স্ট্যান্ডিং এট দি এজ (Standing at the Edge)

ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক। আমার জীবনের কতো কতো স্মৃতি জড়িয়ে রেখেছে সযত্নে। কতোবার এই সবুজের বুক চিরে ছুটেছি, কখনো এদিক, কখনো ওদিক। কোনদিন তো এমন হয়নি আমার, এই চিরচেনা পথটার জন্যে এভাবে বুকটা হুহু করে ওঠেনি!
ছয়তা বছর ধরে, বছরে সাত-আট বার আমি এই সড়ক পাড়ি দিয়েছি। যতবার এই পথে ছুটেছি আমি, প্রতিবার নতুন কিছু পেয়েছি, নতুন নতুন জিনিস দেখেছি। মনেহয় যেন এই সড়কের প্রতিটি নুড়ি আমার চেনা। আসলে কি চেনা?
সেই ছোট্টবেলায় মা বাবার সাথে বেরাতে এসেছি ময়মনসিংহ। কিন্তু সেবারের কথা নয় এখন। কারন তখনকার আমি’র এই মহাসরকের সাথে পুরো জীবনটা এভাবে জড়ানো ছিলোনা। বলি ছয় বছর আগের কথা। মা-নানু, ভাইয়ের সাথে বাসে করে যেদিন আমি ক্যাডেট কলেজে যোগ দেবার জন্যে আসি, মনে হয়েছিল এই পথেই, আর মাত্র ১০ দিন পরেই আমি আমার মায়ের বুকে ফিরে যাবো! সেদিন আমি জানতাম না, যে আমার জীবনের মধুরতম অপেক্ষা আর দুঃসহ আশংকা গুলো একদিন এই মহাসড়কের পাশের মাইলফলক গুলো নিয়ন্ত্রণ করবে!
সপ্তম শ্রেনী ঘোরে কেটেছে। শুধু মনে পড়ে বাড়ি ফেরার সময়ের উত্তেজনা আর কলেজে ফেরার সময় আর্মি স্টেডিয়ামে সেই মরাকান্না! ফেরার দিন প্রার্থনা করতাম যেন পথটা শেষ না হয়!
দেখতে দেখতে, সামান্য কিছু পরিবর্তন নিয়ে নিজেকে দ্বাদশ শ্রেণীতে আবিষ্কার করলাম। আমি কতো বিজ্ঞ(!) কতো কতো চিন্তা আমার এখন! সেই ছট্টবেলার ভীতু ৭ম ‘আমি’ কে আজ খুঁজে পাইনা। কিন্তু তাও, কিছু জিনিস মনেহয় বদলায় না। বাসে এখনো আমাকে স্যার বকা দিয়ে সীটে বসান, কলেজ থেকে বের হবার সময় এখনো আমিই ১০ থেকে উলটা গোনা শুরু করি(এবং গোনা টা সবসময়ই ভুলে আগে শেষ হয়ে যায়!) এবং আজও কলেজের বাস্কেটবল গ্রাউন্ডে পা রাখতেই আমার হঠাৎ বোথ হয় চারপাশটা খুব শূন্য আমার-কিভাবে এই টার্ম টা কাটাবো!
এবার কেন জানিনা, হঠাৎ মনে হোল গত ছ’বছরে এই ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের সাথে আমার একটা সম্পর্ক গরে উঠেছে। জানিনা এ কিসের টান, একে মমতা বলে, নাকি নিতান্তই স্বপ্নবাজ মনের ভ্রান্ত কল্পনা! কিন্তু আমার কেন যেন মনে হোল আজ, যে আগামী জুন, আমার ১৮তম জন্মদিন আসার আগেই আমি আমার এই সড়কের সাথে সব বন্ধন চিরতরে ছিন্ন করবো। কি অদ্ভুত বিষাদ! একে কি বলে?
হয়তো এ পথ আমি আর পাড়ি না দিলেও আমার কিছু আসবে যাবে না। এমনও নয় যে এপথে আমার আসা যাওয়া বন্ধ হলে আমার কন অপূর্ণতা থেকে যাবে। হয়তো…….এই যাত্রা থেকে আমার পাওয়ার কিছুই নেই। তবুও জানিনা কেন, মনেহয় যেদিন শেষ বারের মতো আমি ঢাকার পথে ছুটবো, এই সড়কে ফেলে যাব অন্তরার আমার কোলে ঘুমানো, অবিরাম গান, Bazaar dance, চোখের কিছু জল, কিছু ভয়, কিছু স্বপ্ন আর হৃদয়ের একটুখানি।
চলে যাব আমরা সবাই। একে একে মাইলফলকের লেখা পাল্টাবে- ঢাকা ৯৬ কি.মি, ঢাকা ৮৪ কি.মি,
ঢাকা ৫৫ কি.মি। এই মহাসড়কেই সব রয়ে যাবে। আর আমার কাছে রয়ে যাবে শুধুই এর স্মৃতি…..।

১৮.০৯.১০

৮৬৯ বার দেখা হয়েছে

৪ টি মন্তব্য : “স্ট্যান্ডিং এট দি এজ (Standing at the Edge)”

  1. শরিফ (০৩-০৯)
    ১৮.০৯.১০

    সৃতিশক্তির প্রশংসা করতে হয় । এতো তারিখ মনে রাখ কিভাবে ? 😀 এর আগের গল্পেও দেখলাম একটা তারিখ দিয়েছ 😀

    এনিওয়ে তোমার এই লেখা দেখে আমার বাসা থেকে কলেজ আর কলেজ থেকে বাসা ফিরত যাবার সেই দিন গুলো মনে পড়লো । বাসা ছিল সিরাজগঞ্জ , পড়তাম পিসিসিতে । দেখতে দেখতে পার হয়ে যেত ভ্রমণ কাল ।

    জবাব দিন
  2. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    আমাদের কলেজ জার্নিগুলো ছিল অসাধারন, যাবার সময় সারারাত লঞ্চে বন্ধুরা আড্ডাবাজি করতে করতে যাওয়া। আর আসার সময় বাসে করে দুটো ফেরি আর আরিচাতে লঞ্চ পারাপার... দারুন হতো।

    লেখা ভাল লাগলো, নিয়মিত চালিয়ে যাও :thumbup:


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন
  3. সুষমা (১৯৯৯-২০০৫)

    কিছুদিন ধরে সপ্তাহে একদিন গাজীপুর যেতে হচ্ছে অফিসের কাজে। রাস্তার দুইপাশে শালবন আর সেই পরিচিত রাস্তা, সত্যিই মনে হচ্ছিল বছর সাতেক আগে ফিরে গেছি। ভুলে যেতে ইচ্ছে করছিল খুব, আমার গন্তব্য শ্রীপুর পর্যন্ত 🙁

    লেখার জন্য :thumbup: :hatsoff:

    জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।