উপরে যে কয়েকটি গুণাবলীর কথা উল্লেখ করলাম, তার মধ্যে প্রথম তিনটি যাদের মধ্যে আছে, শেষেরটিও তাদের মধ্যে অবশ্যই পাওয়া যাবে। অর্থাৎ যিনি অপরের প্রতি সৌজন্য, সহযোগিতা এবং সুআচরণ প্রদর্শন করে থাকেন, তিনি অপরকে অবশ্যই সম্মানও করে থাকেন, এবং এ কারণে নিজেকেও অপরের নিকট সম্মানীয় করে তোলেন। অস্ট্রেলিয়ায় এটা আমার তৃতীয় সফর। প্রতিবারে আমি এখানকার পথে ঘাটে, ট্রামে বাসে ট্রেনে, শপিং মলে, রেস্তোরাঁয় এখানকার মানুষের মাঝে এই গুণগুলোর পরিচয় পেয়েছি। প্রায় সব ধরণের লোকের কাছ থেকেই পেয়েছি; তা সে মূলধারার অজি হোক কিংবা অন্য কোনদেশের মাইগ্র্যান্ট হোক। পথে মুখোমুখি অতিক্রম করার সময় একটি ছোট্ট ‘হাই’ এবং সেই সাথে একটি নির্মল হাসি এদেরকে পর্যটকদের কাছে খুব সহজেই এ্যাপ্রোচেবল করে তোলে। কেউ যদি বলে, ‘আমি তোমাদের দেশে একজন পর্যটক, আমার এই তথ্যটুকু জানা প্রয়োজন। কোন সাহায্য করতে পারবে কি’? ব্যস, অমনি সে উঠে পড়ে লাগবে আপনাকে সাহায্য করতে, আর তা করতে না পারলে নিদেনপক্ষে কোথায় গেলে আপনি সাহায্যটুকু নির্বিঘ্নে পেতে পারেন, খুব যত্ন করে সে পথ বাৎলে দেবে। যদি শোনে যে আপনি একজন পর্যটক এবং আপনি একা ঘুরতে বের হয়েছেন, তবে সে তো জিজ্ঞাসিত পথটুকু বাৎলে দিবেই, সেখান থেকে আপনি একা ঘরে ফিরতে পারবেন কিনা, সে ব্যাপারেও নিশ্চিত হতে চাইবে।
অন্যান্য সভ্য দেশের মত এখানেও ট্রামে বাসে ট্রেনে কয়েক ধরণের যাত্রীদের জন্য আসন সংরক্ষিত থাকে। যেমন, সিনিয়র সিটিজেন, অন্তঃসত্ত্বা মহিলা, স্ট্রলারে শিশু বহন করা মহিলা, হুইলচেয়ারে আসীন কোন ব্যক্তি কিংবা অন্য কোন শারীরিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তি। এদের জন্য সংরক্ষিত আসনে যদি এর বাইরের কোন যাত্রী বসেও থাকেন, এদেরকে দেখা মাত্র তারা উঠে দাঁড়িয়ে যান এবং তাদেরকে সংরক্ষিত আসনে বসতে সাহায্য করেন। হুইল চেয়ার এবং স্ট্রলার নিয়ে সরাসরি ট্রামে বাসে ট্রেনের ভেতরে প্রবেশ করা যায়। এমনকি সংরক্ষিত আসনে বসা একজন সিনিয়র সিটিজেন তার চেয়েও দুর্বল কিংবা বেশি সিনিয়র সিটিজেন কে প্রবেশ করতে দেখলে স্বেচ্ছায় আসন ছেড়ে দেন এবং নিজে দাঁড়িয়ে যান, যতক্ষণ পর্যন্ত না আরেকটি সংরক্ষিত আসন খালি হয়। এখানে ট্রেনে চলাচলের সময় ট্রেনের অভ্যন্তরীণ সিস্টেমে কম্পিউটারাইজড ভয়েসে যেসব ঘোষণা দেয়া হয়, যেমন এখন ট্রেন থামছে কোন স্টেশনে, তার পরের স্টেশন কী, কোথায় ট্রেন বদল করে অন্য লাইনের ট্রেনে উঠতে হবে ইত্যাদি, তার সবই আমি খুব সহজেই বুঝতে পারি। কিন্তু মুশকিল হয় তখন, যখন ট্রেনের ড্রাইভার সরাসরি কোন ঘোষণা দেন। সাধারণতঃ কোন জরুরি কারণেই তারা এমন ঘোষণা দিয়ে থাকেন; যেমন, সামনের কোন স্টেশনে অপ্রত্যাশিত বিলম্বের সম্ভাবনা থাকলে, কোন কারণে ট্রেন আর যাবে না- এমন কোন সম্ভাবনা থাকলে এবং নির্ধারিত সূচীর বাইরে কোথাও কোন ট্রেন বদল করতে হলে সে ক্ষেত্রে বদলি বাসের ব্যবস্থা কোথায় কিভাবে পাওয়া যাবে, ইত্যাদি।
একদিন বাসা থেকে শহরের প্রাণকেন্দ্র Flinders City তে যাব। বৌমা তার সেলফোনে এ্যাপস দেখে আমাকে পথ বাৎলে দিয়ে বললো, আমদের বাড়ির কাছের Lynbrook স্টেশনে উঠবেন, আর কোন বদলাবদলি নাই, একেবারে শেষের স্টেশন Flinders City তে সবাই নামবে, আপনারাও নামবেন। অবশ্য বৌমা আমাকে এ কথাটাও স্মরণ করিয়ে দিয়েছিল যে মাঝে মাঝে অনেক সময় পথিমধ্যে কফিল্ড স্টেশনে ট্রেন বদল করতে হয়। সে রকম যদি হয়, তবে ড্রাইভার সরাসরি ট্রেনের মাইকে ঘোষণা দিয়ে আগেই তা জানিয়ে দেবেন। তাই কোন ঘোষণা হলে তা মন দিয়ে শুনবেন। বৌমা বলার পর আমিও ইন্টারনেট ঘেটে নিশ্চিত হ’লাম যে ট্রেনটির সরাসরিই যাবার কথা, পথে কোন ট্রেন বদল করতে হবে না। Lynbrook স্টেশনে গিয়েও ওদের schedule দেখে এ ব্যাপারে নিশ্চিত হ’লাম।
ট্রেনে চলাচলের সময় আমি স্টেশনের নামগুলো খেয়াল করে থাকি। দেখতে দেখতে এখন এ লাইনের এবং আশে পাশের লাইনের সবগুলো স্টপেজের ক্রমানুযায়ী নাম আমার মুখস্থ হয়ে গেছে। ট্রেনে বসে আমি জানালা দিয়ে দৃশ্যাবলী দেখছিলাম আর গিন্নীর সাথে গল্প করছিলাম। প্রথম থেকে দশটা স্টেশন পরে আসে কফিল্ড। সেখানে আসার আগে আগে ঠিকই কম্পিউটারাইজড ভয়েস থামিয়ে ড্রাইভারের কণ্ঠে একটি ঘোষণা আসতে শুরু করলো, কিন্তু আমি সে ঘোষণার কোন কিছুই বুঝতে পারলাম না। গিন্নীকে জিজ্ঞেস করলাম, সেও কিছু বুঝেনি। পাশের একজন ভারতীয় সহযাত্রীকে জিজ্ঞেস করলাম, সেও কিছু বুঝেনি। অন্যান্য যাত্রীদের মাঝেও কোন উৎকণ্ঠা লক্ষ্য করলাম না, ফলে আমরাও নির্লিপ্ত থাকলাম। একটু পরে দেখি, ট্রেনটা যে স্টেশনে থামলো, সেটা একটু আগেই আমরা পার হয়ে কফিল্ড পৌঁছেছিলাম। বুঝলাম, ভুলটা কোথায় হয়েছে, তাই আর দেরি না করে তড়িঘড়ি করে সেই স্টেশনে নেমে পড়লাম।
২০ মিনিট পরের ট্রেনে চড়ে আমরা গন্তব্যে পৌঁছেছিলাম। ট্রেন আসার আগে একমাত্র অপেক্ষমান একজন মহিলা যাত্রীকে জিজ্ঞেস করে নিশ্চিত হয়েছিলাম যে আমরা ঠিক ট্রেনে চড়ছি কি না। উনি নিশ্চিত করে বলেছিলেন যে উনিও Flinders City তে যাচ্ছিলেন, আমরা ইচ্ছে করলে তাকে অনুসরণ করতে পারি। গন্তব্যে নামার পর উনি আমাদেরকে জিজ্ঞাসা করলেন, আমরা ‘Way Out’ খুঁজে পাবো কিনা। আমি বললাম, পাবো, কারণ প্ল্যাটফর্মে নেমেই আমি আগের বারে দেখা বের হবার রাস্তা চিনে গেছি। তার পরেও উনি জিজ্ঞাসা করলেন, আমরা কোন এক্সিট দিয়ে বের হতে চাই। আমি বললাম, ‘Swanston Road Exit’। প্ল্যাটফর্মটি ছিল ভূতলে, এস্কেলেটর দিয়ে ওপরে উঠে গ্রাউন্ড লেভেল পাওয়া যায়। আমরা একসাথেই এস্কেলেটরে উঠলাম। নামার সময় উনি আমাকে বললেন, “এদিক দিয়ে গেলে পাবেন Swanston Road Exit, আর ওদিক দিয়ে গেলে পাবেন Elizabeth Road Exit। আপনাদের দিনটি ভালো কাটুক, মেলবোর্ন ভ্রমণ উপভোগ করুন”!
এর পরে আরও কয়েকদিন Flinders City তে এসেছিলাম। প্রতিবারই দেখেছি, স্টেশনের এক্সিট গেইটে এবং রাস্তার অপর পার্শ্বের ট্রাম স্টেশনে এবং ফেডারেশন স্কয়ারে বহু স্বেচ্ছাসেবক দাঁড়িয়ে থাকেন পর্যটক এবং অন্যান্য সাহায্যপ্রার্থীদেরকে সাহায্য করার জন্য। এদের বেশিরভাগই বয়স্ক লোক, অবসরের পর তারা এসব কাজ করে শান্তি পান, আনন্দও পান। বুড়োদের চেয়ে বুড়িরা সাহায্য করার ব্যাপারে বেশি স্বতঃস্ফূর্ত। এদেরকে কিছু জিজ্ঞেস করলে না বুঝা পর্যন্ত এরা হাল ছাড়ে না। এদের হাতে সিটি ম্যাপ থাকে। চাইলে ম্যাপে কলম দিয়ে এঁকে রাস্তা বুঝিয়ে দেন এবং ম্যাপটাও দিয়ে দেন। একদিন আমরা ‘সিটি সার্কেল ট্যুর’ বাসে ঘুরাঘুরি করার জন্য এসেছিলাম। স্টেশন থেকে বের হয়েই এক কোণায় দুই বুড়িকে দণ্ডায়মান দেখতে পেলাম। ওরা এক ধরণের পরিচিতিমূলক জ্যাকেট পরিহিত থাকে, দেখেই চেনা যায়। আমি তাদেরকে আমাদের উদ্দেশ্যের কথা জানালে তারা দুঃখ প্রকাশ করে জানালেন যে ঐদিন অনিবার্য কারণে আকস্মিকভাবে ‘সিটি সার্কেল ট্যুর’ বাতিল করা হয়েছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, ‘তাহলে এর পরিবর্তে আমরা কোন কোন দর্শনীয় স্থান দেখতে পারি’? ওনাদের মধ্যে একজন একটা লম্বা ফিরিস্তি দিলেন, যার মধ্যে অনেকগুলো আমরা ইতোমধ্যে দেখে ফেলেছি। তখন উনি প্রস্তাব রাখলেন, কাছেই আছে ‘স্কাই ডেক’ বিল্ডিং, সেটা দিয়ে শুরু করে আপনারা নিকটস্থ অন্যান্য স্থানগুলো দেখতে পারেন। আমি তথাস্তু বলে রওনা হ’লাম। একটু পরে দেখি, ওনাদের একজন পেছন পেছন দ্রুত হেঁটে এসে আমাদের সাথে ইয়ারা নদী পর্যন্ত এলেন এবং একটা লোহার সিঁড়িগোড়ায় দাঁড়িয়ে বললেন, এখান দিয়ে আপনারা নেমে যান, তারপর ঐ ফুটব্রীজ দিয়ে ইয়ারা নদী পার হয়ে ঐ দিকে যাবেন, সেখানেই পেয়ে যাবেন ‘স্কাই ডেক’ বিল্ডিং। পুনরায় শুভেচ্ছা জানিয়ে তিনি বিদায় নিলেন, তাঁর এই অতিরিক্ত সৌজন্যটুকু আমাদের মনে গেঁথে রইলো। এটুকু না করলেও আমরা যেতে পারতাম ঠিকই, কিন্তু একটু বেশি ঘোরা হতো। উনি একটু অতিরিক্ত কষ্ট করে আমাদেরকে শর্টকাট রাস্তাটি চিনিয়ে দিয়েছিলেন, এবং এ কারণে আমাদের মনে একটা স্থায়ী আসন গড়ে নিয়েছিলেন।
আমাদের একজন আত্মীয় দম্পতি আমাদের এক মাস আগে মেলবোর্নে এসেছিলেন। ওনাদের কাছ থেকে স্থানীয়দের আরেকটি মহানুভবতার গল্প শুনেছিলাম। একদিন সকালে ওনারা আকাশ ভালো দেখে ছাতা ছাড়াই হাঁটতে বের হয়েছিলেন। হাঁটাহাটি শেষ করে ওনারা যখন বাসায় ফিরছিলেন, তখন হঠাৎ করেই ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পড়া শুরু হলো। আশে পাশে কোথাও দাঁড়াবার মত কোন ছাউনি ছিল না, তাই ওনারা খুব দ্রুত হাঁটছিলেন, কারণ বাসাটা তখনও এক কিলোমিটারের মত দূরে ছিল। হাঁটা পথের একপাশে সারিবদ্ধ কিছু বাড়ি ছিল। সেখানকার একটি ডুপ্লেক্স বাড়ির বারান্দায় বসে এক বয়স্কা মহিলা তাদেরকে লক্ষ্য করছিলেন। তিনি একটা ছাতা হাতে করে দোতলা থেকে নেমে ওনাদেরকে ডাকতে ডাকতে পিছু নিলেন। তাঁর ডাক শুনে ওনারা থামলেন। উনি তাদের হাতে ছাতাটি দিয়ে বললেন, “আমি জানিনা, আপনারা কত দূরে যাবেন, কিন্তু এভাবে হেঁটে গেলে আপনারা যেখানেই যান, ভিজে যাবেন এবং অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন। ঐটা আমার বাসা, এত নম্বর। আপনাদের যদি কখনো এদিকে আবার আসার সুযোগ হয়, তবে ছাতাটি ইচ্ছে করলে ফেরত দিতে পারেন, না পারলেও মোটেই কোন সমস্যা নেই। কলিং বেল টিপলে কেউ বের না হলেও ছাতাটা সামনের দরজার পাশে রেখে যেতে পারেন। আপনারা এখন নিরাপদে বাড়ি ফিরে যান”। মহিলা একজন ভারতীয় বংশোদ্ভূত ছিলেন। আমাদের সেই আত্মীয় দম্পতি পরের দিনই নিজেদের ছাতাসহ বের হয়ে ওনাদের ছাতাটি পৌঁছে দিয়েছিলেন।
ঠিক এ রকমেরই একটা ঘটনা গত পরশুদিন আমাদের সাথেও হয়েছিল। আমরা যাব লিনব্রুক স্টেশনে, সেখান থেকে ট্রেনে করে প্যাকেনহামে। কাপড় চোপড় পরে যখন তৈরী হচ্ছিলাম, জানালা দিয়ে পাশের বাড়ির ছাদে রোদের ঝিলিক দেখতে পেলাম। রেডী হয়ে যখন বের হ’লাম, তখন আকাশের দিকে খেয়াল করি নি, কিন্তু একটু এগোতেই হাতের কব্জির নীচে এক ফোঁটা পানির স্পর্শ পেলাম। পুরো শরীরের মধ্যে কেবল ঐ অংশটুকুই অনাবৃত ছিল, তাই সেখানে পানি স্পর্শ করাতে টের পেয়েছিলাম। পরে তাকিয়ে দেখি জ্যাকেটেও অনেক পানির ফোঁটা। দ্রুত হাঁটতে লাগলাম, যেন বাস আসা মাত্রই বাসে উঠতে পারি। কিন্তু আমাদের সেদিন দুর্ভাগ্য ছিল, বাসটা আসতে আট মিনিট দেরি করেছিল। এখানে খুবই কদাচিৎ পাবলিক ট্রান্সপোর্ট লেট করে, বরং সাধারণতঃ দুই এক মিনিট আগেই আসে। বাস স্ট্যাণ্ডে পৌঁছে দেখি, ছাতা হাতে এক মহিলা বাসের জন্য অপেক্ষমান। আমাদেরকে দেখে তিনি তার হাতে ধরা ছাতাটা এগিয়ে দিলেন। আমি নিতে অস্বীকার করলাম। তিনি বললেন, আমার বয়স কম, ভিজলে আমার কিছু হবে না, আপনারা বয়স্ক মানুষ, আপনারা ভিজলে অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন। আমরা কিছুতেই নেব না, উনিও কিছুতেই ছাড়ার পাত্র নন। শেষ পর্যন্ত একই ছাতার নীচে তিনজন দাঁড়ানোতে একটা দফা রফা হলো। বাসে উঠেও তিনি তার ছাতাটি আমাদেরকে দিয়ে দিতে চাইলেন কারণ আমাদের ফেরার সময়েও বৃষ্টি হতে পারে বলে তিনি সন্দেহ প্রকাশ করলেন। এক ছাতার নীচে তিনজন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে গল্প করার সময় টুকটাক পরিচিতি পর্ব সেরেছিলাম। তিনি নিকটেই একটা বাসায় থেকে পড়াশুনা করছেন, এডুকেশনে মাস্টার্স করছেন। প্রতিদিন এক ঘণ্টার পথ পাড়ি দিয়ে তিনি Flinders City তে গিয়ে আবার ট্রামে করে একটি ইউনিতে যান। সেখানে ক্লাশ করে আবার উল্টোপথে বাড়ি ফিরে আসেন। তিনিও ভারতীয় বংশোদ্ভূত, পাঞ্জাবের। এক পর্যায়ে আমাদের সাথে তিনি হিন্দীতে কথা বলা শুরু করেছিলেন, যদিও আমি ইংরেজীতেই বলছিলাম। আমাদেরকে ছাতা দেয়ার ইচ্ছেটা কথার কথা ছিল না, খুবই আন্তরিক ছিল। বারবার বলছিলেন, লে লো না, লে লো না। বাসে উঠে লক্ষ্য করলাম, তিনি একটা টিস্যু পেপারে মোড়ানো কিছু নাস্তা বের করে খাচ্ছেন। বুঝতে পারলাম, উনি বাসা থেকে খেয়ে বের হতে পারেন নি। এটা দেখে ওনার প্রতি আমার খুবই মায়া হলো। ট্রেন থেকে নামার সময় আমরা তাকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ ও শুভকামনা জানিয়ে হাসিমুখে বিদায় নিলাম।
উপরে যতগুলো ঘটনার কথা বললাম, তার প্রত্যেকটিই সৌজন্যবোধ, সহযোগিতা এবং সুআচরণ এর পরিচায়ক। চমৎকার এসব চারিত্রিক গুণাবলীর দ্বারা সংশ্লিষ্ট প্রত্যেক ব্যক্তিই আমার নিকট শ্রদ্ধার পাত্র, সম্মানের পাত্র হিসেবে আজীবন স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।
মেলবোর্ন, অস্ট্রেলিয়া
১৪ জুলাই ২০২২
সৌজন্যবোধ, সহযোগিতা এবং সুআচরণ এর পরিচায়ক ঘটনাগুলো শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ খায়রুল ভাই। আপনার জন্য এবং ্ঐসব ভাল মানুষদের জন্য শুভকামনা। আমরা যদি অমন হতে পারতাম।
পুরাদস্তুর বাঙ্গাল
"আমরা যদি অমন হতে পারতাম" - আগে আমরাও বোধকরি অনেকটা 'অমন'ই ছিলাম। যান্ত্রিকতার এই যুগে পাশ্চাত্যের খারাপ দিকগুলো অবলীলায় ধারণ করে আমরা আমাদের চিরাচরিত নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয় সাধন করেছি।
পাঠকের এই আকালে আমার পোস্টে আসার জন্য এবং মন্তব্য রেখে যাবার জন্য তোমাকে অশেষ ধন্যবাদ, টিটো।