করতে হয়। তারপরও ওরা প্রেমে তেমন গদ গদ হয় না। আজকাল আমেরিকান ছেলেরাই সবর্ণের মেয়েদের উপর খুব বিরক্ত হয়ে চাইনীজ মেয়েদের দিকে ঝুকছে। আর সঙ্গীহীন সাদা মেয়েদের চাপে ওদেশে এখন অনলাইন ঘটকালীর ব্যবসা দিনদিন বেশ জমজমাট হয়ে উঠছে। আসল প্রেমের মজা হচ্ছে বাংলাদেশে। এদেশে বিবাহিত কি অবিবাহিতই হোক না কেন কোন সুন্দরী আকর্ষনীয় মেয়েকে পটাতে ওর একটার বেশি দুটো ফোন কলের দরকার পরে না। আসলে এখানে এই উচ্চবিত্ত বা উচ্চমধ্যবিত্ত শ্রেনীর মেয়েগুলোও খুব একঘেয়েমীতে ভূগছে। তবে বন্ধুদের মতে আমেরিকা ফেরত বড়লোকের ছেলের তকমাটা পেছনে ঝুলছে বলে তার নারী মহলে এতো চাহিদা। ওর বন্ধুদের মেয়ে ভাগ্য নাকি ওর মতো এতো ভালো না।
তিনমাস আগে বন্ধু অতুলের সাথে একটা রেস্টুরেন্টে গিয়ে লাবনীর সাথে প্রথম পরিচয়। মেয়েটাকে দেখে সুমনের একেবারে মাথা ঘুরে গিয়েছিলো। একেবারে গ্রীক দেবীর মতো নিঁখুত কাঠামো। এই মেয়ে আমেরিকায় জন্মগ্রহন করলে এতোদিনে মিস ইউ এস এ হয়ে যেত অথবা কোন মডেলিংএর বড় সড় কন্ট্রাক্ট বাগিয়ে সেখানে কোটি কোটি টাকা কামাতো। মেয়েটা বিবাহিত শুনেও সে থেমে থাকেনি। বরং আরো আকর্ষন বোধ করেছে। খুব অনায়াসেই একদিনের মুঠো ফোনের আলাপেই লাবনীর সাথে সম্পর্কটা জমে গেল। মেয়েটাও যেন ওর প্রতীক্ষাতেই ছিল। পনেরদিন পর তো ওর বাসাতেই আসতে বললো। তাও আবার সময় বুঝে যখন ওর স্বামী বাসায় থাকে না। তবে মেয়েটার মধ্যে কিছুটা নীতিবোধ আছে। এখনও সমাজের নিয়ম কানুনের কিছুটা তোয়াক্কা করে চলে। এতে অবশ্য মেয়েটাকে ওর কাছে আরো আকর্ষনীয় করে তুলেছে।
তিন
তুরাগ নদী ছুয়ে আসা দমকা বাতাসে লাবনীর চুল এলোমেলো হয়ে যাচ্ছিল। সুমন মুগ্ধ চোখে তা দেখছিল আর কিছুক্ষন পর পর আংগুলের আলতো ছোয়ায় তা ঠিক করে দিচ্ছিল। লাবনী একটু আনমোনা। খুব ধীরে ধীরে হঠাৎ করেই জিজ্ঞেস করলো,
-আচ্ছা তুমি তো বলো সিগ্ধা তোমাকে খুব জ্বালাতন করে। সত্যি করে বলবে তোমার দিক থেকে কি কোন প্রশয় নেই?
সুমন মনে মনে প্রমাদ গুনলো। বাঙ্গালি মেয়েদের নিয়ে এই এক যন্ত্রণা! তারা কোন সম্পর্ককেই হালকা ভাবে নিতে জানে না। একটা কমিটমেন্টের দিকে নিয়ে যেতে চায়। সিগ্ধার প্রসঙ্গ আসলেই লাবনীকে দেখলে মনে হয় ও যেন এক নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে। লাবনীর সাথে এই লুকোচুরির সম্পর্কটা সে বেশ তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করে। মাঝে মধ্যে অবশ্য এটাও মনে হয় এই মেয়ে তার বৌ হলে খারাপ হয় না। কিন্তু মেয়েটা বিবাহিত এটাই এই মুহুর্তে এক বড় রকমের বাঁধা। কিছুদিন আগে বাবা ডেকে বুঝিয়ে দিয়েছেন দেশের রাজনীতিতে ওর খুব ভালো সুযোগ আছে। তিনি সদ্য রাজনীতিতে ঢুকে ওর জন্য পথ তৈরী করছেন। এখন ওর দায়িত্ব হচ্ছে সমাজে উপস্থাপন করা যায় এমন একটা মেয়েকে বিয়ে করা যেখানে কোন স্ক্যান্ডাল থাকবে না। এই মূহুর্তে সে লাবনীকে হারাতে চাচ্ছে না আবার কোন কমিটমেন্টও করতে চাচ্ছে না। এখন অত কিছু না ভেবে আপাতত লাবনীর মাথাটা ঠান্ডা করাটা বেশি দরকার।
সুমন গভীরভাবে লাবনীর দিকে তাকিয়ে খুব গাঢ় স্বরে বললো,
-লাবনী, ময়না পাখী আমার, তুমি কি জান তুমি কত সুন্দর?
সুমন দেখলো কাজ দিচ্ছে। মেয়েটার মুখের কঠিন রেখাগুলো আস্তে আস্তে নরম হয়ে আসছে। এবার সে আলতো করে পরের ডোজটা দিল।
-স্নিগ্ধার সাথে কোনভাবেই তোমার তুলনা হয়না। আমি যখন তোমার পাশে থাকি তখন এই পৃথিবীতে যে আর অন্য কোন মেয়ের অস্তিত্ব আছে সেটা পুরোপুরিই ভুলে যাই। এই হূদয় জুরে শুধুই তুমি। চোখ বন্ধ করলে তুমি, চোখ খুললে তুমি। আমার পৃথিবী শুধুই তুমিময়।
লাবনী মনে হয় পুরোপুরিই গলে গেল। সুমন ভাবলো, যাক এবারের মতো ফাড়া কাটা গেল। তবে মনে মনে আফসোস তার বাবা তাকে কি সব ম্যানেজমেন্ট ট্যানেজমেন্ট গেলাতে চাচ্ছে। এই ম্যানেজমেন্টের একটা ভাগ যদি হতো “HOW TO MANAGE WOMAN” তাহলে তার কোন দুঃখ থাকতো না। ফ্লার্ট একটা বড় ধরনের আর্ট। এটা আয়ত্তে আনতে অনেক দক্ষতা লাগে। ম্যানেজমেন্টের সিলেবাসে ঢোকানো উচিত।
লাবনীর কথায় সুমনের ভাবনায় ছেদ পরলো। ও একটু ভূল হয়ে গেছে। পাশে কোন মেয়ে থাকলে নো অন্যকিছু।
-এবার তোমার চোখটা বন্ধ করে বলো তো কি দেখছো?
সুমন চোখ বন্ধ করে বললো,
-রজনীগন্ধা ফুল।
লাবনী চারদিকে তাকিয়ে বললো,
-কোথায়?
-তোমার এই হাতটার সব আঙ্গুলের ডগাগুলো এক করো তো?
সুমনের কথার যাদুর ছোঁয়ায় লাবনী ভুলে গেল ওর যতো অভিমান, যতো অনিশ্চয়তা। লক্ষ্মী মেয়ের মতো সব আঙ্গুলের ডগাগুলো মিলালো।
-দেখ তোমার আঙ্গুলগুলো রজনীগন্ধা ফুলের পাঁপড়ির মতো। আর পুরো হাতটা যেন একটা রজনীগন্ধা ফুল। তুমি আমার চোখের সামনে না থাকলেও তোমার এই হাত আর গায়ের সুবাস আমার মনের মধ্যে একটা রজনীগন্ধা ফুল হয়ে সব সময় সুগন্ধ ছড়াতে থাকে।
সুমনের কথা লাবনীকে প্রায় পাগল করে তোলে। আজকালকার মুঠো ফোনের সহজলভ্যতার সুবাদে এর আগেও লাবনীর দু একটা আল পটকা সম্পর্ক যে হয়নি তা নয়। কিন্তু তার সবগুলো লোকই ছিল স্থুলরুচির বিকৃত মানসিকতার। প্রেম বা মেয়েমানুষ বলতে ঔ সব লোকগুলো একটা জিনিষই বুঝে। একমাত্র সুমনই পেরেছে তার কল্পনার প্রেমকে বাস্তবে রুপ দিতে। তার অসম্পৃক্ত হূদয়কে কানায় কানায় পরিপূর্ণ করতে। হাসানের সাথে তার প্রায় আট বছরের সংসার হতে চললো। অথচ কোনদিন হাসান তার হাত ধরে এরকম রোমান্টিক কথা বলেছে? এই মূহূর্তে সে ভুলে যেতে চায় তার অসুখী বিবাহিত জীবনের কথা। তার নিজের মানুষদের অসহযোগীতার কথা। পরিপূর্ণভাবে উপভোগ করতে চায় এই সুন্দর সময়।
চলবে ..
দিহান ভাবী... 😀 পারলেন তো না... :grr: :grr: :grr:
চলুক... 🙂
ব্যাপার না, আমরা আমরা'ইতো 😛 :teacup: নিয়া রোজা ভাইঙ্গো 😀
আচ্ছা কেউ বলতে পারবে আমি কিভাবে ১ম পর্বের লিংক দিব?
“Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
― Mahatma Gandhi
ইয়ে শান্তাপু,পুরাটা না পইড়া কমেন্ট করা ঠিক না কিন্তু তাও করি-মাপ কইরা দিয়েন।
আমার মতে সুমন আর লাবনী এই দুইটার জন্য একটাই চিকিৎসা-আগপাশতলা আড়ং ধোলাই x-( x-( x-(
আড়ং ধোলাই কিরে দোস্ত???
ekmot .....
চলছে ... চলুক ... আপি 🙂
আপু গল্পটা ভাল লাগছে
আপনার লেখাগুলো এমন যে শেষ না করে শান্তি পাওয়া যায় না!
পুরা লেখা একটানে শেষ করে এখন পরের পর্বের জন্য অপেক্ষায় আছি। :dreamy:
যাই এখন পরেরটা পড়ি গিয়ে... :hatsoff: :hatsoff:
আপু,
হিহি...।খুব ভাল লাগলো পড়ে।
সব পর্ব পড়ে একসঙ্গেই মন্তব্য করি………. B-)
আফামনি, আপনে কেমনে ধইরা ফেললেন সত্যি কাহিনীটা?
কাহিনী প্যাঁচ খাইতেছে সামনে মনে হয়।
আশুলিয়া ....
পরেরটা পইড়া আসি যাই।